রাজাবলী – আবুল বাশার

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..পুকুরে স্নান করছিলেন মা। না, তিনি তখনও শলােমনের মা নন। বৎসেবা দাউদের চোখে পরস্ত্রী, হিত্তীয় বউ। দাউদ দেখছিলেন ছাদের উপর থেকে পদ্মপুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে ঢেউ উঠছে মৃদু মৃদু। কে ওই অপরূপা, নগ্ন মৃণালবাহু নারী, কে ওই উন্নত কুচযুগ (যুবতীর স্তন) উন্মুক্ত অপ্সরা, কে ওই হুরি ?………..

….উন্মাদ মদিরাচ্ছন্ন লােত তাঁর দুই কন্যার গর্ভ সঞ্চার করলেন সাের পর্বত-উপত্যকায়।

তুমি এ কী করলে লােত ? —আমি জানি না, আমি কিছু জানি না শলােমন! আমাকে কন্যারা প্রলুব্ধ করেছে। মন আমার বিষ, হৃদয় শূন্য, আমি তাড়িত, আমি কেন শেষ হয়ে যাব ? কন্যারা বলেছে, ইতিহাস এখানে শেষ হতে পারে না বাবা! আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি, পারিনি। এবার পারব, নিশ্চয় পারব ।…….

…….আদম বললেন, ওহে লিপিকার লেখ, উরিয়কে কে খগাঘাতে হত্যা করে ? সম্রাট দাউদ ধর্ষণ দ্বারা বৎসেবার গর্ভ সঞ্চার করেন। একথা গােপন করেছেন বৎসেবা স্বামীর কাছে কিন্তু দাউদের কাছে প্রকাশ করেছেন। তখন দাউদ ওই গর্ভের সন্তানের দায়িত্ব উরিয়র কাঁধে চাপানাের জন্য তাঁকে মদ খাইয়ে স্ত্রী সহবাসে পাঠানাের পরিকল্পনা করেন। একজন সৈনিক তখন যুদ্ধকে এতই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন যে, মত্ত অবস্থাতেও সম্রাটের অনুমতি পেয়ে স্ত্রী-সহবাসে যাননি, অন্যান্য সৈনিকদের সঙ্গে। সৈন্যাবাসে রাত্রি কাটিয়েছেন।…..

…….একথা ভাবলে এক তীব্র কষ্ট শলােমনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এই পবিত্রতার কী মূল্য দিয়েছিলেন দাউদ ? স্ত্রী-সহবাসে পাঠানাের জন্য উরিয়কে মদ্যপান করানাে, এই চড়া নাটক অভিনীত হয়েছে এই মরুভূমিতে। কারণ তখন বৎসেবার গর্ভে দাউদের সন্তান এসে পড়েছে। বললেন আদম। কিন্তু মনে কর শলােমন, সম্রাটের যে-কোনও নির্দেশই পবিত্র। উরিয় মত্তাবস্থায় স্ত্রী-সহবাস করেন। এই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিতে পার না।

নাথন জানতেন সমস্ত ঘটনা। এমন তাে হতেই পারে বৎসেবার গর্ভে উরিয়ের সন্তান থাকাকালীন সম্রাট দাউদ বংসেবাকে গমন করেন। অতএব আসল ঘটনা বৎস জানতেন, মরুভূমির ধূলিকণা কিছুই জানে না। নাথন কি সাহায্যকারী ?……….

…….নারীদেহ যেন ঈশ্বরের মতাে দুর্লভ হয়, যেন সেই দেহ ভরানের মতাে সুক্ষ্ম হয়, তার সৌন্দর্য যেন অচেনা সুগন্ধির মতাে ললিত হয় ; নারীদেহ যেন বলিপ্রদত্ত হােমাগি ঝলসিত পশুমাংসের মতাে শস্তা না হয়। তার রূপের মধ্যে মেশানাে হবে অপার্থিব বিস্ময়। উগ্রতা আর স্নিগ্ধতার মিশেল হবে এমন অনুপাতে যে তার এক চোখে থাকবে যুদ্ধ, অন্য চোখে প্রেম। নারীর পরাস্ত সমর্পণ পদদলিত লতার মতাে উপেক্ষা করেন শলােমন।

তার কুচযুগ উদ্ধত এবং অসি অপেক্ষা তীক্ষ কিন্তু চোখে তার কখনও মেঘের সুবর্ণমুকুটের আলাে এবং কখনও ছায়াঘন প্রশান্ত নীলিমা। কখনও তাকে চেনা মনে হয় না। সেই অবৈধ অচেনা হাত থেকেই তৃষ্ণার জল চাইছেন শলােমন। নিজেকে তাঁর আশ্চর্য কাঙাল মনে হচ্ছিল।……

Leave a Reply