মেমােরিজ অফ মাই মেলানকোলি হােরস – গেব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

›› অনুবাদ  ›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

অনুবাদঃ আনােয়ার হােসেইন মঞ্জু

যে বছর আমার বয়স নব্বই এ পড়ল তখন আমি নিজেকে এক কিশােরী কুমারীর সাথে উন্মত্ত লীলাময় একটি রাত উপহার দিতে চেয়েছিলাম। প্রথমেই রােসা ক্যাবারকাসের কথা আমার মনে আসে। অবৈধ কাজকর্ম চলে এমন একটি বাড়ির মালিক সে এবং যখন নতুন কোনাে মেয়ে তার কাছে আসে তখন মেয়েটি সম্পর্কে তার ভালাে খদ্দেরদের অবহিত করে।…….

…….আমাকে আধ ডজন চমৎকার পছন্দ থেকে বাছাই করে নেয়ার প্রস্তাব দিল । কিন্তু বলাই বাহুল্য, তাদের প্রত্যেকে ব্যবহৃত । আমি বললাম, না। মেয়েটিকে অবশ্যই কুমারী হতে হবে এবং ওই রাতেই পেতে হবে।…..

……আমার যৌনতার বয়স আমাকে কখনাে উদ্বিগ্ন করেনি, কারণ আমার যৌন ক্ষমতা মহিলাদের ওপর যতটা নির্ভর করত ততটা আমার নিজের ওপর নির্ভর করত না। এবং সেসব মহিলা জানত যে, তারা কখন, কেন ও কীভাবে তা পেতে চায়। এখন আমি আশি বছর বয়সের তরুণদের দেখে হাসি, যারা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যায়,……..

………আমি কখনাে এমন কোনাে মহিলার সাথে শয্যাগমন করিনি, যাকে বিনিময়ে অর্থ দেইনি এবং তাদের মধ্যে পেশার বাইরের খুব কম সংখ্যক মহিলা থাকলেও আমি তাদেরকে যুক্তি দিয়ে অথবা জোর করে অর্থ নিতে বাধ্য করেছি, এমনকি তারা আমার দেয়া অর্থ আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেয়া সত্ত্বেও। আমার বয়স যখন বিশ বছর তখন আমি তাদের নাম, বয়স এবং যৌনমিলনের পরিস্থিতি ও ধরন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণী রাখতে শুরু করেছিলাম। আমার বয়স পঞ্চাশ বছরে উন্নীত হওয়ার সময়ের মধ্যে তালিকায় লিপিবদ্ধ মহিলার সংখ্যা ছিল ৫১৪ জন, যাদের সাথে আমি অন্তত একবার মিলিত হয়েছি। আমারকারীর যখন এত সংখ্যকের সাথে মিলিত হওয়ার পক্ষে সায় দিচ্ছিল না তখন আমি তালিকা রাখা বন্ধ করে দেই। কিন্তু কাগজ ছাড়াই আমি তাদেরকথ্রা স্মরণ করতে সক্ষম ছিলাম। আমার নিজস্ব নীতিবােধ ছিল। আমি কখনাে হৈ হল্লা বা বেলেল্লাপনায় শামিল হইনি, প্রকাশ্যে যৌনােন্মত্ত হইনি এবং শরীর বা আত্মার কোনাে গােপনীয়তা বা উত্তেজক কোনাে ঘটনা নিয়ে কারাে সাথে মত বিনিময় করিনি। কারণ, তরুণ বয়স থেকে আমি উপলব্ধি করেছি যে কেউ বিনা শাস্তিতে পার পাবে না।……..

