সন্ধ্যা রাতের শেফালি – মিস শেফালি

›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

অনুলিখন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

…..আরও একটা লজ্জার ব্যাপার ঘটত মাঝেমাঝেই। কাজকর্ম শেষ করে আমরা, কাজের লােক যারা, তারা সবাই এক জায়গায় পাশাপাশি শুতাম। মাঝরাতে আমার গায়ে কেউ হাত দিত। একটা নােংরা জন্তুর মতাে হাতটা আমার সারা গায়ে ঘুরে বেড়াত। আমার ফ্রক টেনে কোমরের উপরে তুলে দিত। যদিও তখন আমার সবে বারাে বছর, যদিও তখনও ফ্রক পরি, কিন্তু আমার শরীর বয়সের তুলনায় একটু বেশিই বাড়ন্ত ছিল। সেটাই কাল হয়েছিল! ভয়ে আমার ঘুম আসত না কখন গায়ে সেই হাত এসে পড়ে। কোনওদিন চোখ খুলে দেখারও সাহস হয়নি যে কে! কার হাত! ঘুমের ভান করে মটকা মেরে পড়ে থাকতাম। ফ্রক উপরে তুলে দিলে আমি আবার টেনে ছোট নীচে নামিয়ে দিতাম, কিন্তু চেঁচিয়ে ওঠার সাহসও ছিল না। মালকিনের কাছে নালিশ করা দূরে থাক, লজ্জায় কাউকে বলতেও পারিনি। শুধু একা থাকলে দু’চোখ ভরে জল আসত। মনে হত, কই, বাড়ির বাকি কাজের মেয়েদের সঙ্গে তাে এরকম হয় না, আমার সঙ্গেই কেন হয়!………

…..মহিলা নিজের ব্লাউজ আমাকে পরতে দিয়েছেন, কিন্তু তার নীচে পরার জন্য ব্রেসিয়ার দেননি। যদিও তখন আমার বয়স সবে বারাে বছর, কিন্তু আমার বুকজোড়া তখনই যে-কোনও কুড়িবাইশ বছরের যুবতীর মতাে পুরু, ভরাট। কাজেই ব্রা ছাড়া ব্লাউজ পরে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। হিলজুতাে পরে ওইরকম নড়বড় করে হাঁটছি, তাতেই রাস্তার লােকে তাকিয়ে দেখছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই রে, বুঝতে পেরেছে বােধহয় যে আমি ভিতরে ব্রা পরিনি! সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা।……

…..কাজেই প্রথম রাতে লিডাে রুমে নাচার স্মৃতি আলাদাভাবে কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে নাচের পােশাকটার কথা। গলা থেকে পা অবধি ড্রেসটার একদিকের হাত আর তার অন্যদিকের পা-টা পুরাে খােলা। নেকলাইনটা বেশ নিচু, ফলে বুকজোড়া অনেকটাই দেখা যাচ্ছে।……

…..একবার বম্বেতে প্রােগ্রাম করতে গিয়ে আমি প্রথম স্ট্রিপ টিজ দেখলাম। ইন্ডিয়া গেটের কাছে ‘ব্লু নাইল’ বলে একটা নাইট ক্লাব ছিল, সেখানে। মনে আছে, মেয়েগুলাের দু’ বুকে দুটো নাইলনের ফুল আটকানাে, দুপায়ের ফাঁকে আর পিছনেও তাই। অসাধারণ নাচত সবক’টা মেয়ে। কলকাতায় তখন স্ট্রিপ টিজ হত গ্র্যান্ড, পার্ক, আর স্পেনসেস হােটেলে। ফিরাপােজে কখনও স্ট্রিপ টিজ দেখিনি আমি। তবে পুরাে স্ক্রিপিং নয়, কলকাতায় হত টপলেস ডান্স। মানে শুধু বুকের কাপড়ই সরত, নীচে সরু এক চিলতে প্যান্টি পরা থাকত। তবে সেখানেও একটা দুষ্টুমি থাকত। ডান্সাররা পাচ-ছ’টা প্যান্টি পরে থাকত। সেগুলো একটা একটা করে খুলে ফেলত আর প্রতিবার লােকে আশায় থাকত, এবার…এবার বােধহয়। মিউজিকের লাস্ট বিটের সঙ্গে যে প্যান্টিটা খুলে হাওয়ায় ছুড়ে দিয়ে ওরা চলে যেত, তার নীচে কিছু থাকত কি না, আলো-আঁধারিতে সেটা কারও দেখা হয়ে উঠত না!

কলকাতায়, যারা স্ট্রিপ টিজ করত, প্রত্যেকেই অসাধারণ সুন্দরী ছিল! আর তেমনি ফিগার! আমি নিজে মেয়ে হয়েও বলছি, প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতাে! যখনই সুযােগ পেতাম, ওদের নাচ দেখতাম আমি। স্ট্রিপ টিজ সম্পর্কে যার যে ধারণাই থাকুক না কেন, এর মানে শুধুই জামা-কাপড় খােলা নয়। খােলা এবং ঢাকা। অডিয়েন্সকে ক্রমাগত ‘টিজ’ করে যাওয়া। সব খুলে যদি দাড়িয়ে যাওয়া হয়, তার মধ্যে শিল্প কোথায়! কীভাবে খােলা হচ্ছে, সেটাই আসল। যেমন বুকের উপর আড়াআড়ি রাখা দুটো হাত। অডিয়েন্স জানে, বুকটা খােলা, একটা সুতােও নেই। তবুও দেখা যাচ্ছে না। না দেখলে ঠিক বলে বােঝানাে যাবে না যে কী অসম্ভব আর্টিস্টিক একটা ব্যাপার ছিল এটা।…..

