দ্বিতীয় লিঙ্গ – সিমোন দ্য বোভোয়ার

›› অনুবাদ  ›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

অনুবাদঃ হুমায়ুন আজাদ

………পুরুষদের সর্বজনীন আধিপত্য, তার নিজের শিক্ষা – সব কিছু তার মনে সৃষ্টি করে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের বােধ। পরে, সে যখন অংশ নেয় যৌন সম্পর্কে, সঙ্গমের আসনের মধ্যে সে দেখতে পায় এক নতুন অবমাননা যে নারী শােয় পুরুষের নিচে।…….

……..সুসায় পাওয়া গেছে মহাদেবীর, মহামাতার আদিতম মূর্তি, যার বস্ত্র দীর্ঘ এবং কেশবিন্যাস উচ্চ, অন্যান্য মৃর্তিতে যাকে আমরা দেখতে পাই মিনারের মুকুটশােভিত। ক্রিটে খননকার্যের ফলে এমন কয়েকটি মূর্তি পাওয়া গেছে। কখনাে কখনাে সে স্কুল ও অবনত, কখনাে কখনাে তন্বী ও দণ্ডায়মান, কখনাে বস্ত্রপরিহিত এবং প্রায়ই নগ্ন, তার দুই বাহু চেপে আছে তার স্ফীত স্তনযুগলের নিচে। সে স্বর্গের রাণী, তার প্রতীক কপােত; সে নরকেরও সম্রাজ্ঞী, যখন সে হামাগুড়ি দিয়ে চলে তখন সাপ তার প্রতীক। সে আবির্ভূত হয় পর্বতে ও অরণ্যে, সমুদ্রে, ঝরনাধারায়।……….

শৈশব

………ছােটো মেয়ে যখন বুঝতে পারে সে কুমারী ও রুদ্ধ, এবং তাকে একটি সারীতে পরিণত করার জন্যে দরকার পড়বে পুরুষের একটি যৌনাঙ্গের, যেটি বিদ্ধ করবে তাকে, তখন তার মনে জেগে ওঠে ঘৃণা ও ভীতির শিহরণ। যৌনাঙ্গপ্রদর্শন যেহেতু একটা ব্যাপকভাবে প্রচলিত যৌনবিকৃতি, অনেক তরুণী মেয়েই দেখেছে দাঁড়ানাে শিশ্ন; তা যা-ই হােক, তারা দেখেছে পুরুষ পশুর যৌনাঙ্গ, এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘােড়ার যৌনাঙ্গ প্রায়ই আকর্ষণ করেছে তাদের স্থিরদৃষ্টি; এটা হতে পারে খুবই ভীতিকর। সন্তানপ্রসবের ভয়, পুরুষের যৌনাঙ্গের ভয়, বিবাহিতদের আক্রান্ত করে যে-সব সংকট’, সেগুলাের ভয়,…….

