শহরের নাম, আমি মনে করি আপনাদের জানা এবং আমার জানানোর কোন প্রযোজন নেই। ব্যস এটুকু বলাই যথেষ্ট যে এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট স্থান পেশোয়ার জেলায় অবস্থিত। সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় নলখাগড়ার পেছনে একটা জীর্ণ কুটিরে সেই মহিলা বাস করে।
মহিলাটির কুটিরের এপাশে কাচা সড়ক, তার ওদিকেই ঘন নলখাগড়ার বন। সড়কের উপর দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীরা নলখাগড়ার বনের কারণে সে কুটির দেখতে পায় না।
নলখাগড়া সবই শুকিয়ে গেছে, কিন্তু মাটির সাথে এমন ভাবে গেঁথে আছে, দেখে মনে হয় যেন দুর্ভেদ্য দেয়াল। এসব নলখাগড়া আগে থেকে বিদ্যমান ছিল নাকি সেই মহিলা পুতে দিয়েছে, জানি না। তবে বলা যায়। যে মহিলার ঘর সে দেয়ানের পর্দার আড়ালে অবস্থিত।
কুটির বলুন, মাটির ঘর বলুন, মোটে তিনটি ছোট ছোট কা মরা । তবে খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পেছনের কামরায় একটি সুন্দর পা নন্ত, তার পাশে একটা উচু স্থানে সারা রাত স্বহ আলো ছড়ানো বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। প্রতিদিন জ্বালানো থাকলেও বাতিটি বেশ পরিষ্কার এবং প্রত্যহ তাতে নতুন করে তেল দেয়া হয়।
এবার আমি আপনাদেরকে সেই মহিলার নাম বলব যে কিনা নিজের মেয়েকে নিয়ে নলখাগড়ার পেছনে বাস করে।
অনেক কথা শোনা যায়। কেউ বলে, সেই মেয়ে তার কথা সন্তান নয় । এক অপরিচিতা অনাথ বালিকাকে সে শৈশব থেকে প্রতিপালন করেছে, কেউ বলে সে তার অবৈধ সন্তান, আবার কেউ বলে এসব কিছু নয়, সেই আসলে তার বৈধ সন্তান। যা কিছুই সত্য হোক সে সম্পর্কে নিশ্চয়তার সাথে কিছু বলা সম্ভব নয়। এ কাহিনী পাঠের পর আপনারাই কোন একটি সিদ্ধান্ত নিম্নে নেবেন।
দেখুন, আপনাদের সেই মহিলার নাম বলতে ভুলে গেছি। আসল কথা হলো তার নাম তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনারাই তার একটি নাম ঠিক করে নিন। ধরুন, সকিনা, মাহতাব, গুলশান বা অন্য কিছু। নামে কি আর এসে যায়। কিন্তু আপনাদের সুবিধার জন্ম সেই মহিলার নাম সরহার রাখছি।
এই সরদার এজন যৌগ মহিলা। এক সময়ে নিঃসন্দেহে সু ছিল। তার ভাঁজ পড়া লালচে গালের প্রতি তাকালেই সেটি বোঝা যায় । তবে প্রৌঢ়া হলেও বয়সের চেয়ে তাকে বেশ কয়েক বছর ছোট বলে মনে হয়। সে যাকগে, তার গানের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই । তার কন্ঠা বা অগ্ন যাই কিছু হোক না কেন- যৌবনের অত্যন্ত চমৎ- কার উপমা ছিল। তার চেহারা ভাবভঙ্গি দেখে কিছুতেই তাকে বাজে মেয়ে বলে মনে করা যাবে না। কিন্তু আসলে তার মা তাকে দিয়ে অসৎ কাজ করায়, এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। আর এটাও ঠিক যে, সেই মেয়ের এ পেশার প্রতি কোন ঘৃণা বোধ ছিল না। মেয়েটির নাম আপনাদের সুবিধার্থে নওয়াব রেখে দিচ্ছি আসলে জনপদ থেকে দুরে এমন স্থানে সে প্রতিপালিত হয়েছিল যে, সুস্থ স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না। সরদার তার সাথে পালঙ্কে যখন প্রথম পুরুষের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তখন নওয়াব ভেবেছিল মেয়েদের যৌবন সূচনা এভাবেই হয়ে থাকে। ফলে নওয়াব পতিতা জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয় এবং দুর দুরান্ত থেকে আগত পুরুষদের সাথে অসংকোচে পুরনো আমলের সেই পালঙ্কে শুয়ে পড়ত। নওয়াব ভেবেছিল এটাই তার জীবনের চরম প্রাপ্তি ।
