পুনর্মিলন – দেবকুমার বসু

›› সম্পুর্ণ গল্প  

উৎসঃ নষ্টনারী গ্রন্থ

এক

—হ্যালাে —হ্যালাে, কে ? আইভি ? কথা বলছি। -তুমি কি ফ্রি আছ ? আমি রুদ্র। —বুঝতে পেরেছি। কি ব্যাপার রুদ্র ? ব্যাপার কিছু নয়। তুমি ফ্রি থাকলে যেতাম আর কি। আমি ফ্রি থাকলেও তােমাকে এখন আমার দরকার নেই।

-কিন্তু আমার যে তােমাকে দরকার। হাজার চেষ্টা করেও আমি কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। ব্যাপারটা একটু বােঝার চেষ্টা কর।

–তােমাকে আমি অনেকবার বলেছি, যখন তখন আমাকে বিরক্ত করবে না। আমি যদি প্রয়ােজন মনে করি তবেই আমার কাছে কেউ আসতে পারে। নচেৎ নয়।

–শােন আইভি, তুমি শৃগালকে আখের ক্ষেত দেখিয়ে এখন বেড়া দিতে চাইছ। এর পরিণাম কিন্তু ভালাে হবে না। আমি কিন্তু যেচে তােমার কাছে যাইনি। তুমিই আমাকে। সিডিউজ করে—

—আমি কোনও কথা শুনতে চাই না। এটা জেনে রাখ, আমি বাজারি মেয়েমানুষ নই। আমি কখন কাকে ডাকব বা কার কাছে যাব সেটা নির্ভর করে আমার ইচ্ছের ওপর। তুমি আমাকে একদম বিরক্ত করবে না। রাখছি। রুদ্রকে কোনও কিছু বলার সুযােগ না দিয়ে লাইন কেটে দিলাম।

কী অদ্ভুত ব্যাপার ! একসময় নিঃসঙ্গতা কাটাবার জন্যেই মানুষ খুঁজতাম। আর আজ আমি একাকিত্ব চাইছি ! অনায়াসেই রুদ্রকে আসতে বলতে পারতাম। নির্জন রুক্ষ দুপুরটা শরীরে শরীর ঠেসে, রুদ্রকে শুষে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু এখন আমার একা থাকতেই ইচ্ছে করছে। এতগুলাে পুরুষকে বুকের ওপর শুইয়ে শশাষণ করে একটা অদ্ভুত সুখানুভূতি পেতাম। আজ গােটা ব্যাপারটাই কেমন জলাে হয়ে গেছে। তবুও কখনও কখনও কী যে হয়, হঠাৎ পুরুষসঙ্গর জন্য কেমন মরিয়া হয়ে উঠি। ব্যাপারটা অনেকটা মেঘ রােদের খেলার মতন। হঠাৎ ইচ্ছে হল আ-তু-তু করে কাউকে ডাকি। একটু একটু করে নগ্ন করি নিজেকে। পুরুষের হ্যাংলা দৃষ্টিটা খুব উপভােগ করি। তারপর কলুর বলদের মতন তাকে ব্যবহার করি। খাটিয়ে নিই গাধার মতন।

কুড়ি বছর আগে যখন আমার বিয়ে হয়েছিল তখন আমি সােল বছরের ভরা যুবতী।

আমার রূপের ঝলকানিতে চোখ ধাধিয়ে গিয়েছিল আমার হবু স্বামীর। তখন ওর বয়স তিরিশের কাছাকাছি। খুব একটা সুপুরুষ না হলেও দেখতে খারাপ ছিল না। পয়সা ছিল অগাধ, আজও আছে।

কথায় বলে, ‘সুখের ঘরে রূপের বাসা। আমার ক্ষেত্রে এটা ব্যতিক্রম। আমি খুব সাধারণ ঘরের মেয়ে। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। বাবাকে মা যখন তখন খোটা দিয়ে কথা শােনাত। আমাদের ছ’ ভাইবােনের মধ্যে আমিই সবার বড়। বাবা এক স্কুলে কেরানির কাজ করত। মাসের মাইনে দিতে হত না। তাই আমরা যথাসমান্ত ভাইবােনেরা স্কুলে ভর্তি হয়েছি।

আমার হবু বর প্রথম আমাকে দেখে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে। তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্রী। দুজন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরছিলাম। ওদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যেতেই একা হয়ে গেলাম। আমাকে অনুসরণ করে আমার হবু বর বা চিনে গেল। তারপর খোঁজ-খবর নিয়ে বাবার সঙ্গে যােগাযােগ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল। বিয়ে দেবে বাবা ! টাকা কোথায় ? বাবা ইতস্তত করায় আমার হবু বর সহ ব্যাপারটা সামাল দিল। বিয়ের সব খরচ তত দিলই, উপরন্তু বাবার হাতে ধরিয়ে দিল মােটা টাকা। অতএব ড্যাং ড্যাং করে বিয়ে হয়ে গেল আমার। কলােনি থেকে সােজা উঠে এলাম রাজপ্রাসাদে। বরের পাশে শুয়ে আদর খেতে খেতে শুনেছিলাম আমার বিয়ের উপাখ্যান।

ক্লান্তিহীন লাগাতার সঙ্গমে সুখের জীবন শুরু হল। আমার বর আমাকে ছেড়ে নড়তে চায় না। বৈভবে ভরে দিল আমায়। ঠাণ্ডা গাড়িতে চড়িয়ে আমাকে নিয়ে যায় বড় বড় সব। হােটেলে। রাজকীয় সব খাবারে ভরে যায় টেবিল। অনাবিল সুখের স্রোতে ভেসে যাচ্ছি।