………..এ-অস্থিরতার সময়ে যা ঘটতে থাকে, তা হচ্ছে বালিকার দেহ পরিণত হতে থাকে নারীর দেহে এবং হয়ে উঠতে থাকে মাংস। লালাগ্রন্থিক ন্যূনতার বেলা ছাড়া, যেখানে বিষয়ী আবদ্ধ হয়ে থাকে বালসুলভ পর্বে, বয়ঃসন্ধির সংকট হঠাৎ এসে হাজির হয় বারাে-তেরাে বছর বয়সে। ছেলের থেকে মেয়ের মধ্যে এ-সংকট দেখা দেয়। অনেক আগে, এবং এটা ঘটিয়ে থাকে অনেক বেশি গুরুত্বপর্ণ বদল। কিশােরী মেয়ে এর সাক্ষাৎ লাভ করে অস্বস্তির সাথে, বিরক্তির সাথে। যখন দেখা দিতে থাকে স্তন ও শরীরের ললাম, তখন জন্ম নেয় এমন একটা বােধ, যা অনেক সময় দেখা দেয় গর্বরূপে, তবে সেটা মূলত লজ্জা; হঠাৎ বালিকা হয়ে ওঠে বিনয়ী, সে উলঙ্গ হতে চায় এমনকি তার মা ও বােনদের সামনে, সে নিজেকে দেখতে থাকে মিলেমিশে যাওয়া বিস্ময় ও বিভীষিকার মধ্যে, এবং নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে সে দেখতে থাকে প্রতিটি বৃন্তের নিচে বেড়ে উঠছে এ-টানটান ও কিঞ্চিৎ বেদনাদায়ক শাঁসটি, যা এপর্যন্ত ছিলাে নাভির মতােই নিরীহ। একথা অনুভব করে সেবিচলিত বােধ করে যে তার আছে একটা অরক্ষিত স্থান; এ-স্পর্শকাতর ও যন্ত্রণাপূজার্নটি অবশ্যই পােড়ার বা দাঁতের ব্যথার তুলনায় তুচ্ছ ব্যাপার; তবে আঘাতের ফলই হােক বা অসুখের। ফলেই হােক, সব ধরনের ব্যথাই অস্বাভাবিক জিনিকিছু একটা ঘটছে- যা অসুখ নয়- যার ইঙ্গিত রয়েছে অস্তিত্বের নিয়মের মধ্যেই তবে তার প্রকৃতি অনেকটা সংগ্রামের, একটা ক্ষতের। শৈশব থেকে বয়সন্ধি পর্যন্ত মেয়েটি অবশ্যই বড়াে হয়েছে, ……… দিনের পর দিন তার শরীর ছিলাে এক বর্তমান ঘটনা, নির্দিষ্ট, সম্পূর্ণ কি এখন সে বাড়ছে। এ-শব্দটিই বিভীষিকা জাগানাে; স্তনের বিকাশৰ্মধ্যে বালিকা বােধ করে বাঁচা শব্দটির দ্ব্যর্থতা। সে সােনাও নয় হীরেও নয়, সে এক অদ্ভুত পদার্থ, সব সময়ই পরিবর্তনশীল, অনির্দিষ্ট, যার গভীবুতনে বিশদভাবে ঘটছে অপরিচ্ছন্ন রসায়ন। সে অভ্যস্ত মাথাভরা চুলে, যা রেশমি যেটির মতাে নীরবে ঢেউ খেলে; কিন্তু তার বগলে ও মধ্যভাগে এই। নতুন উদ্দাম তাকে রূপান্তরিত করে এক ধরনের জন্তু বা শৈবালে। তাকে আগে থেকে সতর্ক করে দেয়া হােক বা না থােক, এসব বদলের মধ্যে সে অনুভব করে এক চূড়ান্ত অবস্থার পূর্ববােধ, যা তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র থেকে : সে দেখতে পায় তাকে ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে এক জীবনচক্রে, যা প্লাবিত করছে তার ব্যক্তিগত অস্তিতের গতিপথকে, সে জানতে পারে ভবিষ্যতের পরনির্ভরতাকে, যা তাকে দণ্ডিত করে পুরুষের কাছে, সন্তানের কাছে, এবং মৃত্যুর কাছে। শুধু স্তন হিশেবে তার স্তন দুটিকে মনে হবে এক অপ্রয়ােজনীয় ও অযাচিতভাবে চাপিয়ে দেয়া বিস্তার বলে। বাহু, পা, ত্বক, পেশি, এমনকি বর্তুল পাছা, যার ওপর সে বসে- এ-পর্যন্ত এগুলাের ছিলাে সুস্পষ্ট উপযােগিতা; শুধু তার লিঙ্গটিকে, সুস্পষ্টভাবেই যেটি প্রস্রাব করার প্রত্যঙ্গ, মনে হতাে কিছুটা সন্দেহজনক, তবে সেটি ছিলাে গােপন ও অন্যদের কাছে অদৃশ্য। তার সুয়েটার বা ব্লাউজের নিচে থেকেও তার স্তন দুটি প্রদর্শন করে। নিজেদের, এবং যে-দেহটির সাথে ছােটো মেয়ে নিজেকে অভিন্ন বােধ করেছে, সেটিকে সে এখন বােধ করে মাংসরূপে। এটি হয়ে ওঠে একটি বস্তু, যা দেখতে পায় অন্যরা এবং যার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অন্যরা। দু-বছর ধরে, এক মহিলা আমাকে বলেছেন, আমার বুক লুকিয়ে রাখার জন্যে আমি ঢিলে জামা পরেছি, আমি এতাে লজ্জায় ছিলাম এ নিয়ে। এবং আরেকজন : ‘আমার আজো মনে পড়ে আমি কেমন অদ্ভুত বিভ্রান্তি বােধ করেছিলাম যখন আমার বয়সেরই এক বান্ধবী, তবে যে আমার থেকে অনেক বেশি বাড়ন্ত ছিলাে, সে যখন উপুড় হয়ে একটি বল তুলছিলাে আর আমি তার অন্তর্বাসের ফাঁক দিয়ে দেখছিলাম তার পূর্ণবিকশিত স্তন দুটি। আমার নিজের বয়সের কাছাকাছি একটি দেহ, যার আদলে গড়ে উঠবে আমার দেহটি, সেটি দেখে নিজের কথা ভেবে আমার গাল লাল হয়ে উঠেছিলাে। কিশােরী মেয়ে বােধ করে তার শরীর যেনাে তার কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এটা আর ব্যক্তিতার সরাসরি প্রকাশ নয়; এটা অচেনা হয়ে ওঠে তার কাছে; এবং একই সময়ে অন্যদের। কাছে সে হয়ে ওঠে একটি জিনিশ : পথে চোখে চোখে তাকে অনুসরণ করে পুরুষেরা……….