এমনিতে নওয়াব সবদিক থেকেই ছিল একটা বাজে মেয়ে। আমাদের সমাজের মেয়েরা দেহপসারিণী মেয়েদের সম্পর্কে এরূপ ধারণাই পোষণ করে। কিন্তু বলতে কি এ সম্পর্কে নওয়াবের কোন অনুভূতিই ছিল না। সে মুহূর্তের জন্যও ভাবেনি যে, সে পাপ পঙ্কিল জীবন যাপন করছে। আর ভাববেই বা কি করে, এ ধরনের ভাবনার কোন সুযোগই যে পায়নি। তার দেহে অদ্ভুত সরলতা ছিল। তার কাছে সপ্তাহ দেড় गा পরে আসা পুরুষদের কাছে সে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করতো।
কারণ সে মনে করতো যে, এটাই মেয়েদের কাজ। সে সব পুরুষের আশা-আকাঙ্খা এবং আরাম-আয়েশের প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতো। পুরুষদের কোন সামান্যতম দুঃখ-কষ্টও সে লক্ষ করতে পারতো না।
শহরের লোকদের চালচলন সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। সে মোটেই জানত না যে তার কাছে যেসব পুরুষ মোটরে চড়ে আসে তার। প্রতিদিন ভোরে ব্রাশ দিয়ে দাত সাফ করতে অভ্যস্ত এবং চোখ মেলেই বাসিমুখে বেড-টি পান করে, তারপর প্রাতঃকৃত্য সম্পন্ন করে। কিন্তু ধীরে নওয়াব শহরে নাগরিকদের এসব অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। সে জেনে অবাক হয়ে যায় যে, সব পুরুষ একরকমের হয় না । কেউ ভোরে উঠে সিগারেট চায়, কেউ চা চায়, আবার কেউ কেউ বিছানা ছেড়ে উঠতেই চায় না। আবার কেউ রাতভর জেগে থেকে প্রত্যুষে মোরে আরোহণ করে পালিয়ে যায়।
সরদার ছিল সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত। সে ভালো করেই জানতো যে, তার করা নওয়াব যত ছোটই হোক না কেন সে তার ক্রেতাদের চাহিদা পুরণ করতে সক্ষম। এ কারণে সরদার একটা নেশাজাত বটিকা খেয়ে তক্তপোষে শুয়ে থাকতো। তবে কখনো কখনো সরদারের প্রয়োজন দেখা দিত। যখন কোন ক্রেতা অত্যধিক মদ খাওয়ার কারণে মাতলামি শুরু করে দিত, তখন সরদার নওয়াকে বলতো যে, ওকে আচার খাইয়ে দে। অথবা, গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে খাইয়ে বমি করিয়ে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দে।
নওয়াবের কাছে যে লোকই আসতো তার কাছ থেকে সরদার আগে- ভাগেই পারিশ্রমিক আদায় করে নিজের নির্দিষ্ট কৌটায় হেফাজত করে রাখত। এ ব্যাপারে সে খুবই সচেতন থাকতো। পারিশ্রমিক আদায়ের পর ক্রেতাকে শুভ কামনা জানাতো। যেমন, তুমি আরামে দোলনায় দোলো। তারপর নেশার বটিকা সেবন করে শুয়ে থাকতো ।
যে পারিশ্রমিক পাওয়া যেতো তার মালিক ছিল সরকার। কিন্তু উপহার উপঢৌকনের ব্যাপারে সে কিছু বলত না, সেগুলো নওয়াবই পেতো। নওয়াবের কাছে যেসব লোক আসতে। সাধারণত তারা ছিল বিত্তশালী। এজন্য সে দামী পোষাক পরিধান করতো এবং মিঠাই-মণ্ডা, ফল-ফলারি খেতো।
নওয়াব খুব সুখী ছিল। মাত্র তিন কামরা বিশিষ্ট সে মাটির ঘরে নওয়াৰ বেশ স্বচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছিল। একজন সামরিক অফিসার তাকে গ্রামো- ফোন এবং বেশ কিছু রেকর্ড উপহার দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে নওয়াব সে সব রেকর্ড বাজিয়ে শুনতো এবং নিজে সে অনুযায়ী গান গাওয়ার চেষ্টা করতো।
তার কণ্ঠে কোন সুর ছিল না। কিন্তু সম্ভবত সে এ সম্পর্কে কখনো খেয়ালই করেনি। সত্যি বলতে কি তার কোন ব্যাপারেই তেমন জানা- শোনা ছিল না এবং সে জানতে চাইতো না । তাকে যে পরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে তা সে নিজের অজ্ঞাতেই মেনে নিয়েছে।
