অনুবাদঃ ডঃ মুরারিমোহন সেন
……….হিমালয়ের গুহামুখে জন্মে একজাতীয় লতা-তা থেকে উজ্জ্বল আলাে বিকীর্ণ হয় ; কিরাতেরা যখন তাদের বনিতাদের সঙ্গে কামনায় রত থাকে তখন সেই আলাে প্রদীপের কাজ করে, তৈলের প্রয়ােজন হয় না।
হিমালয় যেখানে হিম শিলায় পরিণত হয়েছে, সেই পথে চলতে গিয়ে অবমুখী কিন্নরীদের পায়ের আঙুল আর গোড়ালি অসাড় হয়ে পড়ে; তাদের গুরু নিতম্ব এবং দুর্বহ স্তনের ভারে দ্রুতগতিতে চলতে পারে না।…..
…….কালক্রমে তারা রপানযায়ী রতিসম্ভোগে লিপ্ত হলেন—এবং পর্বতরাজের পত্নী, মনােরম যৌবনের অধিকারিণী মেনা গর্ভিণী হলেন।…..
……….ক্রমে পার্বতীর যৌবন দেখা দেখা দিল। যৌবন ( নরনারীর ) অযত্নসিদ্ধ অলংকার, যৌবন মদ্য না হয়েও হদয়ের মত্ততজনক, যৌবন কামদেবের পপির অতিরিক্ত ষষ্ঠ বাণ-বাল্যকালের পরে এই যৌবনই পাবতীকে অলংকৃত করল।
নব যৌবনের আবির্ভাবে তাঁর দেহ নিপুণ চিত্রকরের তুলিকায় অকিত চিত্রের ন্যায়, সর্যের কিরণে বিকশিত পন্মের ন্যায় সৌন্দর্যে সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে উঠল।
তাঁর প্রতি পদক্ষেপে উত্তোলিত চরণপক্ষের অঙ্গ অঙ্গলি ভূমিতে নিহিত হবার সময়ে যেন নখের দীপ্তি থেকে একটা রক্তিম আভা ফুটে উঠত-মনে হত তিনি যেন এখানে-ওখানে স্থলপম ছড়াতে ছড়াতে চলেছেন।
নুপুর পরে তিনি যখন মন্থর পদে চলে যেতেন তখন মনে হত তাঁর ঐ নপুরের ধনি প্রতিদানরপে ফিরে পাবার জন্যেই বুঝি রাজহংসীরা তাঁকে ঐ মন্দগমন শিক্ষা দিয়েছে। (তা না হলে ঐ মরালগতি তিনি পেলেন কোথা থেকে ?)।
সুবর্তুল্য গোপম্পাকার, অনতিদীর্ঘ তাঁর জংঘাদ্বয় বিধাতা এতই সুন্দর করে গড়েছিলেন যে মনে হয় তাঁর সৌন্দর্য ভাণ্ডারের সবটুকু সৌন্দর্য ঐ জঘা নির্মাণেই নিঃশেষিত হয়েছিল; পার্বতীর অন্যান্য অঙ্গ নির্মাণের সময়ে বিধাতাকে লাবণ্য-সংগ্রহে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
হস্তিশুণ্ডের ত্বক কর্কশ আর কদলীতর, শীতল সুতরাং তারা (সৌন্দর্যে সাধারণ ঊরর উপমানযােগ্য হলেও) পার্বতীর নাতিশীতােষ্ণ অসাধারণ সুন্দর ঊরর উপমান হতে পারল না (অর্থাৎ বাইরেই থেকে গেল, ত্রিসীমাতেও আসতে পারল না )।
অনিন্দ্যসুন্দরী পার্বতীর কাঞ্চীগণের স্থান অর্থাৎ নিতম্ব কতদর অনুপম শােভায় মণ্ডিত ছিল তা শুধু এইটুকু বললেই অনুমান করা যাবে যে পরে পার্বতীর এই নিতব মহেশ্বরের ক্রোড়ে স্থাপিত হয়েছিল যা অন্য কোনাে রমণী স্বপ্নেও কামনা করতে পারে না।