তরুণী

………সাধারণত, কিছুটা প্রতিরােধের সাথে হ’লেও, তরুণী মেনে নেয় তার নারীত্ব; তার পিতার সাথে, তার শৈশবের ছেনালিপনার সময়, তার যৌন স্বপ্নপ্রয়াণে, সে এর মাঝেই জানতে পেরেছে অক্রিয়তার মােহনীয়তা; সে দেখতে পায় এর ক্ষমতা; তার দেহের জাগানাে লজ্জার সাথে মিলেমিশে যায় গর্ববােধ। সেই হাত, সেই দৃষ্টি, যা আলােড়িত করেছে তার অনুভূতি, সেটা ছিলাে এক আবেদন, এক প্রার্থনা; তার দেহকে মনে হয়। ঐন্দ্রজালিক গুণসমৃদ্ধ; এটি একটি সম্পদ, একটি অস্ত্র; সে এর জন্যে গর্বিত। তার যে-ছেনালিপনা হারিয়ে গিয়েছিলাে শৈশবের স্বাধীন বছরগুলােতে, তা আবার দেখা দেয়। সে নেয় নতুন প্রসাধন, চুল বাঁধার নতুন ঢঙ; স্তন লুকিয়ে রাখার বদলে সে ওগুলাে বাড়ানাের জন্যে মর্দন করে, সে আয়নায় দেখে তার নিজের হাসি।……

……….কিছু মেয়ে পরস্পরকে দেখা দেয় নগ্ন দেহ, তারা তুলনা করে তাদের স্তনের : আমাদের মনে পড়ে ম্যাটশন ইন ইউনিফর্ম-এর সে-দৃশ্যটি, যাতে আঁকা হয়েছে। আবাসিক বিদ্যালয়ের বালিকাদের এসব দুঃসাহসিক আমােদপ্রমােদ; তারা সাধারণ বা বিশেষ ধরনের শৃঙ্গারু পর্যন্ত করে থাকে। অধিকাংশ তরুণীর মধ্যেই রয়েছে সমকামী প্রবণতা, যাকে আত্মরকি সুখানুভূতিবােধ থেকে পৃথক করা যায় না : প্রত্যেকেই অন্যের মধ্যে কামনা করে তার নিজের ত্বকের কোমলতা, তার নিজের দেহের বাকগুলাে।……..