নলখাগড়ার এদিকের পৃথিবী কেমন সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। শুধু একটা কাঁচা রাস্তাই সে বরাবর দেখে এনেছে। সে কাগ রাস্তা দিয়ে ছ’তিন দিন পর পর একটা মোটর ধূলি উড়িয়ে এসে হন’ দিত। নওয়াবের মা অথবা সে যেই ছিল, তখন গাড়ীর কাছে গিয়ে আরোহীকে বলত, মোটের যেন নলখাগড়া থেকে কিছু দূরে রেখে দেয়। তারপর মোটর আরোহী বাড়ীর ভেতর এসে পালঙ্কের ওপর নওয়াবের সাথে বসে মিষ্টি মিষ্টি আলাপ জমাতো।
নওয়াবের কাছে যা 1 মাসতো তাদের সংখ্যা খুব বেশী ছিল না। পাঁচ-ছ’ জন হবে। কিন্তু এ পাঁচ-ছ’ জনের জ্বর সরদার এমন ব্যবস্থা করে রেখেছিল যে, কারো সাথে কেউ মুখোমুখি হতো না। সাহার বড় হুঁশিয়ার মহিলা ছিল। প্রত্যেক ক্রেতার জন্য সে নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করে দিত। এতে কেউ অভিযোগের সুযোগ পেত না। এ ছাড়া নওয়াব যেন যা হতে না পারে সরদার যথা সময়ে সে ব্য: হা করে রাখতো। নওয়াব যে অবস্থার জীবন কাটাচ্ছিল তাতে তার মা হওয়া ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু সরদার দু’আড়াই বছর থেকে নওয়াবকে এ আশা থেকে মুক্ত রাখে। নগগাগড়ার পেছনে ‘আড়াই বছর যাবত এ কাজ নিরুদ্বেগে সম্পন্ন হচ্ছিল। পুলিশও খবর পায়নি। যার যাওয়া আসা করতো, শুধু তারাই জানতো।
সে মাটির ঘরে একদিন আলোড়ন সৃষ্টি হলো । একটা বড় ধরনের মোটর গাড়ী, সম্ভবত ভজ ওখানে এসে থামল। হর্ন শুনে সরদার বাইরে এসে দেখে একজন অপরিচিত লোক। সে সরদারের সাথে কোন কথা বলল না, সংসারও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করল না।
মোটর গাড়ী দুরে দাড় করিয়ে লোকটি সোজা ঘরে প্রবেশ করলো, যেন এ ঘর তার চেনা এখানে সে প্রতিদিন এসে প্রবেশ করে। সরদার উদ্বিগ্ন বোধ করলো। কিন্তু বারান্দায় এসে নওয়াব মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে আগন্তককে স্বাগত জানালো এবং নিজের ঘরে গেল। নওয়াব এবং আগন্তক পাশাপাশি বসেছিল, এমন সময় সরদার কামরায় প্রবেশ করলো।
আগন্তককে দেখেই সরদার বুঝে ফেলল যে লোকটি বিত্তশালী, দী পোশাক পরিধানে দেখতে সুদর্শন। সরদার আগন্তককে সালাম জানিয়ে বলল, আপনাকে এদিকের পথের হদিস কে জানিয়েছে ? আগন্তুক হাসলো এবং নওয়াবের ফোলা তুলতুলে গাল আঙ্গলে টিপে বলল, ও।
নওয়ার পট করে এক পাশে সরে গিয়ে বলল, হায়, তোমার সাথে তো কখনো আমার দেখাই হয়নি। আগন্তকের মুখে হাসি প্রসারিত হলো। সে বলল, আমি কয়েকবার তোমার সাথে সাক্ষাৎ করেছি।
নওয়াব জিজ্ঞেস করল, কবে, কোথায়? তার ছোট চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠলো। এতে তাকে আরো আকর্ষণীয় মনে হলো। অপরিচিত আগন্তক নওয়াবের মাংসল হাত মুঠোয় পুরে বলল, সেটা তুমি এখনো বুঝবে না, তোমার মাকে জিজ্ঞেস করো।
নওয়াব আ ত্মভোলা ভাবে তার মাকে জিজ্ঞেস করল সে কবে এবং কোথায় এ লোকের সাথে দেখা করেছে ? সরদার বুঝে ফেলল যে তার কাছে যেসব লোক আগে তাদের কেউ বলেছে। এটা বোঝার পর সরদার নওয়াৱকে বলল, আমি তোমাকে বলব’খন।
এই বলে সে বাইরে চলে গেল। তক্তপোষে বসে কৌটা থেকে আফিমের বটিকা বের করে খেয়ে শুয়ে পড়ল। মনে মনে নিশ্চিন্ত হলো যে, মানুষ ভালো, গোলমাল করবে না।
আগন্তকের নাম আমরা যতোটা জানি হায়াত খান, বাড়ী হাজারা জেলায়। বেশ বিত্তশালী। নওয়াবের দুষ্টমীতে এতোটা প্রভাবিত হলো যে, যাওয়ার পথে সরদারকে বলল, ভবিষ্যতে ওর কাছে অন্য কেউ যেন না আসে।
