সবিতা ভাবি ও একটি ভিখিরি – বিনোদ ঘোষাল

›› সম্পুর্ণ গল্প  

সপ্তাহে দুইদিন ঘণ্টাখানেক বাংলা পড়িয়ে আসবি, পুরো হাজার টাকা। অরণ্যকে লোভটা এইভাবেই দেখিয়েছিল বিতান।
ধুস, টাকা কি টিসু পেপার নাকি? অত্ত সস্তা! অবিশ্বাসের সুরে বলেছিল অরণ্য।
ইয়েস ব্রো। তোর আমার কাছে হাজার টাকা ম্যাটার করলেও সকলের কাছে করে না। এই আমাদের পাড়াতেই কত ফ্যামিলি রয়েছে জানিস যারা রোজ হাজার টাকার ব্রেকফাস্ট করে। তুই রাজি কি না বল ?
রাজি না-হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। ক্লাস থ্রি-তে পড়ে একটা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বাচ্চাকে সপ্তাহে দু-দিন সন্ধেবেলা বাংলা পড়িয়ে মাসে হাজার টাকা রোজগার অরণ্যর কাছে জাস্ট হাতে হাফমুন। টিউশন বাড়িটা বিতানদের পাড়ায়। অরণ্যর বাড়ি থেকে সাইকেলে মিনিট পনেরো। বিকেলে ক্লাবে ক্যারম পিটিয়ে সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ গিয়ে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত, ম্যাক্সিমাম আটটা। কোনো ব্যাপারই না। প্লাস আমার ধারণা সন্ধের টিফিনটাও তোর ওখানেই হয়ে যেতে পারে। বউদি হেবি খাওয়ায়।
না না ওসব দরকার নেই, মাইনেটা টাইমে হাতে পেলেই হল। বিতানকে বলেছিল অরণ্য।
ওরে তুই মাইনে নিয়ে ভাবছিস? শ্লা কপাল ভালো থাকলে আরও কতকিছু যে পেতে পারিস জানিস না, বলে চোখ মেরেছিল বিতান।
মানে ?
মানে নিজে গেলেই বুঝতে পারবি।
না বল। বলে মাঝরাস্তায় সাইকেল চালানো থামিয়ে দিয়েছিল অরণ্য।
উফফ তুই না মাইরি এমন একটা অক্ষয়কুমার মার্কা ফিগার নিয়ে আর কতদিন যে ছাগল হয়ে জীবন কাটাবি কে জানে। আরে বাবা বউদির হাজব্যান্ড জাহাজে চাকরি করে। মেরিন ইঞ্জিনিয়র। টাকার কুমির। কম করে লাখ দুয়েক টাকা বোধ হয় মাসে স্যালারি পায়। সুতরাং তোর মাইনের অ্যামাউন্টটা যে ওদের কাছে স্রেফ টুথপেস্ট কেনার খরচা সেটা বুঝেছিস নিশ্চয়ই। আর বাকিটুকু তোকে সবিতাভাবিই বুঝিয়ে দেবে। বলে রহস্যপূর্ণ হেসেছিল বিতান।
সবিতাভাবি! মানে সেই একসময়ের মার্কেট কাঁপানো অ্যানিমেটেড পর্ণ ক্যারেক্টার! হঠাৎ তার নাম কেন বলল?