মাসখানেক পরেই আমি গর্ভবতী হলাম। এই একটি মাস আমার বর সব সময় আমার। গায়ে গায়ে লেগে ছিল। বিশেষ বেরুত না কোথাও। একমাস পরে বেরুতে শুরু করল। সকালে দশটার মধ্যে বেরিয়ে যায়, ফেরে রাত দশটার পরে গুচ্ছের মদ গিলে। বিয়ের একমাসের মধ্যে জানতে পারিনি, আমার বর মদ খায়। ও বেরুতে শুরু করার পর আমি কেমন যেন একা হয়ে গেলাম। বাড়িতে কাজের লােকজন আছে, তাদের সঙ্গেই কথা বলে। সময় কাটাতে হয়। কিন্তু ঠা-ঠা নিস্তব্ধ দুপুরটাকে বড় বড় মনে হয়। যেন কাটতেই চায় না। শুয়ে বসে টিভি দেখে সময় কাটাই। কোনও কোনও দিন বিকেল-সন্ধ্যের দিকে আমার বর ফোন করে আমাকে রেডি হতে বলে। তারপর আমাকে সঙ্গে নিয়ে যায় থিয়েটার বায়ােস্কোপ দেখাতে। রাতের খাবার বাইরে খেয়ে বাড়ি ফিরি। তখন আমার মুখেও মদের গন্ধ থাকে। ছুটির দিনেও বেড়াতে বেরুই ওর সঙ্গে। একটু একটু করে সােসাইটি চিনতে শুরু করলাম। মদে অভ্যস্ত হতে লাগলাম। সাজ-পােশাকে উগ্র আধুনিকা হয়ে উঠছিলাম। আমার বর আমাকে যেমনভাবে গড়তে চেয়েছে, সেইভাবেই গড়ে উঠেছি একটু একটু করে।

মাঝে মাঝে আমার বর আমাকে বোঝাতে শুরু করল, এখনি যদি আমার বাচ্চা কাচ্চা হয় তাহলে আমি নাকি বুড়িয়ে যাবো। শরিরের বাধুনি নষ্ট হয়ে  যাবে।

আমি রাজি হইনি। ফলে, ও রেগে গেলে আমার ওপর। যখন তখন অশান্তি হতে পরে বাধ্য হয়ে আমি ওর কথা মেনে নিলাম। একদিন সকালে ও আমাকে নার্সং হােমে নিয়ে গিয়ে খালাস করিয়ে দিল। 

এরপর থেকেই একটা ব্যাপার অনুভব করতে লাগলাম, আমার প্রতি ওর আকর্ষন কমে যাচ্ছে। সেই উদ্দামতা যেন আর নেই। চটকা ভাঙতে শুরু করেছে। আমাকে বলে দিল কদিন বাপের বাড়ি থেকে  ঘুরে আসতে। হাতে মােটা টাকা দিয়ে দু সপ্তাহের জন্য বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিল। বলল, ও-ও ওই সময় কলকাতায় থাকবে না, উত্তরবঙ্গে যাবে চা-বাগান দেখভাল করতে। শুনেছি উত্তরবঙ্গে ওর অনেকগুলি চা-বাগান আছে। ট্রান্সপোর্ট,  চালকল ও  তেলকলের ব্যবসাও আছে ওর। বিয়ে হওয়া ইস্তক ওর কোনও আত্বিয় সজনের কথা শুনিনি কোনওদিন। জিজ্ঞেস করলে বলে, শিলিগুড়িতে বাড়ি, জমি-জায়গা আছে। বাবা মা থাকে সেখানে। দুই বােনের বিয়ে হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে উত্তরবঙ্গে গেলে বাবা-মায়ের সাখে দেখা হয়। বােনেরা কোথায় থাকে জানতে চাইনি। শিলিগুড়িতে আমাকে নিয়ে যাবার কথাও কখনও বলেনি।

আমি বাপের বাড়ি যেতে ঘর যেন আলােয় ভরে উঠল। বাবা, মা ও ভাইবােনেদের ভরে একগাদা দামী দামী জামা-কাপড় ও নানারকম উপহার নিয়ে এসেছি। আমাকে দেখে সবাই খুশি। হাত খুলে খরচ করে যাচ্ছি। যখন তখন গাড়ি আনিয়ে ভাইবােনদের নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াই, নামী হােটেলে খেতে যাই। পাড়ায় অনেকে মন্তব্য করে, দেমাকে আমার নাকি মাটিতে পা পড়ে না। রূপের ছটায়, যৌবনের দাপটে আমার অহঙ্কার নাকি তুঙ্গে। ভাগ্য আমাকে আকাশের চাঁদ হাতে এনে দিয়েছে!

বাপের বাড়িতে সাতদিন থেকেই হাঁপিয়ে উঠলাম। আসলে বিলাসবহুল জীবনে তখনই বেশ কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। বর উপস্থিত না থাকলেও আপন গৃহের টান অনুভব করলাম। বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে আবার উঠে এলাম রাজপ্রাসাদে। শয়ন কক্ষে ঢুকে বিরাট ধাক্কা খেলাম। তখন সকাল পৌনে আটটা। দেখলাম, আমার বিছানায় আমার জায়গায় আমার বরের সঙ্গে শুয়ে আছে একজন মেয়েমানুষ। মেয়েমানুষটি পুরােপুরি নগ্ন। উদ্ধত স্বাস্থ্য। আমার বরের খােলা বুকে মাথা রেখে নিদ্রিত। রাগে দুঃখে ক্ষোভে আমি চিৎকার করে উঠলাম। ধড়মড় করে ওরা দুজনে উঠে পড়ল। মেয়েমানুষটি পরিত্যক্ত শাড়িটা দিয়ে কোনওরকমে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করল। আমার বর-ঠাণ্ডা নির্লিপ্ত গলায় বলল, তুমি বাইরে যাও। জাস্ট গেট আউট। যখন ডাকব তখন ঘরে আসবে।

আমি সরােষে মুখ বিকৃত করে বললাম, নির্লজ্জ বেহায়া দুশ্চরিত্র ইতর কোথাকার। ওই কুত্তিটা কে ?

আমার বর উঠে এসে সপাটে একটা চড় কষাল আমার গালে। আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কাছে তাের সঙ্গে ওর কোনও তফাৎ নেই। তােদের মতন মাগী আমার অনেক আছে। যখন যাকে ইচ্ছে নিয়ে শোব। ইচ্ছে হলে থাকবি, নাহলে যেখানে খুশি যেতে পারিস।

লজ্জায় অপমানে আমি কুঁকড়ে গেলাম। মেঝেয় বসে পড়লাম মুখ ঢেকে। মনে মনে। প্রতিজ্ঞা করলাম, এর বদলা আমি নেব। | প্রথম বদলা নিলাম ড্রাইভারের সঙ্গে শুয়ে। তার কাছেই ধীরে ধীরে জানতে পারলাম আমার বরের আসল পরিচয়। শিলিগুড়িতে ওর ঘর-সংসার আছে। আছে বউ ও দুটি সন্তান। মাসে বারদুয়েক সেখানে যায়। কলকাতায় নিত্য নতুন মেয়েমানুষ নিয়ে মেতে থাকে। বাঁধা মেয়েমানুষও আছে একাধিক। প্রচুর টাকা দিয়ে সকলের মুখ বেঁধে রেখেছে।

