ফুলবউ – আবুল বাশার

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

………নবীনা এক বুকের দুধ বাচ্চাকে পান করতে দিয়ে অন্যমনস্ক বসেছিল। বাচ্চাটা সহসা মৃদু দংশন করতেই ‘আহ করে মুখে শব্দ করে নবীনা বাচ্চাকে টেনে বুক থেকে ছাড়িয়ে ফেলে দুম দুম করে পিঠে গােটাকতক কিল বসিয়ে দিয়ে বাচ্চার গাল দুটি আঙুলে খামচে ধরুল শুধু মুখে চাপা ক্রুদ্ধ আর্তনাদ, শয়তানটা খালি বদমায়েসী করে ।………

……….মবিন নবীনার শরীরে রাজিয়াকে সােহাগ করতে থাকে। রাজিয়ার বুকে মুখ ডুবিয়ে দেয়। নবীনার দেহ অন্ধকারে কোথায় ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকে। নবীনা বুঝতে পারে না । ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে গড়িয়ে গাল বেয়ে নামতে থাকে। অন্ধকার রাত্রির পেটে হাওয়া দাপিয়ে বেড়ায়।……

………আশ্চর্য হয় মিল্লাত নেই। একটু বাদে মান-স্নিগ্ধ রূপসী রাজিয়া ঢুকে এসে চমকে ওঠে। তােয়ালে মাথার চুল জড়াননা। কেবল শাড়িতে গা-ঢাকা। মবিনকে দেখে শুধু বিস্ময়-বিদ্ধ ‘আপনি’ উচ্চারণ করে চুলে জড়ানাে তােয়ালে ছাড়িয়ে নেয়। মবিন বলে—মিল কোথায় ?

রাজিয়া তােয়ালেয় চুল মুছতে মুছতে জবাব দেয়—আমি ওকে তাড়িয়ে দিয়েছি । চলে গেছে। কথাটা বলে ফেলে রাজিয়া প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করবার জন্য বাঁকা করে মবিনের চোখে চায়। লক্ষ করে মবিনের চোখ রাজিয়ার দেহের কাপড়ে ঢাকা আচ্ছন্নতায় অনতি লুকাইত রেখাগুলি খুঁজছে । রাজিয়া সতর্ক হয়ে গায়ের কাপড় টেনে নেয়। টেবিলের দিকে দূরত্ব রচনার জন্য সরে যায়।………..

………..ভেজা কাপড় জামা ছাড়তে ছাড়তে দরজার কাছে এসে বাইরে চেয়ে চেয়ে দেখে নেয় মূর্তিটা মানুষ কিনা ! চোখের ভুল কিনা! হঠাৎ সেই কালাে মূর্তি ঘরের আলােয় চলে আসে। দরজা বন্ধ করে দেয় দ্রুত হাতে। খালি গা রাজিয়াকে আচমকা কোলে পাঁজা করে তুলে এনে খাটে ছুঁড়ে ফেলে কাঁপিয়ে পড়ে। ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। বাইরে প্রবল গর্জনে বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘ ডাকছে। বাতাসে শইি শাহ শব্দ পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। রাজিয়া চোখ বুজে দেখতে পাচ্ছে গনগনে আঁচ। ফুটন্ত চায়ের কেলি। ভয়ে আর্তনাদ করে উঠল। সেই হাহাকার গর্জন মুখর রাত্রির অন্ধকার আকাশে ছড়িয়ে গিয়ে কোথায় মিলিয়ে গেল। তখন শুনতে পায় রাজিয়া-খালাস নাই। দিব না মুই । না রে নাঃ! দিব। । সেই রাতে যা দিলি নে মালকিন, সেই ভুখ নিয়ে বেঁচে আছি। মরিনি ।………

………..মেয়েটি কালাে, স্বাস্থ্য ভাল । সাদিক মেয়েটিকে টিউশানী পড়াত। একদিন দুপুরবেলা পড়ার ঘরে দুজন সঙ্গমবদ্ধ হয়। বাড়ির লােক দেখে ফেলে। মেয়েটির বাড়ি সাদিক জায়গীর থাকত। ফলে গাঁয়ের লোেক নিকে পড়িয়ে দিয়েছে। সেই কলঙ্কিত প্রেমিক বাহারপুর ছেড়ে সীতাহাটি আসবে কোন্ মুখে !………