সেদিন বিতানের অমন হাসির কারণটা বুঝতে না-পারলেও ঠিক এক মাসের মাথায় ওইরকম একটা হাসি নিজেও হাসতে শিখে গেছিল অরণ্য। সুমিতা বউদির মেয়ে মিলিকে পড়িয়ে আর নিজে বউদির কাছে পড়ে যখন নীচের গ্রিলের গেটটা আটকানোর আগে দোতলায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা বউদির দিকে শেষবারের মতো তাকাত অরণ্য তখন অবিকল ও নিজে বিতানের সেই হাসিটার মতোই হাসত নিজে টের পেত।
আজও বেরিয়ে রোজের মতো ওপরের দিকে তাকাল অরণ্য। সুমিতা স্লিভলেস নাইটি পরে ব্যালকনির রেলিঙে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। অরণ্যও পালটা হাসি দিল, তারপর ওই ফ্ল্যাটের মেন গেটে নীচে যে ভিখিরিটা থাকে তাকে এক টাকার একটা কয়েন দিয়ে সাইকেলে চেপে পড়ল অরণ্য। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে, হরির দোকানে একটু চা খেতে হবে। আজ বউদি একেবারে পিষে মেরেছে।
বেশ কিছুটা সাইকেল চালানোর পর হরির চায়ের দোকানে দাঁড়াল অরণ্য। সাইকেল স্ট্যান্ড করে দোকানের ভেতর বেঞ্চে গিয়ে বসল। অর্ডার দিতে হল না, মিনিট কয়েক পরে দুটো বিস্কুট আর কাচের গ্লাসে একটা চা নামিয়ে গেল হরিদা। বিস্কুট ডুবিয়ে মুখে দিতেই ঠোঁট জ্বালা করে উঠল। শালা মেয়েছেলেটা কোনদিন খুন করে ফেলবে ওকে। আর ইচ্ছে করে না এসব। কবে যে মুক্তি
পাবে কে জানে … ভাবতে ভাবতে বেশ কিছুটা ফ্ল্যাশব্যাকে ঢুকে গেল অরণ্য ।
বাহহ খুব মিষ্টি দেখতে তো তোমায়। বিতান বলেছিল অবশ্য। তবে আমার ধারণায় আসেনি এত সুন্দর দেখতে হবে তুমি ।
মধ্য চল্লিশের কোনো মহিলা যদি কোনো চব্বিশ বছরের ছেলেকে প্রথম দিনের পরিচয়তেই এমন বলে তাহলে যেমনটা হওয়া উচিত ঠিক তেমনই হয়েছিল অরণ্যর। বেজায় ঘাবড়ে গেছিল। বিতান বলে রেখেছিল বউদির ইয়ার্কিতে ভয় পাবি না। পালটা উত্তর দিবি, ওতে খুশি হবে। বিতানের এমন কথার মানে বোঝেনি অরণ্য। খুশি করারই বা কী আছে?
কারণটা বাচ্চাটাকে পড়াতে যাওয়ার দেড় সপ্তাহের মধ্যেই টের পেয়েছিল অরণ্য।
এই তুমি একবার এই ঘরে এসো তো। মিলি তুই নিজে একটু পড়, স্যার একটু পরে আসছে। বলে সটান ওকে বেডরুমে নিয়ে গেছিল সুমিতা তারপর ফিক করে হেসে বলেছিল নাও এবার খাটের ওপর উঠে ওই ফ্যানটাকে একটু ঘুরিয়ে দাও তো এই স্কেল দিয়ে। কয়েকদিন ধরে ট্রাবল দিচ্ছে ওটা।
মেয়ের প্রাইভেট টিউটরকে দিয়ে হঠাৎ কেউ এমন কাজ করাতে পারে ধারণার বাইরে ছিল অরণ্যর। তাও খাটের ওপর উঠে কাঠের স্কেল দিয়ে ফ্যানটাকে দু-পাক ঘোরাতেই বনবন করে ঘুরতে শুরু করল।
খাট থেকে নামতেই বউদির কমপ্লিমেন্ট, থ্যাঙ্ক ইউ, কী খাবে বলো? না না কিছু না। বলতে বলতেই চোখ চলে গেছিল বউদির ক্লিভেজে। নাইটির বুকের দুটো বোতাম কখন যেন খুলে ফেলেছিল।
হুমম, খুব দুষ্টু ছেলে তো তুমি, দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানো না, অথচ অন্যদিকে নজর।
অরণ্য ঘেমে স্নান হয়ে যাচ্ছিল উত্তেজনায়। কিছু না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখনই ওর হাত চেপে ধরেছিল বউদি। তারপর আচমকা ওর মুখটা ধরে নিজের বুকের মধ্যে গুঁজে দিয়ে বলেছিল নাও কত খাবে খাও দেখি।
মেয়েদের বুক এত নরম হয়! বুকের ভেতর মুখটা ঠেকা মাত্র মনে হয়েছিল অরণ্যর। তারপর আর কিছু ভাবেনি। ভাবার সুযোগও পায়নি। দরজা লক করে সেদিনই প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বিছানায় দুজনের লড়াই। অরণ্য হাঁপিয়ে উঠছিল এক-এক সময়, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল সুমিতার ভারী শরীরটার
চাপে। কিন্তু কী আশ্চর্য এক গন্ধ ছিল ওই শরীরটায়। মেয়েদের শরীরের এত সুন্দর গন্ধ হয় !
