জেনারেল ও নারীরা – আনিসুল হক

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…….পিন্ডি ক্লাবের শৌচালয়ের কাছে বসে ছিলেন আকলিম।
ওখানেই একটা কুর্শিতে জায়গা হলাে তার। জায়গাটা অন্য কোনাে নারী পছন্দ করবে না। শরীর আছে যেসব নারীর, আছে চেহারা, আছে স্তনসম্পদ, নিতম্বভান্ডার, আছে মধু-উপত্যকা—তারা ঢলে পড়ছে ওই নৃত্যগীতময় বলরুমে, ঢলছে, দুলছে, নাচছে, গাইছে। কিন্তু তার তাে | কেবল শরীর নয়, আছে বুদ্ধিও। ওই মাতাল ক্ষমতাবানদের সঙ্গে নাচানাচি করে, অতঃপর তাদের অঙ্কশায়িনী হলে তুমি বড়জোর আয় করবে কয়েক হাজার, কিন্তু কয়েক লাখ আয় করতে হলে শৌচাগারের পাশের এই অলিন্দের এই নির্জন কুর্শিটাই উত্তম স্থান।…….

………ইয়াহিয়া নাচ দেখছিলেন, গান শুনছিলেন, তাঁকে মদ ঢেলে দিচ্ছিলেন আকলিম, নিজের হাতে, কিন্তু তার চোখ ছিল ইয়াহিয়ার চোখের দিকে। ইয়াহিয়ার চোখ উঠছে-নামছে, তিনি তামান্নার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন, মুখের দিকে, বুকের দিকে, নাভির দিকে, তামান্নার ঘাগরা সরে গেল, তার উরুতে আছড়ে পড়ছে ঝাড়বাতির আলাে, ইয়াহিয়ার চোখ নামল, তামান্না কার্পেটে বসে পড়েছে, তার বুক উপচে পড়ছে কাঁচুলি থেকে, তামান্নার স্তন তত বড় নয়, ইয়াহিয়ার চোখ নিচে, তারপর তামান্না উঠল, ইয়াহিয়া হাত বাড়িয়েছেন আকলিমের দিকে, আকলিম তার হাত মুঠোয় পুরলেন, তারপর ইয়াহিয়ার হাত তার পিঠে, তারপর তার চোখ চলে এল আকলিমের দিকে, আকলিম চোখ সরাচ্ছেন না। আকলিম জানেন, মেয়েদের সবচেয়ে বড় যৌনাস্ত্র হলাে চোখ। গ্রামােফোনে গান বাজছে…উর্দু ছবির গান…খাড়ি নিম কে নিচে । ইয়াহিয়া আকলিমকে কাছে টেনে নিলেন। আকলিম তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, ‘আমি আপনার কত কাছে, তবু কত দূর’…ফিসফিসিয়ে বললেন, নিজের লেখা শায়েরি থেকে, তার কথার সঙ্গে শ্বাস মেশানাে, সেই শ্বাস উষ্ণ, ইয়াহিয়ার কানে তা দিল গরম ভাপ, আকলিমের শরীরও উষ্ণ, একটা কবুতরের বুকের মতাে নরম আর উত্তপ্ত, ইয়াহিয়া গেলাসে আরেকটা চুমুক দিলেন।……….