মনে মনে হিসেব করে নিলাম, আমাকেও ওর বাঁধা হয়েই থাকতে হবে। বিয়েটা আসলে লােক-দেখানো। হয়তাে অনেক মেয়েকেই প্রলােভন দেখিয়ে বিয়ে করে শেষপর্যন্ত নিজের বাঁধা করে রেখে দিয়েছে।

ড্রাইভারের সঙ্গে দুদিন শুয়েছি। মাঝবয়সী বিহারী মুসলমান। রাতে অবশ্য তথাকথিত বরের সঙ্গেও শুতে হচ্ছে। কিন্তু সঙ্গমের আনন্দ বেশি পাচ্ছি গােপন পরকীয়ায়। এক সপ্তাহের জন্য আমার বর উত্তরবঙ্গে গেল। যাবার আগে আমাকে পর্যাপ্ত অর্থ, সর্বক্ষণের জন্য গাড়ি ও অগাধ স্বাধীনতা দিয়ে গেল। ঠারে ঠোরে নিজের দুর্ব্যবহারের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিল। আমি খুব একলা হয়ে গেলাম। সীমাহীন নিঃসঙ্গতা আমাকে গ্রাস করল। ইচ্ছে করলে ড্রাইভারকে ডাকতে পারতাম। কিন্তু ড্রাইভারকে নিয়ে শুয়েছিলাম শুধুই বদলা নেবার জন্য। তাই নিঃসঙ্গতা কাটাতে ড্রাইভার মনঃপূত হল না।

চৈত্রের দীর্ঘ দুপুর যেন কাটতেই চায় না। রােদ পড়ে এলে শোবার ঘরের এ.সি. বন্ধ করে ছাদে গেলাম। সেখানেও বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। রােদে তখনও বেশ তাত। নিচে নেমে বাথরুমে ঢুকলাম। শাওয়ার খুলে বেশ আয়েস করে গা ধুলাম। শ্যাম্পু করা চুল ভেজালাম না। গা মুছে সারা গায়ে ঠাণ্ডা বডি-স্পে ছড়ালাম। তারপর জুত করে সাজালাম নিজেকে। পুরাে আধুনিক আকর্ষণীয় সাজ। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললাম।

বেশ কয়েকটা বড় বড় হােটেল ও ক্লাবে বরের সঙ্গে গিয়েছি এবং ওর বৃত্তের অনেকের সঙ্গেই আমি যথেষ্ট পরিচিত। একটা বড় ক্লাবেই গেলাম। আমাকে একা পেয়ে বেশ কিছু তােষামুদে মােসাহেব আমাকে ঘিরে ধরল। আমিও তাদের যথেষ্ট প্রশ্রয়ের কটাক্ষে বিদ্ধ করলাম। মদ্যপানের জন্য সকলেই আমাকে যার যার টেবিলে আহ্বান জানাতে লাগল।

শেষমেষ একজনকে বেছে নিলাম। সকলের সামনেই তাকে ক্লাব থেকে বের করে আনলাম। আমার গাড়িতে করে তাকে নিয়ে গেলাম একটা বড় হােটেলে। সেখানে পানভােজন সেরে পুরাে বিল মেটালাম আমি। তারপর তাকে নিয়ে গিয়ে তুললাম সােজা আমার বিছানায়। সে তাে না চাইতে হাতে স্বর্গ পেল। আমি যে কেন এসব করছি তার কৈফিয়ৎ দেবার কোনও প্রশ্ন নেই। ড্রাইভার সবই বুঝতে পারছে, তারও কিছু বলার নেই।

সান্ধ্যকালীন নিঃসঙ্গতা বলতে আর কিছুই রইল না। যে কদিন বর উত্তরবঙ্গে ছিল, প্রত্যেক দিনই বিভিন্ন ক্লাব থেকে পছন্দ মতন পুরুষ ধরে নিয়ে গেছি। তাকে খাইয়েছি, দেহ দিয়েছি, কাউকে কাউকে খুব ভালাে লেগে গেলে দামী উপহারও দিয়েছি। যদিও প্রত্যেকের সঙ্গে যােগাযােগের ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু কারাে সঙ্গেই দ্বিতীয়বার শুইনি।

এর ফলে দুপুরের নিঃসঙ্গতা আরও বড় করে দেখা দিল। সারা বাড়ি খাঁ খাঁ করছে। কাজের লােকজন বিদায় হয়েছে অনেকক্ষণ, দু-একজন যারা সর্বক্ষণের লােক, তারা কাজকর্ম সেরে বিশ্রাম নিচ্ছে।

বর ফিরে আসার পর তার সম্মতি নিয়ে একটা ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম। দুপুরের সেশনটাই বেছে নিলাম। বেলা দুটো থেকে পাঁচটা। শিক্ষক শিল্পী মহাশয়ের বয়েস চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ। প্রথমেই তাকে গেঁথে ফেললাম। যাতে আমার পরবর্তী শিকার ধরার ব্যাপারে মুখ খুলতে না পারে।

এভাবেই ধীরে ধীরে আমার পুরুষ শিকারের বৃত্তটি বড় হতে লাগল। একটা ব্যাপার বুঝতে পারি, কচিকাঁচা যুবা পুরুষদের আমার বড় একটা পছন্দ নয়। চল্লিশােধেঁর পাকা অভিজ্ঞ পুরুষরাই আমাকে টানে বেশি। একবছরের মধ্যে অনেক পুরুষকে একাধিকবার নিয়েও শুলাম কিন্তু হঠাই আবিষ্কার করলাম, আমি কিন্তু আর গর্ভবতী হইনি।

যে নার্সিংহােমে আমাকে খালাস করিয়েছিল সেখানে গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম। ডাক্তার পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, আমার বরের লিখিত নির্দেশে আমাকে চিরদিনের জন্য বন্ধ্যা করে দেওয়া হয়েছে। কথাটা শুনে আমি সাংঘাতিক ভেঙে পড়লাম। ভবিষ্যতে মা হতে পারলে হয়তাে আমি বদলে যেতে পারতাম। অন্য জীবন শুরু হতে পারত। সেই সম্ভাবনা হারানােয় আমি আরও ব্যভিচারিণী হয়ে উঠলাম। হাই সােসাইটির এক নম্বর স্বৈরিণী, দ্বিচারিণী মিসেস আইভি সেনগুপ্তা। আমার একটু সঙ্গ, একটু মন পাবার জন্য ভাদ্র মাসের কুকুরের মতন অসংখ্য পুরুষ আমার পেছনে লেগে থাকে।

