অনুবাদঃ কবীর চৌধুরী
………অবশেষে ডাক্তার জুভেনাল উরবিনাে রােগীকে উঠে বসতে বললেন এবং গভীর যত্নের সঙ্গে তার রাতকামিজটা কোমর পর্যন্ত টেনে নামিয়ে দিলেন। শয়নকক্ষের অন্ধকারের মধ্যে শিশুর মতাে স্তনাগ্রসহ তার উন্নত বিশুদ্ধ স্তনযুগল বারুদের চমকানির মতাে ঝলসে উঠলাে, তারপরই ও দ্রুত নিজের দু’বাহু জড়াে করে উপরে তুলে তার বুক ঢেকে ফেললাে, কিন্তু অবিচলিত ডাক্তার ওর দিকে না তাকিয়ে ওর বাহু দুটি খুলে দিলেন, তারপর সরাসরি ওর গায়ে কান লাগিয়ে, প্রথমে বুকে ও পরে পিঠে, ওকে পরীক্ষা করলেন।…….
…………দুই বােন সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করলাে। প্রথম দুপুর থেকেই তারা একসঙ্গে স্নান করতে শুরু করে, নগ্নদেহে, চৌবাচ্চা থেকে জল নিয়ে একে অপরের হাত-পা ধুইয়ে দেয়। তারা পরস্পরের গায়ে সাবান মাখালাে, পরস্পরের উকুন দূর করলাে, তাদের নিতম্ব ও শান্ত স্তনের তুলনা করলাে, অন্যের দর্পণে নিজেকে দেখলাে, যাচাই করতে চেষ্টা করলাে শেষ বার একে অন্যকে নগ্নাবস্থায় দেখার পর নিষ্ঠুর কাল এই সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে কীরকম আচরণ করেছে। হিল্ডাব্রান্ডা ছিল বড়সড়াে, নিরেট, ত্বকের রঙ সােনালি, কিন্তু গায়ের লােম বর্ণসঙ্করের মতাে, ছােট, কোঁকড়ানাে, ইস্পাতের উলের মতাে। অন্য দিকে, ফারমিনা ডাজার নগ্নতা ছিল সাদাটে, দীর্ঘ রেখায় বিন্যস্ত, তৃক নির্মল, চুল সােজা।………
…….তিনি তাঁর নিজের জুতার ফিতা খুলতে আরম্ভ করলেন। হিল্ডাব্রান্ডার পক্ষে কাজটা সহজ হল না, কারণ শক্ত করে আটকানাে বক্ষবন্ধনীর জন্য তার নিচু হতে অসুবিধা হচ্ছিল।……
……….তখন হঠাৎ পাশের একটা ঘরের দরজা খুলে গেল আর বাজপাখির থাবার মতাে একটা হাত চকিতে বেরিয়ে এসে তার জামা খামচে ধরে তাকে ক্যাবিনের ভেতরে টেনে নিলাে। অন্ধকারের মধ্যে সে একটি নগ্ন রমণীকে আবছাভাবে দেখতে পেল, তার কালবিহীন শরীর গরম ঘামে ভিজে গেছে, নিঃশ্বাস ভারি, সে তাকে তার শয্যায় চিৎ করে ঠেসে ধরলাে, তার বেল্ট খুলে নিলাে, প্যান্টের বােতামগুলি খুলে দিল, তারপর নিজেকে তার উপরে বিদ্ধ করলাে, যেন একটা ঘােড়ার পিঠে চড়ছে, তারপর কোনাে রকম গৌরব ছাড়াই তার কুমারত্ব হরণ করে নিলাে। কামনার এক অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দুজনই এক অতল গহ্বরের শূন্যতার ভেতর ডুবে গেল, যেখান থেকে ভেসে এলাে চিংড়ি মাছে পূর্ণ লবণাক্ত এক জলাভূমির গন্ধ । তারপর ও তার ওপর এক মুহূর্ত শুয়ে থাকলাে, হাঁপালাে, আর তারপর অন্ধকারের মধ্যে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেল।
“এবার যাও’, সে বললাে, সব কিছু ভুলে যাও। এ ব্যাপারটা ঘটেই নি।…….
………রােসান্বার কাছে জাহাজের ক্যাবিনে তার কৌমার্য খােয়াবার পর ফ্লোরেন্টিনাে আর কোন রমণীর সঙ্গ লাভ করে নি, তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নিয়েছিল যে বিধবা নাজারেত তার বিছানায় ঘুমাবে এবং সে নিজে শয্যা পাতবে তার দোলনায় । কিন্তু মহিলা তার হয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ফ্লোরেন্টিনাে আরিজার বিছানার এক কিনারায় বসলেন, ফ্লোরেন্টিনাে তখন শুয়েছিল, সে কি করবে বুঝতে পারছিলাে না, আর তখন মহিলা তিন বছর আগে প্রয়াত তার স্বামীর জন্য নিজের গভীর শােকের কথা বলতে শুরু করলেন এবং কথা বলবার ফাকে ফাকে তার পােশাকে বৈধব্যের নিদর্শনগুলি একে একে খুলে ফেলতে লাগলেন। সব তিনি এদিকে-ও দিকে ছুড়ে ফেললেন, তাঁর বিয়ের আংটিও আর তার আঙ্গুলে রইলাে না। কাচবসানাে এম্বয়ডারি করা তাঁর ট্যাফেটার ব্লাউজটি খুলে ঘরের এক কোণে রাখা ইজিচেয়ারের উপর তিনি সেটা ছুড়ে দিলেন, এক টানে তিনি তার কুঁচিদেয়া লম্বা স্কার্টটি খুলে ফেললেন, পিঠের উপর দিয়ে তাঁর বডিস ছুড়ে দিলেন বিছানার অন্য পাশে, তিনি খুলে ফেললেন তাঁর সাটিন গার্টারের বেল্ট আর কালাে মােজা, সব তিনি ছুড়ে ফেললেন ঘরের মেঝের উপর, তার শােকের শেষ নিদর্শনগুলিতে ঘরের মেঝে অবকীর্ণ হয়ে গেল। আর এই সব কিছু তিনি করলেন আনন্দের সঙ্গে, চমক্কার হিসেব করা বিরতি দিয়ে। ওদিকে আক্রমণকারী সেনাদলের কামানের গােলায় শহরের ভিত কেঁপে উঠলেও, মনে হল, ওই গােলাধ্বনি যেন রমণীর প্রতিটি ভঙ্গিকে অভিবাদন জানাচ্ছে। ফ্লোরেন্টিনাে আরিজা তার ব্রা খুলতে তাকে সাহায্য করতে যাচ্ছিল কিন্তু তিনি তার আগেই দ্রুত নিপুণ হাতে কাজটা সমাধা করে ফেললেন। পাঁচ বছরের বিবাহিত আনুগত্যের সময় প্রেমের প্রতিটি পর্বে তিনি স্বনির্ভর হতে শিখেছিলেন, এমনকি প্রাথমিক পর্বেও কারাে কাছ থেকে তার কোন সাহায্য নিতে হয় নি। এবার সাঁতারুর নিপুণ ভঙ্গিতে তিনি এক ঝটকায় তার পা গলিয়ে তাঁর লেসের প্যান্টি মাটিতে ফেলে দিলেন। তিনি এখন সম্পূর্ণ নগ্ন ।
