উৎস : -পরকীয়া প্রেম – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত
….কমলেন্দু বলল:……….একে অন্যজনকে সৌভাগ্যের চিহ্ন দেখাতে ব্যস্ত। হঠাৎ শিবানি বলল, তার বুকে নীল শিরার একটা ফ্রশ আছে। আমি বললাম, তা হলে সে মস্ত পূণ্যবতী। বলে আমি হাসছিলাম। এরকম যে হয় না, হতে পারে না, তা আমি জানতাম। আমার হাসি দেখে শিবানী বুঝতে পারল আমি তাকে অবিশ্বাস করছি। সে বলল, “হাসছ কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না? আমি মাথা নাড়লাম… শিবানী কি ভাবল জানি না, হঠাৎ যে সে তার বুকের জামার ওপরের বোতাম খুলে—জামা অনেকটা সরিয়ে আমায় বলল, আলো এনে দেখ। …আমি দেখলাম। কি দেখলাম। কি দেখলাম তা তাোমাদের কাছে বলে লাভ নেই। …বুঝতেই পারছ। তবে শিবানীর বুকে শিরা ছিল, নীলচে রঙের। সেটা ক্রশ কিনা আমি দেখিনি। আমি অন্য জিনিস দেখলাম। …আজ আমার স্বীকার করতে দোষ নেই, সেই বয়সে শিবানীর সেই ইনােসেন্স ছিল। আমার হাতে সেটা মরে গেল। কমলেন্দু নীরব হল। …..
…. শিশির, তোমার যা বলার…’।
আমার বলার পালা কমলেন্দুর পর। শিবানীর জীবনে আমি দ্বিতীয় প্রেমিক তার যৌবনের প্রেমিক। আমারও তখন যৌবন। …. তিন-চার বছর শিবানীর সঙ্গে আমার খুব মাখামাখি ছিল এটা তার শেষের দিকের ঘটনা……. শিবানীকে যে দেখতে খুব সুন্দর ছিল, তা আমার কখনো মনে হয়নি। তার গায়ের রঙ, চোখমুখের ছাঁদ আমার পছন্দ ছিল না। কিন্তু তার শরীর আমার ভীষণ পছন্দ ছিল, … আর শিবানীর তখনকার শরীরের জন্যে তাকে আমার ভালো লাগত। শিবানীর সেই যৌবন বয়সে তোমরা জানো, মনে হত তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন ফেটে পড়ছে। …একদিন, সেটা শীতকাল, লতিকা-কাকিমা তাদের মহিলা সমিতির মিটিঙে গিয়েছিলেন। বাড়িতে চাকর আর ঝি ছিল। ঝি-টার ঠাণ্ডা লেগে অসুখ করেছে, সে শুয়ে আছে। শিবানীর শশাবার ঘরে বসে আমরা গল্প করছিলাম। জানুয়ারী মাস, প্রচণ্ড শীত। ঘরের জানলা-টালা সবই বন্ধ ছিল।…সাধারণ একটা কথা নিয়ে আমরা দুজনেই হাসছিলাম, হাসতে হাসতে শিবানী বিছানায় গিয়ে লুটিয়ে পড়ল। সে এমনভাবে লুটিয়ে পড়েছিল যে তার একটা হাত মাথার ওপর দিয়ে বালিশে পড়েছে, অন্য হাতটা তার কোমরের কাছে বিছানায় অলসভাবে পড়ে আছে, তার মুখ সিলিংয়ের দিকে, মাথার ওপর হাত থাকার জন্যে তার বুকের একটা পাশ আরো স্ফীত হয়ে উঠেছে। শিবানীর কোমরের তলা থেকে পা পর্যন্ত বিছানা থেকে মাটিতে। ধনুকের মতন বেঁকে—কিংবা বলা ভাল-ঢেউয়ের মতন ভেঙে পড়েছে। বিছানার ওপর সুজনিটা ছিল কালচে লাল, তাতে গোলাপের মতন নকশা, শিবানীর পরনের শাড়িটা ছিল সিল্কের, তার রঙ ছিল সাদাটে। ওর ভাঙা শরীরের বা আছড়ে পড়া শরীরের দিকে তাকিয়ে আমার আত্মসংযম নষ্ট হয়ে গেল। ঘরের বাতি নিবিয়ে দিয়ে আমি যখন তার গায়ের পাশে, সে আমায় যেন কেমন ফিসফিস গলায় গরম নিশ্বাসের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল, আমি কবে তার মাকে কথাটা বলব।.. আমি তখন যে-কোনো রকম ধাপ্পা দিতে রাজি। বললাম, কালই বলব, কাল পরশুর মধ্যে। শিবানী যেন অন্ধকারের মধ্যে সুখে আনন্দে উত্তাপে সর্বাঙ্গে গলে গলে যেতে শুরু করল।… সে কতবার করে বলল, সে আমায় ভালোবাসে। আমি কতবার করে বললাম, আমি তাকে ভালোবাসি। …তারপর ঘরের বাতি জ্বালা হয়ে গেলে আমি শিবানীর ময়লা রঙ, ছাোট কপাল, মোটা নাক, সামনের বড় বড় দাঁত, পুরু পুরু ঠোটের দিকে তাকিয়ে মুখ নীচু করে পালিয়ে এলাম। …তারপর থেকেই আমি পালিয়েছি..’।…….