সরদার ছিল সুচতুর। মহিলা হারবত মানকে বলল, খান সাহেব, আপনি কি এতে। টাকা দিতে পারবেন যে-হায়াত খান সরদারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে পকেট থেকে এক তাড়া নোট বের করে সরদারের পায়ের কাছে ছুঁড়ে মারল। তারপর চলে গেল
নিজের আঙ্গলের আংটি নওয়াবের আঙ্গুলে পরিয়ে নলখাগড়ার ওপারে নওয়াব টাকার প্রতি চোখ তুলেও চাইল না, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের হাতের আংটি দেখতে লাগলো, যা থেকে আলো ঠিকরে বেরুচ্ছিল।
মোটর স্টার্ট” নিল এবং ধোঁয়া হলো উড়িয়ে চলে গেল। তারপর নে চমকে উঠে নলখাগড়ার কাছে এলো, কিন্তু রাস্তায় তখন ধূলো-বালি ছাড়া আর কিছু নেই। সরদার টাকার তোড়া উঠিয়ে গুণে দেখল। আর একখানা নোট হলে পুরো দু’ হাজার টাকা হতো। কিন্তু সে জন্য তার কোন দুঃখ ছিল না।
সব টাকা তুলে নির্দিষ্ট স্থানে হেফাজত করে রেখে আফিমের একটা বটিকা খেয়ে সে শুয়ে পড়ল । নওয়াব মনে মনে খুব খুশী। বার বার হীরক-সজ্জিত আঙ্গদের তাকাচ্ছিল। তিন-চার দিন কেটে যাবার পর আরেকজন লোক এলো । লোকটি বেশ বিত্তশালী কিন্তু সরদার জানান যে পুলিশের হানা দেয়ার আশংকায় আমরা সে ধান্দা বন্ধ করে দিয়েছি। লোকটা ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে গেল। হায়বত খান সরদারকে বিশেষ প্রভাবিত করেছিল। সে আফিম খেয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো, যদি আমদানী এভাবে হতে থাকে তাহলে দিন-কাল অল্প দিনেই ফিরে যাবে। আর লোড যদি একজনই আগে ভাতে ঝামেলা কম। এসব ভেবে সরদার সিদ্ধান্ত নিল যে, বাকি যারা আসে তাদের একে একে পুলিশের ভয়ের কথা বলে সরিয়ে দেবে। তাদের বলবে যে নিজের সম্মান বিপন্ন করতে পারি না।
এক সপ্তাহ পর হায়বত এলো, এ সময়ের মধ্যে সরদার দুজন ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। হারবত প্রথম দিনের মত শান শওকতের সাথে এসে হাজির হয়েছিল। এসেই সে নওয়াবকে বুকে জড়িয়ে ধরল। হায়বত খান সরদারের সাথে কোন কথা বলল না। হায়বত নওয়ানকে কামরার পালঙ্কের উপর নিয়ে গেল। সরদার আর ভেতরে গেল না। আফিমের বটিকা খেয়ে ঝিমোতে লাগল । হারবত খান নওয়াবের সান্নিধ্যে আরো দেশী অভিভূত হলো। নওয়াব পেশাদার পতিতাদের বেহায়ামীপনা থেকে ছিল সম্পূর্ণ মুক্ত। তার মধ্যে সাধারণ ঘরোয়া মেয়েনের ছাপ নেই, তবে তার মধ্যে যা রয়েছে তা তার একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। শিশু যেমন মায়ের কোলে শুয়ে থাকে নওয়াব ঠিক তেমনি হারবত খানের সাথে মিশে শুয়ে থাকতো। হায়াত খান নওয়াবের বুক আদর করতো, তার নাকে এবং চুলে আদর করতে। তারপর একসময় ঘুমিয়ে পড়তো ।
হায়াত খানের জন্য নওয়াব ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। মেয়েদের এ রকম মোহন বৈশিষ্ট্য তার মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিত। এরপর থেকে নওয়াবের কাছে সপ্তাহে দুবার করে আসতো। নওয়াব তার জয় অসাধারণ আকর্ষণের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল। সরদারের নোট সঞ্চয় আগের চেয়ে অনেক বেশী হওয়ায় সে মনে মনে খুব গুণী হলো।