আঠাশ বছর বয়স তাঁর, তিন বার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন কিন্তু তার নগ্ন দেহে এখনাে বিরাজ করছে এক অনূঢ়া মেয়ের উন্মাতাল উত্তেজনা। মাত্র কয়েকটি শােকার্ত কাপড় জামা এই উদ্দাম ঘােটকীর গােপন যৌনতাড়না কিভাবে লুকিয়ে রেখেছিল তা ফ্লোরন্টিনাে আরিজা কোন দিন বুঝতে পারে নি। নিজের উত্তপ্ত কামনায় প্রায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তিনি আপন হতে ফ্লোরেন্টিনাের কাপড় খুলে দিলেন, যে-কাজটি তার স্বামীর ক্ষেত্রে কোন দিন করতে পারেন নি, কারণ তাহলে তার স্বামী ভাবতাে তিনি বিকৃত রুচির, পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মেয়ে মানুষ।
ওই রাতেই তিনি বৈধব্যের সব নিদর্শন পরিত্যাগ করেন, চিরকালের জন্য। তিনি কোন মধ্যবর্তী অবস্থা অতিক্রম করলেন না, ছােট ছােট ধূসর ফুল বসানাে ব্লাউজ গায়ে দিলেন না। তিনি তার জীবনকে পূর্ণ করে তুললেন প্রেমসঙ্গীত আর বর্ণাঢ্য টিয়াপাখি ও ঝুঁটিদার প্রজাপতির ছবি আঁকা সাজপােশাক দ্বারা, আর যে কেউ প্রার্থনা করলেই তিনি তার সঙ্গে তার দেহের আনন্দ দ্বিধাহীন চিত্তে ভাগ করে নিতে লাগলেন।……
…..মাঝে মাঝে তিনি পূর্ব নির্ধারিত সময় ও স্থানে ফ্লোরেন্টিনাে আরিজার সঙ্গে মিলিত হতেন। সব চাইতে ব্যস্ত থাকার সময়েও তিনি তা থেকে বিরত থাকতেন না, আর এই মিলনের পেছনে ভালােবাসা দেবার বা পাবার কোনাে ভান ছিল না, যদিও তার মধ্যে সর্বদা ভালবাসার মতােই অথচ ভালােবাসার সমস্যামুক্ত একটা কিছু পাবার আশা সর্বদাই বিরাজ করতে। কখনাে কখনাে ফ্লোরেন্টিনাে আরিজা তার বাড়ি যেতাে, তখন তারা সমুদ্র-চত্বরে বসতাে, সমুদ্রের লবণাক্ত হাওয়া আর ফেনাপুঞ্জে সিক্ত হত, আর দিগন্তের কোলে সমগ্র পৃথিবীর জন্য জেগে উঠতে দেখতে রক্তিম প্রভাতী সূর্যকে। তার সকল অধ্যবসায় নিয়ে ফ্লোরেন্টিনাে আরিজা অস্থায়ী হােটেলের ঘুলগুলি দিয়ে দেখা কমাকলার বিবিধ প্রক্রিয়া তাকে শেখাবার চেষ্টা করে, লােটারিও থুগুটের লাম্পট্য বিষয়ক তত্ত্বাবলী তাকে ব্যাখ্যা করে শােনায় কিন্তু এসব কোনাে কাজে এলাে না। আসলে বিধবা নাজারে নিঃশঙ্ক শিক্ষানবিস হলেও পরিচালিত যৌনকর্মের ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিভা ছিল না। বিছানার মধ্যে যে একটা স্নিগ্ধ মাধুর্য আছে তা তিনি কখনাে উপলব্ধি করেন নি, এক মুহূর্তের জন্যও তিনি কোন উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন নি, আর তার যৌন উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছে যেতাে অসময়ে, শয্যাসঙ্গিনী হিসাবে তার মধ্যে কোনাে অনুপ্রেরণার বিদ্যুঝলক ছিল না। বহুকাল যাবৎ ফ্লোরেন্টিনাে ভাবতাে সেই বুঝি তার একমাত্র প্রেমিক, তিনিও তার ওই বিশ্বাসে সমর্থন যুগিয়ে যেতেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একদিন ঘুমের মধ্যে তাঁর অস্ফুট উচ্চারণ ফ্লোরেন্টিনাের ভুল ভাঙ্গিয়ে দিল। একটু একটু করে সে তার কথাগুলি জোড়া দিয়ে তাঁর প্রেমযাত্রার একটা মানচিত্র এঁকে ফেলে এবং তখন সে তার গােপন জীবনে অগণিত দ্বীপের মধ্য দিয়ে তার নৌযান চালিয়ে নেয়। এই ভাবে সে অবহিত হয় যে তিনি তাকে বিয়ে করতে চান না, কিন্তু তিনি অনুভব করেন যে তার জীবন ফ্লোরেন্টিনাের জীবনের সঙ্গে যুক্ত, আর এই দুর্নীতির সাগরে তাঁকে নিক্ষেপ করার জন্য তিনি তার কাছে অপরিসীম কৃতজ্ঞ। তিনি তাকে লক্ষ্য করে প্রায়ই বলতেন, ‘আমি তােমাকে ভীষণ ভীষণ ভালােবাসি, কারণ তুমিই আমাকে বারাঙ্গনা বানিয়েছে।’…….
