……..কনখলে গুরুদেবের শয়নকক্ষের সঙ্গে লাগােয়া ঘরটি ওদের দেওয়া হয়েছিল যা শুধু বিশেষ অতিথিরাই পেয়ে থাকে। বস্তুত আগে এটি ছিল মহারাজের ধ্যানকক্ষ, তাই দুই কক্ষের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী দরজাও থেকে গেছে। যে দুই রাত্রি ধরণীধর হরিদ্বারে ছিল, প্রথম রাতে মাঝখানের দরজায় টোকা দিয়ে আসেন স্বয়ং প্রভু। দ্বিতীয় রাতে, খিল খুলে অভিসারে যান শতরূপা নিজে। যাবার কথা ছিল না। প্রভু ডাকেননি।……….মােট তিনবারের ঠিক কোনটিতে গর্ভে এসেছিল বনবিহারী, গভীরভাবে পরে ভেবে দেখেছিলেন আমাদের গর্ভধারিণী! ওঁর ধারণা ছিল নিশ্চিত ওই প্রথম দু’বারের মধ্যে কোনও একবার।………..
……প্রথম রাত্রির তুলনায়, দ্বিতীয় রাতটিই ছিল তাঁর বেশি পছন্দের। কেননা, প্রথম রাতে সতীত্ব হারানাের ভয়, ধরণীধরের কাছে কৌমার্যস্থলনের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও ব্যাপ্ত বলে মনে হয়েছিল। স্বামী দ্বারা সদ্য বিবাহিতার কৌমার্য-হারানাের মধ্যে একটা বােঝা-নামানাের ব্যাপার থাকে— উৎসবের আমেজের মধ্যে দিয়ে সেই দস্যুতা বা লুটপাট তথা পরস্পাপহরণ হয় বলে, তা আটপৌরে থেকে বেনারসাতে প্রবেশের চেয়ে বেশি গুরুতর কিছু বলে মনে হয় না।……
………প্রভুর সঙ্গে প্রথম রাতে শতরূপা আরও দেখলেন ফুলশয্যার রাতে জেনে শুনে কৌমার্য হারাতে গিয়ে তিনি এতটা অপ্রস্তুত ছিলেন না। সন্ন্যাসীর কুশলী ঠোঁটের অগ্রভাগ যখন তার জিহ্বাগ্র নিয়ে খেলা শুরু করল— নিজের জিহ্বাকে তার জিভে তুলাের প্যাড ছাড়া কিছুই মনে হল না। সন্ন্যাসী বললেন তাকে, সে যেন তার শরীর কণামাত্র নিজের জন্য না রাখে—তাহলে তার উদ্দেশ্য সফল হবে না। জ্যা-মুক্ত স্বাধীন তীরই শুধু লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। শতরূপা মাঝে মাঝে বিষম রেগেও যাচ্ছিলেন নিজের ওপর। ন্যাকা! কচি খুকি! কুমারী নাকি! গত সাত বছর ধরে বিবাহিত হতে হতে শেষ কবে যে কুমারী ছিলিস সে তাে তাের মনেই নেই। তবে এমন ম্যাদা মেরে পড়ে আছিস কেন লাে ঢঙি?……
………দ্বিতীয় দিন, রাতের শেষ প্রহরে তিনি নিজের হাতে নিঃশব্দে খিল খুলে প্রভুর শয়নকক্ষে গেলেন। আজ কোনও দ্বিধা নেই, সঙ্কোচ নেই। আজ বিছানাটি অনেক বড় আর উষ্ণ আর নমনীয় লাগল। আজ সতীত্ব হারানাের সঙ্গে স্বেচ্ছায় কৌমার্য উপঢৌকনের খুব একটা তফাত আর রইল না । বাগীশ্বর ঝা (ওঁরা বিহারি ব্রাহ্মণ) যখন ওঁর যুক্তিতর্কাতীত অবােধ স্তনবৃন্তে ঠোঁট রাখলেন– মনে হল যেন প্রথম স্তন্য দান করছেন অবশ্যম্ভাবী আত্মজকে— বাগীশ্বর সেভাবেই ব্যবহার করছিলেন বৃন্তদুটিকে। দুধে ভরে গেল তাঁর প্রথমে মাথা, তারপর সর্বাঙ্গ, সবশেষে অপত্যপথ। গার্বেলে উঠল তাঁর শরীর।
গর্ভধারণের উন্মাদনার সঙ্গে এই দেহদান ছিল এমন সর্বতােভাবে তৃপ্তিসুখের যে, জন্মের তিনদিন পরে বনবিহারীকে তিনি যখন প্রথম স্তন্যদান করেন, দু’জনের গায়েই তখন একটা সুতােও রাখেননি। শতরূপা, অতএব, গর্ভসঞ্চারের ব্যাপারে দ্বিতীয় রাত্রিটির সম্ভাবনাকে সবদিক ভেবে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছিলেন।……….