নওয়াব তার সহজাত ছষ্টমী সত্ত্বেও মাঝে মাঝে ভাবে যে হায়াত খান এমন ভয়ে ভয়ে থাকে কেন? নলখাগড়ার এপাশে *161 রাস্তায় যদি কোন পরী বা মোটরের শব্দ শোনা যায় তাহলে সে ভয়ে এতটুকু হয়ে যায় কেন? তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় কেন? আর চুপে চুপে দেখে কেউ এসেছে কি না। একদিন রাত বারোটার দিকে রাস্তার উপর দিয়ে একটি দরী যাওয়ার শব্দ শোনা গেল। নওয়াব এবং হায়বত মান ঘনিষ্ঠভাবে ওয়েছিল।
হঠাৎ হায়বত খান কেঁপে উঠে একপাশে সরে গেল। নওয়াবের ঘুম ছিল খুবই হালকা। সে ভয়ে ধর ধর করে কাপতে কাপতে চীৎকার করে হায়বত দানকে বলল, কি হয়েছে ? হায়বত স্থান ততক্ষণে নওয়াবকে বলল, না না, কিছু না। সম্ভবত আমি স্বপ্নের মধ্যে ভয় পেয়ে গেছি।
রাতের নীরবতায় দূর থেকে তখনো লরীর আওয়াজ ভেসে আসছিলো। নওয়াব হায়াত খানকে বলল, না খান, অক্ষ কিছু হয়েছে। যখনি কোন মোটর যা গরী রাস্তার উপর দিয়ে যায় তখনি তুমি অমন করো কেন ?
সম্ভবত হায়াত খানের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক স্থানে নওয়াব হাত দিয়েছে। নিজের গৌরব বজায় রাখবার জন্য সে তাড়াতাড়ি ধমকের সুরে বলল, কি যা তা বলছ, মোটর এবং নরীকে ভয় পাবার কি কারণ থাকতে পারে ?
নওয়াবের মন ছিল খুবই লাজুক। হায়াত খানের ধমকে সে মনে ব্যথা পেয়ে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। হারবত খান নওয়াবকে ধীরে ধীরে চুপ করিয়ে আরো বেশী ধরে আদর করতে শুরু করল। হায়বত খান বেঁটে ঘাটো দেহের অধিকারী স্বাস্থ্যবান পুরুষ। নওয়াবকে হায়বত খান ভাবাসার উষ্ণতা প্রদান করেছে, দৈহিক তৃপ্তি সম্পর্কে অবহিত করেছে। ফলে নওয়াব হায়াত খানকে ভালবাসতে শুরু করেছে। হায়বত খান এক সপ্তাহ না এলে নওয়াব রেকর্ড প্লেয়ারে বিরহের গান বাজায়। নিজেও সে গানে কণ্ঠ মিলায়। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। কয়েক মাস কেটে গেল, নওয়াব মানসিক দিক থেকে হায়বত খানকে পুরোপুরি আপন করে নিয়েছে। কিন্তু হায় বত খান এখন কয়েক ঘণ্টার জন্ত জাগে এবং ভাড়াতাড়ি চলে যায়। এসব দেখে নওয়াবের উদ্বেগ বেড়ে যায়। নওয়াব এও বুঝতে পারে যে, তার সাথে বেশী করে সময় কাটাতে চেয়েও হারবত খান পারে না। কেন জানি সে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ সম্পর্কে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও নওয়াব সহত্তর পায়নি। হায়বত খান এড়িয়ে গেছে।
একদিন খুব ভোরে ভজ গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল। নওয়াব চোখ কচলাতে কচলাতে তাড়াতাড়ি বাইরে এসে দেখে হায়বত খান এসেছে। নওয়াব তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। দীর্ঘক্ষণ উভয়ে প্রেম-ভালবাসার আলাপ করল। নওয়াবের মনে কি হলো কে জানে, সে হঠাৎ বলল, খান, আমাকে সোনার চুরি এনে দাও ।
হায়বত খান নওয়াবকে চুমু খেয়ে বলল, কালই নিয়ে আসব। তোমার জন্য তো আমার জীবনই হাজির রয়েছে। নওয়ার একটি মোহন ভঙ্গি করে বলল যেতে দাও খান সাহেব-জীবন তো আমাকে দিতে হবে।
