শঙ্খবিষ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

……সেদিন ? সমবয়সী দুজন কিশোর-কিশোরী ছিল তারা। ঐ সময়টা মোটেও অনকূল ছিল না প্রেম-ভালবাসার পক্ষে। অথচ কী একটা ঘটে গিয়েছিল। একটা নিষ্ঠুর টান যেন দুজনকে বারবার কাছাকাছি হতে বাধ্য করেছিল। আর টের পাওয়া যাচ্ছে যে সেটা ছিল নিছক প্রকৃতির ষড়যন্ত্র । সেটা ছিল ভীতু বোকা- বোকা আড়ষ্ট যৌনতা মাত্র। সংযোগ যদিও বা ছিল নিরঙ্কুশ, তাকে কেউই চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই ঘরে দুজনে পাশাপাশি “শয়ে থাকলেও কেউ এসে পড়ার সম্ভাবনা ছিল না। আর টানটা ছিল গঙ্গারই বেশি । সে উত্ত্যক্ত করে মারত রাহলকে । নখে আঁচড়াত ৷ কামড়াত। রাহুলের মতো ছেলেকেও সে ভয় পাইয়ে দিতে পারত ।

আর এই দঃখময় অনভূতিই কি প্রেম? কিন্তু তখন সে কিশোর । দেহের তীব্রতাটা নিয়েই সে ছিল ভাবিত, মনের তীব্রতা সে স্পষ্ট টের পায় নি। গঙ্গা তার অপরিণত ষোলবছরের শরীরে একটা জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল—সে জ্বালা শরীর ঘরে-ঘরে একদা একসময় নিভে গেল ৷ মন ছিল আরও দূরে—আগনের নাগালের বাইরে। মনে একটুও আঁচ লাগে নি।……

-অরুণের এই বোনের চোখের পাতা খুব আস্তে পড়ে এবং ওঠে । খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে কি ? স্বাস্থ্যটি বেশ ডগমগে । এমন তাজা সুস্বাদু মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে না কেন অরুণ?….

…..যৌবন নিজের কাছে গোপন প্রাচুর্যের প্রতীক-কৃপণের ধনের মতো লোহার কঠিন আলমারিতে গঙ্গা যেন নিজের দেহকে রাখতে শিখেছে। সে পাপপণ্যের সস্পষ্ট সীমারেখা চিনেই মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে একহাতে পাপ অন্য হাতে পণ্যকে ছংয়ে থেকেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, সে মা হয়ে গেছে । তার স্তনে অভাবিত দুধের উৎস খুলে গেছে সংসারী প্রৌঢ় পুরুষের কামনার দাঁতে—আর সে পুরুষকে সে হয়তো একদা পিতৃসম দেখেছিল । তাই সব মিলিয়ে সে ছিল বিদ্রোহিনী গঙ্গা। কিন্তু পূর্ণতা দিয়ে সব বিদ্রোহ সব প্রক্ষোভ সে ঢেকে রাখতে জানত ।…..

….গঙ্গার চোখে জল দেখে অবাক হল রাহল। সে সংযত স্বরে বলল, আদিম যথে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছিল। তখন মেয়েরাই ছিল নাকি সমাজের লিডার । তাদের হুকুমেই পুরষকে ওঠবস করতে হত। লিডার মেয়েটি ইচ্ছেমত পরষ বেছে নিয়ে তার সঙ্গে বাস করত । সন্তান জন্মাত ৷ মা-তার মানে সেই লিডার তখন করত কি জানো? সন্তানদের ভিতর শক্তিমানদের বেছে নিত—যৌন সংসর্গ করত । ফ্রি সেক্স কাকে বলে—হয়তো তোমার চেয়ে কেউ বেশি জানে না গঙ্গা ৷ কিন্তু আমরা যে অনেক দূরে চলে এসেছি।….

….শীলা সামান্য ঘুরল। চোখ খুলল না। ঠোঁটে নিশ্চুপ হাসির আভাষ ধরা পড়ছিল । সে দুহাত বাড়িয়ে রাহুলের গলাটা জড়াল । তারপর ওর মুখটা নিজের মুখের কাছে টেনে নিল । ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ফিস ফিস করে বলল, জলতেষ্টা —না, অন্য কিছ?

রাহুলের কিছ, ভাল লাগছিল না। শীলার নিশ্বাসের গন্ধ, তার বুকের চাপ— অনিবার্য’ যৌনতার আক্রমণ – অথচ রক্ত যেন জমাট হয়ে গেছে শরীরে। তার মনে হল, এখন এসব অশোভন-ভারি অসঙ্গত। প্রস্তুতিহীন আকস্মিক উপদ্রব। কিন্তু একটা গভীরতর ভিন্ন প্রকৃতির আবেগ তার বাকের মধ্যে আস্তে আস্তে দলে উঠেছে। শান্তির আশ্রয়ের জন্যে আত্মা মাথা কুটতে সরে করেছে। শূন্যতার জালা থেকে আত্মরক্ষার জন্যে কোন কঠিন মাটি—যে মাটিতে ছায়া আছে, তার পক্ষে কাম্য হয়ে উঠেছে । আর সেই প্রবলতম কামনা তার মুখটা শীলার ঠোঁট থেকে শীলার ব্লকের দিকে নিয়ে গেল। ব্লাউজের বোতামটা হিংগ্রহাতে খুলে ফেলে সে তার দুটি কুমারী স্তনের মধ্যে শিশুর মতো মাথা ঘষতে থাকল । কতক্ষণ পরে শীলা চমকে উঠেছে। দুহাতে রাহলের মুখটা তুলে দেখল, এই দুর্দান্ত তরুণ খুনী যেন কোন প্রতিদ্বন্দ্বীর নিষ্ঠুর আঘাতে রক্তাক্ত কারণ তার চোখ এবং গালে ওই ভিজে ছোপগুলো অশ্রু, বলে মনে হল না শীলার— সেগুলো হয়তো রক্তই ।…..