জর্মের চোখ – তিলোত্তমা মজুমদার

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

………..সেদিন নিজের বােনের সঙ্গে অন্য মেয়ের সান্নিধ্যের তফাত সে অনুভব করেছিল প্রথম। বুলুর পাশে শুয়ে তার কোনওদিন অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়নি। একটা স্কাটের ওপর শার্ট পরেছিল খেয়ালি। সাধারণত এটাই সে পরত। আর খুব গরম লাগতে থাকায় সে খুলে দিয়েছিল ওপর দিকের দুটি বােতাম।

কথা বলতে বলতে বিজুর একটা হাত টেনে খেলতে শুরু করল সে আর এক সময় সেই হাত নিল তার শার্টের অন্দরে। বিজুর আঙুলগুলিতে সাড় ছিল না কোনও। ভয়ে এবং লজ্জায় সে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। সে যদিও ইতিমধ্যে জেনেছে একটি হাত এবং স্তনের অপরূপ খেলার ইতিবৃত্ত কিন্তু বাস্তবিক অনভিজ্ঞ সে কোনও স্তন স্পর্শ করেনি। স্কুলের একটি কিশােরর পক্ষে স্বাভাবিক ছিল না সেই পরিস্থিতি পাওয়া যা তাকে নারীর স্তন বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তুলতে পারে। সে অতএব কাঠ হয়ে থাকল কিছুক্ষণ এবং টের পেল খেয়ালিদি নিজের আঙুলগুলির দ্বারা তার হাত পরিচালনা করছে।

সমস্ত শরীরে শীত করছিল বিজুর। মৃদু কাঁপুনি হচ্ছিল তার। হাতের তালু স্বেদসিক্ত হয়েছিল এবং এক দীর্ঘসময় অতিবাহিত করে তার শরীর তার হাতকে দিতে পেরেছিল চাপ দেবার শক্তি। সে তখন মুঠোয় নিচ্ছিল খেয়ালিদির স্তন আর শীত কাটিয়ে বসন্তের উন্মাদ স্পর্শ তাকে পরিণত করে দিল এমন গ্রীষ্মে যাতে সে এক ক্ষুধিত অগ্নিগিরি যে ধারণ করেছে। আগুনে গলিত লাভা এক বিস্ফোরক চুড়ায়। এবং তার মনে হয়েছিল তার কল্পনার সঙ্গে এই স্তনের কোনও মিল নেই। এ বিষয়ে তার যে কোনও কল্পনা ছিল, একজোড়া পুষ্ট ও সুগােল স্তনের অভিলাষ, সে জানত না, বরং আবিষ্কার করেছিল সেই মুহুর্তেই। তদসত্ত্বেও সে চাপ বৃদ্ধি করেছিল এবং তার কম্পিত আঙুল স্পর্শ করেছিল বৃন্তদ্বয়।

এর পর এই কর্মে তার পিপাসা জন্মায়। খেয়ালিদিরও জন্মেছিল নিশ্চয় কারণ এর পরবর্তী প্রায় বৎসরকাল তারা কেবলই একান্ত মুহূর্তের সন্ধান করত এবং সামান্য সময় পেলেই পরস্পর শরীর সংলগ্ন করত। তখন তার সমগ্র পৃথিবী ছিল খেয়ালিময়। মুগ্ধ হয়ে সে দেখত খেয়াল ফুটবল খেলা। তার মনে হত মাঠময় এক কবিতার সঞ্চার। বহুদিন সে-ও ভিড়েছিল দলে খেলুড়ে হয়েই আর সে লিখেছিল অসংখ্য কবিতা যাকে পরের জীবনে তার লেগেছে সব অপরিণত, ব্যর্থ বাক্যাবলী।

যদিও খেয়ালিদি কখনও তার আঙুলগুলি যােনি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া এবং বিজুও চিন্তামাত্র করেনি। এই ইচ্ছে তার জন্মায় আরও পরে। যখন তাপসী তাকে সম্মােহিত করে।……

………সেই রাতেই, অত দুঃখের মধ্যেও তাপসীকে দেখে সে মুগ্ধ হয়ে যায়। খেয়ালির বাসর জাগার রাত্রে, কোনও অন্ধকারের সুযােগে সে তাপসীকে দিয়েছিল তার প্রথম অতর্কিত চুম্বন। তাপসীর পরিধানে চাপারঙের বেনারসিতে সে জুইফুলের গন্ধ পেয়েছিল। সেই গন্ধে নিমেষেই তার সব দুঃখ উধাও হয়ে যায়। আর তাপসীও তার চুম্বনকে প্রত্যাখ্যান না করে বিজুর পরবর্তী দিনগুলােকে প্রায় অলৌকিক করে তুলেছিল। কেননা তাপসীর মধ্যে বিজু পেয়েছিল তার স্বপ্নের সন্ধান। গােল আর ভরাট বুক। ওই বুকে হাত রেখে, মুখ রেখে বিজু পেয়েছিল অপরিসীম প্রশান্তি, যা খেয়ালির কাছে কখনও পায়নি।…

………বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বিজুর চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিল বরং তাপসীই। সম্ভবত বিজুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই তাপসীর বিয়েকে ত্বরান্বিত করে। খেয়ালির সঙ্গে তার মেলামেশা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তােলেনি কিন্তু তাপসীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া সহজ ছিল না। তাকে আর তাপসীকে বাড়ির লােকজন চোখে চোখে রাখছে টের পেত বিজু। তবু তারা শরীরে শরীর মিশিয়েছে প্রতিশ্রুতিহীন, অপূর্ব আবেগে। চা-বাগানের সবুজ ঝােপে তারা আশ্লেষে জড়িয়েছে পরস্পরকে। অন্তর্মুখী বিজু অবলীলায় বহু কথা বলে বলে আদর করেছে তাপসী নামের মেয়েকে। আর তাপসী বিজুকে আঁকড়ে ধরেছে এমন যেন কোনওদিন ছাড়বে না। কেউ কারও কাছে ভবিষ্যৎ দাবি করেনি, বিবাহের অঙ্গীকার চায়নি। ছেড়ে যেতে হবে এই বােধে জড়িয়েছে পরস্পর। এবং বিজু তাপসীর যােনি পর্যন্ত স্পর্শ করেছিল। নরম সেই অনুভূতি তার করতল জুড়ে ছিল দীর্ঘকাল।……..

Please follow and like us:

Leave a Reply