……..একটিমাত্র অস্বাভাবিক সম্পর্ক আমি বহু বছর ধরে রক্ষা করেছি, তা বিশ্বস্ত দামিয়ানার সাথে । সে বলতে গেলে বালিকা, দেখতে রেড ইন্ডিয়ানদের মতাে, শক্তিশালী, সহজ সরল। সে কথা বলত কম এবং বাচনভঙ্গিও সুন্দর ছিল না। আমার ঘরে সে খালি পায়ে চলাফেরা করত, যাতে লেখার সময়ে আমার মনোেযােগে কোনাে বিঘ্ন না ঘটে। আমার মনে আছে যে, আমি করিডােরে দোলনায় শুয়ে শুয়ে ‘লা লােজানা অহংকারী আন্দালুসীয় বালিকা’ বইটি পড়ার সময়ে লন্ড্রি রুমে ঝুঁকে তাকে খাটো একটি স্কার্ট পরতে লক্ষ করি। স্কার্টটি এত খাটো যে তার দেহের আকর্ষণীয় ভাঁজ উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। অদম্য এক উত্তেজনা আমার ওপর ভর করে এবং আমি এগিয়ে গিয়ে তার স্কার্ট ওপরে তুলে প্যান্টি হাঁটু পর্যন্ত নামিয়ে এনে পিছন দিক থেকে তার ওপর উপগত হই। বিষাদে বিলাপ করার মতাে সে বলে উঠে, আহ্, কী করছেন সেনর, ওটি ভিতরে প্রবিষ্ট হওয়ার পথ নয়, নির্গমনের পথ।’ তার শরীর প্রবলভাবে কম্পিত হলেও সে দৃঢ়ভাবে দণ্ডায়মান ছিল। তাকে এভাবে নিপীড়ন করে আমি নিজেও অপমানিত বােধ করেছি। আমি তাকে দ্বিগুণ অর্থ দিতে চেয়েছি, সে সময়ের সবচেয়ে দামি মহিলার মূল্য। কিন্তু সে একটি সেন্টও নিতে চায়নি। আমি মাসে একবার তার ওপর উপগত হওয়ার হিসাব করে তার বেতন বৃদ্ধি করেছি, যখনই সে কাপড় ইস্ত্রি করত তখন এবং সবসময় পিছন দিক থেকে।……….

……..রাত এগারােটায় সংস্করণের কাজ শেষ হলে আমার প্রকৃত জীবনের সূচনা হত। সপ্তাহে দু-তিনদিন আমি ব্যারিও চিননা গণিকা পল্লিতে রত্রিযাপন করতে যেতাম এবং এত বিচিত্র সঙ্গীদের শয্যায় গ্রহণ করতাম, যে কারণে আমি বছরের শীর্ষ খদ্দের হওয়ার সম্মান লাভ করেছিলাম দুবার। নিকটস্থ কাফে রােমায় রাতের খাবার খেয়ে অনেকটা লক্ষ্যহীনভাবে গণিকালয় বাছাই করে পিছনের দরজা দিয়ে সেখানে ঢুকে পড়তাম। এ কাজটা করতাম নিজেকে আমােদিত করার উদ্দেশ্যে।…….

…….কেউই ওসব কারণে ক্ষতিপূরণ দেয় না, রােসা ক্যাবারকাস তাে নয়ই। সে বরং তার আবাসে ছােটোদের মধ্য থেকেই তার ফসল তােলে। যেসব মেয়েকে সে নিয়ে আসে তাদেরকে চিপে শুকিয়ে ফেলে সে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ব্ল্যাক ইউকিমিয়ার ঐতিহাসিক বেশ্যালয়ে সেরা বেশ্যাদের বাজে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে। কখনাে সে কোনাে ধরনের জরিমানা দেয়নি।’…..

…….বললাম, হতে পারে, কারণ আমি বেশ্যালয় পরিবর্তন করেছি। প্রাণােচ্ছল হয়ে উঠল সে, “আমি যতটা স্মরণ করতে পারি, তােমার যন্ত্র জাহাজের দাঁড় টানা ক্রীতদাসদের মতাে,’ সে বলল, “কেমন আছে ওটি?…..

…….নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনাে উপায় নেই। রুমে প্রবেশ করলাম আমি, কিন্তু বুক জুড়ে দ্বিধা। মেয়েটিকে দেখলাম বিশাল বিছানার ওপর শুয়ে আছে, যেদিন সে জন্ম নিয়েছে সেদিনের মতাে নগ্ন ও অসহায়। সে তার পাশে দরজার দিকে মুখ করে শুয়ে আছে, সিলিং থেকে ঝুলে থাকা একটি বাতির আলাে ছড়িয়ে পড়েছে রুমে। বিছানার এক পাশে বসে আমি তাকে নিরীক্ষণ করলাম, আমার পঞ্চেন্দ্রিয়ের সম্মােহিত হওয়ার অবস্থা। তার ত্বকের বর্ণ গাঢ় এবং শরীর উষ্ণ। তাকে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও সৌন্দর্য চর্চার পর্যায়গুলাে পার হয়ে এখানে আসতে হয়েছে। কিন্তু তাতে তার শরীরের নিম্নাংশের নতুন লােমগুলাে ঢাকা পড়েনি। তার মাথার চুল কোঁকড়ানাে এবং হাত ও পায়ের আঙুলে প্রাকৃতিক পলিশ লাগিয়েছে। কিন্তু আখের গুড়ের মতাে ত্বক দেখে মনে হয় অমসৃণ ও যত্নহীন। তার সদ্য প্রস্ফুটিত স্তন ছেলেদের মতাে, কিন্তু গােপন শক্তিতে পরিপূর্ণ যেন বিস্ফোরিত হওয়ার জন্যে প্রস্তুত।…….