হায়বত খান মনে মনে বিগলিত হয়ে গেল। নওয়াবের সাথে অত্যন্ত আনন্দ ঘন পরিবেশে সময় কাটিয়ে পরদিন সোনার কাঁকন নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হায়াত খান বিদায় নিয়ে চলে গেল। বলে গেল, সোনার কাঁকন আমি তোমাকে নিজের হাতে পরাবো । পরদিন নওয়াবের পুশীর সীমা उইল না। সে ভাবল আজ হায়াত খান তার প্রেমিক তার জন্ম সোনার কাঁকন নিয়ে আসবে। নিজ হাতে তাকে পরিয়ে দেবে। সারাদিন প্রতীক্ষা করেও লাভ হলো না। হায়বত খান এলো না। নওয়াব ভাবল, সম্ভবত মোটর গাড়ী খারাপ হয়ে গেছে। রাতে জাগবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সারারাত নিদ্রায় কাটিয়েও নওয়াব হায়বত খানের দেখা গেল না। তার খুব দুঃখ হলো। সে তার মাকে, অথবা সে যা-ই হোক, সে বলল, দেখ, খান কথা দিয়েও এলো না। আবার ভাবলো, হয়তো কিছু হয়ে গেছে। এই ভেবে সে আতঙ্কে এতটুকু নওয়াবের মাথায় কয়েকটি দুশ্চিন্তা আসতো। মোটর না আকস্মিক অসুখ, কোন ডাকাতের হানা। কিন্তু আবার মোটরের শব্দে হায়বত ধানের ভয় পাওয়ার কথাও সে ভাবতো। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারত না।
এক সপ্তাহ কেটে গেল। এ সময়ে নওয়াবের পুরনো ক্রেতারাও কেউ এলো না কারণ সরদার তাদের নিষেধ করে দিয়েছে। কাঁচা রাস্তা দিয়ে কয়েকটি লরী ধূলো উড়িয়ে চলে গেছে। নওয়াবের ইচ্ছে হতো এসব লরীর পেছনে ছুটে গিয়ে তাদের আগুন ধরিয়ে দেয়। কারণ এদের জন্যই হায়াত খান তার কাছে আসতে পারে না। আবার ভাবে তা হবে কেন ?
জরী বা মোটর কি কোন বাধা হতে পারে? নিজের নির্বুদ্ধিতার কথা ভেবে সে হাসতো । তবে হারবত খানের মত বলিষ্ঠ পুরুষ মোটর গাড়ীর শব্দকে কেন ভয় পায়, এটা নওয়াব কিছুতেই বুঝতে পারত না। তার মাথায় যে সব কারণ যুক্তি হিসেবে এসে হাজির হতো তাতে সে নিজেকে প্রবোধ দিতে পারত না। ফলে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সে রেকর্ড প্লেয়ারে বিরহের গান বাজিয়ে শুনতো, এতে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠতো। এক সপ্তাহ পরে একদিন দুপুর বেলা নওয়াব এবং সরদার খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রামের কথা ভাবছিল, হঠাৎ বাইরের কাঁচা রাস্তায় মোটর গাড়ীর হন শোনা গেল। উভয়ে সে হর্ন শুনে চমকে উঠলো, কারণ এ হন হায়বত খানের গাড়ীর হন নয়। সরদার বাইরে গিয়ে কে এসেছে দেখছিল কিন্তু দেখে তার বিস্ময়ের সীমা রইল না। সে দেখল একটা নতুন মোটরে যুবতী।
হারবত খান বসে আছে। পেছনের আসনে একজন জাধুনিক সুদর্শনা হারবত খান কিছু দূরে মোটর গাড়ী থামিয়ে নেমে এল। তার সঙ্গের যুবতীও নেমে এল। সরদার ভাবল এ কি আজব ব্যাপার। নারী ‘লাভের জন্যই তো হায়বত খান এখানে আসে, তাহলে অমন দামী পোষাক রিহিতা সুদর্শনা যুবতী মেয়ে হায়বত খানের সঙ্গে এলো কেন ? সরদার এসব ভাবছিল আর হায়বত খান নওয়াবের ঘরে গিয়ে ঢুকল । সরদার দেখল মহিলার গায়ে সোনার অলংকারও রয়েছে। সরদারের প্রতি তাদের দুজনের কেউই ভ্রক্ষেপ করল না।
নওয়াবের কামরায় খাওয়ার পর নওয়াব সেই যুবতী মেয়ে এবং হায়বত খান কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। অদ্ভুত নীরবতা। তবে যুবতী মেয়েটিকে কিছুটা অস্থির দেখাচ্ছিল, তার একটি পা দ্রুত ভুল ছিল।
এ সময় সরদার এসে বারান্দায় দাঁড়াল এবং হায়বত থানকে সালাম করল। হায়বত খান কোন জবাব দিল না। আসলে সে ভীষণ নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। যুবতী মেয়েটি পা তুলানো বন্ধ করে সরদারকে বলল, আমরা এসেছি, খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করো। সরদার আন্তরিকতার সুরে বলল, তোমরা যা বলবে, এক্ষুণি তৈরী হয়ে যাবে।
মেয়েটিকে গভীর দৃষ্টিতে দেখলেই বোঝা যায় তার ভাবভঙ্গি সন্দেহ-জনক এবং বড় ধুরন্ধর মেয়ে। সরদারকে সে বলল, তুমি বাবুর্চিখানায় যাও, চুলো ধরাও। বড় ডেকচি আঁছে তোমার ঘরে ?
