আন্ডার দি উড – গী দ্য মপাসাঁ

›› অনুবাদ  ›› সম্পুর্ণ গল্প  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প

অনুবাদঃ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর মেয়র একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সহসা ঝড়ের বেগে প্রহরীর আগমন। জানায় সে- ধরা পড়েছে প্রৌঢ় এক দম্পতি। টাউনহলে তাদের বসিয়ে রেখে সে খবর দিতে এসেছে। বেচারা মেয়রের আর বিশ্রাম নেওয়া হলাে না। ছুটলেন তিনি টাউনহলে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন পুরুষটি বেশ মােটা-সােটা, নাকটি তার গােলাপী, চুলে পাক ধরেছে। মহিলাটি বেটে-খাটো, রঙ ফর্সা, কেশ ও চঙে পােষাক পরেছে সে। পুরুষটিকে দেখে মনে হলাে কৃতকর্মের জন্য সে বেশ বিব্রত।  স্পর্ধিত মহিলাটি মােটেই অনুতপ্ত নয়। মেয়র প্রশ্ন করেন, ব্যাপার কি? কি হয়েছিল ? প্রহরী বলে প্রতিদিনের মতাে আজও সে শ্যামাপিয়ার সুনীল সবুজ বনে পাহারা দিচ্ছিল। এ অরণ্যের মাঝে রয়েছে গমের ক্ষেত। আমের বনে কাজ করছিল মালী। মালীই প্রথম তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে, ‘ভায়া, একবার গিয়ে দেখে এস লাজ-লজার মাথা খেয়ে এক বুড়ো আর এক বুড়ি বনের মাঝে কী সব কেলাের কীতি করছে। অমনি কর্তব্য-সচেতন প্রহরী ছুটল অরণ্যের গভীরে। প্রণম্নালাপের ফিসফিস শব্দ এল তার কানে। ঝােপের দিকে তাকাতেই মােটা থলথলে এই বুড়ােটিকে বুড়িটার সঙ্গে সঙ্গমরত অবস্থায় দেখল সে আর সঙ্গে সঙ্গেই তাদের গ্রেপ্তার করল।

প্রহরীর বর্ণনায় অতিরঞ্জনের স্পর্শটুকুও ছিল না। সে যা দেখেছে আর যা করেছে সব কিছু নিখত বিবরণ দিল সে। মুহুর্তের জন্যে বিশ্বয়ে হতবাক হলেন মেয়র। অবাক হওয়ারই তাে কথা! পুরুষটির বয়স কমপক্ষেও ষাট আর মহিলাটির বয়স পঞ্চান্নর কম নয়। দেহ কামনায় উন্মাদ হয়ে বনের মাঝে তারা যৌন সংসর্গে লিপ্ত যে ভাবাই যায় না। পরে গাম্ভীর্য বজায় রেখে তিনি লােকটিকে প্রশ্ন করেন, ‘কি নাম তােমার?
নিকোলাস বুয়েন।
—“কিভাবে জীবিকা নির্বাহ কর ?
-প্যারীতে আমার কাপড়ের দোকান আছে।
-“বনের ভেতর ঢুকেছিলে কেন? কি করছিলে? প্রহরী যা বলল তা কি সত্যি ?
পুরুষটি মিনমিনে স্বভাবের। একটু চুপ করে থাকার পর ক্ষীণকণ্ঠে বলল সে,
—“প্রহরী ঠিকই বলেছে মসিয়ে। আমি অপরাধ স্বীকার করছি।
—ভাল, কিন্তু মাগীটাকে জোটালে কোথা থেকে ?
-“সে আমার স্ত্রী।
-বনে কেন বাবা, একসঙ্গে থাক না তােমরা?
–একসঙ্গেই থাকি মসিয়ে।
–তাহলে ধরা পড়বার জন্যেই কি তােমরা বনেবাদাড়ে পশুর মতাে ঐ অপকর্মটি করছিলে? তােমরা দুজন দেখছি বদ্ধ উন্মাদ! থলথলে বড়ােটির মুখে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। বললে সে,
—হুজুর, কোন দোষ নাই আমার। আমার মেয়ে মানুষটির ইচ্ছাপুরনের জন্যেই আমার ঐ অপকর্মটি করতে হয়েছিল। সকলেই জানে নারীরা যেনতেন প্রকারেণ তাদের কাজ হাসিল করে।

ব্যুরেন একটু উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীর দিকে চেয়ে বলে, এবার হলাে তো? তাের জন্যেই আজ আমায় এই ফ্যাসাদে পড়তে হলো। আদালতে যেতে হবে আমাদের। বুড়াে বয়সে কি ঝামেলাই না পােয়াতে হবে!

মহিলাটি কিন্তু স্থির, নির্বিকার। সে বলে ধর্মাবতার, আমি সামান্য নারী। কিন্তু আমিও কিছু বলতে চাই—অনুগ্রহ করে আমায় অনুমতি দিন। আমার বিশ্বাস সবকিছু, শুনে আপনার সহানুভূতি জাগবে, আমরাও মুক্তি পাব।

