একটু উষ্ণতার জন্য – বুদ্ধদেব গুহ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..ওর চোখ দেখে মনে হল ও চাইছে, ভীষণ চাইছে, এই দারুণ শীতের কুঁকড়ে যাওয়া রাতে আমি একটু ওর কাছে যাই।

ওর সঙ্গে আমি ওর ঘরে গেলাম। ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলাম। নাইটিতে ঢাকা ওর বুকে আমার বুক রাখলাম।

ও ভালো লাগায় শিউরে শিউরে উঠতে লাগল, আর মুখে বলতে লাগল, অসভ্য; আপনি একটা অসভ্য।

আমি ওকে ডাকলাম, ছুটি; আমার সোনা।

ছুটি যেন কোন ঘোরের মধ্যে, কত দূরের জঙ্গল পাহাড় পেরিয়ে, কত শিশিরভেজা উপত্যকার ওপাশ থেকে আমার ডাকে সাড়া দিল, অস্ফুটে বলল, উঁ, আরামে বলল উঁ–উষ্ণতার আবেশে বলল, উঁ…।

আর কোনো কথা হলো না। ও আমাকে আশ্রয় করে, আমাতে নির্ভর করে, আমার শক্ত বুকে ওর নরম, লাজুক, উষ্ণ বুকের ভার লাঘব করে আমার সারা গায়ের সঙ্গে লেপ্টে রইল।…..

…..গরম জলে চান করতে করতে ছুটির শরীরের কথা ভেবে আমার সমস্ত শীত চলে গেল। আমার সমস্ত শরীর এই দারুণ হিমেল সকালে এক আশ্চর্য উষ্ণতায় ভরে গেল।

যে শরীরকে আমি ভালোবাসি, যে নূপুরের মত নাভিকে আমি কল্পনায় দেখেছি বহুবার, যে মসৃণ রোমশ রেশমী কাঠবিড়ালিতে আমার স্বপ্নের মধ্যে আমি বহুবার হাত ছুঁইয়েছি, যে-সমর্পণী বুকে আমি বহুবার আমার মাথা এলিয়ে এই দ্বিধা-বিভক্ত জীবনের সব ক্লান্তি অপনোদন করেছি, কল্পনার সেইসব এই সকালে যেন সত্যি হয়ে উঠল। আমার আর একটুও শীত রইল না।……

…..রুপোর গয়নার দোকানে ভিড় করেছিল একদল শহুরে সুন্দরী মেয়ে–এখানের কোনো বাসিন্দার বাড়ির ক্ষণকালের অতিথিরা। তাদের রঙিন বেল-বটম ও বহুমূল্য শাড়ি, তাদের চুল-বাঁধার কায়দা ও রকমারি সানগ্লাস ম্লান করে তাদেরই পাশে আছে এখানের মেয়েরা। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বা বসে এ ওর মাথার উকুন বাছছে। কেউ বা হেসে হেসে ঝরনার মত এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে। তাদের উত্তোলিত হাতের ফাঁকে ফাঁকে দু-এক ঝলক চোখে পড়ছে তাদের নিবিড় স্তন, তাদের মেদহীন পরিশ্রমী পুরন্ত দেহ, তাদের সরল নিরাভরণ নিরাবরণ তরঙ্গময় সৌন্দর্য। আর ওদেরই পাশে আসলের অভাব মেকিতে-ভরানো বিত্তবতী সভ্য যুবতীরা তাদের সমস্ত প্রাপ্তি সত্ত্বেও ওদের আড়চোখে দেখে শারীরিক হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।…..

……এত কাজ, এত টাকা, এত খ্যাতির মাঝেও বড় শীতার্ত লাগে–স্ত্রীর কাছে একটু বসে, তার চোখের দিকে চেয়ে, তার সুগন্ধি গ্রীবায় আলতো করে একটু চুমু খেয়ে, তার কবোষ্ণ বুকের রেশমী স্বস্তিতে একটু মুখ ঘষতে ভারী ইচ্ছা করে।…..

…..আমি এগিয়ে গিয়ে ছুটিকে বুকের মধ্যে নিলাম, ছুটির নরম ভিজে মিষ্টি ঠোঁটের সমস্ত স্বাদু স্বাদ ও উষ্ণতা আমার ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলাম।

ভালো-লাগায় ছুটি আমার বুকের মধ্যে শিউরে উঠতে লাগল।

আমি বললাম, দেখি; আমার দারুণ পায়রা দুটি দেখি।

ছুটি বলল, অসভ্য।

মুখে অসভ্য বলেই ওর কাজলমাখা চোখে এক অনামা অসভ্য আশ্লেষের নিমন্ত্রণ জানাল।

ওর জামার মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ওর রেশমী কোমল স্নিগ্ধ শান্তি-ভরা সুডৌল বুক আমার হাতের সমস্ত পাতা দিয়ে ধরলাম।

আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল ভালো-লাগায়।

ছুটি মুখ নামিয়ে ফেলল লজ্জায়।

আমি ছুটির কবুতরের লালচে ঠোঁটে আমার কালো ঠোঁট ছোঁয়ালাম।

ছুটি থর থর করে কাঁপতে লাগল, ভালো-লাগায়, ভীষণ এক ভালো-লাগায়। এই শীতের নিস্তব্ধ ছায়া-পড়া মধ্যাহ্নে ছুটির ও আমার সমস্ত একাকীত্ব, সমস্ত শৈত্য শুষে নিয়ে আগুনের ফুলকির উষ্ণতার ফোয়ারার মত কী এক দারুণ অনুভূতি আমাদের মনের মধ্যে উৎসারিত হল।

ছুটি অস্ফুটে, বোঁজা-চোখে বলতে লাগল, অসভ্য! অসভ্য! অসভ্য!

তারপর ছুটি হঠাৎ বলল, ঊঃ, আর না। এখন আর না।…..

Leave a Reply