অরণ্য ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার পর সুমিতা বলেছিল তোমাকে ভালো করে ট্রেনিং দিলে তুমি ভালো প্লেয়ার হবে।
চব্বিশ বছরের অরণ্য ভালোবাসা বোঝার আগেই শরীর বুঝে গেল সেদিন থেকে।
অরণ্য আর কোনো উত্তর দেয়নি। খালি গায়ে সামনে বসে থাকা সুমিতা বউদির আনত বুকদুটোর দিকে তাকাতে কেমন একটা কষ্ট হতে শুরু করেছিল। কীসের কষ্ট নিজেও বুঝতে পারছিল না। পেটের দু-পাশে থাক থাক চর্বির ভাঁজ ভারী পাছার নির্লজ্জ শরীরটাকে দেখে মায়া লাগতে শুরু করতে নিজেই চমকে উঠেছিল অরণ্য। এ আবার কেমন অনুভূতি? খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি নিজের পোশাক পরে নিয়েছিল। গা ঘুলোচ্ছিল। আর আসবে না ভেবে নিয়েছিল সেই মুহূর্তে।
ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে সুমিতা বউদি জিজ্ঞেস করেছিল এরপর দিন আসবে তো ?
বউদির চোখ দুটোর দিকে তাকিয়েছিল অরণ্য। তৃপ্তি বা লোভ নয়, তার থেকেও অন্য একটা কিছু ছিল, একটা ভিখিরির চোখ যেমন হয় অবিকল সেই
রকম। ছ্যাঁত করে উঠেছিল বুক।
কোনো উত্তর না দিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছিল অরণ্য। গেটের ঠিক বাঁ পাশেই পাঁচিলের গায়ে প্লাস্টিক দিয়ে বানানো একটা ঝুপড়ি। তার ভেতর শুধুমাত্র একটা পুঁটলি আর বাইরে বসা বহুদিনের পুরোনো, ক্ষয়ে যাওয়া একটা বুড়ি। বুড়িটা পাঁচিলের গায়ে হেলান দিয়ে উবু হয়ে বসে অরণ্যের দিকে একদৃষ্টে শুধু তাকিয়েছিল। সেই চোখদুটোর ইচ্ছে বুঝতে পেরেছিল অরণ্য। মানিব্যাগ বার করে একটা দু-টাকার কয়েন বার করে বুড়ির হাতে দিতে দিতে ওপরে তাকিয়েছিল। সুমিতা ব্যালকনির রেলিং-এ ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে।
অরণ্য ভেবেছিল আর যাবে না। সারাক্ষণ ধরে একটা মেয়েমানুষের গদগদে যৌবন ফুরিয়ে আসা শরীরের ছবি অরণ্যকে মেয়েদের ভালোবাসার অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে বুঝতে পারছিল, কিন্তু তারপরেই মনে হত অতটাও তো খারাপ নয়। নীচে বসে থাকা ভিখিরিটার মতো তো নয়। সুতরাং প্রতি সপ্তাহে দু-দিন শরীরে প্রবেশ ও প্রস্থান। কন্ডোমটা পর্যন্ত অরণ্যকে কিনতে হয় না। বউদি প্রথমদিনই বেডরুমে খাট লাগোয়া টেবিলের ড্রয়ার টেনে অরণ্যকে বলেছিল দেখো তোমার নিজের কোনো চয়েস আছে কি না।
অরণ্য সেই ড্রয়ারে উঁকি দিয়ে দেখেছিল থরে থরে নানা রঙের কন্ডোমের প্যাকেট।
অরণ্য কোনো উত্তর দেয়নি। হাঁ করে তাকিয়েছিল একটা মানুষের অসংখ্য শরীরের দিকে।
বউদি ওর অবস্থা বুঝে ফিক করে হেসে বলেছিল। থাক খুব হয়েছে। একেবারে ছেলেমানুষ, ওই স্ট্রবেরি ফ্লেভারটা নাও। আই লাভ ইট। সব শেখাতে
হবে আমায় …।
বউদির মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারত না অরণ্য। যেটুকু সময় পড়ানোর জন্য ওর সামনে বসত, মাথা নীচু করে থাকত। অথচ ওইটুকু মেয়ে কত প্রস্তুত। আধঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরে নিজেই জিজ্ঞেস করত
স্যার মমের কাছে যাবে না ?