মহিলাটি বলতে শুরু করে, সে আজ কতকাল আগের কথা। কৈশােরের বনময় রাজ্যে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করছি তখন। আমার চোখে সবকিছুই তখন রঙীন। ব্যুরেনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তখনই। এই ব্যুরেন তখন কত সুন্দর ছিল। নির্জন রৌদ্রোজ্জ্বল একটি দিনে বেজনসে প্রিয়তম ব্যুরেনের সঙ্গে মিলিত হলাম। মধুর একটা ঔদাসীন্য আচ্ছন্ন করেছিল আমায়। অকারণে জল আসছিল চোখে। কী উদার, কী উম্মুক্ত এই বিশ্বপ্রকৃতি। পায়ের নীচে বুজ ঘাসের ঘন আস্তরণ, বাতাস বইছে বনের গল্প বয়ে, রঙবেরঙের কত শত ফুল ফুটেছে, পাখীরা গান গাইছে, মাথার ওপর বিরাট একটা সুর্য। পরিচ্ছন্ন রােদ্দুরে পাশাপাশি হাঁটছিলাম আমি আর ব্যুরেন । আলিঙ্গনাবদ্ধ রােজ আর সিমের অস্ফুট গুঞ্জনধ্বনি আসছিল কানে। দেখলাম তারা পরস্পর পরস্পরকে চুমু খাচ্ছে-অনুভব করছে মিলনের উত্তাপ। আমরা একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ফেললাম নিজেদের। বসলাম ঘাসের নাম গদিতে। ব্যুরেন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি করে সে। সে বলেছিল এক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী সে। সে সময় কত শােভন ছিল এই ব্যুরেন । এরপর প্রতি রবিবারে আমাদের দেখা হতাে। স্বপ্নসম্মােহনে চলাফেরা করতাম আমরা। সেপ্টেম্বরে ব্যুরেনের সঙ্গে আমার বিয়ে হলাে। বিয়ের পর সে নিজেই একটা কাপড়ের দোকান খুলল। সে সময় আমরা দুজনে দাম্পত্য জীবনের মিলন মদির মুহূর্তকে অবহেলা করে দোকানের উন্নতিতে আত্মনিয়ােগ করেছিলাম। আর্থিক সঙ্গতি ফিরিয়ে আনাই ছিল আমাদের একমাত্র লক্ষ্য আর তপস্যা। আমাদের মনে হয়েছিল মধুচন্দ্রিমার রসােপভােগ, উচ্ছল আনন্দে সদ্য ফোটা গােলাপের ঘ্রাণ নেওয়া—এব আমাদের জন্যে নয় কারণ আমরা গরীব। তাই ব্যবসার মাঝে নিশেষিত হলে আমাদের প্রাণচাঞ্চল্য। আমরা বুড়িয়ে গেলাম। আমাদের বৈচিত্র্যহীন দিনগুলি কোলাব্যাঙের মতাে একঘেয়ে ডাকত-না সেখানে হাঙর-কুমিরের নিমন্ত্রণ না রাজহাঁসের। কিন্তু
আমাদের অবস্থা ফিরল। এদিকে আমার মনটা ছিল বেশ রােমান্টিক। রঙীন স্বপ্নে বুধ হয়ে থাকতে ভালােবাসতাম। মনে হতাে এখনও আমাদের মাথার ওপর রয়েছে বিরাট সেই আকাশ, সুনীল বিস্তৃতর মাঝে আজও তাে গানগাওয়া পাখীরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। পুরানাে দিনের হিসেব মেলাতে গেলে বিষাদে ভরে ওঠে মন। কত সহজেই হারিয়ে গেল আমার জীবনের কুড়িটা বছর, শিহরিত যৌবন। আমিও তাে উপভােগ করতে পারতাম অরণ্যের নিঃসীম নির্জনতার মাঝে যৌন সম্ভােগের নিবিড় আনন্দ! বয়সের ভার বয়ে হা হতাশ করে কি লাভ! আজও তাে নতুন করে আরও একবার স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় স্নান করতে পারি। দেহ মিলনের মদির নেশা আমায় পেয়ে বসল। কিন্তু ব্যুরেনকে রাজী করাব কিভাবে? সে তাে ঠাট্টা করবে। নিশ্চয়ই বলবে যে, তুমি কি পাগল হলে? আর সে ছাড়া আর কে আছে আমার। যৌবনের তাপ আর দুতি ঝরে গেছে আমার শরীর থেকে। অন্য কোন প্রেমিক জোটাব সে গুড়ে বালি। লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে ব্যুরেনকে একদিন বললাম মনের গভীরে আমরা বিয়ের আগে যেখানে মিলতাম, চল। একদিন সেখানে যাই। জায়গাটা কী সুন্দর!

ভাগ্য ভালাে এক কথায় রাজী হলাে ব্যুরেন । কতদিন আগের সেই পরিবেশ ফিরে পেলাম কত সহজে। বর্তমানকে মাড়িয়ে উপনীত হলাম অতীতের রাজ্যে। মায়ামন্ত্রবলে ফিরে এল নাকি সেইসব দিন। তারুণ্যের দীপ্তিতে ভাস্বর হয়ে উঠল আমার সারা শরীর। আমার চোখে অপরুপ হয়ে ধরা দিল করেন। তাকে জড়িয়ে ধরে একের পর এক চুমু দিলাম থতমত খেয়ে করেন বলে-কি হলাে তােমার? কি করছ তুমি ?
একটা ঝােপের আড়ালে গেলাম আমরা। তারপর যৌন মিলনের মধুর ক্ষণে ধরা পড়লাম আপনার পাহারাদারের হাতে।

মেয়র খুব রসিক লােক। সবকিছু শুনে সুন্দর হাসিতে মুখ উজ্জ্বল করে তিনি বললেন, ‘ছেড়ে দিচ্ছি তােমাদের। কিন্তু ভবিষ্যতে ঐসব কাজকর্ম বনে বাদাড়ে নয়-বাড়িতেই করবে। বুঝলে?

Leave a Reply