বাতিঘর – বুদ্ধদেব গুহ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

………..এখনও কেন তাকে ভুলতে পারি না, এখনও একা থাকলেই কেন তার কথা মনে হয় ? রাতের অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে কেন তার হাতের স্পর্শ, তার নরম ঋজু থরােথরাে বুকের ছোঁয়া, তার ইউক্যালিপটাস গাছের মতাে পেলব শরীরের গন্ধ পাই কল্পনায় ? ………

……….মেয়েটি কোনও কথা বলল না। হঠাৎ পিছন ফিরে দু’হাতে বালি খুঁড়ে মাছের ঘরের বেড়ার। পাশে জড়াে করতে লাগল। দেখতে দেখতে মেয়েটি একটি বালির তাকিয়া বানিয়ে ফেলল, তারপরই তাতে আধশােয়া ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে বসে কোনও লজ্জা বা ভান বা কাব্য না করে একটানে নিজের কাপড়টি খুলে পাশে বালিতে ফেলে দিল। | জয় মেয়েটার গা থেকে, চুল থেকে, বুক থেকে, উরু থেকে সমুদ্রের গন্ধ পাচ্ছিল। মেয়েটার নিশ্বাসে সার্ডিনের গন্ধ ছিল। মেয়েটা দু’পাশে দুটি হাত বালির উপর ছড়িয়ে দিয়ে পা দুটি সামনে মেলে চুপ করে আধ-শােয়া ভঙ্গিতে বসে রইল। …… ওকে দেখতে লাগল। তারার আলােয় জয় মেয়েটাকে দেখতে লাগল। বাতিঘরের আলােটা এক ঝলক ঘুরে গেল। এবারেও মেয়েটির মুখ ভাল করে দেখা গেল না। মিনিটখানেক পরে মেয়েটি ভাঙা-ভাঙা হিন্দিতে বলল, বাবু, আমার দেরি করে দিয়াে না, আমি যাত্রা দেখতে যাব।…..

…….আলােটা আবার একবার ঘুরে গেল। হঠাৎ জয়ের মনে হল মেয়েটার মুখের সঙ্গে সীমার মুখের আদল ভীষণ মেলে। মেয়েটা বেশ দেখতে। জয় চুপ করে বসে রইল। …মেয়েট! ওর পf দুটি গুটিয়ে নিল বলল, কি বাবু আমাকে পছন্দ হল না.

……….আলােটা সরে যেতেই জয় আবার বলল, তুমি এসব করাে কেন ? উত্তরে মেয়েটা তবুও কথা বলল না। মেয়েটা হঠাৎ জয়ের ডান হাতটা টেনে নিয়ে ওর খােলা পেটের উপর রাখল। জয়ের গা শিরশির করে উঠল। তবু জয় হাতটা সরিয়ে নিল না, জয়ের হাতের আঙুলগুলাে ওর পেটে ছড়ানো রইল। মেয়েটার পেটটা মরা ব্যাঙের মতাে ঠাণ্ডা, একটুও মেদ নেই পেটে। জয়ের তর্জনী মেয়েটার নাভি ছুঁয়ে রইল।

মেয়েটা খুব আস্তে আস্তে ওর নিজের হাতটা ওর পেটে রাখা জয়ের হাতের উপর রেখে বলল, বাবু, এসব শুধু পেটের জন্যে করি ।…….

………..তাহলে এখনও কি মানুষ যাকে মন থেকে ভাল না বাসে, তাকে শরীরের ভালবাসা দিতে কার্পণ্য করে ? তার কি ইচ্ছে করে না? কোনও শরীরের উপরে অন্য কাউকে নিবেদিত ভালবাসা কল্পনায় আরােপ করে নিয়ে কি সে শরীরকে সােহাগ করা যায় না ?

কে জানে, হয়তাে যায়—হয়তাে যায় না। কিন্তু জয় এটুকু জানে যে, ওই পরিবেশে ওই মাছে ঘরের পাশে সমুদ্রের হাওয়ায় এবং ঝাউবনের ফিসফিসানিতে কোনওদিন তার সীমা যদি অমনি করে তাকে ডাকত, তবে জয় তাকে চুমােয় চুমােয় ভরে দিত। তার চোখের পাতায়, চিবুকে, তার নুপুরের মতাে নিবিড় নাভিতে চুমু খেত। তার সিল্কের শাড়ির মতাে মসৃণ উরুতে মাথা রেখে শুয়ে থাকত।

কতদিন-কতদিন স্বপ্নে খেলেছে জয়। কতদিন কত খেলা খেলেছে সীমার সঙ্গে-সীমার কবুতরী বুকে হাত রেখে স্বপ্নের মধ্যে ঘুমিয়েছে, সীমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কতদিন স্বপ্ন ভেঙে জেগে উঠেছে। কিন্তু লছমামা সীমা নয় । সীমা-সীমা ।……..

Leave a Reply