………..কেননা তৃতীয় ও শেষবারের যে মিলন তাকে পশ্বাচার বললে কম বলা হয় আর সেটা ঘটেছিল প্রখর দ্বিপ্রহরে, হৃষীকেশে বদ্রির বাস ধরতে যাবার সময় শতরূপা যখন তাঁকে শেষবার প্রণাম করতে যান, তখন। স্নানে যাবার আগে বাগীশ্বর তখন ইম্পাের্টেড ইতালীয় অলিভ তেল মেখে জানালার ধারে বসে রােদ পােহাচ্ছিলেন। ঘরে আর কেউ ছিল না বলে একঝটকায় তিনি ওকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজস্ব স্নানাগারে। বিস্তৃত বিবরণে যাবার কোনও প্রয়ােজন নেই। কেবল এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে পাথর বসাবার জন্যে বাথরুমে তখন সবে খােয়া তােলা হয়েছিল, তাই গােটা ব্যাপারটা সর্বথা সঙ্ঘটিত হতে হয়েছিল, অবস্থানগত দিকথেকে, সমারূঢ় থেকে এবং সেইসব আসনে যাদের কথা না মিলবে কামসূত্রে, যারা না আছে যােগায়।
আজানুলম্বিত লৌহভুজদ্বয় দ্বারা তুলে ও ধরে রেখে কখনও—যখন দু’পা দিয়ে যােগীরাজের কোমর বেষ্টন করে ঝুলে আছেন শতরূপা—যােগের ভাষায় একে পবনমুক্তাসন বললে বলা যেতে পারে(যদিব্যুৎপত্তির দিক থেকে দেখা যায়)—আবার লুপ্ত মাধ্যাকর্ষর্ণাসন বললেও অত্যুক্তি হয় না, যদি নতুন নামে একান্তই ডাকতে হয়। কখনও তার দেওয়ালে-পিঠ দুটি পা ফাঁক হতে হতে নদীর এপার-ওপারে—অথচ আগাগােড়াই বলতে গেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে—গােটা ব্যাপারটা নিষ্পন্ন হয়ে গেল কী অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। যেন শুরুর আগেই শেষ। যেন দাঁড়ানাে ষাঁড় ও গাভী। যাতে টু শব্দটি বাইরে না যায় সেজন্য একই সঙ্গে ট্যাপও ঝাঁঝরি খুলে দেওয়া হয়, যে-জন্যে ভিজে যাচ্ছিল, পিছলে যাচ্ছিল অলিভ-পিছল প্রতিটি ধরতাই তাই আরও আকুলভাবে আঁকড়ে ধরছিলেন শতরূপা, অবশ্য ঝুলন্ত যে-কোনও মানুষই পড়ে না যেতে চাইবে আর সেটাও ঘটনা। অন্যদিকে শব্দ বলতে বিশেষ কী আর। একশতরূপার মুখনির্গত অ-আ-ও-ঔ প্রভৃতি কয়েকটি আদিস্বরবর্ণ ছাড়া।………
…….সারাদিন যেমন তেমন, কিন্তু বিশেষত রাতের বিছানায় তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজের জন্য (সেই ব্লাউজ খােলা। থেকে) সে দিনে দিনে বেশি বেশি লজ্জিত হয়ে পড়তে লাগল। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বনলতা এসে গেল পেটে।
বনি তখন সবে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে ঢুকেছে। প্রতি মাসে একবার অন্তত যায় ওর কাছে। ক্লাস ফোরে পড়ছে যখন, শান্তিনিকেতনের ট্যুরিস্ট লজে একদিন, আয়নার সামনে সায়া নামিয়ে নিজের কুঁচকে মিইয়ে যাওয়া খাঁড়ি ও উপখাঁড়িবহুল পেট সহসা-দেখে সে কেমন অধীর হয়ে পড়েছিল! সে তাড়াতাড়ি তার মুখটুকু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে যায়। দেখেছিল বুক : খুলেও। কোথাও কোনও সান্ত্বনা খুঁজে পায়নি। মাত্র দশ বছর যেতে না যেতেই সমস্ত প্রতিরােধ কী করে আর কখন এ-ভাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল?………