নীল সায়রের শালুক – মিহির সেনগুপ্ত

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……রমণী ঠাকুরের বাড়িটা ছিল একটু তফাতের যৌশর গ্রামে। সন্ন তার বড় মেয়ে। বাস বছর পনেরাে হয়েছে কী হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই তার সর্বাঙ্গ ছাপিয়ে এমন হৈচৈ শুরু হয়ে গেছিল যে রমণী ঠাকুর তার বিয়ে দেবার জন্য একেবারে হন্যে। কিন্তু এ ব্যাপারে তার দুটো সমস্যা ছিল।…..

……সন্নর বয়স তখন তেরাে কী চৌদ্দ। তথাপি ঐ বয়সী মেয়েদের যীশুদাযেরা কামনার চোখেই যেন দেখতে বাধ্য হতাে। কারণ, ঐ অস্বাভাবিক অবস্থায় অন্য উপায়তাে ছিল না। তখনকার সমাজ পরিস্থিতিটা ছিন্ন ভিন্ন এবং ছন্ন হয়ে যাওয়া একটা দেশের যা অনিবার্যত ঠিক তাই। জীবনের সব আনন্দ, সব বিনোদন এইসব গ্রামীণ প্রেক্ষায় কেন্দ্রীভূত হতাে এক অসুস্থ, অস্বাভাবিক ক্লেদাক্ত যৌনতায়। কোনাে নিয়ম শৃঙ্খলা রুচি ঔচিত্য অনেীচিত্যের ব্যাপার বা শােভন অশােভনের কথা কেউ চিন্তা করত না। নৈরাজ্য, বিশেষ করে চিন্তার ক্ষেত্রের নৈরাজ্য এমনই তমসাচ্ছন্ন ছিল যে তার মধ্যে এক ফোঁটা আলাের চিহ্ন মাত্রও ছিল না। সেই তমসায় অস্তিত্ববান ছিল যেন শুধু অন্ধ সরীসৃপের মতাে অসুস্থ ক্ষুধা আর ক্লেদাক্ত কাম। এবং তা কোনমতেই স্বাস্থ্যেজ্জ্বল দেহমনের স্বাভাবিক ধর্ম ছিল না। যীশুদা, যেমন আগে বলেছি সন্নকে একটু বিচিত্রভাবে ভালবাসত।…..

…..কী করছি? তুমি এহন আচুকা মােরে হাবড়াইয়া ধরইয়া যে চুম্বা চাড়া খাইলা, এহানে ওহানে হাত বুলাইলা, হেডা এটটা অসােইব্য কাম না? অববিয়াতােরা ওযা করে ?

“ক্যান তাের ভাল লাগে নায়? —ভাল লাগলেই অইলে? তুমি আমি কী এক জাইত? আমাগাে কী বিয়া অইবে?……সন্ন এরকম মােক্ষম একটা বাস্তব প্রসঙ্গ তুললে যীশুদা তা এড়িয়ে তাকে তুমুল আদর করতে শুরু করেছিল আবার। কিন্তু তা প্রকৃতই আদর। এবং তা প্রেমেরই।……

….…..এইসব শারীরিক ব্যাপার স্যাপারকে আমরা পাড়া গাঁয়ের লােকেরা ‘অসােইব্য’ ‘কু-আচার বুঝতাম, যদিও তৎসত্ত্বেও এসব যে কমবেশি ঘটত না এমন নয়। বিবাহিত দম্পতি ছাড়া এরকম আচরণ পাপ এমনই আমাদের ধারণা এবং শিক্ষা ছিল। সন্নরও। সে যীশুদার আদরের জবাবে বলছিল, যাও, তুমি বড় অসােইব্য।

-কান, তােমার এসব ভাল লাগে না? আমি কী কিছু খারাপ করছি, না কইছি ?

-জানিনা, যাও। খালি কু-আচার কথা। এসব আমার পছন্দ না। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছিল না যে ব্যাপারটা সে আদৌ অপছন্দ করছে। সে যীশুদার বুকের ভেতর একটা পােবা মেনি বেড়ালের মতাে এম খাচ্ছিল।……..

…….ধলু বলেছিল যে সন্নকে নাকি তারা সব্বঅঙ্গেই ধর্ষণ করেছিল। যােনীদ্বার, পায়ু এবং মুখ বা সম্ভাব্য এমন কোনাে স্থান ছিল না তার শরীরে যেখানে তাকে যৌন প্রহারে লাঞ্ছিত করেনি তারা।……

…..পেয়ারার কথা মনে হতে সন্নর মুখটা ঝিলিক দিয়ে গেল। সঙ্গে যীশুদার। একটা পাকা বা ডাঁসা পেয়ারার খুশিতে সন্ন তার সুডােল, সুন্দর বুক দুটি যীশুদার সামনে উন্মুক্ত করতে দ্বিধা করতাে না। তার লালচে ঠোটে যীশুদার কালাে পুরু ঠোটের আদর নিত। তখনকার বিচারে, এমনকী এখনকারও, ঐসব অসভ্য আচরণ অক্লেশে করতাে সে। তাদের শেষ পর্যন্ত মিলন হয়েছে জেনে বেশ খুশি লাগলাে। তাহলে তাদের সঙ্গে শুক্রবার দেখা হবে।……

…..সন্ন যে অসামান্যা সুন্দরী ছিল, তার চোখ, মুখ, নাক ইত্যাদির বর্ণনায় সেকথা বলা যাবে না। সেসব, বা গায়ের মাজা ফর্সা রঙ, অনেক কিশােরী, যুবতীরই ঐ বয়সে থাকে। যৌবনে ককরীও ধন্যা, সে নিয়ে বলছি না। যে কারণে সন্নকে আমি অসামান্যা বলছি তা ছিল তার অতি ঘন এবং দীর্ঘ বিপুল চুলের আয়ােজন। আর অদ্ভুত দেহ সৌষ্ঠব। যেমন ডাটো লম্বা দেহকাণ্ড, তেমনি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গড়ন। যে কোনাে কিশােরী, যুবতী অথবা বয়স্কা রমণী ঐরকম দেহবল্লরীর জন্য গৌরব করতে পারে। অথচ সে ছিল প্রায় নিত্য উপােষী এক ভিখিরি বামুনের মেয়ে। যীশুদাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরাও ঐ উদাসী দিনগুলােতে, ওখানের ছাড়া ভিটে বা ঝােপঝাড়, পুরােনাে জমিদার বাড়ির পুকুর ঘাটে অকারণে ঘুরে বেড়াতাম না। অন্য সব কিছু বাদ দিয়েও, সন্নর ঐ বিপুল কেশভার, যা দিয়ে সে কখনন কখনাে নগ্নতাকেও বাধ্য হয়ে আবৃত রাখার প্রয়াস পেতাে, সে যে কী আশ্চর্য সম্মােহে আমাদের আচ্ছন্ন করতাে, তা আজও দেহে মনে শিহরণ জাগায়।……

Leave a Reply