সরদার তার ভারি মাথা নেড়ে বলল, হাঁ, আছে।
যুবতী বলল, তবে যাও ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নাও, আমি এক্ষুণি আসছি। এই বলে যুবতী গ্রামোফোন দেখতে লাগল।
সরদার অক্ষমতা প্রকাশের সুরে বলল, গোশত টোশত তো এখানে পাওয়া যাবে না। যুবতী মেয়েটি একটি রেকর্ড চালু করতে করতে বলল, পাওয়া যাবে। আমি যা বলছি তাই করো। আর হাঁ, দেখবে আগুন যেন গনগনে হয়। সরদার রান্নাঘরে চলে গেল। যুবতী মেয়েটি হাসিমুখে নওয়াবকে বলল, নওয়াব, আমি তোমার জন্য সোনার কারন নিয়ে এসেছি ।
এই বলে সে নিজের ছোট ব্যাগ খুলে অত্যন্ত সুন্দর এবং ভারী একজোড়া সোনার কাঁকন বের করল। কাগজে জড়ানো । কাঁকনগুলো অত্যন্ত পাতলা নওয়াব তার পাশে বসে থাকা হায়বত খানকে দেখছিল। সোনার কাঁকনের কথা শুনে যুবতীর প্রতি তাকিয়ে খানকে বলল, খান, উনি কে?
যুবতী সোনার কাঁকন দোলাতে দোলাতে বলল, আমি কে ? আমি হায়াত খানের বোন। এই বলে সে হায়াত খানের প্রতি তাকাল। লক্ষ্য করল যে, তার জবাব শুনে হায়াত খান গলে মোম হয়ে গেছে। তারপর যুবতী নওয়াবের দিকে ফিরে বলল, আমার নাম হালাকত।
নওয়াব কিছু বুঝতে পারল না। যুবতীর চোখের দিকে সে ডাকাতে পারছিল না। সে নিঃসন্দেহে সুদর্শনা, কিন্তু তার চোখ থেকে যেন আগুন ঠিকরে রুচ্ছে।
যুবতী নওয়াবের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাতে কাঁকন পরাতে উদ্ভুত হলো। নওয়াব ভয়ে আতংকে জড়সড় হয়ে পড়েছে। হঠাৎ যুবতী নওয়াবের হাত ছেড়ে দিয়ে হারবত খানকে বলল, তুমি বাইরে যাও পেশ করতে চাই। হায়াত খান, আমি ওকে ভাল করে সাজিয়ে বানিয়ে তোমার খেদমতে হারবত খান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। সে উঠছে না দেখে যুবতী কর্কস স্বরে বলল, যাও, তুমি শুনতে পাচ্ছ না?
হায়বন্ত পান নওয়াবের প্রতি তাকাল এবং বাইরে চলে গেল। তাকেও খুব অস্থির দেখাচ্ছিল, কিন্তু সে ভেবে পেল না যে, কোথায় যাবে, কি করবে। বড় ঘরের বাইরে একটি ছোট কামরার মত ঘরের দেয়াল চট দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। সেটা হে শৈল। কাছে গিয়ে হায়বত খান দেখল, সরদার চুলো ধরাচ্ছে। হায়াত খান সরদারের সাথে কোন কথা বলল না, নলখাগড়ার ওপাশে রাস্তার চলে গেল। তার তখন অর্ধোত্মাদের মত অবস্থা । একটুখানি পদশলেই চমকে ওঠে। দুরে থেকে কোন লগ্নী আসতে দেখে হায়বত খানের ইচ্ছে হয় সেটি থামিয়ে উঠে বসে এবং দূরে কোথাও চলে যায়। কিন্তু কাছে আসতেই অত্যধিক ধুলো উড়িয়ে নরী দ্রুতবেগে ছুটে চলে যায়। হায়াত খানের কণ্ঠনালী যেন শুকিয়ে আসে। জোরে শব্দ করে লরী থামাতে পারে না। একটা লরী চলে যাওয়ার পর হারবস্তু খান ভাবলো নওয়াবের কামরার যাবে, যে কামরায় নওয়াবের সাথে তার জীবনের অত্যন্ত মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু তার পা উঠলো না, সে হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে রইল। কাঁচা রাস্তায় দাড়িয়ে হারবত খান ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেল।
