প্রত্নরমণী
তোমাকে দেখেনি মধ্যযুগের নিপুণ পটুয়া,
অজন্তা কিবা ইলোরার ভাস্কর–
তাহলে দেখতে শত ক্যানভাসে,
ব্রোঞ্জে-পিতলে কষ্টিপাথরে,
টেরাকোটা-কাঠ-সোনার পুতুলে
তুমি সাজিয়েছো পুরাকীর্তির সবগুলো যাদুঘর!
কৃষ্ণের পাশে যে আছে দাঁড়িয়ে
যৌবনবতী পাথুরে-স্তনের নারী
লজ্জায় ভেঙে খান খান হবে
তুমি যদি শুধু একটু সাহসে
জোড়ামূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে
খুলে ফেলো এই শাড়ি!
তোমাকে মানাতো প্রত্নবেদীতে পঞ্চালিকায়
গোপীচন্দনে তিলক পরালে বৈষ্ণব কবি,
কোলাহলময় বিশ-শতকের শেষপাদে কেন এলে?
নষ্ট কালের ভ্রষ্ট প্রেমিক
কী দিয়ে তোমার বন্দনা করি?
নারী-কীর্তনে ব্যবহৃত সব উপমা দিয়েছি ফেলে!
তোমাকে দেখেনি চিতোরের রাজা,
রূপের পূজারী রসিক রত্নসেন–
তাহলে দেখতে নিদারুণ ক্ষোভে
মিথ্যুক সেই হীরামন পাখি,
এমনকি প্রিয় পদ্মাবতীকে এক-শূলে চড়াতেন!
নর্তকী নও, তোমার চলার পথ জুড়ে তবু
প্রবাহিত তুমি নৃত্যের নানা মুদ্রায়:
দ্যভিঞ্চি আর হেনরী’র নারী
আমাদের প্রিয় রাজহংসীরা
তোমাকে দেখেই গ্রীবাভঙ্গির অসঙ্গতিকে শোধরায়।
তুমি চলে গেলে ঘর জুড়ে হাঁটে তোমার প্রতিমা,
সারা বাড়ি হয় পরাবাস্তব কোনারক ও খাজুরাহো:
সাজের টেবিলে-বিছানা-বালিশে,
ফাঁকা করিডোরে-বিরান হেঁসেলে
থেকে থেকে জলে ‘তুমি নেই’ এই সত্যের দাবদাহ।
কবিতাটি স্বৈরিণীর ঘরসংসার বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
কালের অদৃশ্য কামড়
স্বভাবে চঞ্চলমতি–অদম্য অপার তার ভাঙনের তৃষা
দেহ তার “কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা”
মুখের ব্যাদান সে-ও চর্মচক্ষে দৃশ্যমান নয়–
একটাই ব্রত তার: ক্ষমাহীন অনিবার্য ক্ষয়।
মূলতই সর্বগ্রাসী, কিছুতেই নেই তার কোনোই অরুচি:
জড় খায়, প্রাণী খায়, পাহাড়-পর্বত খায় ক’রে কুচিকুচি।
জীবন ও যৌবন খায়, খেয়ে ফেলে পীনোন্নত যুবতীর স্তন,
একে-একে পেটে গেছে নদী ও সমুদ্র থেকে বন-উপবন।
মিশরীয় পিড়ামিড, গৌতমের মূর্তি থেকে রোমান খাম্বায়,
খাজুরাহো-কোনারকে পাথুরে নিতম্বে তার কামড়ের চিহ্ন দেখা যায়।