………তাকে যেহেতু পুরুষের ভূমিকা নিতে হবে, তাই প্রিয়া অবিবাহিতা হলেই ভালাে হয়: বিয়ে সব সময় তরুণী অনুরাগিণীকে হতােদম করে না, তবে এটা তাকে বিরক্ত করে; সে পছন্দ করে না যে তার অনুরাগের বস্তুটি থাকবে কোনাে স্বামী বা প্রেমিকের অধীনে। অধিকাংশ সময়ই এ-সংরাগগুলাে দেখা দেয় গােপনে, বা কমপক্ষে এক প্রাতােয়ী স্তরে। ম্যাটশন ইন ইউনিফর্ম-এ যখন ডরােথি ভিয়েক চুমাে খায় হেটা থিলের ঠোটে, তখন চুমােটি একই সাথে মাতৃধর্মী ও কামময়। নারীদের মধ্যে রয়েছে এমন দুষ্কর্মের সহযােগিতা, যা নষ্ট করে শালীনতাবােধ; তারা একজন আরেকজনের মধ্যে জাগায় যে-উত্তেজনা, তা সাধারণত হিংস্রতাহীন; সমকামী শৃঙ্গারে থাকে না সতীচ্ছদছিন্নকরণ বা বিদ্ধকরণ : নতুন ও উদ্বেগজাগানাে পরিবর্তন না চেয়ে তারা তৃপ্ত করে শৈশবের ভগাঙ্কুরীয় কাম। তরুণী নিজেকে গভীরভাবে বিচ্ছিন্ন বােধ না করে অক্রিয় বস্তুরূপে বাস্তবায়িত করতে পারে তার বৃত্তি। রেনি ভিভিয়েঁ এটাই প্রকাশ করেছেন কোনাে কোনাে কবিতায়, যাতে তিনি গেয়েছেন তাদের লঘু স্পর্শ ও কমনীয় চুম্বনের গান, যারা একই সাথে প্রেমিকা ও বােন, যাদের শৃঙ্গার ঠোটে বা স্তনে কোননা ছাপ ফেলে না।।

ওষ্ঠ ও স্তন শব্দের কাব্যিক অনৌচিত্যের মধ্যে সে তার বান্ধবীকে যে-প্রতিশ্রুতি দেয়, স্পষ্টভাবে তা হচ্ছে যে সে বান্ধবীকে বলাৎকার করবে না। এবং আংশিকভাবে হিংস্রতার, বলাৎকারের ভয়েই কিশােরী মেয়ে অনেক সময় তার প্রথম প্রেম দান করে কোনাে পুরুষের বদলে কোনাে বয়স্ক নারীকে।…..

কামদীক্ষা

…….নারীর কাম আরাে অনেক বেশি জটিল, এবং এটা প্রতিফলিত করে নারীর পরিস্থিতির জটিলতা। আমরা দেখেছি ব্যক্তিগত জীবনে প্রজাতির শক্তিশালী প্রবর্তনাগুলাে সুসমঞ্জস করার বদলে নারী হচ্ছে তার প্রজাতির শিকার, এবং প্রজাতির স্বার্থগুলােকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়া হয়েছে ব্যক্তি হিশেবে নারীর স্বার্থগুলাে থেকে। এবিপরীতার্থকতা চূড়ান্তে পৌছে মনুষ্য নারীর মধ্যে; এর অভিব্যক্তি ঘটে, একদিকে, দুটি প্রত্যঙ্গের : ভগাঙ্কুর ও যযানির বৈপরীত্যের মধ্যে। শৈশবে আগেরটি হচ্ছে নারীর কামানুভূতির কেন্দ্র। যদিও কিছু মনােচিকিৎসক মনে করেন যে কিছু কিছু ছােটো মেয়েও যােনীয় স্পর্শকাতরতা অনুভব করে, তবে এটা বিতর্কের বিষয়, তা যা-ই হােক, এর গুরুত্ব নিতান্তই গৌণ। ভগাঙ্কুরীয় সংশয় অপরিবর্তিাকে প্রাপ্তবয়স্ক নারীতে, এবং নারী সারাজীবন রক্ষা করে তার এ-কামসূত; ভগাঙ্কুরীয় পুলক, পুরুষের পুলকের মতােই, এক ধরনের স্ফীতিহ্রাসকরুণ অর্জিত হয় কিছুটা যান্ত্রিকভাবে; তবে এটা স্বাভাবিক সঙ্গমের সাথে নিষিই পরােক্ষভাবে সম্পর্কিত, এবং সন্তান জন্মদানে এর কোনাে ভূমিকা নেই)। | নারীকে বিদ্ধ ও উর্বর করা হয় যােনিদ্বয়, আর পুরুষের মধ্যবর্তিতায়ই যােনি হয়ে ওঠে একটি কামকেন্দ্র, এবংএর সময়ই এক ধরনের বলাকার।

