প্রতিদ্বন্দ্বী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

১.

……….সিদ্ধার্থ শিবেনকে কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারল। পাশ দিয়ে দুটি যুবতী চলে গেল—ওদের চেয়ে দু-এক বছরের বড়োই হবে—দু-জনেই বেশ স্বাস্থ্যবতী, এক হালকা সুগন্ধ বয়ে গেল এক মুহূর্তের জন্য। সিদ্ধার্থ বলল, সাউথ ক্যালকাটায় এলে বেশ ভালো ভালো মেয়ে দেখতে পাওয়া যায়। এইজন্যই আসতে ইচ্ছে করে! কী বুক দেখেছিস?
শিবেন বিজ্ঞভাবে জানাল, সব আসল নয়, নকল।
তোকে বলেছে! তুই হাত দিয়ে দেখেছিস?
হাত দিয়ে দেখতে হয় না, একদিন বাসে একজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল, লোহার মতন শক্ত কী যে একটা—
ভাগ! আমারও তো প্রায়ই ধাক্কা লাগে, দু-একবার ইচ্ছে করেও একটু, বুঝলি না, চান্স পেলে, কিন্তু আমি তো সব্বারই দেখেছি নরম-নরম—তোর লাকটাই খারাপ।……….

৪.

….—সুতপার বুক দুটি ভরাট সুগোল, হাঁটার ভঙ্গিতে খানিকটা মাদকতা মাখানো, ফরসা মুখটাতে একটা অন্যরকম আভা।…….

৬.

………সিগারেট ধরিয়ে লতিকা দীর্ঘ একটি টান দিয়ে ধোঁয়াগুলো নিয়ে খেলা করে। তার সিগারেট ঠোঁটে চেপে রেখে সে খুব যত্ন করে নিজের কড়া ইস্ত্রি করা ধপধপে সাদা পোশাক খুলতে শুরু করে—ভাঁজ নষ্ট না করে সেগুলো পাট করে রাখে আলনায়—শুধু শায়া আর ব্রেসিয়ার পরে সে লঘু পায়ে ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে।

এত কম পোশাক পরা কোনো নারীকে সিদ্ধার্থ এত কাছে থেকে আগে কখনো দ্যাখেনি। নগ্ন স্ত্রীলোকের ছবি সে দেখেছে বটে, কিন্তু এ যে জ্যান্ত, তার থেকে মাত্র দু-তিন হাত দূরত্বে ঘুরছে। সিদ্ধার্থর সমস্ত শরীরটা ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে, কেমন অদ্ভুত লাগে তার নিজের মধ্যেটায়, চোখ ফেরাতে চেয়েও ফেরাতে পারে না।

বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা লতিকার, একটু মোটার দিকে, নগ্ন পেটে দুটো ভাঁজ পড়েছে, পাতলা শায়ার মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় তার মাংসল উরুর গঠন, বগল দু-টি পরিস্কার করে কামানো—লতিকার শরীরে ও মুখে-চোখে এমন একটা তৃপ্তির ভাব যে তার জীবন সম্পর্কে কোনো প্রশ্নই জাগে না। লতিকা আদিনাথের কাছে এসে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, দাও গো ব্রেসিয়ারটা খুলে দাও, একটু মুখ-হাত ধুয়ে আসি, সেদ্ধ হয়ে গেছি একেবারে!

আদিনাথ ব্রেসিয়ারের হুকটা খুলে দিয়েই দু-হাতে লতিকাকে নিজের কোলের ওপর টেনে এনে জড়াজড়ি শুরু করে দেয়। ভেতরে ভেতরে শিউরে উঠে সিদ্ধার্থ মুখ ফিরিয়ে নেয়—তার বুকের মধ্যে এমন দুপ দুপ শব্দ হতে থাকে যে মনে হয় বাইরের সবাই বুঝি সেটা শুনতে পাবে। লতিকা ময়ূরীর মতন তীক্ষ্ণ গলায় হেসে উঠে বলে, এই ছাড়ো ছাড়ো, বললুম তো আগে গা ধুয়ে আসি—এই ঘেমো শরীরটা ধরতে ভালো লাগে তোমাদের?

আদিনাথ কোনো কথা শোনে না, উন্মত্তের মতন ছটফট করে, লতিকার বুকের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে উম—ম-ম-ম শব্দ করে ওঠে—তারপর তাকে সিদ্ধার্থর দিকে ঠেলে বলে, নাও আমার বন্ধুকে একটু আদর করো! ঠেলার চোটে লতিকা একেবারে সিদ্ধার্থর গায়ে এসে পড়ে, সিদ্ধার্থ খাঁটি ভয় পেয়ে বলে ওঠে—না, না, না—। সরে গিয়ে সিদ্ধার্থ লতিকার দিকে তাকায়। লতিকার দুটি বিশাল স্তন সার্চ লাইটের মতন সিদ্ধার্থর দিকে ফেরানো, মন্ত্রমুগ্ধ সাপের মতন সেদিকে তাকিয়ে থেকে সিদ্ধার্থ অস্ফুটভাবে বলে, না, আমি না, আমি না—তারপর, ঠিক যে-মুহূর্তে সিদ্ধার্থ সবকিছু ভুলে গিয়ে সেদিকে হাত বাড়াবার কথা ভাবে—সেই সময় লতিকা ধড়মড় করে উঠে পড়ে, সিদ্ধার্থর থুতনিতে একটা আঙুল ছুঁইয়ে বলে আ—হা—হা!

লতিকা যে-রকম গলায় আ-হা-হা বলল কোনো স্ত্রীলোকের ওইরকম অদ্ভুত কন্ঠস্বর সিদ্ধার্থ আগে আর কখনো শোনেনি। লতিকা বাথরুমে চলে যায়।………..

Leave a Reply