…….তাকে ঘুম থেকে জাগানাের চেষ্টা করতে আমি বিছানার ওপর বসলাম। এখন আমিও নগ্ন, লাল আলাের বিভ্রান্তির মধ্যে আমার চোখ এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, তার শরীরের প্রতিটি অংশ আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। তার ঘামে সিক্ত ঘাড়ের মাঝ বরাবর আমার তর্জনি টেনে নিলাম। ভিতরে ভিতরে সে কেঁপে উঠল এবং বুঝা গেল শিহরণটি তার পুরাে শরীরকে রােমাঞ্চিত করেছে। বীণার একটি তারের মতাে। মুখে গােঙানির মতাে শব্দ তুলে আমার দিকে পাশ ফিরল, তার নিশ্বাস লাগল আমার শরীরে। আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি দিয়ে তার নাকে হালকা চিমটি কাটলাম, একটু ঝাঁকুনি দিয়ে সে মাথা সরিয়ে নিল এবং জেগে উঠার পরিবর্তে আমার দিকে আবার পিঠ ফিরিয়ে দিল। অভাবিত এক উত্তেজনা আমাকে ভর করল এবং আমার হাঁটু দিয়ে তার দুই পা ফাক করতে চেষ্টা করলাম। সে তার সচকিত উরু দিয়ে আমার প্রথম দুটি উদ্যোগ প্রতিহত করল । আমি তার কানে ফিসফিস করে গাইলাম, ‘স্বর্গীয় দূতেরা ডেলগাদিনার শয্যা ঘিরে ধরেছে। তার হাত পা একটু শিথিল হল। উষ্ণ একটি স্রোত আমার শিরায় প্রবাহিত হতে শুরু করেছে এবং আমার শ্লথ, অবসর নেয়া জম্ভ তার দীর্থ নিদ্রা থেকে জেগে উঠেছে। | ‘ডেলাগাদিনা, আমার হৃদয়,’ আমি অনুনয় করলাম কামনার্ত হয়ে। | ডেলাগাদিনার মুখ দিয়ে বিষাদের গােঙানি বের হল। আমার ঊরু থেকে তার | শরীর সরিয়ে, পিঠটা ফিরিয়ে যেন শামুকের মতাে খােলের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিল । ভ্যালেরিয়নের মাত্রা নিশ্চয়ই আমার মতো তার ক্ষেত্রেও অতি কার্যকর। কারণ কিছুই ঘটল না, তার বেলায়ও নয়, আমার বেলায়ও নয়। কিন্তু ওসবের তােয়াক্কা করি না আমি। নিজেকে বললাম, আমাকে যখন এভাবে অপদস্ত হতে | হচ্ছে, এভাবে বিষন্ন থাকতে হচ্ছে এবং নগ্ন জম্ভর মতাে শীতলতা সহ্য করতে হচ্ছে, তখন ওকে আর ঘুম থেকে জাগিয়ে ভালাে কী হবে।……..

…….খুব ভােরে আমার ঘুম ভাঙল। স্মরণ করতে পারছিলাম না যে আমি কোথায় আছি। মেয়েটি তখনাে আগের মতােই ঘুমিয়ে আছে, তার পিঠটা আমার দিকে ফিরাননা। অস্পষ্টভাবে আমার মনে হল যে, অন্ধকারে আমি তার বিছানা থেকে উঠার এবং বাথরুমে পানির কল ছাড়ার শব্দ শুনতে পেয়েছি, কিন্তু এটা স্বপ্নও হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা আমার কাছে অনেকটা নতুন। প্রলুব্ধ করার কৌশল সম্পর্কে আমি অজ্ঞ ছিলাম এবং সবসময় এক রাতের জন্যে আমার কনেদের পছন্দ করতাম ঢালাওভাবে এবং তাদের অন্য কোনাে আকর্ষণের চাইতে বরং তাদের মূল্যের জন্যেই পছন্দ করতাম এবং কোনােরকম ভালােবাসা ছাড়াই আমরা দেহ বিনিময় করতাম। অধিকাংশ সময় জুড়েই আমাদের গায়ে স্বল্প বসন থাকত এবং সময়ের অধিকাংশ কাটাতাম অন্ধকারে। অতএব নিজেদেরকে আমরা আসলে যেমন তার চেয়ে ভালােভাবে কল্পনা করতাম। ওই রাতে আমি কামনার কোনাে তাগিদ অথবা পরিমিতি বােধের বাধা ছাড়াই একটি ঘুমন্ত নারীর দেহ গভীরভাবে কল্পনা করে কল্পনাতীত পরিতৃপ্তি লাভ করেছি।…….