বিপুল পরিমাণে শরীরসংস্থানগত ও নিদানিক প্রমাণ রয়েছে যে যােনির অভ্যন্তর ভাগের বেশি অংশই স্নায়ুহীন। যােনির অভ্যন্তর ভাগে বেশ পরিমাণে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব অনুভূতিনাশক ছাড়াই। যােনির ভেতরে শুধু অগ্ৰদেয়ালের এক এলাকায়, ভগাঙ্কুরের মূলের সন্নিকটস্থলে স্নায়ু দেখা যায়।……..

…….নারী যােনিতে কোনাে বস্তুর প্রবেশ টের পেতে পারে, বিশেষ করে যদি যােনির পেশিগুলাে কষানাে হয়; তবে এতে যে-তৃপ্তি পাওয়া যায়, তা সম্ভবত যতােখানি যৌনস্নায়ুর উদ্দীপনার সঙ্গে জড়িত তার থেকে বেশি সম্পর্কিত পেশির আততির সঙ্গে | তবু কোনাে সন্দেহ নেই যে যােনীয় সুখের অস্তিত্ব আছে; এবং যােনীয় হস্তমৈথুন, সেদিক থেকে দেখতে গেলে প্রাপ্তবয়স্ক নারীতে কিন্সে যা নির্দেশ করেছেন, তার থেকে অনেক বেশি ঘটে। তবে যা নিশ্চিত, তা হচ্ছে যােনীয় প্রতিক্রিয়া খুবই জটিল | জিনিশ, যাকে বলা যেতে পারে মনােশারীরতাত্ত্বিক, কেননা এতে শুধু সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রই জড়িয়ে পড়ে না, এটা নির্ভর করে ব্যক্তিটির সমগ্র অভিজ্ঞতা ও পরিস্থিতির ওপরও : এটা নারীর কাছে দাবি করে তার সর্বস্ব।…..

……..প্রথম সঙ্গমের ফলে সূচিত হয় যে-নতুন কামচ, সেটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে। দরকার পড়ে স্নায়ুতন্ত্রে এক ধরনের মন্তাজ বা পুনর্বিন্যাস, এমন একটি বিন্যাস যার রূপরেখা আগে বিশদ করা হয় নি, যার ভেতরে ভগাঙ্কুরীয় দেহতন্ত্রও অন্তর্ভুক্ত; এটা ঘটতে কিছুটা সময় নেয়, এবং কিছু ক্ষেত্রে এটা কখনােই সফলভাবে সাধিত হয় না। এটা চমকপ্রদ যে নারীর ভেতরে আছে দুটি সংশয়, এগুলাের একটি স্থায়িত্ব দেয় কৈশােরিক স্বাধীনতাকে, আরেকটি নারীকে অর্পণ করে পুরুষ ও সন্তানধারণের কাছে। স্বাভাবিক যৌনকর্ম তাই নারীকে করে তােলে পুরুষ ও তার প্রজাতির ওপর। নির্ভরশীল। পুরুষই- যেমন ঘটে অধিকাংশ প্রাণীতে- নেয় আক্রমণাত্মক ভূমিকা, নারী ধরা দেয় তার আলিঙ্গনে। সাধারণত, নারীকে যে-কোর্যে ভয়ই পুরুষ সঙ্গমের জন্যে ব্যবহার করতে পারে, সেখানে পুরুষ নারীর সাথে(তই সঙ্গম করতে পারে যখন তার লিঙ্গ থাকে দাঁড়ানাে অবস্থায়। শুধু যােনিসংকেনের বেলা ছাড়া, যখন নারী সতীচ্ছদের দ্বারা রুদ্ধ থাকার থেকেও দৃঢ়ভাবে রুখর্কে, নারীর অনিচ্ছাকে পরাভূত করা যায়; এবং এমনকি যােনিসংকোচনের সওএমন কিছু উপায় আছে, যা দিয়ে পুরুষ নিজের পেশিশক্তির বলে নারীর একীর ওপর নিজের কামের উপশম ঘটাতে পারে। যেহেতু সে বস্তু, তাই তার অর্কে কোনাে জাড্য তার স্বাভাবিক ভূমিকাকে বিশেষ প্রভাবিত করে না ; বহুপেয় তবেই না যে তারা যে-নারীদের সাথে শােয় তারা সঙ্গম করতে চায়, নাকি নিতান্তই নিজেদের সঙ্গমে সমর্পণ করে। ……..