যে যুবতী এসেছে সে যুবতীর সাথে তার অনেক দিনের সম্পর্ক রয়েছে। মেয়েটির স্বামী ছিল হায়াত খানের বন্ধু। একত্রে উভয়ে বড় হয়েছে। তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোক প্রকাশের জন্য হায়বত খান তার বাসায় গিয়েছিল । তার স্ত্রীকে সে সৌজন্তমূলক সান্ত্বনার কথাও শুনিয়েছে। কিন্তু ঘটনাক্রমে এই সমবেদনা উভয়ের সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। স্বামীর মৃত্যুর পরদিনই দেখা গেল যে হায়বত এমন মেয়েটির সাথে নিজেরে জড়িয়ে ফেলেছে। মেয়েটি তাকে আদেশের সুরে ভেতরে ডেকে নিল এবং আত্মসমর্পণ করল যেন হারবত খান তার ভৃত্য ।
মেয়েদের ব্যাপারে হারবত খান ছিল একেবারে আনাড়ি। শাহিনা অন্তত আদেশের সুরে যখন তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করল তখন সে অভিভূত হয়ে গেল। শাহিনার টাকা-পয়সার কোন অভাব ছিল না । শাহিনার নিজের এবং তার স্বামীর প্রচুর অর্থ তার কাছে রয়েছে। কিন্তু এখন অর্থের প্রতি হায়বত খানের কোন মোহ ছিল না। শাহিনা ছিল তার জীবনের প্রথম নারী, এটাই ছিল শাহিনার প্রতি আকর্ষণের প্রধান কারণ। নিজের আনাড়িপনার কারণেই সম্ভবত সে শাহিনার আদেশ অমাঞ্চ করতে পারেনি দীর্ঘ সময় সে কাঁচা রাস্তায় দাড়িয়ে নানা কথা ভাবলো, অবশেষে আর থাকতে পারল না।
চটের পর্দা ঘেরা হে শৈলের কাছে গিয়ে দেখল সরদার কি যেন ভাজা করছে, নওয়াবের কামরার কাছে গিয়ে দেখল দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, সে ধীরে ধীরে করাঘাত করল। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে গেল। কাঁচা মেঝেতে শুধু রক্ত আর রক্ত।
হায়বত খান কেঁপে উঠল। সে শাহিনার প্রতি তাকালো। শাহিনা দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাহিনা হায়াত খানকে বলল, আমি তোমার নওয়াবকে সাজিয়ে দিয়েছি। হারবত খান শুষকণ্ঠ ঢোক গিলে ভিজিয়ে বলল, কোথায় ?
শাহিনা জবাব দিল, কিছু এ পালংকের উপর রয়েছে, তবে উৎকৃষ্ট অংশগুলে। রান্নাঘরে ।
হারবত খান তখনো ঠিক বুঝতে পারল না। সে কিছু বলতে পারল না। চপচাপ দাড়িয়ে রইল। ভাল করে ভাবিয়ে দেখল বিছানায় গোশতের ছোট ছোট টুকরো এবং এর পাশে একটা রক্তাক্ত ছুরি পড়ে আছে। শাহিনা হেসে বলল, তোমার মুসজ্জিতা নওয়াবকে চাদর তুলে দেখাব ? আমি নিজের হাতে সাজিয়েছি! তবে তুমি আগে খেয়ে নাও। খুব খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই। সরদার বড় সুস্বাদু মাংস রান্না করেছে। সে মাংসের টুকরো আমি নিজ হাতে কুটেছি।
হায়বত ধানের সারা দেহ ধর ধর করে কেপে উঠল। চীৎকার করে বলল, শাহিনা, এ তুমি কি করেছ ? শাহিনা হেসে বলল, প্রিয়তম, এটা প্রথম নয় দ্বিতীয়। আমার স্বামী ছিল তোমার মতই অকৃতজ্ঞ বিশ্বাসঘাতক। আমি তাকে নিজ হাতে খুন করেছি এবং তার মাংস রান্না করে কুকুরকে খাইয়েছিখোদা তাকে বেহেশত নসীব করুন, তোমাকে আমি ভালবাসি, এজন্য তোমার বদলে—-
কথা শেষ হওয়ার আগেই শাহিন। পালতে বিছানো চাদর একটানে সরিয়ে ফেলল। হায়াত খানের চীৎকার তার কণ্ঠনালিতেই আটকে রইল। অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ল।
জ্ঞান ফিরে এলে হায়বত খান দেখল, শাহিনা গাড়ী চালাচ্ছে। গাড়ী নলখাগড়ার বিল অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে।
॥ সমাপ্ত ॥