মাটির দেয়াল – প্রচেত গুপ্ত

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…….দোতারা সেগুলােই ব্যবহার করছে। বাথরুমে গিয়ে সে নিজের জামা খুলেছে। মােজা, রুমাল, ব্রা, প্যান্টি পর্যন্তু। সব শুকোতে দিয়েছে ঘরের ফ্যানের নীচে।…….

………দোতরা কড়া চোখে বিহানের দিকে তাকাল। বিড়বিড় করে বলল, “দাঁড়া, তাের ফোটো তােলা বের করছি।” বলতে-বলতে ফট করে গায়ের টি-শার্টটা খুলে ফেলল দোতারা। একবারে খালি গা। তারপর হাতের টি-শার্ট দিয়ে গা মুছতে শুর করল এমন একটা ভঙ্গিতে যেন কিছুই ঘটেনি। বিহান থমকে গেল। সত্যি, ক্যামেরা তুলে নেওয়ার শক্তি সে হারিয়ে ফেলেছে। সে ডাক্তারি পড়ছে। মানুষের নগ্ন শরীর দেখার অভিজ্ঞতা তার অনেকদিনই হয়েছে। কিন্ত নগ্নতা এমন সুন্দর হয় জানা ছিল না। এত অপূর্ব শরীর সে আগে কখনও দেখেনি। কল্পনাও করতে পারে না। নাকি শরীর তার পছন্দের মানুষের বলে এমন মনে হচ্ছে? হতে পারে। যা খুশি হােক। দোতারার গলায়, স্তনে, পেটে, নাভিতে সে বিহ্বল হয়ে গেল।

দোতারা হাতের বই সরিয়ে মুখ তুলে তাকাল। গাঢ় স্বরে বলল, “কাছে আয় বিহান। মনটা খুব অস্থির লাগছে। আমাকে একটু বুকে নে।

বিহান ক্যামেরা সরিয়ে হামা দিয়ে এগিয়ে এল। দোতারা চোখ নামাল। খুব যত্ন করে দোতারার প্যান্ট খুলতে লাগল বিহান। নিজেরই তাে প্যান্ট, কোথায় ইলাস্টিক, কোথায় বােতাম, জানা আছে সবই, তবু হাতড়াতে লাগল। | এক সময়ে নগ্ন বিহানকে নিজের শরীরে নিতে-নিতে দোতারা বলল, “আমাকে শান্ত করে দে… প্লিজ আমাকে শান্ত করে দে…”।

ক্লান্তি আর তৃপ্তি নিয়ে দুজনে শুয়েছিল পাশাপাশি। বিহানের বুকে হাত রেখে দোতারা বলল, “আমার সঙ্গে একটা জায়গায় যাবি?”
দোতারাকে আরও কাছে টেনে বিহান তার গালে নাক ঘষতেঘষতে আদুরে গলায় বলল, “যাব যাব..তুই যেখানে বলবি যাব, মরতে বললে মরব…”
দোতারা চুলের মুঠি ধরে বিহানের মুখ তার নগ্ন, উদ্ভাসিত স্তনের ওপর নিতে-নিতে বলল, “তাহলে চল তােকে আবার মেরে ফেলি।”…….

…..ত্রপা বাথরুম থেকে বেরােল খানিকটা জড়সড় হয়ে। পাজামা এবং পাঞ্জাবি, দুটোই মাপে বড় হয়েছে। হওয়ারই কথা। তবে একটা অস্বস্তি থেকে বেঁচেছে। তার ব্রা, প্যান্টি সবই ভিজে গিয়েছে। সেসব খুলে শুকোতে দিতে হয়েছে। পােশাক বড় হওয়ায় অন্তর্বাস না থাকার অস্বস্তি কম হচ্ছে। স্যারের সঙ্গে কাল সকাল পর্যন্ত থাকতে পারবে, ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে পার। অনেকটা কাজ করতে পারবে।………

……….জামাটা সুন্দর। সােমদত্তাকে দেখাচ্ছেও ভাল। এমনিতেই সে সুন্দরী। চেহারা, চোখমুখে একধরনের তীক্ষ্ম সৌন্দর্য রয়েছে। গায়ের রং খুব ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল। কোমর, বুক একটু ভারির দিকে।…….

…….তার স্লিভলেস বা অফ শােল্ডার পােশাকে এতটাই যৌন আবেদন থাকে যে পুরুষ সহকর্মীরা পাশে ঘুরঘুর না করে পারে না। শিরীষের কলিগরাও ফ্লার্ট করে নেয়।…..