…….পুরুষের সম্মতি ছাড়া সঙ্গম হতে পারে না, এবং পুরুষের পরিতৃপ্তিই এর স্বাভাবিক সমাপ্তি। নারী কোনাে সুখ না পেয়েও গর্ভবতী হতে পারে। | তবু তার পক্ষে গর্ভবতী হওয়া নির্দেশ করে কামপ্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি; এর বিপরীতে, প্রজাতির প্রতি তার দায়িত্ব পালন শুরু হয় এখানেই : এটা ধীরেধীরে ও যন্ত্রণাকরভাবে পূর্ণতা লাভ করে গর্ভধারণ, সন্তানপ্রসব, ও স্তন্যদানের মধ্যে।…

……..প্রথমত, সে পরিহার করে সে-স্থিরদৃষ্টি, যা তাকে ঢেকে ফেলতে পারে। তার শালীনতাবােধ এক আংশিকভাবে অগভীর অর্জন, তবে এরও শেকড় গভীর। পুরুষ ও নারী সবাই তাদের মাংস নিয়ে লজ্জিত। অনেক পুরুষ আছে যারা বলে যে শিশ্নের দাঁড়ানাে অবস্থায় ছাড়া তারা কোনাে নারীর সামনে নগ্ন হওয়াশ করতে পারে না; । সত্যিই দাঁড়ানাের মধ্য দিয়ে এ-মাংস হয়ে ওঠে সক্রিয়তাবীলতা, যৌনাঙ্গটি আর জড় বস্তু থাকে না, বরং হাত বা মুখের মতাে হয়ে ওঠেঞ্জর এক কর্তৃত্বব্যঞ্জক। প্রকাশ। শালীনতাবােধ কেননা নারীদের থেকে অনেক বিহ্বল করে যুবকদের, এটা তার অন্যতম কারণ; তাদের আক্রমণাত্মক ভূমির্কর জন্যে তাদের দিকে কেউ স্থিরদৃষ্টিতে থাকায় না; এবং তাকালেও, কেৰ্টতার বিচার করছে এ-ভয় তাদের বিশেষ থাকে না, কেননা তাদের দয়িতাদের কাছে জড় গুণ কামনা করে না : তাদের গূঢ়ৈষাগুলাে বরং নির্ভর করে তাকে আশ্লেষের ক্ষমতা এবং তাদের প্রমােদ। দেয়ার দক্ষতার ওপর; অন্তত ভৱিাফিজদের রক্ষা করতে পারে, সংঘর্ষে জয়লাভের চেষ্টা করতে পারে। নারী ইচ্ছে করলেই তার মাংসকে বদলাতে পারে না : যখন সে আর এটিকে গােপন কৃর্কে ৮খন সে বিনা প্রতিরােধে এটি সমর্পণ করে; এমনকি সে যদি স্পর্শাদরের জন্য ব্যাকুলতাও বােধ করে, তবুও কেউ তাকে দেখছে ও স্পর্শ করছে, এ-ভাবনা তার ঐনে জাগিয়ে তােলে ঘৃণাভীতির শিহরণ; বিশেষ করে তার। স্তনযুগল ও পাছা যেহেতু বিশেষভাবে মাংসল এলাকা; অনেক বয়স্ক নারী পােশাকপরা অবস্থায়ও তাদের কেউ পেছন থেকে দেখছে, এটা ঘৃণা করে; এবং এ থেকেই ধারণা করা সম্ভব প্রেমে নবদীক্ষিত কোনাে তরুণীকে কতােটা বাধা পেরােতে হয় তার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকাতে দিতে। সন্দেহ নেই একজন ফ্রাইনের কোনাে ভয় নেই পুরুষের স্থিরদৃষ্টির সামনে; সে নিজেকে নগ্ন করে উদ্ধত গর্বে- সে পরে আছে তার সৌন্দর্য।

