…….আলতাফকে আমার সুখ দিতে হবে, শারীরিক এবং মানসিক সুখ; আলতাফের ঘরবাড়ির শোভা আমাকে বৃদ্ধি করা। নিজেকেই আবার প্রশ্ন করতাম আমার শোভা কে বৃদ্ধি করবে? আমার শোভা তো আমার ত্বকের রঙ ও মসৃণতা, আমার চুলের দৈর্ঘ্য, আমার কোমর নিতম্ব আর বুকের গঠন–সে আমাকেই তলে তলে রক্ষা করতে হবে।………..
……সারারাত কী করে আলতাফ আমার সঙ্গে? কিছু কি করে? কিছু তো করে না, করবার চেষ্টা করে শুধু। বিয়ের পর পর আমি অনেকদিন তার চেষ্টায় সাহায্য করেছি। সে বলেছে–এরকমই হয়। সব ছেলেদেরই হয়।………
…….রাতে ও যখন বাতি নিভিয়ে শুতে আসে; আমার, আমি লক্ষ্য করি দ্রুত নিশ্বাস পড়ছে। অপরাধবোধ থেকে একধরনের সিটিয়ে থাকা ব্যাপার ঘটে আমার মধ্যে। আলতাফ শুয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে–’বউ আমার বউ সোনা, আমার হীরে, হীরের টুকরো বউ।‘ বলে বলে আমার ঠোঁটে ও গাঢ় করে চুমু খায়। যখন চুমু খায়, আমি বুঝে পাই না আমার এমন লাগে কেন। কোথায় যেন, কেমন যেন ভাল লাগে। যখন বলে–’হীরে আমার, গায়ে এটা কী পড়েছ, খুলে ফেল তো। আমার খুলতে হয় না, ও নিজেই খুলে দেয়। খুলেই বহুদিনের না খাওয়া ভিখিরি সামনে গরম ভাত পেলে যেমন গোগ্রাসে খায়, তেমন আমাকে, আমার সর্বাঙ্গ ও খায়। আমার সারা শরীর শিরশির করে। লজ্জা ভয় অপরাধবোধ টোধ কিছুই থাকে না। কোথায় যেন, কেমন যেন বড় ভাল লাগে আমার। আমি ওকে দু হাতে জড়িয়ে ধরি। ও যখন আমার স্তনজোড়ায় মুখ ঘসে, আমি নিজেই অবাক হই অবচেতনে আমার কণ্ঠের ‘আহ আহ শব্দ শুনে। আমার এত কেন ভাল লাগে! আলতাফও গোঙায় খুব, গোঙাতে গোঙাতে আমার সারা শরীরে ও হাত বুলোয়, চুমু খায়। আমি বুঝি, আমার কোথায় যেন জলের স্রোত নামছে, আমি ঘেমে উঠছি, ভরে উঠছি। আমি ওকে আরও নিবিড় করে জড়িয়ে ধরি। ও আমার শরীরের সঙ্গে মিশে যেতে চায় কিন্তু কী একটা হয় ওর, ও হঠাৎ, আমি কিছু বুঝে উঠবার আগে, আমার গায়ের ওপর নেতিয়ে পড়ে। আমার তখনও দ্রুত নিশ্বাস পড়ছে। তখনও আমার শরীরের ভেতর ভীষণ এক সমুদ্র গর্জে উঠছে। আলতাফ পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। আর আমি ছটফট করি।……..
………বলে–আলতাফ ভাই কি রাতে খুব জ্বালায় আপনাকে?
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিই–হ্যাঁ।
রুবিনা বিছানায় আরাম করে বসে। বলে–কটা পর্যন্ত?
–মানে?
–মানে কটায় ঘুমোতে দেয়?
হেসে বলি–ঘড়ি দেখি না।
–তার মানে অনেকক্ষণ চলে! মনজুর তো একঘন্টার আগে শেষ করে না। রুবিনার ঠোঁটের কোণে হাসি ঝিলিক দেয়।–আলতাফ ভাইএর সময় কি রকম?
ও রসালো কিছু আমার মুখ থেকে শুনতে চাইছে। কিন্তু এসব কথা কি করে বলতে হয়, এসব কী ভাষায় বর্ণনা করা যায়, আমি জানি না। আলতাফ আমাকে শেখায়নি কিছু। আমি চুপ হয়ে থাকি। রুবিনা আমার হাত টেনে কাছে বসায়। বলে–এত লজ্জা কিসের? আমাদের সঙ্গে মিশলে লজ্জা কোথায় পালায়, বুঝবেন। আমার জিভ তো অনেক ভাল, লিপি ভাবীর সঙ্গে কথা বললে যে কী অবস্থা হবে। ও এত স্ল্যাং জানে। রুবিনা জোরে হেসে ওঠে। আমি অবাক হয়ে দেখি কী প্রশান্তি ওর সারা মুখে। আমি হঠাৎ জিজ্ঞেস করি, আমি নিজেই প্রস্তুত ছিলাম না এই প্রশ্নটি করবার জন্য–আচ্ছা একঘন্টার কথা কী যেন বললেন!
রুবিনা চায়ে চুমুক দিয়ে আবার হাসে, বলে–মিনিমাম আধঘন্টা, ম্যাক্সিমাম একঘন্টা তো হয়ই।
–কী হয় একঘন্টা?
–কী আবার? যা করে পুরুষলোকে। আমারও পিক আসতে আধঘন্টা এক ঘন্টা লাগে। কখনও কখনও অবশ্য দশ পনেরো মিনিটেও হয়।
–পিক মানে?
–অরগাজম।
–অরগাজম মানে?
–অরগাজম জানেন না?
–না তো!
আমার চোখে অপার কৌতূহল। রুবিনার আরও পাশে সরে আসি। তার ভ্রু কুঞ্চিত হয়। বলে-ইজ ইট?