………নিজের নগ্ন দেহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল সােমদত্তা। এ বাড়ির বাথরুমের আয়না তত ভাল নয়। কসবার ফ্ল্যাটের দুটো বাথরুমই বড় করে বানানাে।……..

………কসবায় সােমদত্তা যে-বাথরুম ব্যবহার করে, তার একটা দেয়াল জোড়া আয়না। হাফ সার্কেল করা শাওয়ার ইউনিটটা থেকে বেরলেই সেই আয়নার মুখােমুখি হতে হয়। মনে হয়, দুটো নিরাবরণ মানুষ দু’জনকে দেখছে। কোনও আড়াল নেই, আবরণ নেই। একজন অন্যজনকে জরিপ করছে আপাদমস্তক। শিরীষ ব্যাখ্যা দিত। | “বাথরুম হল নিজের সঙ্গে নিজের দেখা হওয়ার কথা বলার একমাত্র জায়গা।”
সােমদত্তা গালে লাল আভা ফেলে বলেছিল, “নিজেকে অতটা জামাকাপড় ছাড়া দেখতে যেন লজ্জা করে।”
শিরীষ ফিসফিস করে বলেছিল, “তুমি তাে একা দেখবে না, আমিও তােমাকে দেখব।” সােমদত্তা স্বামীর হাতে ঘুষি মেরে বলেছিল, “অসভ্য।” ‘অসভ্য’ সেও কম হয়নি। বিয়ের পর একসঙ্গে দু’জনে শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়েছে, সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিয়েছে একে অপরকে, চুমুতে-চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছে। তারপর ভিজে থাকা নগ্ন স্ত্রীকে শিরীষ পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসেছে বেডরুমে। তখন অবশ্য আয়না এত বড় ছিল না।…….

………..বাবা মারা যাওয়ার পর সােমদত্তা সেই আয়না বদলেছে। আয়নায় ঝুঁকে নিজের গালে হাত বুলিয়ে সােমদ মনে মনে ভাবল, ত্রপা। মেয়েটার মধ্যে কী এমন আছে যে শিরীষ এতটা মজে গেল! সে কি সুন্দরী? যৌনক্রীড়ায় পারদর্শী খুব? নিশ্চয়ই তাই। এরা পুরুষমানুষকে ফাঁদে ফেলার ছলাকলা জানে। বেশি বয়সের যৌন আকাঙ্ক্ষা ভংয়কর। রতিক্রিয়ায় এমন কিছু খেলা মনের অন্ধকার থেকে টেনে তুলে আনে। যা লাগামহীন, দামাল। কিছু মেয়ে পুরুষমানুষের এই সংকটের কি সুযােগ নেয়? এতদিন সােমদা এসব জানত না। সে জানত, সংসারে বাইরে পুরুষমানুষের একবারে অন্য নারী থাকবে না, তা হয় না। ভালও লাগে না। আগেকার দিনে বলা হত, স্বামীর শরীরে অন্য মেয়েমানুষের গন্ধ কামােত্তেজনা বাড়ায়। এই উত্তেজনার জন্ম হিংসে থেকে। শিরীষের তাে তাও ছিল না। নাকি তলে-তলে পা মেয়েটির সঙ্গে যােগাযােগ ছিল? ছিল হয়তাে। গােপন রেখেছিল। শিরীষ যে বলে নাওডুবিতে চাষ করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে, মিথ্যে কথা বলে।