………আর তার জ্ঞাতি-বােনদের অতি স্বাভাবিক ভাবে আলােচনা করতে শুনলাে পরিবারের বিভিন্ন দম্পতিবর্গের যৌন জীবন সম্পর্কে, কারা এখনাে তাদের মিলন অব্যাহত রেখেছে, কারা তা বন্ধ করে দিলেও এখনাে একসঙ্গে বাস করছে। এই সময়েই সে একক নিঃসঙ্গ ভালােবাসায় প্রথম দীক্ষা লাভ করে, যদিও তার সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে এটা তার প্রথম থেকেই জানা ছিল, সে বিছানায়, আধডজন বােন একই ঘরে শুয়ে আছে, আর সে তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে পড়ে আছে পাছে অন্যরা ব্যাপারটা টের পেয়ে যায়, আর তার পর আগ্রহ ও দুশ্চিন্তা নিয়ে সে ওই অনুভূতির স্বাদ গ্রহণ করে বাথরুমের মেঝেতে এলিয়ে পড়ে থেকে, চুল খােলা, ঠোটের দু’ফাকে খচ্চর চালকদের সিগারেট। কিন্তু সে সর্বদাই এ কাজটা করার সময় তার বিকে কর্তৃক দংশিত হত, একমাত্র বিয়ের পরই সে তা থেকে মুক্ত হয়। ফারমিনা ডাজা সব সময় একান্ত গােপনীয়তার সঙ্গে ওটা করতাে, যদিও তার কাজিনরা দিনে কার কতােবার যৌন উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছিল শুধু যে তাই আলােচনা করতাে তাই-নয়, তার আকার ও প্রকৃতি নিয়েও গল্প করতাে। কিন্তু ওই সব প্রথম আনুষ্ঠানিকতার জাদুকরি আকর্ষণ সত্ত্বেও কুমারিত্ব বিসর্জন দানের ব্যাপারটা একটা রক্তাক্ত বলিদানের মতােই তার কাছে সর্বদা মনে হয়েছে।……….
………অন্ধকারের মধ্যে কথা বলতে বলতে তিনি ওর ঘাড়ের পেছনে তার আঙ্গুলের ডগা দিয়ে আলতাে করে চাপ দিলেন, ওর বাহুর সিল্কের মতাে নরম ললামের ওপর দিয়ে কোমলভাবে হাত বুলিয়ে দিলেন, ওর ছলনাময় পেটের ওপর নিজের হাত রাখলেন এবং যখন দেখলেন যে ওর টানটান অবস্থা কেটে গেছে তখন তিনি ওর নৈশাবাশটা টেনে খুলে দেবার প্রথম প্রয়াস নিলেন, কিন্তু ও তার নিজস্ব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাকে নিরস্ত করে বললাে, এটা আমি নিজেই করতে পারবাে, বলেই সে তার কাপড় খুলে ফেললাে। কিন্তু তারপর সে এমন নিথর নিশ্চল হয়ে পড়ে রইলাে যে অন্ধকারের মধ্যে ওর শরীর চকচক করে না উঠলে ডাক্তার নিশ্চিত ভাবে মনে করতেন যে ও আর এখানে নেই।
একটু পরে তিনি আবার ওর হাত নিজের হাতে তুলে নিলেন। এবার ওর হাত উষ্ণ, শিথিল-কোমল, যদিও তখনাে ভেজা-ভেজা, যেন শিশিরের ফোটায় স্নাত । দুজনেই নির্বাক, অনড়, ডাক্তার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের সুযােগ খুঁজছেন, ফারমিনাও ওই পদক্ষেপটি কি রূপ নিয়ে আসবে তার জন্য অপেক্ষমান, এদিকে উভয়ের নিঃশ্বাস ভারি ও তীব্র হয়ে উঠতে লাগলাে আর অন্ধকার হতে লাগলাে প্রসারিত। কোন রকম সাবধান না করে দিয়েই ডাক্তার হঠাৎ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে শূন্যে ঝাঁপ দিলেন, তিনি নিজের জিহ্বা দিয়ে তার হাতের আঙ্গুল ভিজিয়ে নিয়ে আচমকা ওর স্তনাগ্র ঘষে দিলেন, আর ওর মধ্যে তখন একটা মর্মান্তিক বিস্ফোরণ ঘটে গেল, যেন কেউ তার একটা রক্তাক্ত শিরার ওপর হাত রেখেছে। অন্ধকারের জন্য ও খুশি হল, নইলে ওর মুখে আগুনের মতাে লজ্জার রক্তিমাভা তার চোখে ধরা পড়তাে, ওই লজ্জা তার করােটি পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছে। ডাক্তার প্রশান্ত গলায় বললেন, “চিন্তা কোরাে না, ভুলে যেও না যে এর সঙ্গে আমার ইতিপূর্বেই পরিচয় হয়েছে।’ সে বললাে, “সে কথা আমার খুব ভালাে মনে আছে, এবং তার জন্য আমি এখনাে রেগে আছি।’
এবার ডাক্তার বুঝলেন যে তিনি সাফল্যের সঙ্গে উত্তমাশা অন্তরীপ পেরিয়ে এসেছেন। আবার তিনি ওর বড়সড়াে কোমল হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে তাকে ছােটখাটো চুমােয় চুমােয় ভরিয়ে দিলেন, প্রথমে শক্ত করতল, তারপর দীর্ঘ সূক্ষ্মদর্শী আঙ্গুল, স্বচ্ছ নখ, আর তারপর তার ঘামে ভেজা করতলে নিয়তির রেখাগুলি । ফারমিনা বুঝতেই পারলাে না কেমন করে ওর হাত তার বুকের ওপর একটা শক্ত জায়গায় গিয়ে পড়লাে, ওটা কি সে বুঝতে পারলাে না। ডাক্তার বললেন, “ওটা একটা অস্থি।’ সে তার বুকের লােমগুলির ওপর কোমল ভাবে তার হাত বুলালাে, একটা একটা করে, তারপর সবগুলি তার হাতের মুঠোয় ধরে সজোরে টান দিলাে, একেবারে গােড়া থেকে তাদের উপড়ে আনতে চাইলাে। ডাক্তার বললেন, “আরাে জোরে।’ ও চেষ্টা করলাে, শেষে বুঝলাে যে ডাক্তারকে সে কোন ব্যথা দিতে পারছে না, আর তখন তার হাত অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া ডাক্তারের একটা হাত খুঁজে নিল । কিন্তু ডাক্তার এবার ওকে আঙ্গুল আঙ্গুলে জড়াতে না দিয়ে ওর কজি চেপে ধরে ওর হাতকে নিজের দেহের ওপর দিয়ে অদৃশ্য কিন্তু সুপরিচালিত এক শক্তি দ্বারা টেনে নিয়ে চললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ও একটা নগ্ন জন্তুর ঘন তীব্র নিঃশ্বাস অনুভব করলাে, তার কোন দৈহিক আকর নেই, কিন্তু জিনিসটা উদগ্রীব ও ঋজু। এরপর যা হল ডাক্তার তা কল্পনা করেন নি, সেও করে নি, ডাক্তার যেখানে ওর হাত স্থাপন করেছিল সেখান থেকে ও | হাত সরিয়ে নিল না, তাকে ওখানে অসাড় ভাবে রেখেও দিল না, বরং নিজেকে দেহমন আত্মাসহ ব্লেসেড ভার্জিনের কাছে উৎসর্গ করে, দাঁতে দাঁত টিপে, পাছে সে নিজের উন্মত্ততাতেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে, সে তার উত্তোলিত প্রতিপক্ষকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে | তার পরিচয় নিতে শুরু করলাে, কেমন তার আকার, কি রকম শক্তিশালী তার স্তম্ভদণ্ড, তার পক্ষ কতদূর বিস্তৃত, আর ও তার সঙ্কল্পের দৃঢ়তা দেখে অবাক হল, কিন্তু তার একাকিত্ব দেখে তার জন্য একটু অনুকম্পাও জাগলাে ওর মনে, এমন একটা ব্যাপক ঔৎসুক্যের সাথে সে জিনিসটাকে তার নিজের করে নিল যে তার স্বামীর চাইতে কম অভিজ্ঞ কেউ হয়তাে ওটাকে আদরের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতাে। ওর নির্দয় অনুসন্ধানের তীব্রতা সহ্য করার জন্য ডাক্তারকে তার শক্তির সর্বশেষ কণা পর্যন্ত কাজে লাগাতে হয়, | তারপর এক সময় ও একান্ত শিশুসুলভ নিস্পৃহতার সঙ্গে জিনিসটা ছেড়ে দিল, যেন | সে ওটাকে ময়লার বাক্সে ছুড়ে দিচ্ছে।
ও বললাে, “ওটা কিভাবে কাজ করে তা কখনাে আমার বােধগম্য হয় নি। | তখন ডাক্তার বিশেষজ্ঞের জ্ঞান ও পদ্ধতি সহকারে চরম গাম্ভীর্যের সঙ্গে ওর হাত তাঁর উক্তির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিভিন্ন বিন্দুতে নিয়ে গেলেন এবং সেও একান্ত অনুকরণীয় এক ছাত্রের মতাে তার নির্দেশ অনুসরণ করে চললাে। একটা অনুকূল | মুহূর্তে ডাক্তার বললেন যে আলাে জ্বালানাে থাকলে বিষয়টা অনেক সােজা হবে। কিন্তু তিনি যখন আলাে জ্বালাবার উপক্রম করলেন তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর হাত ধরে বাধা দিলেন, বললেন, “আমি হাত দিয়েই বেশি ভালাে দেখি।” সেও কিন্তু আলাে জ্বালাতে চেয়েছিল তবে সেটা সে নিজে করতে চেয়েছিল, কারাে নির্দেশ অনুযায়ী নয় এবং তাই করলাে সে। হঠাৎ আলাে জ্বলে উঠলে ডাক্তার তার স্ত্রীকে দেখলেন বিছানার চাদরে নিজেকে মুড়ে সে মাতৃগর্ভে জ্বণের মতাে পড়ে আছে, কিন্তু সে অনুসন্ধানের বিষয়টি শক্ত হাতে ধরে সেটাকে এদিকে-ওদিকে ঘােরালাে এবং ব্যাপারটাকে তখন ডাক্তারের কাছে বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের চাইতে আরাে বেশি কিছু বলে মনে হল । তার পর্যবেক্ষণ শেষ করে অবশেষে সে মন্তব্য করল, কী বিশ্রী! মেয়ে মানুষেরটার চাইতেও বিশ্রী দেখতে।’ তিনি একমত হলেন, বললেন যে বিশ্রী দেখতে হওয়ার চাইতেও এটার আরাে বেশি কিছু অসুবিধা আছে। তারপর বললেন, এটা হচ্ছে কারাে প্রথম ছেলের মতাে। তুমি সারা জীবন তার জন্য পরিশ্রম কর, তার জন্য সব কিছু উৎসর্গ কর, তারপর সময় এলে সে তার যা খুশি তাই করে। তার স্ত্রী ওটাকে পরীক্ষা করতে থাকলাে, প্রশ্ন করল এটা কি জন্য, ওটা কি জন্য, তারপর সব তথ্য জেনে সন্তুষ্ট হয়ে ওটা দুহাতে তুলে ধরে তার ওজন পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে ওটাকে নিয়ে ভাবনার কিছু নেই, তখন সে একটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে ওটা তার হাত থেকে ছেড়ে দিল। তারপর ও বলল, ‘তাছাড়া আমার মনে হয় ওটার মধ্যে বড় বেশি জিনিস আছে।’
