গল্পসংগ্রহ – আবদুল মান্নান সৈয়দ

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

ছবি ও মানবী

…….কিন্তু রূপার সাহসের কোনাে শেষ ছিল না। যে দোকান-বাড়ির তিন তলায় আমি ভাড়া থাকতাম, সেটা আমার এক বন্ধুদের বাড়ি। আর্ট কলেজে পড়তে পড়তেই পড়া ছেড়ে দ্যায় সে—আমাদের সঙ্গে পড়ত—পরে হয়ে ওঠে ব্যবসায়ী-বছরের অধিকাংশ সময় থাকত বিদেশে। সে-ই বন্ধু হিসেবে আমাকে ঐ ঘর ভাড়া দ্যায়। সে জানত, আমার স্বভাব-চরিত্র ভালাে—অন্তত কোনাে মেয়ে আমার ঘরে আসবে না। সে জন্যে নিরুপদ্রবেই কাটাচ্ছিলাম। মাস গেলে ভাড়াটা বন্ধুর বিধবা মায়ের হাতে দিয়ে আসার পরে আর আমার কোনাে দায়-দায়িত্ব থাকত না। রূপাই প্রথম মেয়ে, সে আমার বাসায় আসে। আগে থেকেই ফোনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করা থাকত, সে সােজা চলে আসত উপরে। দোকানপাট চতুর্দিকে, বড় রাস্তার ওপরে বাড়ি, সারাক্ষণ রাস্তা গমগম করছে—কে আর অত খোজ রাখে? আমি ভাবতাম।

কিন্তু ভাবছিলাম-রূপার সহজ-স্বাচ্ছন্দ্য আর সাহসের কোনাে তুলনা ছিল না। একদিন আমার ঘরে ওকে বললাম-তােমার একটা ছবি আঁকতে ইচ্ছে হয়, রূপা।

—ছবি? আঁকো। বলে হাসতে লাগলঝাড নাকি?

রূপার সংস্পর্শে আমারও সাহস বেড়ে গিয়েছিল। বললাম—ন্যুড হলে তাে খুব ভালাে হয়।

রূপা তখনও হাসছে খুব। বলল—উর্ধাঙ্গ হলে আপত্তি নেই। আমার তখন সাহস বেড়ে গেছে খুব। ওর সঙ্গে থেকে কথাও শিখেছি। বললাম—তাহলে তাে আর ন্যুড হলাে না?

রূপা বলল, অপরূপ মুখ ভঙ্গি করে—উহবসতে পেলে শুতে চায়। আমার মতাে মেয়ে তােমাকে এটুকু সুযােগ দিচ্ছে তা কি কম হলাে? বিশেষ করে তােমার মতাে ভীরু-ভিতুর ডিমের জন্যে এই তাে বেশি। আমি যদি তােমাকে বিয়ে করতে চাই, তােমার তাে রাজি হওয়ার সাহসও হবে না।

না। সত্যি, সেই সাহস আমার হয়নি। কয়েকদিন—না কয়েক মাস—আমার পৃথিবী ওলােটপালোট করে দিয়ে রূপা একটা জলপরির মতাে জীবনের জলস্রোতে মিশে গেছে। যেমন হঠাৎ একদিন ওকে চেয়েছিলাম । তেমি হঠাৎই আমার জগৎ থেকে ও সরে গেল। নামি আমিই সরিয়ে দিলাম?

নিয়মিত আমার অফিসে আসছিল রূপা। দুপুরবেলা সেজেগুজে হঠাৎ একটা ঝলমলে নক্ষত্রের মতাে এসে পড়ত আমার ঘরে। বস্ এসে বললেন, সেদিন রাতেই আমার বন্ধু ফিরে এসেছিল দু’দিন আগে আমার বাড়িঅলা বন্ধু আমার ঘরে এসে বলল-মাসুদ, আম্মা বলছিলেন এবার তেতলাটা তৈরি করে ফেলতে—তুমি তাে থাকলেও অনেকদিন—এখন নিশ্চয় তােমার অন্য কোথাও খুব একটা অসুবিধে হবে না।-বন্ধুটি সত্যিই আমাকে ভালােবাসত—সে আরাে কঠিন কথা বলতে পারত, বলেনি। | আমি কি ভুল করেছিলাম কোনাে?—পরদিন দুপুরবেলা রূপা আসতে, আমি তাকে খুব মােলায়েম করেই ঘটনা দুটি জানিয়েছিলাম।

রূপা সেই যে গেল, আর আসেনি কখনাে। আর আমার স্বভাব এমন, আমিও একবারও তার খোঁজ করিনি। রাত্রিবেলা এখন বারান্দার-অন্ধকারে-ইজিচেয়ারে শুয়ে আমার কয়েকজন মৃত প্রিয়জনের সঙ্গে আরএকটা মুখও ভেসে আসে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুয়ে শুয়ে কত কল্পনার জাল বুনি।

নগ্নবক্ষা রূপার সেই ছবিটা কিন্তু আমি এঁকেছিলাম। রূপারই নিবন্ধে। রূপা বলছিল—ইশ, একটা ছবি আঁকারও সাহস নেই? তুমি আবার একটা আর্টিস্ট! রূপা বলছিল—কিন্তু আঘাত করবার জন্যে নয়, আমার ভেতরে সাহস জাগিয়ে দেবার

জন্যে যেন। কয়েকদিনের সীটিঙে আমি রূপার একটি নগ্নবক্ষা কিন্তু নিম্নাঙ্গ-আবৃত একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি এঁকেছিলাম। তার পাশে আলােকিত রাত্রি, শহরের ছাদের পর ছাদ । আমার স্থান থেকে যেমন দেখা যায়।

ভীরু আমি ভীরু আমি-কল্পনার জগতের অধিবাসী আমি। রূপাকে কি আমি নিজেই প্রত্যাখ্যান করেছিলাম? রূপাকে কি আমি নিজেই প্রত্যাখ্যান করিনি?

একদিন অনেক রাতে অন্ধকার বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘরের ভিতরে ফিরে এসে আলাে জ্বেলে দিলাম। সামনেই রূপা। নগ্নবক্ষা কিন্তু তার নিম্নাঙ্গ ছায়ায় ঢাকা। ঘরের ভেতরে দাড়িয়ে আছে-হাসছে তার অমলিন ঝর্ণাধারার হাসি। আমার আঁকা রূপার ছবিটা কই? রূপার ছবিটা?…..

প্রবেশ

……..জমিলা তাদের গ্রামের মেয়ে। ওর মাও কাসেমের বাড়িতে কাজ করত। জমিলা আছে অনেকদিন। কাসেমের আলাদা ঘর হবার পর, ইউনিভার্সিটিতে তখন উঠেছে, সদ্য বসে যাচ্ছে, এক রাতে জমিলা তার ঘরে কি কাজে ঢুকলে সে জমিলাকে জাপটে ধরেছিল। মেয়েটা ফুলের মতাে কোমল, বুকে ফুটে আছে দুটো গােলাপ, পাছা মানপাতার মতাে চওড়া আর ছড়ানাে। কিছু না, এক মুহূর্তে জাপটে ধরে সর্বাঙ্গের স্বাদ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল জমিলাকে। জমিলা হয়তাে নারাজ ছিল না।……

Leave a Reply