……..বিকেলে প্রাডােমারে প্যালােমার ডি ক্যাস্টো পরিবারের বাড়ির ভুল একটি দরজা খুলে জিমেনা ওরটিজকে দেখার পর আমার বিভ্রান্তি দূর হয়। জিমেনা প্যালােমার পরিবারের সর্বকনিষ্ঠা কন্যা। সংলগ্ন শয়নকক্ষে সে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল নগ্ন হয়ে। উন্মুক্ত পশ্চাৎদেশ ছিল দরজার দিকে। হঠাৎ সে কাঁধ ঘুরিয়ে এমন ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকায় যে আমার পালাবার কোনাে সুযােগ ছিল না। আমাকে ক্ষমা করাে’, কোনােরকমে আমি বলি । আমার হৃদপিণ্ড যেন আমার মুখে উঠে এসেছে। সে হাসল, আমার দিকে ফিরল হরিণীর ভঙ্গিমায় এবং তার পুরাে শরীর আমাকে প্রদর্শন করল। পুরাে কক্ষ যেন আচ্ছন্ন হয়ে গেছে তার নিবিড়তায়। তার নগ্নতা নিরঙ্কুশ ছিল না, শিল্পী ম্যানেটের ‘অলিম্পিয়ার মতাে তার কানের পিছনে কমলা রঙের একটি বিষাক্ত ফুল ছিল, ডান হাতের কজিতে ছিল একটি সােনার চুড়ি এবং ছােটো ছােটো মুক্তায় গাঁথা একটি মালা গলায় ।………

…….আমরা পরস্পরকে যত বেশি জানতে চেষ্টা করছিলাম, সে সময়ের মধ্যে জিমেনা অধিকতর কামাতুর হয় উঠছিল। জুন মাসের উত্তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে সে তার জামা, পেটিকোট কোনাে কিছুই আর গায়ে রাখত না এবং এ পরিস্থিতিতে রাতের অন্ধকারে তার শক্তি যে প্রচণ্ড হয়ে উঠত তা সহজেই কল্পনা করা যায়। বাগদানের দুমাস পর আমাদের বলার মতাে আর কোনাে কথাই অবশিষ্ট ছিল না।……..

…….বাড়ি ফিরে দামিয়ানাকে মেঝে পরিষ্কার করতে দেখলাম, চারটি কক্ষের মধ্যে তখন সে ছিল আমার লিভিং রুমে, এ বয়সে তার ঊরুর যে পরিপূর্ণতা তা আমাকে ঝাকুনি দিয়ে চাঙ্গা করে তুলল। সে নিশ্চয়ই আমার মনের অবস্থা অনুমান করতে পেরেছে, কারণ, স্কার্টের নিচের অংশ টেনে সে ঊরু আবৃত করল।…..

…….ডেলগাদিনার জন্মদিনের রাতে আমি ওকে পুরাে গানটি গেয়ে শােনালাম এবং আমার দম শেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওর শরীরের সর্বত্র চুম্বন করলাম- ওর মেরুদণ্ডের প্রতিটি সন্ধিতে এবং অবসন্ন নিতম্ব পর্যন্ত, শরীরের যে পাশে আঁচিল আছে সেখানে, অফুরন্ত আগ্রহের উৎস হৃদপিণ্ডের পাশে। আমার চুম্বনের সাথে ওর দেহের উত্তাপ বাড়ছিল এবং দেহ থেকে যেন বুননা, অশান্ত সুবাস বের হচ্ছিল। ওর ত্বকের প্রতিটি অংশে নতুন কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে সে সাড়া দিল এবং এক একটি অংশে আমি সুনির্দিষ্ট উত্তাপ অনুভব করছিলাম, অদ্ভুত এক স্বাদ, সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের গােঙানি এবং ওর পুরাে দেহে একটি সুর অনুরণিত হচ্ছিল, স্পর্শ না করা সত্ত্বেও ওর স্তনের বােটা স্ফীত হয়ে উঠল।……….

Leave a Reply