প্রতিক্ষণ গল্প সংকলন (১৯৮৩-১৯৯৩)

›› গল্পের অংশ বিশেষ  ›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

ভুখা মানুষের কোনাে পাপ নেই – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

………..তারকের মা খরচের বহর দেখে, মজে গিয়েছিল। তখন টেপির স্তন যেন বড় হয়ে উঠছে। সে এসে তারকের মার কাজে সাহায্য করতে লেগে গেল।……..তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা দু-একবার ঘুরে গেছে। কিন্তু টেপিকে যেদিন থেকে সিনেমার জন্য পয়সা দিতে শুরু করল, সেদিন থেকেই একটা অলিখিত চুক্তি হয়ে গেল ভােগের।……….

………প্রথম দিনের কথাবার্তা এমন, এই তাের নাম কি? যান ঠাকুর! বলেই মুখ ঝামটা দিয়ে টেপি সরে গেছিল।………..বা সুন্দর পাছা। ফ্রক গায়। চোখে কাজল লতা। কপালে টিপ। সবই গাছপালা শস্য খেতের মতাে সবুজ হয়ে আছে। সে ডেকে বলেছিল এই শােন না। তুই কার মেয়ে?……..

শূন্যসময় – অরূপরতন বসু

…….মাধুরীই তাকে প্রথম শূন্যসময়ের অভিজ্ঞতা দেয়, যেদিন প্রথম, সে নগ্ন হয়ে তার নীচে শুয়ে থাকে শীতের এক সমস্ত দুপুর। সেদিন তারা অনভিজ্ঞতার জন্য পরস্পরের ভিতর যায় নি, শুধু নগ্ন শরীরের ওপর নগ্ন শরীর। দুই উদ্যত চিতাবাঘের মতাে পরস্পরের ঘ্রাণ নিয়ে পরস্পরকে লক্ষ করেছিল তারা। অশােকের মনে হয়েছিল, এক অদ্ভুত বন্য উজ্জ্বল সােনালি চিতাবাঘিনীর মত উদ্যত নগ্ন ওই নারীশরীর যেন উর্ধ্বে তার ভয়ঙ্কর ক্ষিপ্র থাবা স্তব্ধ করে রেখেছে, সময় হলে মুহূর্তের মধ্যে তাকে ছিড়ে বিলুপ্ত করে দেবে বলে, কিংবা এক দীর্ঘ রােমহীন বালিয়াড়ির মতাে শরীরের কিনারে কেবল ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের অবিরাম ওঠানামা, যেন মুহূর্তের মধ্যে তাকে টেনে নিয়ে ছিড়েখুঁড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অতলে বেওয়ারিশ লাশের মতাে, অথচ একমাত্র এই সেই গহ্বর, যেখানে সে ঝরনার মতাে ঝরে যেতে পারে, এই সেই মাটি যেখানে বৃষ্টির ফোটার মতাে ভেঙে চুর্ণ হয়ে যেতে পারে প্রশ্নের মতাে উদ্যত বিশাল অন্ধকার দুই কালাে চোখ, আর জ্বলন্ত, দুই নক্ষত্র বসানাে তীব্র স্তন, জঙ্ঘায় দুর্বিনীত পাহাড়ের ঝুঁকে পড়া বিশাল ছায়া, সমস্ত মিলিয়ে এক অরণ্যচারী নগ্ন তরুণী পশুর মৃত্যু উৎসব, কিংবা এক প্রাচীন দেবীর উৎসর্গবেদিতে যূপকাষ্ঠ সবে তৈরি হচ্ছে, অথবা এক আদিম প্রধান নারী পুরােহিত যে মৃত্যুর পরপার থেকে জন্মের জ্বলন্ত শিখায় শরীর পুড়িয়ে দিতে জানে।………..

উড়ােমেঘ – অমর মিত্র

……..সে তাে কল্পনাও করতে পারে নি কেবল-টিভি এমন আশ্চর্য পণ্যের সন্ধান দিতে পারে। ভাবতে ভাবতে জলের ধারে দাড়িয়েছিল মালা। তার মনে হচ্ছিল ওইভাবে দাড়িয়ে থাকলে গন্ধটা বােধহয় লেগে যাবে তার গায়ে, মাথার চুলে। লেগে যাচ্ছিল যেন একটু একটু করে। তখন সে নিরাবরণ হতে থাকে। প্রত্যহের স্নানে যে নিরাবরণতা তার সঙ্গে ওইদিন সকালের নিরাবরণতার তফাত ছিল যেন। সে তাে চাইছিল গন্ধটা লেগে যাক তার গায়ে। ছড়িয়ে পড়ুক সর্ব অঙ্গে। বাহুতে গালে ঠোটে গলায় দুই স্তনে, পেটে, পেট থেকে উরুতে, পায়ের পাতায়, নখাগ্রে। ধীরে ধীরে চটনা ওঠা পুরােনাে মেঝেয় উবু হয়ে বসে পড়েছিল সে। কী এক সঙ্কোচে শিহরনে ভরে যাচ্ছিল তার মন। অন্যের সাবানের গন্ধ তার গায়ে লেগে যাচ্ছে।………….

