……আর জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বেশ আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করলেন, লেপের তলায় তিনি যেন একা নন। পরিষ্কার অনুভব করতে পারলেন, তাঁর রাতপােশাকের মধ্যে কিলবিল করছে একজোড়া নরম হাত। বেপরােয়া পর্যটকের মতাে সেই হাতদুটো বিচরণ করে চলেছে তাঁর শরীরের যত্রতত্র। নির্দ্বিধায় স্পর্শ করছে তাঁর বুক, পেট, নাভিমূল। আগ্রাসী নাবিকের মতাে ক্রমশ যাত্রা করছে নীচের দিকে।
গাঢ় ঘুম অসময়ে ভাঙলে কয়েক মুহূর্তের জন্য কেমন ঘােরের মধ্যে থাকে সবাই, বাস্তবে ফিরে আসতে সময় লাগে খানিকক্ষণ। অদম্য পালেরও সেটাই হচ্ছিল। ঘুম ভেঙে তিনি চুপচাপ শুয়েছিলেন। সাতপাঁচ না ভেবে চোখ বুজে উপভােগ করছিলেন লেপের তলার সেই উষ্ণ আদর।
বহুদিন পর তাঁর মধ্যত্রিশের উপােসি শরীর যেন জেগে উঠছিল।
নরম হাতদুটোর সঙ্গে একজোড়া নরম ঠোঁটেরও স্পর্শ পাচ্ছিলেন এবার তিনি। ঠোঁটদুটো তাঁর বুকে পাগলের মতাে ঘষে চলেছিল পাপড়িদুটো, বুক থেকে ধীরে ধীরে সর্পিল গতিতে উঠে আসছিল তাঁর গলা বেয়ে। ঘাড়ের পেছনে কর্ণমূলের সামান্য নীচে ক্রমাগত ঘর্ষণে অদম্য পাল প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন। সুখানুভূতিতে একসময় নিজের অজান্তেই তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, “আহ!”
আর তাঁর আরাম শীৎকারেই বােধ হয় ঠোঁটদুটো আরাে উৎসাহিত হয়ে পড়ল। সােজা এসে সে-দুটো চেপে বসল তাঁর ঠোঁটের ওপর, শুষে নিতে লাগল আশ্লেষে।
আহ, কী মাদকতাময় একটা সুগন্ধ! প্রচণ্ড কর্ষণে নিজের ঠোঁটদুটো যেন ক্রমশই শুষ্ক হয়ে উঠছিল। তবু অদম্য চাইছিলেন এই অসম্ভব স্বর্গীয় মুহূর্ত যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ভেজা চুমুতে সুখসাগরে ভাসতে ভাসতে অদম্য কিছুক্ষণ পর চোখ খুললেন। আর তখনই তাঁর চটকাটা পুরােপুরি কেটে গেল। তাঁর মনে পড়ে গেল, ঘরে দ্বিতীয় ব্যক্তি কেউ নেই।
থাকা সম্ভবও নয়। তাঁর এই তেরােতলার ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকেন।
মনে হওয়ামাত্র তিনি বিস্ফারিত চোখে উঠে বসতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। ভেজা ঠোঁট আর দুটো হাত তখন তাঁর শরীরের নিয়ন্ত্রণ পুরােপুরি দখল করে নিয়েছে।
ঘরের মিশমিশে কালাে অন্ধকারেও যেটুকু আবছা আলাে বাইরে থেকে এসে পড়ছিল, সেই আলােয় শিহরিত অদম্য টান মেরে লেপটা সরিয়ে দিলেন গা থেকে। দেখলেন লেপের তলায় কেউ নেই। কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।
অথচ তিনি এখনাে স্পষ্ট অনুভব করতে পারছেন এক নারীশরীর তাঁকে নিয়ে রতিক্রিয়ায় মগ্ন। পরিষ্কার বুঝতে পারছেন একজোড়া যৌবনপুষ্ট নরম মাংসপিণ্ড নিষ্পেষিত হচ্ছে তাঁর রােমশ বুকে।
কিন্তু না। তিনি আর উপভােগ করতে পারছেন না। ইন্দ্রিয়সুখও লুপ্ত। বরং ভয়ে, অবিশ্বাসে তাঁর শরীরের রােমকূপগুলাে এখন খাড়া হয়ে উঠছে। তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করছেন অদৃশ্য সেই শয্যাসঙ্গিনীর হাত থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু পারছেন না।
আতঙ্কে তাঁর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এই ঠান্ডাতেও কুলকুল করে ঘামতে ঘামতে তিনি অনুভব করলেন, কোনাে নারীযােনিতে প্রবিষ্ট হচ্ছে তাঁর পুরুষাঙ্গ। সম্পূর্ণভাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই।
ওহ! কী হিমশীতল সেই গহ্বর। যেন হাজার বছর ধরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছে সেই মৃত্যুশীতল উপত্যকা।
প্রবল আন্দোলনের মাঝে কাঁপতে কাঁপতে তিনি জ্ঞান হারালেন।……
…….ধীমান একটু কেশে বললেন, “আসলে ইদানীং ও রাতে বিছানায় শুলেই একটু পরে ওর ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। ও অনুভব করছে কোনাে মেয়ে যেন ওর শরীরে ঘষাঘষি…ইয়ে মানে…বুঝতেই তাে পারছেন কী বলতে চাইছি! ও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না, এদিকে সবকিছু হয়ে যাচ্ছে।”…….