নিনাভি পার্বতীর নাভির চারিদিকে নবাের্গত অতি সুক্ষ, রােমাবলী! সেই রােমাবলী তার নাভিগর্ভে ঈষৎ প্রবিষ্ট হয়ে এমন শােভা সষ্টি করেছিল যে মনে হত, বুঝি তার মেখলার মধ্যস্থিত নীলকান্তমণির নিধ আভা নাভির উপরের বসনগ্রন্থি ভেদ করে নাভিগতে প্রবেশ করেছে।
পার্বতীর কৃশ কটিদেশ যেন একটি বেদির মতাে ; সেই বেদির নিচে তিনটি সন্দর ত্রিবলীরেখা। দেখে মনে হত যেন নবযৌবন ঐ সিড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে যাতে মদনদেবতা ঐ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে যেতে পারেন।
কমলনয়না পাবতীর পাণ্ডুবর্ণ স্তন দুইটি পরস্পরকে পীড়িত করে এমনি পুষ্ট হয়ে উঠেছিল যে সেই শ্যাম-মুখ স্তনদ্বয়ের মধ্যে এতটকু স্থান ছিল না যে মধ্যে এক সক্ষ। মৃণালসূত্র প্রবেশ করতে পারে।
আমার মনে হয়, পার্বতীর বাহু দুইটি শিরীষ কুসুমের চেয়েও অনেক বেশি কোমল ছিল-তা না হলে, পরাজিত হয়েও মদন ত্রিলােচনের কণঠ পার্বতীর বাহপাশে বাঁধতে পারলেন কি ভাবে ?
পার্বতী যখন তাঁর পীনস্তনােন্নত কণ্ঠে সুগােল মুক্তাহার পরতেন-তখন মুক্তাহারে কণ্ঠের যেমন শােভা হত, মুক্তাহারও সৌন্দর্যময় হয়ে উঠত। তারা হত পরস্পর পরুপরের ভূষণ।
(সৌন্দর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা চঞ্চলা ) লক্ষী রাত্রিতে চন্দ্রকে আশ্রয় করে বিকশিত পথের শােভা ভােগ করতে পারতেন না, (আবার দিনে) পমে অধিঠিত থেকে চন্দ্ৰশােভা থেকে বঞ্চিত হতেন; এখন পার্বতীর মুখ আশ্রয় করে চন্দ্র ও পদ্ম-দইয়েরই। প্রীতিলাভ করলেন। (অর্থাৎ পাবতীর মুখ যুগপৎ চন্দ্র ও পদ্মের তুলা)।…..
……….এই সময়ে অনুগামিনী দুই বনদেবীর সঙ্গে গিরিরাজকন্যা পার্বতীকে দেখা গেল ; তাঁর দেহসৌন্দর্যে কন্দর্পের নির্বাপিতপ্রায় বীর্যবহ্নি পুনরায় উদ্দীপিত হয়ে উঠল।
যে অশােক পদ্মরাগমণিকেও পরাজিত করেছিল, যে কণিকার কুসম স্বর্গের দীপ্তি আকর্ষণ করেছিল, যে সিধবার মুক্তামালার স্থান পূর্ণ করেছিল, বসন্তকালীন সেই সকল কুসুমে ভূষিতা ছিলেন পার্বতী।
স্তনয়ের ভারে তিনি ছিলেন কিঞ্চিৎ আনতা, তরণে অরণরাগের ন্যায় আর বসন পরিধান করেছিলেন তিনি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল পর্যাপ্ত পুপের ভরে ঈষৎ নতা পল্লবিনী একটি লতা চলে আসছে।…….