সােমদত্তা আয়নার নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। বয়স বাড়ছে। বলে তার শরীর কি আকর্ষণ হারিয়েছে? পুরুষকে কাছে টানার ক্ষমতা কমে গিয়েছে? নগ্ন বুক, পেট কোমর দেখল সােমদত্তা। উরু, পায়ের। গােছও বাদ দিল না। মাথার ওপর হাত তুলে দেখল। কই, বুড়ােটে, ক্ষয়াটে ভাব তাে আসেনি। তবে কি চেনা শরীর একঘেয়ে লাগছিল শিরীষের? সেই জন্য মেয়ের বয়সী একজনকে বেছে নিয়েছে? শিরীষের সঙ্গে তার শেষ করে শরীরের মিলন হয়েছিল? মনে করার চেষ্টা করল সােমদত্তা। তারিখ মনে পড়ছে না, তবে ঘটনাটা আবছা মনে পড়ছে। শনিবার ছিল একটা, নাকি রবিবার? শনিবারই হবে। দু’জনেরই ছুটি ছিল। দোতারা ফোন করে জানিয়েছিল, এই সপ্তাহে সে আসছে না। স্পেশাল কোচিং হবে। লাঞ্চের পর বেডরুমে একটু শুতে গিয়েছিল সােমদত্ত। সারা সপ্তাহ দুপুরে বিশ্রাম হয় না। শিরীষ খাটের এক পাশে বসে ল্যাপটপে খুটখাট করছিল। খানিকপরেই ল্যাপটপ সরিয়ে গায়ের উপর এসে পড়ল। মনে করার চেষ্টা করছে সােমদত্তা। এতদিনের দাম্পত্য জীবনের পর স্বামীর সঙ্গে কোনও একদিনের মিলন আলাদা করে মনে পড়ার কথা নয়, তারপরেও জোর করে মনে করতে চাইল সােমদত্তা। মনে পড়ল আবছা। সেদিনও অন্যদিনের মতাে শান্তভাবে তার জামাকাপড় খুলেছিল শিরীষ। তারপর নিঃশব্দে ঠোঁট রেখেছিল গায়ে। আদর শুরু করেছিল একেবারে পায়ের পাতা থেকে। তারপর মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল শরীর বেয়ে। এমনটাই ভালবাসে শিরীষ।

“বুঝলে সােম, শরীরে হল রাগের মতাে। ভাল শিল্পী তাকে ধাপে-ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়। আলাপ দিয়ে শুরু করে, জোড় হয়ে ঝালায় পৌঁছায়। এই বিষয়ে আমি একজন ভাল শিল্পী বলতে পার। ধৈর্য ধরে, সময় নিয়ে এগােই।”
চিরকাল তাই করে শিরীষ। মুখের স্পর্শে-স্পর্শে উন্মাদ করে দেয়। ঊরুসন্ধি, নাভি, পেট, বুক হয়ে গলা বেয়ে চিতা বাঘের মতাে উঠে যায় চিবুকে, ঠোঁটে, চোখের পাতায়। একসময়ে নিজেও জেগে ওঠে। সেদিনও উঠেছিল। কতদিন আগে? কই বেশি দিন তাে নয়! বড়মামা আসার কয়েকদিন আগেই তাে। নাকি পরে? তাহলে? এত দ্রুত শরীর। ঝরে গেল? একঘেয়ে হয়ে গেল সে? হয়তাে এসব নয়। হয়তাে কম বয়স বলে ত্ৰপার শরীর আরও সুন্দর। আরও মিঠে করে বেজে ওঠে।……..

………সেদিন ঘরে ঢােকার পর ‘মনের বন্ধুরা খুব দ্রুত শরীরের বন্ধু ও হয়ে যায়। পরদিন ফিরে যাওয়া বলে জিনিসপত্র ছড়ানাে ছিল ঘর জুড়ে। সােফা, ডিভানে জামা কাপড়ের স্তুপ। সুটকেস, ব্যাগ পড়ে আছে মেঝেতে। সেসব ডিঙিয়ে দাঁড়ানাের জায়গা করে নিয়েছিল দু’জনে। শিরীষই প্রথমে যত্ন করে চুমু খায়। তারপর এক-এক করে পােশাক খুলে ফেলে। সােয়েটার থেকে ব্রা পর্যন্ত। সােমদত্তা হাত লাগাতে গেলে, হাত সরিয়ে দেয় আলগােছে।
সােমদত্তা ফিসফিস করে বলেছিল, “তাড়াতাড়ি হবে।” শিরীষ অস্ফুটে বলে, “আমার কোনও তাড়া নেই।” শিরীষ হাঁটু গেড়ে বসে যখন ধীরে-ধীরে ট্রাউজার এবং পরে প্যান্টি খুলতে থাকে সােমদত্তার, সে তখন শিরীষের কাঁধ চেপে ধরে। এত সুন্দর করেও পুরুষ নগ্ন করতে জানে! যেন কোনও শিল্পী পাথর কেটে তাকে তৈরি করছে। লজ্জা, কাম, মিলনের আকাঙ্ক্ষায় সে যত অস্থির হয়ে উঠছে, ধীরে-ধীরে তার সৌন্দর্য তত ফুটে উঠছে। শিরীষ হাঁটু পেতে বসে থাকা অবস্থাতেই দু’হাতে সােমদত্তার কোমর ধরে এবং মুখ নামায়। তীব্র আশ্লেষে শিরীষের চুল মুঠো করে চেপে ধরে সােমদত্তা। শরীর টলে ওঠে তার। চমকে-চমকে ওঠে। এমনও তার জানা ছিল না। শরীর এমনভাবে কথা বলে! জড়ানাে গলায় সে বলে ওঠে, “কী করছ! এ কী করছ?”
শিরীষ কোনওরকমে বলেছিল, “রূপসাগরে ডুব দিয়েছি সােমদত্তা। বাধা দিও না।”