পুরুষের রায়ের ব্যাপারে থাকে অনিশ্চিত; তাই সে চায় আলাে নেভে যাওয়া, লুকোতে চায় বিছানার চাদরের নিচে। যখন সে আয়নায় দেখে প্রশংসা করে নিজের, তখন সে শুধু স্বপ্ন দেখছে নিজেকে, স্বপ্ন দেখছে তার নিজেকে কেমন দেখাবে পুরুষের চোখে; এখন এসে উপস্থিত হয়েছে সে-চোখ; প্রতারণা অসম্ভব, লড়াই অসম্ভব; সিদ্ধান্ত নেবে একটি রহস্যপূর্ণ স্বাধীন সত্তা এবং কোনাে পুনর্বিচার নেই। অনেক তরুণী অস্বস্তি বােধ করে তাদের বেশি মােটা গুল্ফ নিয়ে, খুব কৃশ বা খুব বেশি বড়াে আকারের স্তন। নিয়ে, সরু উরু নিয়ে, জড়ল নিয়ে; এবং প্রায়ই তারা ভয়ে থাকে কোনাে গুপ্ত ত্রুটিপূর্ণ গঠন নিয়ে। স্টেকেলের মতে সব তরুণীই ভরাট থাকে হাস্যকর ভীতিতে, তারা মনে করে তারা হয়তাে দৈহিকভাবে অস্বাভাবিক। উদাহরণস্বরূপ, একজন মনে করতাে নাভি হচ্ছে যৌনাঙ্গ এবং এটা বন্ধ বলে সে খুবই কষ্টে ছিলাে।………..

……..এটা নিশ্চিত সত্য যে নারীর কামসুখ খুষের কামসুখের থেকে বেশ ভিন্ন। আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে যােনীয় অনুভূতি কোন নির্দিষ্ট কামপুলক জাগায় কি না, তা অনিশ্চিত : এ-ব্যাপারে নারীদের ব ই বিরল, এবং যখন যথাযথভাবে ব্যাপারটি বর্ণনার চেষ্টা করা হয়, তখনওঁতৗকৈ খুবই অস্পষ্ট; দেখা যায় যে বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া ব্যাপকভাবে ভিকি সন্দেহ নেই যে পুরুষের কাছে সঙ্গমের আছে এক সুনির্দিষ্ট জৈবিক উপসংহৎ ধীর্যপাত। এবং নিশ্চয়ই এ-লক্ষ্যের সাথে জড়িত থাকে । আরাে নানা জটিল অভিপ্রায়; কিন্তু একবার এটা ঘটলে একেই মনে হয় একটি নির্দিষ্ট ফলাফল বলে; এবং এতে যদি কামনার পূর্ণ পরিতৃপ্তি নাও ঘটে, তবে কিছু সময়ের জন্যে কামনার সমাপ্তি ঘটে। নারীর মধ্যে, উল্টোভাবে, শুরু থেকেই লক্ষ্য অনিশ্চিত, এবং এটা যতােটা শারীরবৃত্তিক তার চেয়েও বেশি মনস্তাত্ত্বিক প্রকৃতির; সাধারণভাবে নারী কামনা করে কামােত্তেজনা ও সুখ, কিন্তু তার দেহ এ-রমণের কোনাে যথাযথ পরিসমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দেয় না; এবং এজন্যেই তার জন্যে সঙ্গম কখনােই সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হয় না : এটা কোনাে সমাপ্তি মানে না। পুরুষের কামানুভূতি তীরের মতাে জেগে ওঠে, যখন এটা পৌছে বিশেষ উচ্চতায় বা সীমায়, এটা পূর্ণতা লাভ করে এবং কামপুলক লাভের মধ্যে হঠাৎ মারা যায়; তার রমণকর্মের ভঙ্গিটি সসীম ও ধারাবাহিকতাহীন। নারীর সুখ বিকিরিত হয় সারা শরীর জুড়ে; এটা সব সময়। যৌনপ্রত্যঙ্গগুলােতে কেন্দ্রীভূত হয় না; এমনকি যখন হয়ও, যােনীয় সংকোচন একটি প্রকৃত কামপুলক সৃষ্টির বদলে তৈরি করে একটা তরঙ্গসংশয়, যা জেগে ওঠে ছন্দস্পন্দনে, বিলীন হয় ও পুনর্গঠিত হয়, থেকে থেকে লাভ করে এক আকস্মিক বিস্ফোরণের অবস্থা, হয়ে ওঠে অস্পষ্ট, এবং কখনােই লুপ্ত না হয়ে স্তিমিত হয়। যেহেতু কোনাে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত নেই, নারীর কামানুভূতি সম্প্রসারিত হয়। অনন্তের দিকে; কোনাে বিশেষ পরিতৃপ্তিবশত নয়, বরং প্রায়ই স্নায়ুতন্ত্রের বা হৃৎপিণ্ডের অবসাদের ফলে বা মানসিক পূর্ণপরিতৃপ্তির ফলেই সীমায়িত হয় নারীর কামের। সম্ভাবনা; এমনকি সে যখন অভিভূত, অবসন্ন, তখনও সে কখনাে পরিপূর্ণভাবে নিস্তার লাভ করে না : লাসাতা ননদুম সাতিয়াতা, যেমন বলেছেন জুভেনাল:

