……….-আ! ছি! ছি!—ব্রজেশ্বর হঠাৎ চুম্বন করিলেন। গ্রন্থকার প্রাচীন লিখিতে লজ্জা নাই—কিন্তু ভরসা করি, মার্জিতরুচি বীন পাঠক এইখানে এ বই পড়া বন্ধ করিবেন।
যখন ব্রজেশ্বর এই ঘােরতর অশ্লীলতা-দোষে নিজে দূষিত হইতেছিলেন, এবং গ্রন্থকারকে সেই দোষে দূষিত করিবার কারণ হইতেছিলেন—যখন নির্বোধ প্রফুল্ল মনে মনে ভাবিতেছিল যে, বুঝ এই মুখচুম্বনের মতাে পবিত্র পুণ্যময় কর্ম ইহজগতে কখনাে কেহ করে নাই, সেই সময়ে দ্বারে কে মুখ বাড়াইল। মুখখানা বুঝি অল্প একটু হাসিয়াছিল—কি যার মুখ, তার হাতের গহনার বুঝি একটু শব্দ হইয়াছিল—তাই ব্রজেশ্বরের কান সেদিকে গেল। ব্রজেশ্বর সেদিকে চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন, মুখখানা বড় সুন্দর। কালাে কুচকুচে কোঁকড়া কোঁকড়া ঝাপটায় বেড়া—তখন মেয়েরা ঝাপটা রাখিত—তার উপর একটু ঘােমটা টানা—ঘােমটার ভিতর দুইটা পদ্ম-পলাশ চক্ষু ও দুইখানা পাতলা রাঙা ঠোঁট মিঠে মিঠে হাসিতেছে। ব্রজেশ্বর দেখিলেন, মুখখানা সাগরের। সাগর স্বামীকে একটা চাবি ও কুলুপ দেখাইল। সাগর ছেলেমানুষ; স্বামীর সঙ্গে জিয়াদা কথা কয় না।………
……পিপড়ে, নাভিতে পতঙ্গ পুরিয়া বাধিয়া রাখে’ যুবতীকে কাছারিতে লইয়া গিয়া সবসমক্ষে উলঙ্গ করে, মারে, স্তন কাটিয়া ফেলে, স্ত্রীজাতির যে শেষ অপমান, চরম বিপন, সর্বসমক্ষে তাহ: প্রাপ্ত করায়।……..
……….গালিচার উপর বসিয়া একজন স্ত্রীলােক তাহার বয়স অনুমান করা ভার—পঁচিশ বৎসরের নিচে তেমন পূর্ণায়ত দেহ দেখা যায় না; পঁচিশ বৎসরের উপর তেমন যৌবনের লাবণ্য কোথাও পাওয়া যায় না। বয়স যাই হউক—সে স্ত্রীলােক পরম সুন্দরী, সে বষয়ে কোনাে সন্দেহ নাই। এ সুন্দরী কৃশাঙ্গী নহে অথচ স্থূলাঙ্গী বলিলেই ইহার নিন্দা হইবে। বস্তুত ইহ’র অবয়ব সর্বত্র ষােলােকলা সম্পূর্ণ—আজি ত্রিস্রোতা যেমন কূলে কূলে পুরিয়াছে, ইহারও শরীর তেমনই কূলে কূলে পুরিয়াছে। তার উপর বিলক্ষণ উন্নত দেহ। দেহ তেমন উন্নত বলিয়াই স্থূলাঙ্গী বলিতে পারিলাম না। যৌবন বর্ষার চার পােয় বন্যার জল, সে কমনীয় আধারে ধরিয়াছে—ছাপায় নাই। কিন্তু জল কূলে কূলে পুরিয়া টলটল করিতেছে—অস্থির হইয়াছে; জল অস্থির, কিন্তু নদী অস্থির নহে; নিস্তরঙ্গ। লাবণ্য চঞ্চল, কিন্তু সে লাবণ্যময়ী চঞ্চলা নহে—নির্বিকার। সে শান্ত, গম্ভীর, মধুর অথচ আনন্দময়ী……….