ডাক্তার বিস্ময়াভিভূত হলেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের মূল বিষয়ই ছিল এটা : মানবদেহের কাঠামাের সরলীকরণের সুবিধা। তাঁর কাছে ওই গঠন মনে হয়েছিল অতি প্রাচীন, সেখানে অনেক বাহুল্য ও নিপ্রয়ােজনীয় জিনিসের সমাহার ঘটেছে, মানবজাতির বিভিন্ন স্তরে হয়তাে এসবের দরকার ছিল, কিন্তু এখন আমাদের কালে তার আর কোন দরকার নেই। হ্যা, এটা আরাে সহজ ও সরল হতে পারতাে এবং সেই সূত্রে কম আক্রমণেরও শিকার হত। শেষে তিনি বললেন, কিন্তু এ কাজটা একমাত্র ঈশ্বরই করতে পারেন, তবে তাত্ত্বিক দিক থেকে ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ভালােই হবে।’ | সে মজা পেয়ে এত স্বাভাবিক ভাবে হেসে উঠলাে যে ডাক্তার ওই সুযােগ গ্রহণ করে ওকে আলিঙ্গন করলেন এবং প্রথমবারের মত ওর ওষ্ঠচুম্বন করলেন। সেও তার উত্তর দিল আর তখন তিনি আলতাে ভাবে চুম্বন করতে থাকলেন ওর গাল, ওর নাক, ওর চোখের পাতা : তিনি চাদরের নিচে হাত ঢুকিয়ে ওর যােনির চারপাশের সােজা অকুঞ্চিত কেশরাশিতে হাত বুলালেন। ও তাঁর হাত সরিয়ে দিল না, কিন্তু নিজের হাতটা সতর্কাবস্থায় রাখলাে যেন তিনি আর অগ্রসর হতে না পারেন। | ফারমিনা বললাে, “অনেক হয়েছে, আর চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষা দানের দরকার নেই।’
‘না’, তিনি বললেন, ‘এবার শিক্ষাদান হবে প্রেমলীলায়।’
তিনি চাদরটা সরিয়ে নিলেন, ও যে বাধা দিল না শুধু তাই নয়, পায়ের এক দ্রুত ঝটকায় খাট থেকেই সে ওটা ফেলে দিল। ওর অসহ্য গরম লাগছিল। ওর শরীর ছিল নমনীয় ও ঢেউখেলানাে, পােশাক পরা অবস্থায় যেমন দেখাতাে তার চাইতে বেশি ধীর ও অচপল, ওই শরীরে অরণ্যের প্রাণীর একটা নিজস্ব গন্ধ পাওয়া গেল, ওই গন্ধ ওকে বিশ্বের আর সব রমণী থেকে স্বতন্ত্র করে তুললাে। আলাের মধ্যে প্রতিরক্ষাহীন ফারমিনা অনুভব করলাে যে তার সারা মুখ একঝলক রক্তে রাঙা হয়ে উঠেছে এবং সেটা লুকাবার একটা পথই সে দেখলাে, সে দুই হাতে তার স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে তাকে একটা সুদীর্ঘ গাঢ় চুম্বনে সিক্ত করলাে, দুজনের প্রায় শ্বাসরুদ্ধ হবার উপক্রম হলেই তার সমাপ্তি ঘটে।
তিনি যে ওর প্রেমে পড়েন নি এ সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। তিনি ওকে বিয়ে করেছিলেন কারণ তার অহঙ্কারী মেজাজ আর গাম্ভীর্য আর শক্তিমত্তা দ্বারা তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, তাছাড়া তাঁর নিজের অহমিকা দ্বারাও তিনি তাড়িত হয়েছিলেন, কিন্তু ও তাঁকে প্রথম বার চুম্বন করার পরই তিনি নিশ্চিত হন যে পরস্পরকে সত্যিকার ভালােবাসার কারণ আবিষ্কারের পক্ষে তারা কোন অন্তরায়ের সম্মুখীন হবেন না। সেরাতে সকাল পর্যন্ত তারা অনেক কথা বলেছিলেন, কিন্তু ওই প্রথম রাতে কিংবা পরবর্তী কোন সময়ে তারা ওই বিষয় নিয়ে কখনাে কোন আলাপ করেন নি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত, তাদের দুজনের কেউই ভুল করেন নি।
অবশেষে সকালের দিকে তারা যখন ঘুমিয়ে পড়লেন, ফারমিনা তখনাে কুমারী, কিন্তু আর বেশিক্ষণ সে তা থাকলাে না। পরের রাতে ডাক্তার তাকে নক্ষত্রখচিত ক্যারিবীয় আকাশের নিচে ভিয়েনার ওয়াল্টজ নাচ শেখালেন, তারপর তিনি বাথরুমে ঢুকলেন। ফারমিনা আগেই গিয়েছিল। ডাক্তার বাথরুম থেকে শােবার ঘরে ফিরে | দেখলেন যে তার স্ত্রী শয্যায় তার জন্য অপেক্ষা করছে, নগ্নদেহে । এবার সে অগ্রণী ভূমিকা নিল এবং নিজেকে উজাড় করে দিল, কোন রকম দুঃখ বা শঙ্কা ছাড়া, উত্তাল সমুদ্রে কোন অভিযানে ঝাপিয়ে পড়ার আনন্দ নিয়ে, বহুশ্রুত রক্তাক্ত উৎসবের কোন চিহ্ন ছাড়াই, শুধু চাদরে লেগে থাকলাে মর্যাদার একটা গােলাপ। তারা দুজনই সঙ্গম করতাে চমক্কার ভাবে, প্রায় একটা অলৌকিক ব্যাপারের মতাে এবং এটা তারা করতে থাকে দিনের পর দিন ও রাতের পর রাত, গােটা সফর ব্যাপী এবং প্রতিবারই তা ক্রমান্বয়ে উন্নততর হতে থাকে, তারা যখন লা রােশেলে এসে পৌঁছল তখন তাদের দেখে মনে হল তারা যেন অনেক দিনের পুরনাে প্রেমিক যুগল।………..
