টুনি মেম – সৈয়দ মুজতবা আলী

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..তাকিয়ে দেখি, মিশকালাে সাঁওতাল মেয়ে—তার উপর মেখেছে প্রচুর তেল। শাড়ির উপর বেঁধেছে গামছা, উত্তমাঙ্গে চোলিফোলি কিছু নেই, নিটোল দেহ, সুডােল ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষেরটা বােঝা গেল পরিষ্কার, কারণ হাত দুটি যতদূর সম্ভব উঁচু করে পলাশ ফুল পাড়বার চেষ্টা করছিল খোঁপায় গুজবে বলে। হলদে পলাশ। এ অঞ্চলে লালের তুলনায় ঢের কম। কি জানি, মেয়েটা হয়তাে ভেবেছে, লাল কালাের চাইতে হলদে কালাের কনট্রাস্টে খােলতাই বেশী।…..

….গুল বাহাদুর দিল্লী শহরে বিস্তর খাপসুরৎ রমণী দেখেছেন। খাটি তুকী মেয়ের ড্যাবডেবে চোখ, খানদানী পাঠান মেয়ের ধনুকের মত জোড়া ভুরু, নিকষ্যি কুলীন ইরাণী তঙ্গীর দোলায়িত দেহসৌষ্ঠব, এমন কি প্রায় অমিশ্র আর্যকন্যা ব্রাহ্মণকুমারী সরল বুদ্ধিদীপ্তশান্তসৌন্দর্য তিনি বহুবার দেখেছেন, কিন্তু আজ যে রমণী তার সামনে আধা আলাে-অন্ধকারে দাঁড়িয়ে, তার লাবণ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ সৌন্দর্য ছ’শ বছরের মিশ্রণের সওগাত। এর গায়ের রঙ এদেশের কচি বাঁশপাতার সবুজ দিয়ে আরম্ভ, তাতে মিশে গিয়েছে পাঠান-মােগলের কিঞ্চিৎ তঁাবা-হলুদের রঙ। চুল ইরাণীদের মত কালাে হয়ে গিয়ে যেন নীলের ঝিলিক পড়েছে। কিন্তু তার আসল সৌন্দর্য তার আটসাঁট গড়নে— সাঁওতাল মেয়ে দেখে যেমন মনে হয় এর দেহ তৈরী হয়েছে গয়ার কালাে পাথর দিয়ে। পেটে পিঠে কোনও জায়গায় এক চিমটি ফালতাে চর্বি নেই। আলগােছে কোমরে জড়াননা এর শাড়ির আঁচল কোমরটিকে যা ক্ষীণ করে দিয়েছে দিল্লীর তন্বঙ্গী তার ইজের-বন্ধ কষে বাঁধলেও এ ক্ষীণ কটি পেত না।

প্রথম তরুণ বয়সে গুল বাহাদুর যখন সবে বুঝতে আরম্ভ করেছেন যুবতীর দেহে কি রহস্য লুক্কায়িত রয়েছে, তখন তাঁর এক ইয়ার তাকে একখানা চিত্রিত ইউসুফ-জোলেখার বই দিয়েছিল। পাতার পর পাতা উল্টে সে বইয়ে তিনি দেখেছিলেন শিল্পী কি ভাবে প্রতি পাতায় জোলেখার সৌন্দর্য ধীরে ধীরে উঘাটন করেছেন। প্রতি ছত্র, প্রতি রঙ তার অঙ্গে অঙ্গে তখন কি অপূর্ব শিহরণ এনে দিয়েছিল। রােমাঞ্চ-কলেবরে কাটিয়েছিলেন অর্ধেক যামিনী।………

Leave a Reply