ছড়িয়ে থাকা জামাকাপড়, জিনিসের মাঝে দুই নগ্ন যুবক-যুবতী কতক্ষণ পরস্পরে আচ্ছন্ন হয়েছিল, তা বলা মুশকিল। তাদের কখনও মনে হয়েছিল, এইভাবে রয়েছে অনন্তকাল, আবার কখনও মনে হয়েছে, এই সুখ মুহূর্তটুকু বড় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল বুঝি।…….

……….সােমদত্তা হিসহিসিয়ে বলে, “মিথ্যে কথা বলছ। তােমরা পুরুষমানুষরা সব সমান। লায়ার, পার্ভার্ট,..”।

মৈত্রেয় একটু চুপ করে রইল। তারপর দু’হাত বাড়িয়ে সােমদত্তার মুখটা ধরল। নিজের মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি প্রমাণ। করে দিতে পারি সােমদত্তা। তােমার অনুমতি পেলে প্রমাণ করে দিতে পারি।”
সােমদত্তা হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, “বেডরুমে চলাে।”

নারী শরীরের ব্যাপারে শিরীষ যেমন শান্ত, মৈত্রেয় তেমন উন্মত্ত। আবার এমন হতে পারে, না পাওয়া প্রেয়সীকে শেষ যৌবনে পেয়ে যাবতীয় সংযম সরিয়ে রাখে সে। চুমুর মধ্যেই টেনে হেঁচড়ে খুলে দেয় সােমদত্তার হাউসকোট। শিরীষের কিনে দেওয়া হাউসকোর্টের একটা। পাশ অল্প ছিড়েও যায়। নাইটির ঘেরাটোপ থেকে সােমদত্তাকে মুক্ত করতে মাত্র কয়েক মুহূর্ত নেয় মৈত্রেয়। খাটের উপর নগ্ন সােমদত্তাকে। জড়িয়ে ধরে পাক মারে। ঘাড়ে, হাতে, স্তনে ঠোঁট দিয়ে কামড় বসায়। জড়ানাে গলায় বলতে থাকে, “কোথায় গিয়েছিলে? আমাকে ফেলে। কোথায় গিয়েছিলে এতদিন?”

সােমদত্তা অনুভব করে, এই উন্মত্ত আদর তার শরীর গ্রহণ করছে। ভাল লাগছে না তার। সে সােমদত্তাকে যেন বলছে, “একে সরিয়ে দাও। ঠেলে সরিয়ে দাও একে।” না, এখনই সরিয়ে দেওয়া যাবে না। মৈত্রেয়র উত্তেজনা কমিয়ে দেওয়ার জন্য সােমদত্তা উদ্যোগী হল। তার। একটা পা তুলে দিল মানুষটার গায়ের ওপর।

বুক পর্যন্ত চাদর ঢেকে শুয়ে আছে দুই রমণ-ক্লান্ত নারী-পুরুষ।
নারীটি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “একটা গােলমাল হবে। খুব বড় গােলমাল হবে। চাষবাসের নাম করে মেয়ে। নিয়ে ফুর্তি করার জন্য গ্রামের মানুষ গােলমাল করবে। বাড়ি ভাঙচুর হবে। জিনিসপত্রে আগুন ধরবে। ক্ষেতের ধান তছনছ করা হবে। বেশ্যা মেয়েটাকে ন্যাংটো করে চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে মাঠ দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে উন্মত্ত মানুষ। পুরুষমানুষটি যাতে পালিয়ে আসতে পারে, তার জন্য গাড়ি থাকবে, লােক থাকবে।” নারীটি নগ্ন পুরুষের বুকে হাত দিয়ে বলল, “পারবে না?”

পুরুষটি নারীর ডান স্তনে হাত রেখে বলল, “একসময়ে পারতাম , এখন পারব সােমদত্তা। অপমানের প্রতিশােধ নিতে হবে না?”………

Leave a Reply