………দেখতে পেলেন তাঁর আগা জানির সমস্তটা দেহ, পাশ থেকে, সেই কলপ-মাখানাে চুল, এলােমেলাে, উঁচু নাক, কোটরাগত বড় চোখের একটা পাশ, ইলেকট্রিক লাইটের হলদে আলােতেও লাল, তার সেই ললাট, উন্নত, কিন্তু ভাজের দাগসমেত, সেখানে তার সেই শজারুর কাটা-মার্কা ভুরু, ঝুলে পড়া ঠোট, তাঁর গ্রীবা, গ্রীবার নিচ থেকেই তাঁর সাদা-পাকা যােমরাশি, বুকভরা, পেটটা খানিকটা ঝুলন্ত, একটুখানি ভুঁড়ির লক্ষণসমেত, নাভির নিচটা, তারপর তলপেট, খানিকটা রােমশ, তার নিচে নুরজাহানের মুখমণ্ডল, হাত দুটোও, হাত দুটোর আড়ালে, আগা জানির হাত নুরজাহানের মাথার পেছনে একটা, আরেকটা বােধ হয় ঝুঁকে পড়ে তার হৃদপিন্ড স্পর্শ করতে চাইছে, আগাজির ছায়া একবার সামনে একবার পেছনে ঝুঁকছে, তিনি আহ্ আহ্, আরও জোরে আরও জোরে’ বলে উঠছেন, নুরির পিঠে একটা স্বর্ণরেখা, রােমের নাকি আলাের, তিনি হাঁটু গেড়ে বসা, তার পেট ঝুলে আছে, একটু কদাকারই লাগছে দেখতে, হাঁটু গেড়ে বসায় তাকে ডুলির মতাে লাগছে, সৌন্দর্যের চেয়ে রানির কাছে সেটা বিবমিষা উদ্রেককারী বলে বেশি মনে হচ্ছে, কারণ কি ঈর্ষা! নাকি তাঁর কবিজনােচিত সৌন্দর্যবােধ ও রুচির উচ্চতা! নুরির মাথাটা দেয়ালঘড়ির পেন্ডুলামের মতাে সামনে-পেছনে দুলছে।
ইয়াহিয়া বললেন, ‘রানি, অসময়ে! এসাে। জয়েন করাে।’
রানি বললেন, ‘আগা জানি, ইরানের শাহর বিদায়ের অনুষ্ঠান অলরেডি এক ঘণ্টা লেট হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ুন। নুরিজি, আপনি মাথাটা সরান। ওকে ছাড়ুন।’
ইয়াহিয়া বললেন, ‘আরেকটু দিলেই কিন্তু হয়ে যাবে।’
রানি বললেন, ‘আরেকটুর সময় নাই, আগাজি। আপনি অলরেডি লেট।’
নুরি ততক্ষণে দাড়িয়ে পড়েছেন। তার অন্তর্বাস খুঁজছেন। সালােয়ারের তূপ থেকে সেটা এই সময়ে খুঁজে না পাওয়াই স্বাভাবিক।……….

…….আকলিমের শ্বাস ঘন হয়ে আসে, কণ্ঠ ভারী। তার শরীর ভিজে যাচ্ছে। আশ্চর্য, এই জীবনে কম পুরুষ তাে ঘটলেন না, কম পুরুষ ছানলেন না। কিন্তু এই লােকটার ভেতরে কী আছে? তার চেহারা দেখেই তিনি আর্ত ও আর্দ্র হয়ে পড়ছেন!…….

…….তার কত ব্যস্ততা। নুরজাহান আসেন। আকলিম আসেন। আর আসেন তারানা । আহ তারানা! তারানার একটা সিনেমা ইয়াহিয়া দেখেছিলেন।
তার দোহারা শরীর। তলপেটে তিনটা ভাজ। ইয়াহিয়ার আবার একটু মােটাসােটা শরীরই পছন্দ। আটার ময়ান যেমন ছানা যায়, মাখা ময়দার মতাে শরীরও তেমনি ছানা যায়।

তারানা সিনেমায় ভ্যাম্প চরিত্রে অভিনয় করেছেন। খােলামেলা পােশাক। বাইজি বেশে নাচছিলেন। শরীরটা কাত করে কোমর দোলাচ্ছিলেন। নিতম্ব দোলাচ্ছিলেন। বুক নাড়ছিলেন। গিরিখাদ কেঁপে কেঁপে উঠছিল। সেই সিনেমা দেখেই ইয়াহিয়ার শরীরটা মােচড় দিয়ে ওঠে। একে আমার চাই-ই।
আন্তরিকভাবে চাইলে পাওয়া যায় না, এমন জিনিস দুনিয়ায় কী আছে!

দুদিন পরই তার সান্ধ্য পার্টিতে তারানা এসে হাজির। তুমি? তারানা না? ‘জি জনাব।’ ‘আমি তােমাকে স্বপ্নে দেখেছি।’
তারানার কামিজের গলা যথেষ্টই বড়। তার বুকের প্রায় পুরােটাই বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু আশ্চর্য যে বোটা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাপারটা রহস্যজনক।
‘আশা করি স্বপ্নটা যথেষ্টই দুষ্টু ছিল,’ মিচকি হাসি দিয়ে তারানা বললেন।…….“জনাব, আপনি আমাকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখেন। আর আমি
আপনাকে দেখি সর্বক্ষণ। জেগে জেগে। আপনার এই ভুরুর কোনাে তুলনা নেই। আপনার ভুরুর চুল এই রকম। আর আপনার ভেতরটা না জানি কী রকম।’
‘চলাে, তুমি আমার সঙ্গে বাথরুমে চলাে।’……

…..ইয়াহিয়ার এবার আবার বাঙালি চাখতে ইচ্ছা করছে। উফ, বাঙালি নারীরা খুব সুন্দর নাচতে পারে। তাদের নাচের কোনাে তুলনা নাই। আর পার্টিতে তারা এমন উচ্ছল। শাড়িতে তাদের যা লাগে! বিশেষ করে, নাভির নিচে শাড়ি পরা মেয়েগুলাের কোনাে তুলনাই হয় না।……

Leave a Reply