কোনাে পুরুষ যখন সঙ্গিনীটির ওপর চাপিয়ে দেয় তার ছন্দোস্পন্দ বা সময়সীমা এবং তাকে একটা কামপুলক দেয়ার জন্যে প্রাণপণে খাটে, তখন সে অত্যন্ত ভুল করে : নারীটি নিজের যে-বিশেষ রীতিতে পুলকের যে-রূপের দিকে এগােচ্ছিলাে, তখন সে সফল হয় শুধু তা চুরমার করে দিতে। এটা এমন এক নমনীয় রূপ যে এর শর্তগুলাে নির্ধারণ করা কঠিন : মংসপেশির কিছু খিচুনি যােনিতে সীমিত থেকে বা সমগ্রভাবে কামসংশ্রয়ের ভেতরে, বা সারা শরীরে জড়িত থেকে ঘটাতে পারে সমাপ্তি; কিছু নারীতে এগুলাে খুবই তীব্র এবং নিয়মিতভাবে ঘটে যে এগুলােকে গণ্য করা যায় কামপুলক বলে; তবে প্রণয়িনী নারী তার পুরুষটির কামপুলকের সৃধ্যেও পৌছােতে পারে উপসংহারে, যা দেয় প্রশমন ও পরিতৃপ্তি। এবং এই যে কামের অবস্থাটি প্রশমিত হতে পারে ধীরশান্তভাবে, হঠাৎ রাগমােচড়হিসাফল্যের জন্যে। অনুভূতির গাণিতিক এককালবর্তীকরণ দরকার পড়ে যেমন আছে খুঁটিনাটির প্রতি অতিযত্নশীল বহু পুরুষের অতি-সরলীকৃত বিশ্বাসের জন্যে দরকার একটা জটিল কামবিন্যাস প্রতিষ্ঠা। অনেকে মনে করে যে নারীর্দের কামসুখের অনুভূতি দেয়া একটা সময় ও কৌশলের ব্যাপার মাত্র, এটKএকহিংস্র কর্ম বটে; তারা বােঝে না নারীর। কাম কতােটা মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত হয় পরিস্থিতি দিয়ে।……….

আত্মরতিবতী

……….আমি অনুভব করি আমার নিজের দেহের উষ্ণতা। আমি তাকাই আমার নগ্ন পায়ের দিকে- ওগুলাে ছড়িয়ে দিই। আমার স্তনের কোমলতা, আমার বাহু, যেগুলাে কখনাে স্থির নয়, বরং কোমলভাবে তরঙ্গিত হয়ে নিরন্তর দুলে যাচ্ছে, এবং আমি বুঝতে পারি যে বারাে বছর ধরে আমি ক্লান্ত, এ-বক্ষ মনে মনে পােষণ করেছে এক অশেষ যন্ত্রণা, আমার এ-হাত দুটিতে লেগে আছে দুঃখের দাগ, আর যখন আমি একলা থাকি, তখন এ-চোখ দুটি কদাচিৎ শুষ্ক থাকে।……..

 

Please follow and like us:

Leave a Reply