…..অবশ্য শরীর নিয়ে সংকোচ কেরিয়ারের শুরুতেই কেটে গিয়েছিল আমার। বরং বুঝেছিলাম, শরীরটাই আমার একটা অ্যাসেট, যেটাকে সাবধানে, যত্ন করে রাখতে হবে। আরও একটা ব্যাপার ছিল আমার। আমি হােটেলে ক্যাবারে করতাম ঠিকই, কিন্তু আমি না চাইলে কেউ আমার গায়ে হাত ছোঁয়াতে পারত না! সাফ কথা ছিল আমার যে, দেখছ দেখাে। প্রাণ ভরে দেখাে। আমার খােলা বুক, আমার খােলা পা, আমার কোমর, আমার নাভি, যতক্ষণ আমি ফ্লোরে আছি, দেখে যাও। কিন্তু ছুয়ে দেখার সাহস কোরাে না। হাত বাড়িও না আমার দিকে। আমি ডাম্পার, প্রস্টিটিউট নই! ফিরপােজে অবশ্য সেরকম অসভ্য, অভদ্র ক্রাউড কখনও আসতও না। কিন্তু স্ট্রিপটিজ এমন একটা নাচ, যাতে ভাল ফিগার ছাড়াও আরও কিছু লাগে। ওইরকম একটা মানসিকতা লাগে, যেখানে নিজের শরীরটাকে আর শরীর বলে মনে হবে না। ওই জায়গাটায় পৌঁছনাে আমাদের দেশের মেয়েদের পক্ষে বেশ শক্ত। তবে কখনও কি শরীরে একটা সুতোও না রেখে আয়নার সামনে দাড়াইনি? ‘না’ বললে মিথ্যে কথা বলা হবে। আমার নুডিটিও তাে কম সুন্দর ছিল না। নিজেকে দেখার ইচ্ছেও তাে হত কখনও কখনও। নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হত যে, আরু, তুইও কিছু কম যাস না !…..

……….তাড়াহুড়াে করে ফিরপােজ ফিরেছি, ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করার সময় পাইনি, সােজা ড্রেসিং রুমে চলে গিয়েছি। তার আগেও বেশ কয়েকবার এরকম হয়েছে, আমি ফিরে, ঝটপট চেঞ্জ করে সােজা চলে গিয়েছি লিভাের ফ্লোরে। তখন আমি হাওয়াইয়ান নাচি লিডােতে। রাতের কলকাতার ক্রেজ তখন ওটা। মিস শেফালির হাওয়াইয়ান নাচ দেখার জন্য লিডােতে জায়গা পাওয়া যায় না। সেদিনও দুদ্দাড়িয়ে ফিরেছি, পরনের স্ন্যাকসটা খুলে হাওয়াইয়ানের যে ঘাসের ঘাগরা, সেটা পরেছি, তারপর টপটা খুলে ফুল লাগানাে বিকিনিটা পরে সােজা ফ্লোরে চলে গিয়েছি। | হাওয়াইয়ান নাচে ফ্লোরে গিয়ে আমি প্রথমেই একটা উইং করতাম। কোমরটা এক ঝটকায় এমনভাবে ঘােরাতাম যে ঘাগরাটা ফুলে উঠত, নীচের ষ্টিটা দেখা যেত। সেদিনও তা-ই করেছি। কিন্তু করার পরেই মনে হল, কী রে পাছুতে ঠান্ডা লাগেন! তার পরেই বুঝতে পারলাম, তাড়াহুড়োয় ব্ল্যাকসটা খােলার সময়, যে প্যান্টিটা আগে পরেছিলাম, সেটাও খুলে ফেলেছি! কিন্তু হাওয়াইয়ান নাচের যে প্যান্টি, সেটা পরিনি। অর্থাৎ আমার ঘাসের ঘাগরার তলায় আর কিছু নেই! তখন তাে মহা বিপদ! আমি কোমর শক্ত করে এক বর্গায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচছি, কিন্তু কোমরের নীচ থেকে পা জোড়া আর নড়ছে না। আমি এক জায়গাতেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত নাড়িয়ে যাচ্ছি। হাওয়াইয়ান নাচের ইতিহাসে বােধহয় কেউ কখনও ওভাবে নাচেনি।…..

……সেদিন হেদার মাঝে মাঝেই ফ্লাস্ক বার করে চুক চুক করে খাচ্ছে, আবার রেখে দিচ্ছে। ও ‘ক্যান ক্যান’ নাচত। ফ্লোরে সেদিন যখন ও নাচছে, তখন সবাই খেয়াল করল, হেদার প্যান্টি পরে নেই! অথচ সেটা লুকিয়ে রাখারও উপায় নেই কারণ ক্যান ক্যান মানে প্রায় মাথার উপর পা তােলা, স্কার্ট তুলে হিপ শেক। আর তার থেকেও বড় কথা, হেদারের হুঁশ নেই যে ও ভিতরে কিছু পরে নেই। ফলে কোমরের উপর স্কার্ট তুলে যখন হিপ শেক হচ্ছে, লিডাে রুমে তখন হুলস্থুল কাণ্ড। মিউজিশিয়ানরা বুঝতে পারছে, কিন্তু মাঝপথে নাচ বন্ধ করার কোনও উপায় নেই। আমরা খালি দেখতে পাচ্ছি ভ্যালে সাহেব দাঁত কিড়মিড় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নিচু গলায় হেদারকে গালি দিচ্ছে। সেবার হেদারকে এক মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল ফিরপােজ।…..

Leave a Reply