ফোনটা বাজছে। নিশ্চয়ই রুদ্র। ছোঁড়াটা বড় জ্বালাচ্ছে। একেবারে নাছােড়বান্দা। একবার ওকে নিয়ে শুয়েছিলাম। বড্ড আনাড়ি। ওর জীবনে প্রথম মেয়েমানুষ আমি। নগ্ন নারী আগে কখনও দেখেনি। একবার আমাকে পেয়েই নেশা ধরে গিয়েছে, একেবারে পাগল-পাগল অবস্থা। ওর কাঙালপনা দেখে বেশ মজা পাই। জেদ ধরে বসে আছি, কিছুতেই ওকে ঘেঁষতে দিচ্ছি না।

ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেল। জানি, আবার বাজবে। বাজুক। বেজে যাক। দিন পনের আগে রুদ্রকে প্রথম দেখি একটা পাঁচতারা হােটেলে। উত্তীর্ণ সন্ধ্যায় সাঁতার কাটছিল সুইমিংপুলে। আমি এক পুরুষসঙ্গীর সঙ্গে অদূরে বসে হুইস্কি পান করছিলাম সঙ্গীটি আমার সমবয়সীই হবে। কিন্তু আমাকে দেখে কেউ পঁচিশের বেশি বলবে না।

রুদ্রকে দেখে তীব্র আকর্ষণ অনুভব করলাম। সুপুরুষ সুদর্শন যুবক। বয়স আনুমানিক পচিশ ছাব্বিশ। পরনে সুইমিং কম, খালি গা। রােমশ বুক, জলে ভেজা শরীর, মাথার লম্বা চুল থেকে টুপ টুপ করে জল গড়াচ্ছে। সিড়ি বেয়ে জল থেকে উঠে আসছে। আমি আমার সঙ্গীকে কিছু না বলেই সােজা এগিয়ে চললাম ওর দিকে। ততক্ষনে এ তােয়ালে ফেলেছে। আমি স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি ওর মুখােমুখি এসে ডাল, ও যেন পাথরের স্ট্যাচু হয়ে গেল। আমার রূপের কিরণ ঠিকরে যাচ্ছে ওর পাথর আমার চোখে ওর চোখ আটকে গিয়েছে। কয়েক মুহূর্ত। আমার মুখ দিয়ে ফিসফিস করে। বেরিয়ে গেল, ‘অবিকল গ্রীক ভাস্কর্য !  স্বপ্নবিষ্টের মতন রুদ্র উচ্চারণ করল, “কিছু বলছেন ? আমি বললাম, হ্যা। তুমি ঠিক যেন এক গ্রীক ভাস্কর্য ! আমি অভিভূত। আমার মুখে ‘তুমি’ শুনে ও আরও ঘাবড়ে গেল। বােকা বােকা হাসি ওর ঠোটে।। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী নাম তােমার ?

ও জবাব দিল, রুদ্র। রুদ্র সামন্ত। আমি দু হাত জড়াে করে বুকের কাছে ঠেকিয়ে বললাম, আমার নাম আইভি। কাল সন্ধের পরে সি.এস.সি.-তে চলে এস। তােমার সঙ্গে ভালাে করে আলাপ হবে। কাল কিন্তু তুমি আমার গেস্ট। তােমাকে ডিনার খাওয়াব।

ও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাতেই আমি ফিরে গেলাম আমার সঙ্গীর কাছে। সঙ্গীটি জিজ্ঞেস করল, ফাসালে নাকি ছােকরাটাকে ? পাক্কা লেডিকিলার।

আমি হুইস্কিতে চুমুক দিয়ে বললাম, সেটা টের পাওয়া যাবে অদূর ভবিষ্যতে। তুমি আজ কেটে পড়তে পার। এখন আমার কিছুই ভাল্লাগছে না।

ব্যস্ত হয়ে হতাশ স্বরে সঙ্গীটি বলল, ‘সেকি! প্রায় মাসখানেক পরে তুমি নিজে থেকেই। ডাকলে, কত আশা নিয়ে আজ তােমার কাছে এলাম। এখন তাড়িয়ে দিচ্ছ !

দপ করে মাথাটা গরম হয়ে গেল। ওই, মুডের ব্যাপার আর কি ! ইচ্ছে আর অনিচ্ছে। পাশাপাশি ঘুরঘুর করে। ঝট করে ব্যাগ খুলে দুটো পাঁচশাে টাকার নােট বাড়িয়ে ধরে বললাম, এটা ধর, অন্য কোথাও গিয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা করে নিও। এখন আমার মুড নেই।

সঙ্গীটি প্রায় আর্তনাদ করে উঠল, কি করছ কি ! তােমাকে ছেড়ে অন্য কারও কাছে। যাব ! দুধের স্বাদ কি ঘােলে মেটানাে যায়। তাও আবার টাকা দিয়ে অপমান করতে চাইছ ! ঠিক আছে, আমি চলে যাচ্ছি।

এই হল আমার চরিত্র ! টাকাটা মুঠোয় চেপে ধরে বলল, তুমি তাে জান, টাকা দিয়ে কেউ আমার শরীর পায় না। প্রয়োজনে অনিই উকি দিয়ে পুরুষ কিনি।

স্টুয়ার্ডকে ডেকে টাকাটা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

পরের দিন যথাসময়ে সি.এস.সি-তে রুদ্রর সঙ্গে দেখা হল। এক খােলামেলা টাইট পােশাকে নিজেকে আবৃত করেছিলাম, যাতে আমাকে দেখামাত্র করে মাথা ঘুরে যায়। ওকে নিয়ে একটু খেলতে চেয়েছিলাম। ওকে জানতে নিতে চাইনি, শেষ পর্যন্ত আমি কতটা এগােব।

পান করতে করতে কথা হচ্ছিল। ও অস্বস্তি কাটিয়ে আমাকে তুমি বলতে পারছিল  না। আমি প্রশ্রয়ের সঙ্গে ওকে সাহস দিলাম, কোনও মেয়েকে তুমি’ না বললে তাকে কিন্তু চুমু খাওয়া যায় না।

