তটিনী ও আকাতরু – বুদ্ধদেব গুহ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……..তটিনীর শরীরের কাছে এলেই ওর গা থেকে দারুণ এক গন্ধ পায় আকা। গায়ে কি সেন্ট মাখে সে, কে জানে! কখনও তার বুকের আঁচল হঠাৎ খসে গেলে অথবা ইচ্ছে করেই সে কখনও খসিয়ে দিলে, যেমন একটু আগেই দিয়েছিল, ফলসা-রঙা সুডৌল পান-পায়রার মতন স্তনসন্ধি, যেন পৃথিবীর সব আলো-আঁধারী রহস্যের খনি হয়ে ওঠে। সেদিকে চোখ পড়তেই পারুল আর অশােকের লালে লাল হওয়া বৈশাখের নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়েও আকার মাথা ঘুরতে থাকে বনবন করে।………

……..একে একে জামা-কাপড় সব খুলে ফেলল তটিনী। তারপর দাঁড়ালাে আয়নার সামনে। তার প্রিয় শরীরের ছায়া ফেলে। ও কালাে হলে কী হয়, ওর ফিগারটা যে এত সুন্দর তা শুধু নিজেকে পুরােপুরি নিরাবরণ করলেই ও বুঝতে পারে। আর বুঝতে পারে পুরুষমানুষদের চোখের আয়নাতে। কিন্তু পুরুষদের চোখের আয়নাতে যে শুধুই স্তুতি থাকে না, এই মুশকিল!….

……শরীরী আদরও একটা মস্ত বড় আর্ট। পনেরাে বছর বয়স থেকে অনেক পুরুষকে আদর করে আর অনেক পুরুষের আদর খেয়ে এই ভর তিরিশে পৌছে এসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনেছে তটিনী।

চালকলের মালিক, সেই মােটা, বেঁটে, কালাে, মুখে বসন্তের দাগওয়ালা পানখাওয়া বাবুটি, যিনি তার বাবার চেয়েও বড় ছিলেন বয়সে, ধুতি আর পাঞ্জাবি পরতেন, সেই মানুষটিই কিন্তু তাকে যা কিছু শেখাবার সব শিখিয়েছিলেন। সব শরীরী ইতিবৃত্ত। মনেরই মতন, শরীরের মধ্যেও কম জটিলতা নেই। নারী-বিলাসী ছিলেন কিন্তু ভিতরে ভিতরে বড় নরম, বুঝদার। কী সুন্দর করে কথা কইতেন তিনি, হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন কী করলে ওঁর নিজের ভাললাগা বাড়বে আর কী করলে তটিনীরও। পুরুষের আর নারীর শরীরের আলােছায়ার অলিগতিতে, খানা-করে, পাহাড়চুড়ােয়, উপত্যকায় যে কত অগণ্য সুইচ আছে, যেখানে আঙুল হেঁয়ালেই এক একটি পাঁচশাে পাওয়ারের বাশ্ব দপ দপ করে জ্বলে ওঠে, কত কঠিন হিমবাহ অবলীলায় গলে যেতে থাকে নারী শরীরের অভ্যন্তরে, তা উনি না শেখালে তটিনী কি কখনও জানত? মাস্টার রেখে গান ও নাচও তাে প্রথমে উনিই শেখান তাকে। উনিই নামও রাখেন তটিনী’। ওর আসল নাম তাে ছিল মান্তুই।….

……শরীর, সব শরীরই ভারি সুন্দর। এবং ভারি নােংরাও। গাছের পাতারা এলােমেলাে হাওয়াতে যখন আন্দোলিত হয়, যখন উল্টে যায়, যখন তাদের পেটের দিকটা দেখা যায়, তখন তা সাদা দেখায়। তার পিঠের রঙ যাই হােক না কেন। মানুষের শরীরেও যেখানে রােদ পড়ে না, তলপেট, উরু, জঘন, বুক, মেয়েদের নাভির উপর থেকে বুকের নিচ অবধি পেটের অনাবৃত অংশটুকু ছাড়া তার ‘ফিঙের’ মতন কালাে শরীরকেও পাতিকাকের গলারই মতন মসৃণ, ছাইরঙা দেখায়। সে রূপ, ফর্সা যারা, তাদের চেয়েও ভাল। যারা দেখেছে তারাই জানে।…….

Leave a Reply