……..পারীকে কেন্দ্র করে তারা ইউরােপে সময় কাটাল, মাঝে মাঝে কয়েক দিনের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে বেড়াতে গেল। ওই সময়ে তাঁরা প্রতিদিন সঙ্গম করেছে, শীতের রবিবারগুলিতে একাধিকবার, তখন তারা দুপুরের খাওয়ার আগ পর্যন্ত শয্যায় হুটোপুটি করতাে। ডাক্তার ছিলেন প্রবল আবেগ-অনুভূতির মানুষ, তাছাড়া তিনি ছিলেন নিয়ম শৃঙ্খলার অনুবর্তী, ওদিকে ফারমিনা ডাজাও কাউকেই তার ওপর কর্তৃত্ব করতে দিতে | রাজি ছিল না, তাই শয্যায় তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিল।…….
………দরজা খুলে ফ্লোরেন্টিনাে আরিজাকে অভ্যর্থনা জানাতাে, গায়ে কোনাে জামা-কাপড় নেই, সম্পূর্ণ নগ্ন, শুধু চুলে একটা অর্গান্ডির ফিতা জড়ানাে। ফ্লোরেন্টিনােকে আরেক পা এগুতে না দিয়ে সে তার কাপড় খুলে ফেলতাে, কারণ সে মনে করতাে যে কাপড়-জামা পরা কোন মানুষ বাড়িতে ঢুকলে গৃহের অকল্যাণ হবে। এই একটা ব্যাপার নিয়ে কাপ্তান রােজেন্দো ডি লা রােজার সঙ্গে তার সারাক্ষণ ঝগড়া হত। কাপ্তানের কুসংস্কার ছিল অন্য রকম। তিনি বিশ্বাস করতেন যে নগ্ন অবস্থায় ধূমপান করলে সেটা দুর্ভাগ্য ডেকে আনবে, তাই তিনি কখনাে কখনাে তাঁর অপরিহার্য কিউবান চুরুট বাদ দেবার পরিবর্তে তাঁর প্রণয়পর্বকে স্থগিত করে দিতেন। পক্ষান্তরে নগ্নতার মাধুর্য ফ্লোরেন্টিনাে আরিজাকে মুগ্ধ করতাে। আসেনসিয়া বাড়ির বাইরের দরজা বন্ধ করে দেয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পরম আনন্দ নিয়ে ফ্লোরেন্টিনাের কাপড় খুলতে শুরু করতাে, তাকে সম্ভাষণ করার কিংবা টুপি ও চশমা খােলার সময় পর্যন্ত দিতাে না, তাকে চুমু খেতে খেতে ও তার চুম্বন গ্রহণ করতে করতে, সে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার সমস্ত জামা-কাপড় খুলে ফেলতাে, একটা চুমু খায় আর তার প্যান্টের একটা বােতাম খােলে, তারপর চুমুর ফাকে ফাকে খুলে ফেলে তার বেল্টের কলস, সব শেষে তার কোট আর শার্ট, মনে হত সে যেন মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত চিরে ফাক করা একটা জ্যান্ত মাছ। তারপর সে তাকে ড্রয়িং রুমের একটা চেয়ারে বসিয়ে টান দিয়ে খুলে ফেলতাে তার প্যান্ট আর লম্বা আন্ডারওয়্যার, আর তারপর তার মােজা। তখন ফ্লোরেন্টিনাে আরিজা তাকে চুম্বন করা ও তার চুম্বন গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে এই উৎসবে যে একমাত্র কাজের দায়িত্ব সে নিয়েছিল সেই কাজটি সম্পন্ন করত। সে তার কোটের বােতামের ফুটো থেকে তার ঘড়ি ও ঘড়ির চেইন ও চশমা খুলে সেগুলি তার জুতাের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে যেন ভুল ক্রমে এখানে ফেলে না যায়। যখনই অন্য কারাে বাড়িতে তাকে কাপড় খুলতে হতাে তখনই সে অবধারিত ভাবে এই সতর্কতা অবলম্বন করতাে। | ফ্লোরেন্টিনাের এই কাজটা শেষ হওয়া মাত্র আসেনসিও তাকে আর অন্য কিছু করার সুযােগ না দিয়ে তার ওপর চড়াও হত, যে সােফায় বসিয়ে সে তার জামা-কাপড় খুলে দিয়েছিল সেই সােফাতেই, কদাচিৎ সে তাকে তার শােবার ঘরের বিছানায় নিয়ে যেত। সে তার ওপর চড়ে বসে নিজের সব কিছু দিয়ে তার সব কিছুর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করতাে, সে সম্পূর্ণ আত্মমগ্ন হয়ে যেতাে, চোখ বন্ধ, তার পরিপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অন্ধকারের মধ্যে সে অবস্থান অনুমান করে নিতাে, কোথাও অগ্রসর হত, কোথাও পিছু হঠতাে, তার অদৃশ্য পথ সংশােধন করতাে, আরাে তীব্র ভিন্ন কোন পথ বেছে নিতাে, তার গর্ভ থেকে উচ্ছত পিচ্ছিল জলাভূমিতে নিমজ্জিত হবার পরিবর্তে অন্য কোন পথে এগুবার প্রয়াস পেতাে সে, উঁশ মাছির মতাে গুনগুন করে তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় নিজেকে প্রশ্ন শুধাতাে, নিজেই তার উত্তর দিতাে, ছায়ার মধ্যে ওই বস্তুটা কোথায় যার খবর একমাত্র সেই জানে, যার জন্য সে ব্যাকুল, শুধু তার নিজের জন্য, তারপর সে এক সময় কারাে জন্য অপেক্ষা না করে অবদমিত হয়ে যেতাে, সে একা তার নিজের অতল গহ্বরে ডুবে যেতাে, পরিপূর্ণ বিজয়ের একটা আনন্দোচ্ছল বিস্ফোরণ ঘটতাে তার মধ্যে, যার অভিঘাতে সারা পৃথিবী যেন কেঁপে উঠতাে।…….