প্রথম দিন এমন প্রশ্ন শুনে শিউরে উঠেছিল অরণ্য। কীহ্ … শব্দটা তীক্ষ্ণভাবে বেরিয়ে এসেছিল মুখ থেকে।
তুমি মমের রুমে ফ্যান রিপেয়ার করতে যাবে না? মম সেয়েস অনলি ইউ ক্যান রিপেয়ার দ্যাট পুয়োর ব্লাডি ফ্যান।
মেয়েটার মুখের সেই কথাগুলো কাঁসার বাসন হাত থেকে মেঝেতে পড়ে যাওয়ার শব্দ করেছিল।
ইয়োর ফিজিক ইজ ফ্যাবুলাস, আই মাস্ট অ্যাপ্রিসিয়েট … ইসস তোমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য আই ফিল জেলাস। অরণ্যর খোলা চওড়া নরম লোমে ঢাকা বুকে মুখ ডলতে ডলতে বলত সুমিতা।
আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
ওহ্ রিয়েলি ! অরণ্যর উত্তরে অকারণ যেন খুশি হয়েছিল বউদি। ও মাই
গড়, দেন ইউ ওয়্যার ভার্জিন টিল উই মেট? হি হি হি।
যেদিন ওই বাড়িটায় যাওয়ার থাকত সকাল থেকে ভীষণ অস্থির লাগত অরণ্যর। সবকিছু ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করত। ওই লদলদে ভারী শরীরটা মনে পড়ত বারবার। চর্বিতে নাভি ঢাকা পড়ে যাওয়া পেট, মাংসের পুর ঠাসা ঢিলে দুটো ঘুমোতে থাকা বুক, মাংসল থাই, হাত থেকে পালাতে চাইত। কিন্তু তারপরেও অমোঘ এক টান … ওকে টেনে নিয়ে যেত সেই বাড়িটার দরজার কাছে, যার পাশে একটা ভিখিরি বুড়ি বসে বসে অরণ্যর দিকে তাকায় অসহ্যভাবে। আস্তে আস্তে অভ্যাস হতে শুরু করল সবকিছু। বিতান শুধু একদিন জিজ্ঞেস করেছিল কী রে সবিতাভাবির সঙ্গে বউনি হয়েছে?
হুম ।
ব্যস এবার যদ্দিন না স্ক্র্যাপ হচ্ছিস চালিয়ে যা। তবে বেশি লং রানের কথা ভাবিস না যেন। লাথ খাবি। বলে খিকখিক করে হেসেছিল বিতান।
মানে ?
মানে কিছু না। বুঝে যাবে বাবা। তবে তুই মনে হয় অনেকদিন টানবি। কথাগুলোর মানে পুরোটা বুঝতে পারেনি অরণ্য। তবে ওই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সেই বুড়ি ভিখিরিটাকে নিয়মিত এক টাকা দু-টাকার একটা কয়েন বাড়িয়ে দিয়ে ওপরে বউদির দিকে একবার তাকিয়ে নেওয়াটা কেমন যেন অভ্যাসের মতো হয়ে গেল। কয়েনটাকে দেওয়ার সময় অদ্ভুত একটা আরাম লাগত অরণ্যর। বুড়িটার চোখ দুটো চিকচিক করত নেওয়ার সময়।


তুমি এই মাসটাই লাস্ট পড়াও অরণ্য। আর দরকার নেই। একেবারে সোজা সাপটা গলায় মাস চারেক পরে সুমিতা বউদি বলল কথাটা। অরণ্য তখন বউদির মেয়েকে পড়াতে পড়াতে সবে ডিম টোস্টে প্রথম কামড় দিয়েছে। কিছু না বলে শুধু সুমিতার মুখের দিকে তাকিয়েছিল।
এই উইকটা পড়িয়ে দাও। আর দরকার নেই।
কেন? সে প্রশ্নটা আর করতে পারেনি অরণ্য। তবে গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে বউদির উৎসাহটা কমছিল সেটা বুঝতে পারছিল ও। প্রথম দিকে ওকে যেমন বিছানায় আঁচড়ে কামড়ে একাকার করত, সেটা পরের দিকে ঝিমোতে শুরু করেছিল। অনেকটাই যন্ত্রের অভ্যাসের মতো ঘটছিল ব্যাপারটা। তারপর লাস্ট উইকে বউদি বলল, আজ ছেড়ে দাও, আমার শরীরটা ভালো নেই। ভালোলাগার বদলে ছ্যাত করে উঠেছিল অরণ্যর বুক। ও কি তবে ফুরিয়ে, যাচ্ছে? পৌরুষ শেষ হয়ে আসছে ভোর বেলার হ্যারিকেনের মতো? ঠিক পরপর দু-দিন অরণ্যর সঙ্গে আর না-শুয়ে তৃতীয় দিনে সুমিতা কথাটা বলল, তুমি এই উইকটাই লাস্ট পড়াও অরণ্য ।
কথাটা শোনার পর ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে বেরোনোর সময় হঠাৎ বউদিকে সটান জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল, কিছু হয়েছে ?