উত্তেজনায় সহসা ওর মুখ রক্তিম হয়ে উঠল। বলল, যদিও সে-অভিজ্ঞতা এখনও হয় নি, কিন্তু একটি চুম্বনের জন্য তােমার পায়ের কাছে সারাজীবন বসে থাকতে পারি। ব্যাপারটা রােম্যান্সের দিকে গড়াচ্ছে দেখে আমি কথা ঘােরালাম। ওর কাজের কথা, বাড়ির প্রসঙ্গ পেড়ে বসলাম।

সানফ্রানসিসকোয় রুদ্রর বাবার বিশাল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি। সারা পৃথিবী জুড়ে ওদের ব্যবসা। রুদ্র নিজে কেমিক্যাল এঞ্জিনীয়র। কলকাতায় পার্ক স্ট্রীটে ওদের ব্রাঞ্চ অফিসের কর্তা রুদ্র। ওকে মাসে দু-মাসে একবার করে আমেরিকা যেতে হয়। মা বেশিরভাগ সময় কলকাতায় সল্টলেকের বাড়িতেই থাকে। বছরে দু-একবার সানফ্রানসিসকোয় যায় বাবার কাছে। একটি বােন, তিনবছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। থাকে বম্বেতে। একমাত্র জামাই বম্বে অফিসের সর্বময় কর্তা।

আমি নিজের সম্পর্কে রুদ্রকে বললাম, আমি একজন হতভাগ্য গৃহবধূ। নিঃসঙ্গ ও নিঃসন্তান। সচ্ছল, স্বেচ্ছাচারী। বাকিটা রুদ্র নিজে থেকে আমাকে চিনে নেবে। কায়দা করে জেনে নিলাম, রুদ্রর ড্রাইভার আছে কিনা। না, ও নিজেই ড্রাইভ করে। ঠিক করলাম, ড্রাইভারসহ গাড়িটা পাঠিয়ে দিয়ে রুদ্রর সঙ্গে ফিরব। সে কথা বলতে রুদ্র উচ্ছাসে ফেটে পড়ল। এটা নাকি ওর কাছে একটা দুর্লভ সুযোেগ। অতএব গাড়ি ছেড়ে দিলাম।

পান-ভােজন সেরে ক্লাবের বিল সই করে দিয়ে রুদ্রর গাড়িতে ওর সহচারী হলাম। গাড়ি চালাতে চালাতে রুদ্র উসখুস করতে লাগল। বুঝতে পারছি, চুম্বনের ক্ষুধা ওর তীব্র। কিন্তু আমি যতক্ষণ না সুযােগ দিচ্ছি, ও সাহস করে এগােতে পারছে না।

আমার প্রাসাদ সি.এস.সি. থেকে বেশি দূরে নয়। সেদিকে না গিয়ে আমরা নির্জনতার খোঁজে বিদ্যাসাগর সেতুর পথ ধরলাম। সেতুর মাঝামাঝি নিচে বহমান গঙ্গার ওপরে গাড়ি

সাইজ করতে বললাম কেন্দ্রকে। গাড়ির সবকটা কাচ তােলা, এসি চলছে। আমি রুদ্রর কাধে মাথাটা এলিয়ে দিলাম। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কখনও কোনও যুবতী মেয়েকে দেখেছ।

ও জবাব দিল, না।

আমি বললাম, “তােমার এমন সুপুরুষ চেহারা, কোনও মেয়ে-বন্ধু জোটেনি, এটা বিশ্বাসযােগ্য নয়। ষােল বছর বয়সে আমি প্রথম পুরুষসঙ্গ করেছি।’

জবাবে রুদ্র বলল, তােমার সঙ্গে আগে দেখা হলে কী হত জানি না তবে আমার জীবনে ইতিপূর্বে কোনও নারীর আবির্ভাব ঘটেনি। নিজের কেরিয়ার আর ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনও দিকে নজর দেবার সুযােগ পাইনি। তবে হ্যা, খেলাধূলা ও শরীরচর্চার ব্যাপারে আমি বরাবরই আগ্রহী ও যত্নবান।

আমি ওর গালে গাল ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী, মেয়েমানুষের স্পর্শ পেলে তাে ? এবার বল, আমাকে নিয়ে তুমি কী করতে চাও ? | রুদ্রর গাল উত্তপ্ত। বুঝতে পারছি উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সারা শরীরে। ও বলল, আমি কি একটা চুমু খেতে পারি ?

আমি জিজ্ঞেস করলাম, জান, কীভাবে খেতে হয় ? ও বলল, তুমি শিখিয়ে দাও।

আমি দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ঠোটে চুম্বন করলাম। একই কায়দায় ও-ও আমাকে চুম্বন করল। পরের পদক্ষেপ কী, তা ও জানে না অথবা জানলেও সাহস পাচ্ছে না। এ ততা জানে না, আমি ওকে কতটা অগ্রসর হতে দেব। ওর সারা শরীর তেতে আগুন।

আমি ওর বন্ধন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিলাম। বললাম, ‘কাল দুপবে ভs আমার বাড়িতে যদি আসতে পার তাহলে তােমাকে আরও কিছু শিখিয়ে দেব। এখন ঠান্ডা হয়ে গাড়ি চালাও। আমাকে নামিয়ে বাড়িটা চিনে যাও। ঠিক আছে ?

ঠিক যে নেই সেটা বুঝতে পারছি। ওর আগুন এখন সহজে নিভবে না। জলজ্যান্ত। আস্ত একটা নারী শরীর ওর নাগালে, তার স্পর্শ এবং চুম্বনের রেশ ওর মাথার কোষে। কোষে দাপাদাপি করছে। ও বলল, ‘তােমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। আমার সঙ্গে তুমি থাকতে পার না ?

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় ? | ও বলল, ‘পার্ক স্ট্রীটে অফিসের ওপরে আমাদের নিজস্ব গেস্টহাউস আছে। একেবারে ফাইভ স্টার হােটেলের মতন সব ব্যবস্থা। সেখানে থাকা যায় না ?