……….স্ট্যান্ডে এসে বাস ধরল । বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগল দু চারটি। মবিন তখন যৌন-তাড়নায় আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। হঠাৎ মনে হল, রাজিয়া নবীনার চেয়ে একা। মবিন বাস থেকে নেমে সহসা প্রেতাত্মায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। জোর বৃষ্টি শুরু হয় হয় । হাওয়া সবেগে ছুটে আসে। নবীনার অপমান রাজিয়ায় যৌন-প্রহারে চালিত করে মবিন। কারণ নাকি সত্যিকার পুরুষ কোন ধর্মের ভয়েই নারীর অপমান হজম করে না। শােধ নেয় । মবিন পাগল হয়ে যায় । মবিন বলে, হায় নবীনা, তুমি এত কষ্ট দিলে কেন ? রাজিয়ার শরীরে মবিন নবীনাকে ধর্ষণ করতে থাকে।…………

………..নবীনার স্পষ্ট মনে পড়ে মবিনকে প্রথম যৌন স্বাদ দিয়েছিল যে নারী, স্ত্রী-সহবাসের গােপন অজানা যৌন বিদ্যা শিখিয়েছিল যে নারী, তার নাম নবীনা। স্ত্রী-সহবাস পুরুষের এক জৈব অভ্যাস। সেই অভ্যাসেরও দাসত্ব থাকে। নেশা আর মাদকতা থাকে। সেই নেশা আর মাদকতার পথ ধরে ভালবাসার দুয়ারে কি পৌছনাে যায় ? নবীনা মনে করেছিল, যায় বুঝি ! দেহ ছাড়া ভালবাসা কোথায়ই বা থাকে ? যৌনতা ছাড়া ভালবাসা দাঁড়াবে কোথায় ? ‘ভালবাসি’ একথা স্পষ্ট করে বলতে গেলে দেহদানের চেয়ে জোরালাে ভাষা আর কী হয় ? নবীনা মবিনকে সেই কথা বলেছিল প্রথম সহবাসের সময়, বলেছিল নারীর এই দেহকে চেনালাম এর স্বাদ কি বােঝালাম, তােমাকে, সেই কৃতজ্ঞতার বশে থেকো, সেই রহস্য ভেদ করার, দেহের তাবৎ কক্ষ কক্ষান্তর পরিচয় করানোের বিস্ময়-মুগ্ধ অভিজ্ঞতা দিয়েছি, এর নাম কি ভালবাসা নয় ?

নবীনা তার এই দেহচারিতার অনুভূতিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল। গূঢ় বিচারে তার গােপন দেহ-মিলনে অন্যায়বােধ ছিল বটে, কিন্তু সেই অন্যায় করেছিল শুধু কোন যৌনতা নয়, সে ভেবেছিল, এইসব আবেশ ভালবাসারই শক্তি, একটা স্বরূপও বটে। নবীনা কি ভুল করেছিল ? মবিন একবার নবীনার দেহ যখন সম্ভোগ করার কৃতজ্ঞতা লাভ করল, মবিনের ধর্মবিশ্বাসী দেহ আরাে বেশি কৃতজ্ঞ হওয়ার আবেদন পেশ করে চলল দিনের পর দিন। নবীনাও আশ্চর্য হচ্ছিল, তাকেও কেমন নেশায় ঘিরে ফেলেছে। সে স্থির করতে পারছিল না, এটা নেশা নাকি ভালবাসা ? সাদিকের সাথে দেহমিলনে সেই নেশা কখনও ছিল না। নবীনার মনে হয়েছিল, যে মিলনে দেহ নেশাতুর হয় না, তথায় গােলেমান, (গােলেমান-বেহেস্তী নারী বেহেস্তে গিয়ে স্বামী ছাড়াও একজন প্রবল যৌবন-দৃপ্ত পুরুষ লাভ করবে। তিনিই গােলেমান। পুরুষ পারে ৭০ জন হুরি । অপ্সরী।) নেই, তথায় ভালবাসা নেই। দেহ বারবার তাকে বুঝিয়েছিল, ভালবাসা নেই। আছে মবিনের মিলনে। নেশায়। এইভাবে গােপন অন্যায় তরঙ্গে দুটি দেহ ভেসে গেছে। তারপর ? সাদিক স্কুল চলে গেলে দিনের বেলা নির্জন দুপুরে নবীনা নিজের ঘরে হাতুড়ে ডাক্তার মবিনের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভয় করত। নেশায় মিশে থাকত ভয়। সেই নেশা আরাে তীব্র । তা কিছুতেই রােধ করা যেত না। নবীনা ভাবে, মবিন এই গােপন অভিজ্ঞতায় কখনও কি কৃতজ্ঞ ছিল? মবিন কি এই অভিজ্ঞতার দানকে ভালবাসা মনে করেছিল ?………..

Leave a Reply