নাহ্ কী আবার হবে? আই ফিল টায়ার্ড।
আমাকে আর একবার … একটু থেমে নিয়ে অরণ্য আবার বলেছিল আমাকে আর একবার চান্স দেবে?
চান্স? কীসের চান্স? খুব যেন অবাক হয়ে বলেছিল বউদি।
তুমি জানো কীসের চান্স। প্লিজ … একবার।
ঠিক আছে পরে দেখছি। নাউ আয়্যাম … প্লিইইইইজজজ … জাস্ট ওয়ান টাইম। জেদ চেপে গেছিল অরণ্যর।
যেন সুমিতা বউদিকে আর-একবারের জন্য বিছানায় না-টানতে পারলে ওর জীবন পচা কাঁঠালের মতো তীব্র দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে।
সুমিতা ঠোঁটের কোণে খুব সামান্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেছিল, হুমম ঠিক আছে এসো। বাট লাস্ট টাইম ওকে ?
আর কিছু বলেনি অরণ্য। কোনো কথা আসেনি মুখে। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়েছিল সুমিতা বউদির মুখের দিকে।
মাঝের দুটো দিন যেন সময় কাটতেই চাইছিল না। অসহ্য অসহ্য! বারবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে অরণ্য। খুঁটিয়ে দেখেছে নিজের নগ্ন শরীর, কোথাও কি খুঁত হয়ে গেল তবে? নাহ্ … খুঁজে পায়নি। এই তো সাঁওতালদের ধনুকের ছিলার মতো নির্মেদ মসৃণ ত্বকের পুরুষ শরীর … তাহলে কেন বাতিল হয়ে গেল? যে নারী শরীরটার ওপর এতদিন ধরে মনে মনে বমি করত অরণ্য, সেই শালা বাতিল করে দিল আমাকে ! … আ-মা-কে! এত সাহস! বাতিলের সেই মুহূর্ত থেকে ঘেন্না করার শরীরটাই ম্যাজিকের মতো মহার্ঘ হয়ে উঠল
অরণ্যর কাছে। কেন হল নিজেও বুঝতে পারছিল না। কিন্তু ভীষণ তীব্র একটা জ্বালা … গনগনে কিছু একটা …..
আজ সন্ধেবেলা সাইকেল চালিয়ে সুমিতা বউদির বাড়ির দিকে যেতে যেতে টের পাচ্ছিল নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে, টি-শার্টের ভেতর ঘামে ভিজে
উঠছে। যেভাবে হোক শালা ওই মেয়েটাকে চাই, চাইইই…. কী ভাবে নিজেকে ? এত সহজে পুরোনো হয়ে যাব আমি? বাড়ির সামনে এসে গ্রিলের গেটটা খুলে সাইকেল ভেতরে ঢোকানোর সময় অরণ্য আড়চোখে খেয়াল করল সেই ভিখিরিটা ওকে জুলজুল করে দেখছে। চোখদুটোর মধ্যে এক-দু-টাকা পাওয়ার আশা।
চোখ সরিয়ে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে সোজা দোতলায় উঠল। স্টাডিরুমে গিয়ে দেখল বউদির মেয়ে নেই।
ওহ তুমি এসে গেছ। না আজ মিলি নেই, পাশের বাড়িতে ওর এক ফ্রেন্ডের বার্থডে। সেখানে গেছে।
আচ্ছা।
চা খাবে?