আমি বললাম, না। তুমি তাে জান, আমি বিবাহিতা। আমার বর যদি আমায় রাতে তলব করে, তখন কী হবে ? একটা কাজ কর। কাল না হয় তােমাদের গেস্টহাউসেই যাওয়া যাবে। তুমি একটা ফোন করে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেও। এখন চল, আমার বাড়িটা চিনে নেবে।

“ঠিক আছে’, বলে ও গাড়ি স্টার্ট করল । ডবল টোল ট্যাক্স দিয়ে আমরা ফিরে চল্লাম। আমাকে নামানাের আগে পরিষ্কার দেখতে পেলাম, ওর চোখে-মুখে অতৃপ্ত আর অসহায়তার ছাপ। বেচারি ! নামার আগে ওকে ফোন নম্বর দিয়ে বললাম, কাল দুপুরে ফোন করাে। ওর গালটা টিপে দিয়ে নেমে গেলাম।

দুপুরে না, সকালেই ফোন পেলাম রুদ্রর। বলল, সারা রাত ঘুমােতে পারেনি। তার ওপর জরুরি একটা কাজ পড়ে গেছে, সন্ধ্যার আগে ফ্রি হতে পারবে না। আমি বলে দিলাম, ফ্রি হয়ে আমাকে যেন ফোন করে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় রুদ্রর সঙ্গে ওদের গেস্টহাউসে পৌঁছলাম। সত্যিই, ফাইভ স্টার হােটেলের মতােই সব ব্যবস্থা। উর্দি-পরা সেবক এক পায়ে খাড়া আজ্ঞাবহ দাসের মতন। পানাহারের ব্যবস্থা রুদ্র করেই রেখেছিল। আমি গােড়া থেকেই লাগামের রাশ টেনে রাখলাম। খেলা শুরু হতে দেরি আছে। বেডরুমের বাইরে বড় ড্রইং রুম। মােটা কার্পেটের ওপরে দামী সােফাসেট। মাঝখানে। কাচের টপ সেন্টার টেবিল। উর্দি-পরা লােকটা সেন্টার টেবিলে পানীয়, গ্লাস, জলের জাগ আইস-বক্স সাজিয়ে দিল। একটা প্লেটে কাজু বাদাম, অন্য একটিতে স্যালাড। মুখখামুখি বসে আমরা পান শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পরে হট বক্সে রাখা গরম গরম কাবাব আর চিলি ফিশ রেখে গেল লােকটি। খেতে খেতে রুদ্র বলল, আইভি, গতকাল তােমার ছোঁয়া আর চুম্বনের স্বাদ আমাকে পাগল করে দিয়েছে! রাতে আমি ঘুমােতে পারি নি। সারা রাত তােমার মুখটা ভেসেছিল চোখের সামনে। আমি বললাম, আর আমাকে ছুঁয়াে না, চুমুও খেও না। নাহলে আজও তােমার ঘুমের বারােটা বাজবে।

কথা শুনে ও আঁতকে উঠল। বলল, ঘুম না হলেও তােমাকে ছোঁব, চুমু খাব। তাতে যদি আজীবন বিনিদ্র থাকতে হয়, তাই থাকব। ” আমি বললাম, তার চেয়ে বিয়ে করে ফেল। বউয়ের সঙ্গে যা যা করতে হয় সবই করবে। ঘুমটিও হবে খাসা। পরস্ত্রীর কৃপা প্রার্থনা করতে হবে না। | রুদ্র বলল, তুমি বােধ হয় বিশ্বাস করবে না, বউ ব্যাপারটা আমার কাছে সােনার পাথরবাটির মতন। একটি মেয়েমানুষের সঙ্গে, সে যদি বউ হয়, কী করা উচিত, আমি সত্যি জানি না।

আমি বললাম, জানার দরকার নেই। একসঙ্গে থাকলে সবই জানতে পারবে। মেয়েরা গা থেকে একটা একটা করে সব খুলে নগ্ন হলে, তােমাকে আর বলে দিতে হবে না, কী করতে হবে।

রুদ্রর চোখে-মুখে আগুনের হলকা। ও বলল, তাই ? কিন্তু লজ্জা করবে না ?

আমি বললাম, ‘লজ্জা কেটে যায়। দুজনকেই তাে নগ্ন হতে হয়। জামা-কাপড় যে খােলবার জন্যেই পরা। রুদ্র বলল, আমি ভাবতে পারছি না। তােমার কথা শুনেই আমার শরীরে কী যেন হচ্ছে।

ও ঝট করে উঠে আমার পাশে এসে বসল। একেবারে গা ঘেঁষে। মুখের খুব কাছে মুখ এনে বলল, একটা খাব ?

আমি বললাম, না। আমার ভালাে লাগছে না। যখন আমার ইচ্ছে হবে তখন খেও। একটু ধাক্কা খেল রুদ্র। সরে বসল। মুহূর্তে মুখটা যেন শুকিয়ে আমসি হয়ে কােন কিছুক্ষণ নীরবে পানাহার চলল। আমি আবার উসকে দিলাম ওকে। বলল ব্যাপার, চুপ মেরে গেলে কেন ? রাগ হয়েছে আমার ওপর ? আচ্ছা বাবা, আমারটাই না হয় আজ তােমাকে একটুখানি দেখিয়ে দেব। মুহুর্তে চকচক করে উঠল রুদ্রর মুখ-চোখ। আমি ওর একটা হাত টেনে এনে তার বুকে চেপে ধরলাম। আশ্চর্য ! ও কিন্তু আমার বুক মর্দন করল না। এতক্ষণে আমি নিশ্চিন্ত হলাম, ও একশাে ভাগ ভার্জিন। আমি ওকে বুকে টেনে এনে জড়িয়ে ধরলাম। ওর যখন কাছে মুখ এনে বললাম, নাও, চুমু খাও। মুহূর্তে ও আমার ঠোটের ওপর হামলা শুরু করল। কিন্তু বেশিক্ষণ ওকে সুযােগ দিলাম না। মিনিট খানেকের মধ্যেই আমি নিজেকে মুক্ত করে নিলাম। ওকে আমি একটু একটু করে যৌনতার স্বাদ দিচ্ছি। নারীত্বের রহস্য স্বচ্ছ আবরণে ঢেকে রেখেছি ওর কাছে। ইচ্ছে করেই। এটাই আমার খেলা।

ছােট ছােট চুমুকে হুইস্কি খেতে খেতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, রুদ্র, এখন তােমার কী ইচ্ছে করছে বল।

