…….বুকের দিকে সােজাসুজি ওইভাবে তাকানাে যায় নাকি কখনও, যখন বুক মানে মেয়েদের বুকের কথা বলা হচ্ছে? যখন বুক মানে বােঝানাে হচ্ছে বর্ণনার অতীত অথচ গােপন সমস্ত প্রেইরি তৃণভূমির কথা, যাদের ঢালের ওপর ভর দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ফলিয়ে গিয়েছে শস্যের অলস দুলুনি এবং পুরুষদের শান্ত বাড়ি ফেরা, তখন চোখ বন্ধ করে ওইরকম ভাবতে ভাল লাগে ঠিকই, কিন্তু চারপাশে ব্যস্ততার টানে ভেসে বেড়ানাে মেয়েদের, মহিলাদের বুকের দিকে সাহস করে কি তাকিয়ে ফেলা যায় তাই বলে? অন্তত সম্যকের সেই সাহস হচ্ছে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে যে এই তেরছা-মিঠে রােদ-এসে-পড়া গালিচাপাতা চওড়া-চৌকো চত্বরটায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের ভাসমান বুকেদের দিকে চোরাগােপ্তা চাউনি দিচ্ছে না, তাও অবশ্য নয়।…….
…..খয়েরি ওভারকোটের দরজা ফাঁক-হয়ে-থাকার দিকে, ক্যারােলের শরীরচাপা পােশাকের দিকে, তার বুকের দিকে। ব্যাপারটা যতক্ষণে বুঝেছে সে, ততক্ষণে ক্যারােল বলছে, “প্রথম দেখাতেই বুকের দিকে তাকাচ্ছ যে? মতলব কী তােমার? যদিও, মিথ্যে বলব না, ভালই লাগে কেউ তাকালে।”…..
……জ্যোৎস্নার রাত, আর তাপ শুষে নেবার ধাক্কায়, ভাপ হজম করতে থাকার চোটে, হলকা গিলে নেবার কারণে, কালাে সেই ট্র্যাপিজের পােশাক ফাটিয়ে উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে খেলা দেখানাে মেয়েটির নিপ্রাণ দুই বুক, যেন কবেকার তৈরি দু’খানা শ্বেতপাথরের চাঁদ। ইটভাটার সেই মানুষ-গেলা চুল্লির মুখ থেকে তখন চামড়া-পােড়া ধোঁয়া বেরােচ্ছে, আর এক ঝটকায় মেয়েটির স্তন পাথরের হয়ে যাওয়ায় সকলে হাততালি দিচ্ছে, যেন কোথাও কোনও পােড়া গন্ধ নেই।….
…….সম্যক মাঝখান থেকে সানগ্লাস খুলে ফেলে নাকে হাতচাপা দিয়েছে, আর সটান তাকিয়ে ফেলেছে মেয়েটির পাথর হয়ে যাওয়া বুক দুটোর দিকে। যে-দুখানা বুক থেকে কাঠ হয়ে যাওয়া দুই উন্মুখ বৃন্ত এবার খসে পড়ছে, যেভাবে খসে পড়ে সিগারেটের মুখের ছাই। চারপাশের হাততালি তার কানে ম্লান হয়ে আসছে, সে কেবল হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওই জোড়া বুকের দিকে।……
…….এগিয়ে গিয়েছে আর কফির কাপ টেবল-এ রেখে তাকে কষে জাপটে জড়িয়ে ধরেছে ক্যারােল। সম্যক কিছু বােঝার আগেই তার বুক ঢাকা পড়ে গিয়েছে ক্যারােলের নরম উষ্ণ সােয়েটার মােড়া বুক দিয়ে, তার পিঠে কাটাকুটি খেলছে ক্যারােলের খুশি-খুশি দুটো হাত, আর তার একদিকের কানে বারবার ঘষা খাচ্ছে ক্যারােলের চুলগুলাে, যখন ক্যারােল ফিসফিস করে তার কানে-কানে বলে উঠছে, “তুমি আমাকে চমকে দিয়েছ?”……..