নাহ্ থাক ।
তাহলে ঘরে চলে এসো। আমার আবার আজ একটু তাড়া রয়েছে। বেরোতে হবে। কিছু কেনাকাটার দরকার। মেয়েছেলেটা এমনভাবে ঘরে আসতে বলল, যেন অরণ্য ওকে আদর করতে না, বাথরুমের কল সারাতে এসেছে। শা … হ হারামি মাগি … । পুষে রাখা শব্দটা নিঃশব্দে মুখ থেকে বেরিয়েই গেল শেষপর্যন্ত। যন্ত্রের মতো বেডরুমে ঢুকল অরণ্য। তারপর সুমিতার দেখাদেখি নিজেও
পোশাকগুলো খুলে ফেলল ধীরেসুস্থে। শেষ মুহূর্তে হঠাৎ মনে হল পালিয়ে যাই। কিন্তু এখন আর সেই উপায় নেই। কাল আমার হাজব্যান্ড আসছে। নেক্সট উইকে এই সময়ে আমরা সিঙ্গাপুরে। আদর চলাকালীন বলল সুমিতা । উত্তর দিল না অরণ্য। বউদির ওপরে শুয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আজ পৌরুষ ভিজে ন্যাতার মতো। অরণ্য চাইছিল মেয়েটাকে এমনভাবে পিষে ফেলতে যাতে ও কঁকিয়ে ওঠে আবেগে . … . ভালোলাগায় … কিন্তু কিস্যু হচ্ছিল না। নিজের ওপরেই ঘেন্না হচ্ছিল অরণ্যর। বিশ্বাসঘাতক মনে হচ্ছিল নিজের চব্বিশ বছরের শরীরটাকে। বহুক্ষণের চেষ্টায় জাগল। মিটলও একসময়। তারপর বউদির ওপর থেকে
নামল অরণ্য। এত পরিশ্রম আর ক্লান্তিবোধ ওর জীবনে হয়নি। গোটা গা চ্যাটচ্যাট করছে। বউদির কাছ থেকে সরে যাওয়া মাত্র উঠে বসল বউদি। তোয়ালে দিয়ে নিজের গা মুছল। তারপর খুব ক্যাজুয়ালি বলল, আমি উঠে পড়ছি, তুমি টয়লেটে গেলে চট করে ঘুরে আসো। টয়লেটের আয়নায় নিজের দিকে চোখ পড়তে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিল অরণ্য। ব্যবহৃত কন্ডোমটা কমোডে ফেলে ফ্লাশ করার সময় মনে হল যেন ও নিজেই ওই অন্ধকার পাইপ বেয়ে নেমে গেল আরও অন্ধকারে। ফ্রেশহয়ে বেরিয়ে দেখল বউদি ততক্ষণে নাইটি পরে চুলটুল আঁচড়ে একদম ফিট।
অরণ্যকে দেখে মৃদু হেসে বলল, ঠিক আছে তাহলে ? এবার আমি রেডি হই? প্রশ্নটার সহজ মানে, এবার তুমি কাটো। ওহ্ এক মিনিট। বলে খাট থেকে উঠে গিয়ে আলমারি খুলে একটা হাজার টাকার নোট নিয়ে এসে অরণ্যর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই নাও তোমার ফিজটা। আজই তো লাস্ট।
টাকাটা নিল অরণ্য। নিজেকে কেন্নোর মতো মনে হচ্ছে। কিছু না বলে বেরিয়ে এল। সাইকেলে চেপে চলেই যাচ্ছিল, হঠাৎ চোখ পড়ল বাড়ির সামনে
সেই ভিখিরিটা বসে। অরণ্যর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মানি ব্যাগ থেকে খুচরো বার করতে গিয়ে দেখল যাহ … একটাও খুচরো নেই! পাঁচ-দশের নোটও নেই। শুধু দুটো একশো আর বউদির দেওয়া হাজারের নোটটা। কী করবে বুঝে পেল না অরণ্য। একবার ভাবল কিছু না দিয়েই চলে যায়। কিন্তু ভিখিরিটার চোখে চোখ পড়তেই কেমন যেন লাগল … ব্যাগের আতিপাতি খুঁজেও একটা খুচরোও পেল না ও। আজই এই বাড়িতে শেষ দিন। ওপরে তাকাল অরণ্য। রোজের মতো আজও সুমিতা বউদি রেলিং থেকে ঝুঁকে দেখছে। চোখাচোখি হতেই বউদি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল কী হল খুচরো নেই নাকি? অরণ্য ঠোঁট উলটে ইশারায় জানাল না নেই। ভিখিরিটাও ওপরের দিকে তাকাল ।
দাঁড়াও আমি দিচ্ছি। বলে ব্যালকনি ছেড়ে ঘরে গেল বউদি। আর সঙ্গে সঙ্গে অরণ্যর মনে হল খুচরো পয়সাটা কার দিকে ছুড়বে বউদি? কে লুফবে ?