ও বলল, তুমি কী দেখাবে বলছিলে ? আমি বললাম, ও হঁ্যা, দেখাব। চল, আমরা বেডরুমে যাই।

ওকে নিয়ে বেডরুমে গেলাম। বিছানায় ওকে বসিয়ে বাথরুমে গেলাম। ফিরে এলাম এক মিনিট পরে। বুকের ওপর ঢাকা শাড়িটা সরিয়ে দিলাম। উদ্ধত ভরাট ধবধবে ফর্সা দুটি স্তন কালাে ব্রেসিয়ারের বন্ধনে আবৃত। ব্লাউজটা খুলে রেখে এসেছি। সীমাহীন বিস্ময়ে ও আমার গায়ের কাছে এসে দাঁড়াল। কিন্তু আমাকে স্পর্শ করতে ভুলে গিয়েছে ও। অপার রহস্য ওর দৃষ্টিতে। আমি ওর গা ঘেঁষে শরীরের স্পর্শ দিলাম। নিঃসাড়ে ওর প্যান্টের জীপ খুলে ভিতরে হাত ঢােকালাম। পুরুষাঙ্গটি বাঁকা তালগাছের মতন আটকে আছে জাঙিয়ার ভেতর। আমি ওকে ফিসফিস করে বললাম, ‘কিছু বুঝতে পারছ ? ) গলায় ওর স্বর আটকে গিয়েছে। আমি অনুভব করলাম, ওর জাঙিয়া ভিজে যাচ্ছে।

হাত বের করে আমি দ্রুত বাথরুমে চলে গেলাম। ফিরে এসে দেখলাম,ও কার্পেটের ওপর পড়ে আছে। ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসলাম। মুখে কপালে হাত দিলাম। আমার হাত পড়ে গেল। আমি নিচু হয়ে ওকে চুম্বন করলাম। ও আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। চুপি চুপি। বলল, “আর পারছি না। আমি ফিসফিস করে বললাম, ‘পারবে, ঠিক পারবে। আমি সব শিখিয়ে দেব।

পরের দিন সন্ধ্যায় একটা ব্লু-ফিল্ম-এর ক্যাসেট নিয়ে রুদ্রর সঙ্গে ওদের গেস্টহাউসে গেলাম। মদ্যপান করতে করতে ক্যাসেটটা চালিয়ে দিলাম। রুদ্রর চোখের সামনে সব রহস্যের জট খুলে যাচ্ছে। উত্তেজনায় কাঁপছে ওর গােটা শরীর। আমি ঘন হয়ে ওর গায়ের কাছে সরে এলাম। ওর কানের লতিতে ছােট করে দাঁত বসিয়ে বললাম, কী, এবার সব বুঝতে পারছ ? পারবে তাে ?

নির্বাক রুদ্রকে একটু একটু করে আমি অনাবৃত করতে শুরু করলাম। ছবি শেষ হতে সম্পূর্ণ নগ্ন আমি আর রুদ্র বিছানায় গেলাম। পর পর দুবার ব্যর্থ হয়ে তৃতীয়বার ও আমাতে প্রবিষ্ট হতে পারল। কিন্তু ধাক্কার ব্যাপারটা ও আয়ত্তে আনতে পারছে না। ফলে, অতৃপ্তির একরাশ বিরক্তি আমাকে ভর করে বসল। ও বিচ্ছিন্ন হতেই আমি ওকে ব্যাপারটা বােঝাবার চেষ্টা করলাম। ক্যাসেট চালিয়ে কয়েকটা জায়গা আবার দেখালাম ওকে। দু ঘণ্টার মধ্যে আট দশবার ও প্রবিষ্ট হল। স্খলন যা হবার প্রথম দিকে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ওর পুরুষাঙ্গ অবনমিত হয় না। আবার ও চেপে বসে আমার ওপরে। কামনার আগুন জ্বলছে আমার সারা দেহে। নেভানাের কোনও উপায় নেই। বীতশ্রদ্ধ হয়ে আমি ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম। বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে ঠাণ্ডা জলে স্নান করলাম। একটু ধাতস্থ বােধ করলাম। নিজেকে পরিবেষ্টিত করে বেডরুমের বাইরে সােফায় এসে বসলাম। রুদ্র তখনও উখিত পুরুষাঙ্গ নিয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আমি বড় করে হুইস্কি ঢেলে জল মিশিয়ে আয়েস করে চুমুক দিলাম। | কিছুক্ষণ পরে একটা তােয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এল রুদ্র। করুণাপ্রার্থীর মতন মিনতি করল আমায়, ‘প্লিজ আইভি, আর একটিবার, প্লিজ ! ওর পরনের তােয়ালে তাবুর আকৃতি নিয়েছে।

আমি নির্লিপ্ত ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। কেটে কেটে বললাম, আমি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাউকে কিছু করতে দিই না। কোনও ব্যাপারে আমার আগ্রহ বা ইচ্ছে হলে আমাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আমি উঠছি।

কঁাধের ব্যাগটা নিয়ে উঠে পড়লাম। দরজার দিকে এগােচ্ছি। রুদ্রর গলা কানে এল, আইভি, তুমি কিন্তু এটা ঠিক করলে না। আমাকে অগ্নিগর্ভে ছুঁড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছ। এর ফল কিন্তু ভালাে হবে না।”

আমি কোনও জবাব না দিয়ে সােজা গাড়িতে গিয়ে বসলাম। টেলিফোনটা বাজছে। ভাবনায় ছেদ পড়ল। ফোন ধরলাম, ‘হ্যালাে’

-বুঝতে পেরেছি। কী বলতে চাও, বল।

কৃপা পাবার যােগ্যতা তােমার নেই। —তুমি যােগ্য করে নাও। —সম্ভব নয়। আমি ভুল ব্যক্তিকে নির্বাচন করেছিলাম। —সেটা কি আমার দোষ? —দোষ গুণের বিচার করে কী লাভ ? লাভ লােকসানের কথা নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে জীবন মরণ নিয়ে। —মানে ? —শােন আইভি, তুমি ডিভোের্স নাও। আমি তােমাকে বিয়ে করতে চাই।

-তােমার মতন একটা রাঙা মুলােকে আমি বিয়ে করতে যাব কোন্ দুঃখে ! বিয়ে করতে চাইলে তােমার পাত্রীর অভাব হবে না।

বিয়ে করলে আমি তােমাকেই করব। তােমাকে আমি গুরু মেনেছি। রুদ্র, তােমার সঙ্গে বাজে কথা বলার সময় আমার নেই।

—আইভি, একটু বােঝার চেষ্টা কর। কোনও বাজে কথা নয়। আমি সিরিয়াসলি বলছি। তুমি ভাবতে পারবে না, সেদিন থেকে আমার একটি প্রত্যঙ্গ সর্বক্ষণ উত্তুঙ্গ হয়ে আছে। আমি কোথাও বেরুতে পারছি না। কোনও কাজকর্ম করতে পারছি না। তােমার নগ্ন শরীর সবসময় আমার চোখের সামনে ভেসে আছে।