মাথা নেড়ে বলি-হ্যাঁ।
–ওহ সো কিড ইউ আর! আলতাফ ভাই বলে না কিছু?
–না।
–অরগাজম মানে কী আপনি বুঝতে পারছেন না? ওই যে সারাশরীরে একধরনের ফিলিংস হয়। তীব্র এক ভাল লাগা যাকে বলে। এরপর ঘুম নেমে আসে।
–আমার তো শরীরে একটা কষ্ট হয়। ঘুম হয় না। সারারাত ছটফট করি। রুবিনা চমকে ওঠে। বলে–বলছেন কী ভাবী! আপনি ছটফট করেন, আর আলতাফ ভাই কী করেন?
–ওর ঘুম ভাল হয়।………
…….আলতাফ আমার হাত ধরে টেনে তোলে। নিয়ে যায় পাশের ঘরে। বিছানায়। পাতলা নাইটি পরা আমার। একটানে খুলে ফেলে। একসময়, বিয়ের পর কদিন, এই স্পর্শই কী ভীষণ আনন্দ দিত, সবটুকু না হোক, কিছুটা হলেও তা দিত। অথচ আলতাফের সেই হাত, সেই হাতের স্পর্শই এক বিবমিষা জাগায় ভেতরে। আলতাফের গোঙানোকে লাগে যেন কাদা পেয়ে শুয়োর ঘোৎ ঘোৎ করছে। চুমু দিতে চায়। মুখ সরিয়ে নিই। আমি যে এই সব চাচ্ছি না, এসব যে আমার ভাল লাগে না–তা আমার শরীরের নির্লিপ্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিই তাকে।…….
…….সব কিছুর পর আমি যখন রাতে ঘুমোতে যাই, আমার শরীর জেগে ওঠে শুভ্র বিছানায়। আমার ইচ্ছে করে কোনও এক সক্ষম পুরুষের স্পর্শ পেতে। হোস্টেলে সুফিয়া নামে এক মেয়ে আছে, ডিভোর্সি মেয়ে। সে ফাঁক পেলেই তার অতীতের কথা পাড়ে। স্বামীটি খুব শরীর চাইত তার, এত বেশি ছিল তার কামনার আগুন, সুফিয়ার পক্ষে সম্ভব হত না তার তৃষ্ণা মেটানো। স্বামী গণিকাগমন করত, এ নিয়ে ঝগড়া, ঝগড়া বাড়তে বাড়তে ছাড়াছাড়ি। সুফিয়ার ঠিক উল্টো আমি, কামনার আগুন আমাকেই জ্বালিয়েছে। সে আগুনে পুড়ে আজ ছাই হয়েছি আমি অথবা খাঁটি সোনা।…….
……..আমারও জ্বরের ঘোর কাটে যখন আমার হাতদুটো ধরে সে বিছানায় বসায়। ওর শরীর ভেজা। বুকের সঙ্গে লেগে সপসপ করছে ভেজা শার্ট। ও আমার হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে আমার মাথা মুছিয়ে দেয়। মাথা থেকে মুখ, মুখ থেকে বুক, আমার সমস্ত শরীর ও তোয়ালে দিয়ে মোছে। আমার ভেজা শরীরে ওর উষ্ণ হাতের স্পর্শ এসে লাগে। আমি চোখ বুজে ওর উষ্ণতাটুকু উপভোগ করি। বারবার কেঁপে উঠি। ও আমার ঠোঁটে গাঢ় চুমু খায়। আমি আর নিজেকে নিজের ভেতর গুটিয়ে রাখতে পারি না। ছড়িয়ে দিই। গোলাপ যেমন ফুটতে গিয়ে পাপড়িগুলো ছড়ায়, তেমন। ঘরে আর নেই কেউ। দুজন মাত্র মানুষ আমরা। শরীর জেগে ওঠে ঘামের গন্ধমাখা কায়সারের আলুথালু বিছানায়। আমি ওকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ওর ভেজা বুকে মুখ রেখে বুক ভরে শ্বাস নিই। নেব না কেন? আমাকে কে বাধা দেবে? ভালবাসার কাছে, নিজের গভীর গাঢ় ইচ্ছের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবার যোগ্য আমি তো হয়েছিই। ধুম বৃষ্টির জলে ভালবাসা মিশে এমন এক সুগন্ধ আনে যে আমি সেই সুগন্ধ থেকে আর মুখ তুমি না। কায়সারের লোমশ বুক থেকে আমার মুখ তুলতে ইচ্ছে করে না। ও আমাকে আরও নিবিড় করে জড়িয়ে রাখে। তারপর কী হয় আমি ঠিক বুঝতে পারি না, দু’জন মানুষ ভালবাসতে বাসতে কোথায় হারিয়ে যাই। হারিয়ে যেতে যেতে বুঝি আমার পিপাসা মিটছে। পিপাসা মিটছে আমার।
আমার শরীর কতকাল কিছু যেন চেয়েছিল, খরার জীবনে জল চেয়েছিল সামান্য, আর হঠাৎ না চাইতেই অবাধ বৰ্ষণ জোটে সুখের। পিপাসা মিটছে আমার। এক শরীর পিপাসা। ঊষর জমি জুড়ে জলপতনের শব্দ, ফসলের সবুজ দোলা, আমি হারাই অন্য এক অচেনা জগতে। কী ঘটে আমার শরীরে বুঝি না, পিপাসা কেন মিটছে তাও বুঝি না, পিপাসা যখন মিটছে আমি কায়সারের পিঠ আঁকড়ে ধরি প্রচন্ড সুখে, শির্ষসুখে; ওর পিঠে আমার দশ নখের দাগ বসে যায়।……..