…….ভাবতে ভাবতে অদম্য জার্নালটার পৃষ্ঠা ওলটালেন। আর ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি উপলব্ধি করলেন তাঁর গরম পােশাকের ভেতর রােমকূপগুলাে লম্ব অবস্থানে খাড়া হয়ে পড়ছে। তার কারণ, উষ্ণ একজোড়া হাত ব্রাউনীয় গতির মতাে যথেচ্ছ বিচরণ করে বেড়াচ্ছে তাঁর নিম্নাঙ্গে।
অদম্য শিহরিত হয়ে উঠলেন। এতদিন গভীর রাতে এই অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতা হত। কিন্তু আজ এই ভর সন্ধেবেলাতেই এই ঘটনা!…….
…..অদম্য কুলকুল করে ঘামতে লাগলেন। এবার আর হাত নয়, একটা গােটা পূর্ণযৌবনা নারীদেহ তাঁর শরীরটাকে পিষে দিচ্ছে। তাঁর রােমশ বুকে পাগলের মতাে ঘষা খাচ্ছে সেই অশরীরীর নরম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। না চাইতেও জৈবিক ক্রিয়ায় অদম্য তাতে উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। অসহায় ক্রীতদাসের মতাে সমর্পণ করছেন নিজেকে।
প্রাণপণ অশ্রুত চিৎকারে তাঁর মুখচোখ লাল হয়ে যাচ্ছে, দম আটকে আসছে। তাঁর দেহ ও মন দুটি সম্পূর্ণ পৃথক গতিপথে বয়ে চলেছে। মন না চাইতেও শরীর সাড়া দিয়ে ফেলছে অসম রতিক্রিয়ায়।
মনের মধ্যে ভয় আর শরীরে সঙ্গমের উত্তেজনা, দুই মিলিয়ে অদম্য বেশিক্ষণ মানসিক চাপ নিতে পারলেন না। বিছানাতে টলে পড়ে গেলেন।….
……অদম্য কোনােমতে উঠে বসে চোখমুখ মুছলেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন, রাত সাড়ে নটা। মুহূর্তে অনুভব করলেন একটু আগের সঙ্গমে রতিরসে সিক্ত হয়ে ভিজে উঠেছে তাঁর অন্তর্বাস।…..
……মেয়েটা বলল, “আচ্ছা, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি। কিছু মনে করবেন না। আমাকে তাে পুরােটা জানতে হবে। আপনি যে এইভাবে প্রায়দিন সেক্স করছেন বা আপনাকে করানাে হচ্ছে, আপনার শরীরের যে যে পার্টসে তার স্পর্শ আপনি অনুভব করছেন, সবকিছু মেটার পর সেখানে কোনাে দাগ দেখতে পাচ্ছেন? কোনাে কামড়ানাে বা আচড়ানাের দাগ?”…….
…….“সাকিউবাস হল একধরনের প্রেতিনী যারা জীবিত পুরুষের ঘুম বা ওই জাতীয় কোনাে উদাসীনতার সুযােগ নিয়ে তাকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে, উত্তেজিত করে। তারপর তার সঙ্গে একরকম জোর করেই সঙ্গম করে। পুরুষটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও সেই অবস্থায় তার কিছু করার থাকে না। সাকিউবাসের মতােই ইনকিউবাস হল অশরীরী প্রেত যারা জীবিত নারীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ করে।…….
…….সাকিউবাস চেনার সহজ নিয়ম হল, মিলনের সময় মনে হয় কোনাে বরফঠান্ডা গহ্বরে প্রবেশ করানাে হচ্ছে আপনার পুরুষাঙ্গকে।” কথাটা শেষ করে মেয়েটা সােজা তাকাল অদম্যর দিকে, “আপনার কি আগে কোনাে বিয়ে হয়েছিল? বা কোনাে প্রেম? যাতে আপনি শারীরিক সংসর্গে রাজি হননি?”…..
……..প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করছিলেন অদম্য। আর্তনাদের প্রাবল্যে যেন মনে হচ্ছিল হৃৎপিণ্ডটা গলা দিয়ে বেরিয়ে আসবে বাইরে। উত্তেজনার তীব্রতায় মস্তিষ্কের শিরাগুলাে বােধ হয় এখনই বিদ্রোহ ঘােষণা করবে। বিছানাজুড়ে তাঁর শরীরটাকে নিয়ে এক জান্তব দাপাদাপি শুরু হয়েছে।
কিন্তু বরাবরের মতাে এবারও বৃথা সেই আস্ফালন। একফোঁটা চিৎকারও শব্দ হয়ে বহির্জগতে বেরিয়ে আসছিল না। প্রতিবারের মতাে অদম্য ভীরু প্রেমিকের মতাে বিছানায় চিত হয়ে পড়েছিলেন। অপার্থিব সেই নারী ছিল অদম্যর ওপরে, সে একাই শাসন করছিল গােটা সঙ্গমশয্যাকে।
বরাবরের মতাে শৃঙ্গারশেষে ঝড় শান্ত হল। রতিক্লান্ত অদম্য তাঁর একা ফ্ল্যাটে মৃতদেহের মতাে পড়ে রইলেন বিছানায়।…..