-বুঝলাম। কিন্তু আমার কাছে এলেও তােমার কোনও লাভ হবে না। তুমি টানা তিন চারদিন কোনও গণিকাকে নিয়ে পড়ে থাক। তাছাড়া তােমার ওটি নামবে না।

—তিন চারদিন নয়, আমি আজীবন তােমাকে নিয়েই থাকতে চাই।

—আমি কারও বাঁধা মেয়েমানুষ হয়ে থাকতে পারব না। আমি ইচ্ছেমতন পুরুষসঙ্গ করি।

—কিন্তু তােমার খেয়াল-খুশির জন্য একটা জীবন নষ্ট করতে পার না।

—তুমি শুধু শুধু সময় নষ্ট করছ। তােমার মতন আনাড়ি ঢ্যামনা পুরুষ আমার দরকার নেই।

—এটাই তােমার শেষ কথা ? —অনেক আগেই সেটা বােঝা উচিত ছিল।

-বুঝলাম।

লাইন কেটে দিল রুদ্র। ঘড়ি দেখলাম। পাঁচটা বেজে গেছে। আশ্চর্য কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। কারাে সঙ্গ লিপসা এতটুকু আগ্রহ বােধ করছি না। একা থাকতেই ইচ্ছে করছে আমার। স্মৃতির অতল থেকে শুধুই হাতছানির ইশারা।

দুই

ফোনটা কেটে দিয়ে ঘড়ি দেখলাম। পাঁচটা বেজে গেছে। আইভি আমাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল। গত বারাে দিনে অন্তত পঞ্চাশবার ফোন করেছি ওকে। ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত ও আমাকে গ্রহণ করবে। কিন্তু না, ও ওর জেদ থেকে এক চুলও নড়তে চইছে না। আমার গায়ে কামনার আগুন ধরিয়ে দিয়ে আর কাছে ঘেঁষতে দিছে না। সবদিক থেকে এখন আমি বিপর্যস্ত। মানসিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারছি না। আমি ওর কোনও ক্ষতি করিনি অথচ ওর জন্য আমার জীবনটাই বরবাদ হতে চলেছে। অন্য কোনও নারীর কাছে বার ইচ্ছেটাও ও নষ্ট করে দিয়েছে। ওকে যদি কোনওদিন না দেখতাম তাহলে আমার জীবনটা অন্যরকম হত। আমি তাে জানতাম না, আমি আনাড়ি ঢ্যামনা পুরুষ ! ওর আবিষ্কার করার কী দরকার ছিল ! দু-চার দিনের মধ্যে ও তাে অনায়াসেই আমাকে তৈরি করে নিতে পারত। কিন্তু শত অনুরােধেও ও আমাকে সেই সুযােগ দিল না। | ভয়ঙ্কর একটা কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে। সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে তহনই করে দিতে। চাইছে মন। শরীরের সব রক্ত মাথায় উঠে আসতে চাইছে। মুখের ভেতরটা একেবারে তিতকুটে হয়ে গিয়েছে। ঘাের-লাগা একটা ভাব আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। অনেকটা নীট স্কচ গলায় ঢেলে দিলাম। | গাড়ি বের করে ঝড়ের গতিতে ছুটছি বাইপাশ ধরে। বালিগঞ্জ কানেক্টর ধরে সােজা পৌঁছে গেলাম আইভির বাসগৃহে। এর আগে দুদিন এসেছি এখানে। প্রথম দিন বাড়িতে। ঢুকিনি। আইভিকে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় দিন ওকে নিতে এসেছিলাম গেস্টহাউসে যাবার আগে। সেদিন ওর ঘরে বসেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। আমি নিঃসাড়ে সােজা ঢুকে পড়লাম ওর ঘরে। বাধা দেবার মতাে কেউ ছিল না।

আইভি খাটে শুয়েছিল। বন্ধ চোখের ওপর একটা হাত চাপা দেওয়া। আমার উপস্থিতি। ও টের পায়নি। আমি ডাকলাম, ‘আইভি

ও ধড়মড় করে উঠে বসল। ওর দৃষ্টিতে ভয়, বিস্ময় ও চমক। আমি বললাম, এই ভর। সন্ধ্যেবেলায় চুপচাপ শুয়ে কার জন্য অপেক্ষা করছ ? | | আইভি স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। বলল, কারও জন্য অপেক্ষা করছি না। একা থাকতে চাই। আমাকে বিরক্ত করাে না। তুমি চলে যাও।

আইভি আমাকে বসতেও বলল না, তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি ওকে বললাম, ঠিক আছে চলে যাচ্ছি। শেষবারের জন্য তােমাকে একটা চুমু খেতে চাই। আর কোনওদিন আমাদের দেখা হবে না।’ ও শব্দ করে হেসে উঠল। বলল, “ওহে গ্রীক ভাস্কর্য, এরকম করুণাপ্রার্থীর ভূমিকায় তােমাকে মানায় না। মেয়েদের কাছে অনেক কিছু জোর করে ছিনিয়ে নিতে হয়। সে ময়ােদ তােমার নেই। তােমার মতন মেনিমুখাে পুরুষদের আমি ঘেন্না করি। তুমি আসতে পার।

পলকে, বিদ্যুৎগতিতে আমি ওর ওপর ঝাপিয়ে পড়লাম। ঘূণাক্ষরেও ও আঁচ করতে পারেনি, আমি এরকম করতে পারি। টু শব্দটি করার সুযােগ না দিয়ে ওর কণ্ঠনালী টিপে ধরলাম। লােহার বেড়ির মতাে আমার হাত চেপে বসে গেল ওর গলায়। ওর চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে। শূন্যে হাত-পা ছুঁড়ছে। তারপর ধীরে ধীরে এলিয়ে পড়ল। আমি নিশ্চিত হবার জন্য আরও মিনিটখানেক একইভাবে গলা টিপে রাখলাম।

তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সােজা চলে গেলাম লালবাজারে। সারেন্ডার করলাম নিজেকে।

এখন আমি জেল-বন্দী। আমার বিচার চলছে। জানি, আমার ফাঁসি হবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাই হােক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তাে আমার আইভির কাছেই পৌঁছে। যেতে চাই।

Leave a Reply