…….রমণীটি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তার ত্বকের অপরূপ শুভ্রতা, মােটাসােটা মেয়ের সুখী সুরভি, এবং তার কৃত্রিম ম্যাগনােলিয়া আটকানাে উচ্চ সপ্তকে বাঁধা গায়িকার বিশাল বক্ষের জন্য।…..
……….সে তাকে প্রাণ খুলে কাঁদতে বললাে, কোন রকম লজ্জা বা কুণ্ঠা বােধ না করে, কারণ কান্নার চাইতে বেশি শান্তি আর কিছুই দিতে পারে না, কিন্তু সে তার আগে তার বডিসটা ঢিলা করে দেবার পরামর্শ দিল। সে তাকে সাহায্য করার জন্য দ্রুত এগিয়ে। গেল, কারণ তার বডিস ছিল লম্বা কোণাকুণি লেস দিয়ে পিঠের পেছন দিকে শক্ত করে বাঁধা। তাকে সব গুলি লেস খুলতে হয় নি, কারণ নিছক অভ্যন্তরীণ চাপে বডিসটা ফেটে যায়, আর তখন তার অবিশ্বাস্য বক্ষ আবার সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সক্ষম হয়। | ফ্লোরেন্টিনাে আরিজা বিশেষ আরামদায়ক পরিবেশেও তার শিক্ষানবিসী ভীরুতার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে নি। সে মহিলার ঘাড়ে তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ আলতােভাবে বুলিয়ে আদর করার একটা প্রাথমিক ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিলাে, আর মহিলা অত্যধিক আদরে নষ্ট হওয়া একটা বাচ্চার মতাে আঁকুপাঁকু করলাে, তার মুখ থেকে নিঃসৃত হল হাল্কা গােঙানির শব্দ, কিন্তু তার অশ্রু বিসর্জন সে বন্ধ করলাে না। ফ্লোরেন্টিনাে আরিজা ওই একই স্থানে ওকে এবার চুমু খেল, একই রকম কোমলতার সঙ্গে, তারপর দ্বিতীয়বার চুমু খাবার আগেই ও তার বিশাল শরীর নিয়ে তার দিকে ঘুরলাে, আকুল আর উষ্ণ, এবং দুজনেই তখন জড়াজড়ি করে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় মেঝের ওপর পড়ে গেল। সােফার দ্রিামগ্ন মার্জার চিক্কার করে জেগে উঠে ওদের দুজনের ওপর লাফ দিয়ে পড়লাে। ওরা দুই অক্ষতযােনি মানব মানবীর মতাে একে অন্যকে হাতড়ালাে, যেভাবে সম্ভব পরস্পরকে খুঁজে পেলাে, কাপড়-জামা পরা অবস্থাতেই ছেড়া অ্যালবামগুলির মধ্যে হুটোপুটি করলাে, ঘামে তাদের সারা শরীর সিক্ত, তাদের বিপর্যয়কারী প্রেমের চাইতে তারা বেশি মনােযােগ দিল বিড়ালের হিংস্র নখের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার দিকে। কিন্তু ওই রাত থেকে শুরু করে, তখনাে বিড়ালের থাবার আঘাতে তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিলাে, বহু বছর ধরে তারা পরস্পরকে উপভােগ করতে থাকে ।………
………শনিবার দিন ডাক্তার জুভেনাল উরবিনাে সাক্ষাতের নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগে এসে উপস্থিত হল, মিস লিঞ্চ তখনাে তাকে অভ্যর্থনা করার জন্য কাপড়জামা পরে তৈরি হয় নি। ডাক্তার উরবিননা প্রচণ্ড স্নায়বিক চাপ অনুভব করছিলেন, পারীতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য হাজিরা দেবার পর তার আর কখনাে এরকম অবস্থা হয় নি। বারবারা তার ক্যানভাস খাটে শুয়ে পড়লাে, তার পরনে সিল্কের পাতলা একটা অন্তর্বাস জাতীয় পােশাক, তার সৌন্দর্যের যেন কোন সীমা পরিসীমা নাই। তার সব কিছুই ছিল বড়ােসড়াে, তীব্র, তার মােহিনী নারীর ঊরু, তার ধীরে ধীরে আগুন ধরানাে ত্বক, তার বিস্ময়কর স্তনযুগল, তার নিখুঁত দন্তপাটি ও স্বচ্ছ মাড়ি, তার সমগ্র দেহ থেকে যেন সুস্বাস্থ্যের একটা ভাপ বিকীর্ণ হচ্ছিল, আর ফারমিনা ডাজা তার স্বামীর কাপড়ে এই মানুষী গন্ধই আবিষ্কার করেছিল। বারবারা জানালাে যে সে ক্লিনিকে গিয়েছিল কারণ তার একটা শারীরিক কষ্ট হচ্ছিল,……….ডাক্তার উরবিনাে বললেন যে এ জাতীয় উপসর্গ উপেক্ষা করা অনুচিত। তাই তিনি তাঁর হাত দিয়ে ওর দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদি পরীক্ষা করলেন, যতখানি মনােযােগের সঙ্গে তার চাইতে বেশি ইচ্ছার সঙ্গে এবং অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন যে এই প্রাণীটি বাইরে যেমন সুন্দর ভেতরেও তেমনি, তারপর তিনি সােল্লাসে স্পর্শের আনন্দের মধ্যে নিজেকে মুক্ত করে দিলেন, তখন তিনি আর বিস্তীর্ণ ক্যারিবীয় উপকূল অঞ্চলের সব চাইতে যােগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক নন, তিনি শুধু তার প্রচণ্ড বিশৃঙ্খল স্বজ্ঞাতাড়িত যন্ত্রণাকাতর এক বেচারা পুরুষ মানুষ । তার কঠোর পেশা-জীবনে এর আগে মাত্র একবার এই রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল এবং সেটা ছিল তাঁর জীবনের একটা চরম লজ্জা, কারণ তাঁর ক্রুদ্ধ রােগী একঝটকায় তাঁর হাত সরিয়ে দিয়ে বিছানায় উঠে বসে বলেছিল, আপনি যা চাইছেন সেটা হয়তাে হতে পারে, কিন্তু এভাবে নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মিস লিঞ্চ নিজেকে তার হাতে পুরােপুরি সমর্পণ করল এবং যখন সে সুনিশ্চিত হল যে ডাক্তার আর তার বিজ্ঞানের কথা ভাবছেন না তখন সে বলল, আমার ধারণা ছিল আপনাদের নীতিমালা এসব অনুমােদন করে না।’……..