রক্তলজ্জা – আফসার আমেদ

……….. চাদ ও তারারা না থাকলেও আকাশের একটা নরম আলাে এই ঘরের ভেতর এসে ছড়িয়ে পড়ে, জানলা বন্ধ করে সে আলােকেও সরিয়ে রাখতে হয়। হাসান মাঝে মাঝে এই বিছানায় উঠে আসে। বুলুর বয়স দশ, রােজির আট। ওরা বেশ ঘুমােয়। পাচ বছর, দাম্পত্যের মতােই তাদের বসবাস। কিন্তু আশ্চর্য এ দাম্পত্যে কোনাে ছন্দপতন নেই। কোনােদিন ঝগড়া হয় নি। সাক্ষাৎ বিলম্বিত হওয়ায়, অভিমানে ফতিমার নিশ্বাসের ভেতর এক গুমরানি উঠে আসত। প্রথম সাক্ষাতে, হাসান এগিয়ে এসে তাকে দু-হাতে জাপটে বুকের ভেতর নিয়ে নেবে, চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে তুলবে, এতে ফতিমার কোনাে বাধা বা দ্বিধা থাকে না। হাসান তার দিকে এগিয়ে আসার সময়ে, জায়মানতার অনুভূতিতে যেন স্থিরই থাকত। আকুলতায় বুকের ভেতরটা মুষড়ে পড়ে।…….

……প্রেম শুধু চোখের দেখায় থাকে না। শরীরের ভেতরও নতুন করে খুঁজে পায় ফতিমা প্রেমকে। শরীর | ছোয়ারও অর্থ খুঁজে পেয়েছে সে হাসানের স্পর্শের ভেতর। শুনাথের ওপর স্পর্শের উত্তেজনা স্তন জুড়ে | সারা বুকে ছড়িয়ে পড়ে, জননে স্পর্শ জনন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, সারা শরীরে। আশরীর প্রেম। হাসান ফতিমাকে তার শরীর চেনাতে পারে। হাসান চেনে তার শরীর। তবুও শাকিল তার স্বামী, স্বামীই।……

……… চিমনির আলােয়, ড্রেসিং টেবিলের সামনে সেলাই করছিল ফতিমা। জানলায় ছােট্ট টোকায় পাশ ফেরে ফতিমা। দেখে হাসানের মুখ। মুহূর্তে হেসে ওঠে ফতিমার মুখ। বিছানায় চোখ ফেরায় ফতিমা। বুলু রােজি ঘুমিয়ে। হাসান জানলা থেকে সরে গেছে। বুকের ওপর বিস্ত আঁচলটা হাতের আঙুল দিয়ে তুলে দেয় ফতিমা। পিঠের দিকে বা হাত নিয়ে গিয়ে উঠে দাড়ায়, তারপর পিঠের ব্লাউজের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে ব্রাটা নীচের দিকে নামায়। তারপর নিজেই নিজের বুকের দিকে তাকায়। ঘুরে দাড়ায় আয়নার দিকে। আয়নায় নিজের মুখ দেখে। নিজের চোখ দেখে।…….

……..ফতিমার ঘনঘন নিশ্বাসের শব্দ পায় হাসান। দু-হাতের টানে ফতিমাকে বুকে টেনে নেয়। হাসান। ফতিমা কেঁপে ওঠে। ফতিমার সংসারেরে ভেতর থেকে ফতিমাকে স্পর্শ করেছে। সে সংসারে | ফতিমা শালিকের বউ। একটা বাটা মাছ ভেজে ভেজে কতখানি ভাজার পর কড়া হয়, শালিক খেতে | স্বাদ পাবে, এই স্বামী-মনস্কতার শরীরমন ছুঁচ্ছে হাসান। ফতিমাও এটা বােঝে। হলুদ মশলার গন্ধ মাখা হাত ছুঁচ্ছে হাসান। ফতিমার মুখের ওপর ক্রিমের গন্ধ। গলায় বুকে পাউডারের গন্ধ। কোমরে শায়ায় দড়ির গেঁথে যাওয়া ভাজ। পেটের চামড়ায় সন্তানধারণের ভাজ। ফতিমাকে ছাদের মেঝেতে নামাতে গেলে ছােট স্বরে ‘না’ করে বাধা দেয় ফতিমা। কথা বল, কথা।………..

সর্পভূমি – অশােককুমার সেনগুপ্ত

…….এখানে আসার আগেই সে দরজার সামনে ললিতাকে দেখে এসেছে। ছাপা লাল ফুল শাড়ি। লাল ব্লাউজ, গােলগাল ফরশা চেহারা, ভরাট বুক, বড় বড় চোখের চাউনি—প্রদীপ কদিনের অসাক্ষাৎ, স্পর্শ, আদর এবং মুহূর্তের জন্যে বন্ধনের নিবিড়তায় নারী দেহের আস্বাদহীনতার কষ্টে যেন মুচড়ে গিয়েছিল। ……..

Please follow and like us:

Leave a Reply