অনেকের গল্প – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..আমি দরজা ঠেলে ঢুকলাম। কোনও শব্দ হল না। ভারী পরদার আড়াল থেকে উঁকি মেরে দেখলাম, ঘরের জানালাগুলোর পরদা খুব ভালভাবে টানা। ঘরে ডানধারে বিশাল একখানা খাট। আবছা মিহি অন্ধকার।

আমি সম্মোহিতের মতো দাঁড়িয়ে অপরূপ মিথুন-দৃশ্যটি দেখতে পেলাম। পৃথিবীর আদিমতম দৃশ্য! দু’টি সম্পূর্ণ নিরাবরণ নর ও নারী পরস্পরের সঙ্গে কী গভীর আশ্লেষে লিপ্ত রয়েছে। তাদের ধুন্ধুমার শ্বাস ও আহ্লাদজনিত শব্দাবলিতে ঘরটি যেন শিহরিত হচ্ছে।

কোনও লজ্জা বা সংকোচ হল না। আমি দিব্যি ঘরে ঢুকে জানলার সামনে রাখা একটি চেয়ারে নিঃশব্দে বসে পড়লাম। এরকম দৃশ্য এত সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করা ভাগ্যের ব্যাপার। ঘরটি ভারী ঠান্ডা। বাতাসে সুগন্ধ ছড়ানো। আবহ অতি চমৎকার। মিথুনবদ্ধ নরনারী দু’টিও অতি সুন্দর।

খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। নারী ও পুরুষ দু’জনেই ধীরে ধীরে স্থির হলেন। বিচ্ছিন্ন হতে একটু সময় নিলেন। তারপরই আচমকা বন্দনা আর্তনাদ করে উঠলেন, কে? কে ওখানে?

আমি তটস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি বললাম, আজ্ঞে আমি। আমি গোলোকবিহারী।

দু’জনে স্তম্ভিত হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তারপরই সুস্নাতবাবু হঠাৎ লাফ মেরে নেমে এলেন খাট থেকে। বাস্টার্ড! রাসকেল! কোন সাহসে এখানে ঢুকেছিস আত্মরক্ষার্থে আমি তাড়াতাড়ি দু’টি হাত তুলে মুখ আড়াল করে বললাম, আজ্ঞে আমাকে চিত্রলেখা পাঠিয়েছেন।

সুস্নাতবাবুর কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেল। বাধাপ্রাপ্ত কামই ক্রোধ, এবং ক্রোধই হিংসার বন্ধু। পরপর দু’টি ঘুসি খেয়ে আমার চোখ অন্ধকার হয়ে এল। উনি দু’হাতে আমার গলা টিপে ধরে বললেন, আই শ্যাল কিল ইউ। কিল ইউ বাস্টার্ড !…..