……….তারপর কন্যার যােগ্য অভিলাষে প্রসন্ন হয়ে জগংপজ্য পিতা তপস্যার অনুমতি দিলেন। পার্বতীও ময়রসেবিত পর্বতশিখরে প্রস্থান করলেন-পরে ঐ শিখর তারই নামে ‘গৌরীশিখর’ আখ্যায় ভূষিত হয়েছিল।
স্থির-সঙ্কল্প পার্বতী তাঁর যে চঞ্চল হারলতা বক্ষের চন্দন লস্ত করে দিত—সেই হার খুলে ফেললেন-তার পরিবতে কণ্ঠ জড়ালেন নবোদিত সংযের ন্যায় পিঙ্গলবর্ণ বকল। স্তনের উপরে আহত হয়ে হয়ে সেই বকলের ধারগলি শীণ হতে লাগল।
পুর্ব-প্রসিদ্ধ কেশপাশে তাঁর মুখ যেমন মধুর দেখাত, জটাজালেও সেইরপই মধুর মনে হতে লাগল ; কেবল ভ্রমরপঙক্তিতেই পৰ্ম্ম শােভা পায় না, শৈবালদলে জড়িত থাকলেও তাকে সুন্দর দেখায়। | ব্রতের জনা তিনি তিন লহর মঞ্জরচিত মেখলা ধারণ করলেন। প্রথম বন্ধনে তাঁর ‘নিত বদেশ রক্তিমবর্ণ ধারণ করল এবং দেহ প্রতিক্ষণে রোমাঞ্চিত হতে লাগল। | যে হাতে তিনি অধর ও ওষ্ঠ বিভিন্ন রাগে রঞ্জিত করতেন এবং ক্রীড়াকালে রাগরঞ্জিত স্তনের উপর পড়ে কন্দকে রক্তিম হলে তিনি তাই নিয়ে খেলা করতেন সেই হাত এখন কুশাকুর সংগ্রহে ক্ষতবিক্ষত আর সকল সময়েই সেখানে অক্ষমালা বিরাজিত।
মহামুল্য শযায় একদিন যিনি শয়ন করতেন, কবরীচ্যুত পপের আঘাতেও যিনি বেদনা বােধ করতেন, আজ তিনি নিজের বাহ,লতায় মস্তক রেখে যজ্ঞভূমিতেই শয়ন করেন কিংবা উপবিষ্ট থাকেন। | তপস্যার নিয়মে থাকার পর ফিরিয়ে নেবেন এই ভেবে তিনি দুজনের কাছে দুটি জিনিস গচ্ছিত রেখেছিলেন ; কোমল লতার কাছে তাঁর বিলাসকুলা, হরিণীদের কাছে তাঁর চঞ্চল দষ্টি !
তিনি নিজেই অলসভাবে স্তনরপ ঘটের জলসিঞ্চনে ক্ষুদ্র বক্ষগলির পরিচর্যা করতেন-পরে কুমার কাতিকেয় পর্যন্ত তাঁর পূর্বজাত এই বক্ষগ,লির উপর পাবতীর বাৎসল্য হ্রাস করতে পারেন নি।……..
………অন্য কোনাে রমণী জানালার দিকে চেয়ে দ্রুত ছুটে গেলেন-দুতে যাওয়ার জন্য তাঁর নিতম্বের বসন খসে পড়ল, নীবিবন্ধন করা তার পক্ষে সম্ভব হল না। হাতে বসন ধরে রইলেন তিনি, হাতের অলংকারের দীপ্তিতে তার নাভিগহ্বর উদ্ভাসিত হল।……..
……..রাত্রির অবসানে নির্মল প্রভাত প্রকাশিত হলেও; শয্যার আবরণ ছিন্ন এবং এলােমেলাে-মধ্যস্থলে ছিন্ন মেখলা জড়ীভত, চরণের আলতায় শয্যা অকিত-তব; সেই শয্যা তিনি ত্যাগ করতে পারছেন না।
হৃদয়ের আনন্দ বর্ধনকারী প্রিয়ার মখামত দিনরাত্রি পান করবার জন্য তাঁর এতই পিপাসা যে উমার সখী বিজয়া এসে বললেন তিনি কারও সঙ্গে দেখা করলেন না। | এইভাবে নিশিদিন উমার সঙ্গে যুক্তভাবে শঙ্করের, দেড়শত ঋতু এক রাত্রির মতাে অতিবাহিত হল, তব, তার আসঙ্গতষ্ণা মিটল না। সমদ্রগভে নিহিত বাড়বানি যেমন জলসঘাতের ফলে বেড়েই চলে—তাঁর রতিলিসাও তেমনি বাড়তে লাগল।………….