……..কাজটা সহজ হয় নি। মিস লিঞ্চ চাইলাে তার সম্রম যেন রক্ষিত হয়, সে চাইলাে নিরাপত্তা এবং ভালােবাসা, ওই ক্রম অনুসারে, আর তার বিশ্বাস এসব তার প্রাপ্য। সে তাকে প্রলুব্ধ করার সুযােগ দিল ডাক্তার উরবিনােকে, কিন্তু তাকে তার ভেতরের খাস-কামরায় ঢুকতে দিল না, এমনকি সে যখন বাড়িতে একা তখনও না। ডাক্তারকে তার নীতিমালা ইচ্ছা মতাে লঙ্ঘন করার সুযােগ দিয়ে সে তাকে হাতের স্পর্শ দ্বারা ও বুকে কান লাগিয়ে পরীক্ষা কাজ চালাতে দিল, কিন্তু তার কাপড়-জামা না খুলে। ডাক্তারের দিক থেকে, একবার টোপ গেলার পর তিনি আর ছাড়তে পারলেন না, ব্যাপারটা একটা দৈনন্দিন অভিযান হয়ে দাঁড়ালাে। বাস্তব কারণেই মিস লিঞ্চের সঙ্গে এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখা ডাক্তারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে কিন্তু এটা বন্ধ করার মতাে যথেষ্ট শক্তি তিনি পেলেন না, পরবর্তী সময়ে যেমন আরাে অগ্রসর হবার মতাে শক্তিও তিনি পান নি। এই পর্যন্তই ছিল শেষ সীমারেখা।…….
…….তাই, যখন ডাক্তারের গাড়ি ওর বাড়ির সামনে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষক হয়ে উঠলাে তখন তাদের প্রেমলীলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালাে, আর তিন মাস পর ব্যাপারটা রীতিমত হাস্যকর রূপ নিল। তার উত্তেজিত প্রেমিককে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখা মাত্র মিস লিঞ্চ নিজের শােবার ঘরে চলে যেতাে। ডাক্তারকে যেসব দিনে ও প্রত্যাশা করতাে সেসব দিনে ও জ্যামেইকা থেকে আনা লাল ফুলের নকশা আঁকা কুঁচি দেয়া একটা চমৎকার লম্বা স্কার্ট পরে থাকতাে, কিন্তু নিচে কোনাে অন্তর্বাস পরতাে না, একেবারে কিছু না, ভাবতাে, এই সুবিধাটুকুর ফলে ডাক্তারের ভয়-ভীতি দূর হবে। কিন্তু তাকে খুশি করার জন্য ওর সব উদ্যোগ ডাক্তার নষ্ট করে ফেলতেন। ঘর্মাক্ত কলেবর, ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, তিনি ওর পেছন পেছন শােবার ঘরে এসে প্রবেশ করতেন, তারপর সব কিছু ছুড়ে ফেলতেন মেঝের উপর, তাঁর হাতের লাঠি, তার ডাক্তারি ব্যাগ, তাঁর পানামা হ্যাট, তারপর হাঁটুর নিচ পর্যন্ত প্যান্ট নামিয়ে তিনি ভয়-তাড়িত সঙ্গম ক্রিয়াটুকু সমাধা করতেন, তখনাে ঊর্ধ্বাঙ্গে কোট চাপানাে, তার বােতাম আটকানাে যেন কোন বাধার সৃষ্টি না করতে পারে, ওয়েস্টকোটে ঘড়ির সােনার চেইনটাও লাগানাে, পায়ে জুতাে পরা, সব ধরা-চূড়া ঠিক আছে, আনন্দ লাভের চাইতে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাবার জন্যই যেন তিনি বেশি উদগ্রীব। আর বারবারা লিঞ্চ নিজেকে আবিষ্কার করতাে ঝােলানাে অবস্থায়, সে তার নিঃসঙ্গতার সুড়ঙ্গের প্রবেশ পথেও ঠিক মত পৌছায় নি, আর ডাক্তার এরই মধ্যে তাঁর প্যান্টের বােতাম লাগিয়ে ফেলেছেন, তাকে দেখাচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত, যেন জীবন মরণের মধ্যবর্তী রেখায় দাঁড়িয়ে তিনি পরিপূর্ণ ভালােবাসার স্বাদ গ্রহণ করেছেন, যদিও আসলে তিনি একটা দৈহিক ক্রিয়ার বেশি কিছুই সম্পন্ন করেন নি, যা প্রেমের কৃতিত্বের একটা অংশ মাত্র। কিন্তু তিনি ঠিক সময়ে শেষ করেছেন, একটা রুটিন ভিজেটে গিয়ে রােগীকে সময় মতাে ইঞ্জেকশন দিতে পারবেন। তারপর তিনি বাড়ি ফিরতেন, তার দুর্বলতার জন্য চরম লজ্জিত, মৃত্যুর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতেন, নিজেকে অভিশাপ দিতেন কেন তার এই সাহসটুকু হচ্ছে না, কেন তিনি ফারমিনা ডাজাকে ডেকে বলতে পারছেন না, এসাে, আমার প্যান্ট খুলে নিয়ে আমার পাছায় আগুনের ছ্যাকা দাও!…………