……..চোখ তুলে আর নামাতে পারলেন না ডক্টর বয়েল, কেননা রােলিকে দেখে আজ একেবারেই অন্যরকম লাগছে। অন্যান্য দিনের মতাে রােলির পােশাকের কোথাও কোনও ধুলাে বা মাটির লেশমাত্র নেই, একটা ভাঁজ নেই তার জামাকাপড়ের কোনও অংশে। কেননা আজ, এই মুহূর্তে, রােলির শরীরে কোনও পােশাক নেই। সম্পূর্ণ সুতােহীন অবস্থায় রােলি স্থিরভাবে দাঁড়ানাে, বিছানার ঠিক অপর প্রান্তে, ডক্টর বয়েলের পায়ের দিকে, তাঁর চোখে সটান তাকিয়ে। কেন রােলির কণ্ঠস্বর আজ অন্যরকম শােনাচ্ছে, এক মুহূর্তে স্পষ্ট হয়ে উঠল ডক্টর বয়েলের কাছে। কিন্তু সেই এক মুহূর্ত কাটতে, পেরােতে, অনেকখানি সময় লাগল যেন তাঁর। | উত্তরে কিছু বলতে পারলেন না তিনি, বরং মুখের কাছে ধরা অভিধান, বা বলা ভাল তাঁর বর্মখানা স্বয়ংক্রিয় ভাবে তাঁর ভারী দুই হাতসহ নেমে এল তাঁর উঠতে আর নামতে থাকা, আসলে হাঁপাতে থাকা বুকের কাছে, যখন তিনি এত-এত দিন পর সােজা, চোখ টানটান করে তাকালেন রােলির শরীরের দিকে, যাকে তখন একটু-একটু করে সেঁকছে কাচের ওপার থেকে অস্ত-যেতে-থাকা সূর্য। সেইসঙ্গে অবশ্য বেডসাইড টেবল-এ জ্বেলে রাখা লম্বা, পুরু আর সাদাটে মােমের শিখাও নিজের প্রতিফলন দপদপ করে দোলাচ্ছে রােলির গলা আর ঘাড়ের কাছটায়। দম, শিহরনে, বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে ডক্টর বয়েলের, কেননা তিনি এই দৃশ্যের আকস্মিকতায় যা প্রথম বােধ করছেন, তা হল হাঁপ।
“অনেকদিন পর দেখছ আমায়, তাই না? কেমন দেখাচ্ছে, সত্যি করে বলাে তাে?”
নিজের খুলে রাখা চুলে একবার খুব পরিকল্পিত ইতস্তত আঙুল চালিয়ে দিয়ে হিসহিসে গলায় বলে উঠল রােলি, যেমনভাবে সে কখনও কথা বলে না। তার কণ্ঠস্বর, পাতলা, নিচু আর হিলহিল করে দুলতে থাকা সরু কণ্ঠস্বর কিছুতেই তার নিজের বলে বিশ্বাস হত না, যদি-না ডক্টর বয়েল চোখের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বউকে কথাগুলাে বলতে শুনতেন, বা বলা ভাল, দেখতেন। রােলি, বিছানার ওই প্রান্তে দাঁড়িয়ে অল্প-অল্প দুলছে, নাকি তাঁর নিজের মাথাই একটু-একটু এপাশ-ওপাশ করতে শুরু করেছে, ঠিক ঠাহর হচ্ছে না ডক্টর বয়েলের। কিন্তু রােলিকে তিনি নিজের সামনে, খুব আস্তে-আস্তে, মাদক মাখানাে ধানের শিষের মতােই দুলতে দেখছেন, যখন দুই বর্তুল আর পরিপূর্ণ অ্যালার্ম ঘড়ির মতােই এদিক থেকে ওদিক, ওদিক থেকে এদিক দোল খাচ্ছে রােলির ফরসা ও উন্মুখ দুই স্তন। এই দুই যমজ বােন, পিঠোপিঠি গায়ে গা লাগিয়ে টানটান হয়ে থাকা এই দুই স্তনকে শেষ কবে দেখেছেন, মনে করতে পারলেন না ডক্টর বয়েল, কিন্তু এ-কথা বুঝলেন, তাঁর মনে করার শক্তি, হাত নাড়ানাের শক্তি, কথা বলবার শক্তি, সব একসঙ্গে দুলতে-দুলতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, ওই দুই দোলায়মান সম্মােহনপুঞ্জের ইশারায়।
“তাকাও, এদিকে তাকাও, বলাে, কী দেখছ তুমি…”
রােলির এই কণ্ঠস্বরের বিনিময়ে কোনও রকমে, শরীর ও মগজের সমস্ত শক্তি ক্ষয় করে ডক্টর বয়েল নিজের ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করছেন রােলির দুই বাদামি বৃন্তে, অ্যালার্ম ঘড়ির চূড়ায় অবস্থিত পিনের দিকে, যা টিপে দিলে অ্যালার্ম ঘড়ির অস্থিরতা বন্ধ হয়ে যায় মুহূর্তে। কতদিন, কত-কত দিন রােলির দুই বৃন্তে ঠোট ঠেকাননি ডক্টর বয়েল? গুনতে চাইছেন তিনি, আর বুঝতে পারছেন, ক্ষোভে ফেটে পড়তে চাওয়া দুই স্তন তাদের হিংস্র দুই বৃন্ত নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাঁর মুখের দিকে, এতদিনকার প্রতিশােধ উসুল করে নিতে।
“এসাে, আমার কাছে এসাে, আমাকে নাও, পুরােপুরি নাও আজ আবার…”
বলতে-বলতে বিছানায় উঠে আসছে রােলি, হামাগুড়ি দিয়ে, দুই। হাঁটু আর হাতের দুই চেটোর উপর ভর দিয়ে, সামনের দিকে ঝুঁকে, হরিণের অসতর্ক মুহুর্তে হাজির হওয়া চিতার মতাে আস্তে-আস্তে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে সে। আকাশ থেকে গহ্বরের দিকে মুখ নামিয়ে পাশাপাশি দুলতে-দুলতে এগিয়ে আসছে দু’জন অ্যালার্ম ঘড়ি, যাদের বৃন্তদ্বয়ে জমাট বেঁধে অপেক্ষা করছে সময়, কারও শুষে নেবার জন্য।……….