১
হঠাৎ নক্ষত্র ফোটে সহবাসে রক্তের লােহিতে,
হৃদপিণ্ডে ফেটে পড়ে সৌর এই মণ্ডল পুরােটা,
বেড়াল বিক্ষুব্ধ আমি সারারাত শরীরের ভিতে,
নখের আঁচড় ত্বকে, নীল ঠোট, ছিন্ন স্তন বোঁটা।
এবার শান্ততা চাই? তবে যাই সাগরে? লবণ!
দৃষ্টির নন্দন সেটি, সেই জল পানীয় তাে নয়!
শরীরের মহাজন! মূল্যশােধ কে করে এখন
যে কোনাে পুরুষ তবে? প্রেমহীন মানেই অনয়!
মেধায় তােমাকে চাই, বাস্তবিক মাংসেও তােমাকে-
ওই যে নক্ষত্র ফোটে! দেখা দেয় মথিত শয্যায়!
রাতের আকাশ ছিড়ে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়,
তারপরও পুনরায় পুড়ে যেতে বড় সাধ জাগে।
অন্ধকারে বেড়ালের জ্বলজ্বলে সবুজ দু’চোখ-
এখনাে রতির ঘােরে দৃষ্টি তার অগ্নি ধ্বকধ্বক।
১৪.৯.২০০৯ ঢাকা
২
তােমার সাক্ষাতে আমি নক্ষত্রের মতাে হয়ে যাই-
দীপ্তিমান একটি বা দুটি নয়, কামুক আঁধারে
এক লক্ষ সংখ্যায় পৌছেই। তবু আমি থেমে নাই!
অগণন আরাে লক্ষ অপেক্ষায়- স্ফুটনের পারে।
বিষাদ বিমূর্ত দেশে কেটে গেছে একটি জীবন,
সরােদ রােদনে রাত কেটে গেছে কত না মহলে,
একটি জীবন ছিলাে, সুঁচে তার ছিলাে না সীবন,
অজানা থেকেই ছিলাে কত স্বাদ আম্রপালি ফলে।
যখন দু’স্তন মেলে ডেকে নিলে বুকের ওপরে,
স্বর্গের জঘন খুলে দেখালে যে-দীপ্তির প্রকাশ,
তখন কী হলাে আমি কোন্ ভাষে বলবাে কী করে?
মুহূর্তেই ঘুচে গেলাে তৃষিতের অপেক্ষার ত্রাস।
তখন স্ফুটন আমি টের পেয়ে যাই এ শরীরে,
তখন নক্ষত্র হয়ে জ্বলে উঠি তােমার গভীরে ॥
১৫.৯.২০০৯ ঢাকা
৩
কী করে ভাষায় বলি আঙুল যা জেনেছিলাে ছুঁয়ে!
জেনেছিলাে ওই দুটি স্তনে হাত রেখে অন্ধকারে
তখন নগ্নতা ছিলাে, তখন যে পাশাপাশি শুয়ে
কেবল দুটি তাে নই আরাে ছিলাে শয্যার ওপারে
জানালার বাইরে আকাশ আর আকাশ গভীরে
অসহ্য সুন্দরসাধ্য আগুনের যৌথ তাপ নিয়ে
-লেখা কবিতা এক দীপ্তিমান নক্ষত্র শরীরে
লিখবাে কী! সারারাত কেটে গেছে আঙুল পুড়িয়ে।
গুহা ছিলাে অন্ধকার, জ্যোতিস্মান করেছিলাে তাকে
আমার বাসনা অগ্নি, সেই সঙ্গে তােমার কামনা!
সারারাত কেটে যায়, বাগানের ভােরপাখি ডাকে—
তুমিও বিরতি চেয়ে বলেছিলে, এবার নামাে না!
নেমেছি শরীর থেকে, তাপ থেকে তখনাে নামিনি,
কেননা আগুন তুমি, পৃথিবীর প্রথম কামিনী!
২০.১০.২০০৯ ঢাকা
৪
টকটকে লাল সেই ফতুয়ার সােনালি বােতাম
হরিণের চোখ হয়ে দেখেছিলাে বুঝি এক বাঘ!
কী জানাে, মানুষ নয় যদি সেই প্রাণীটি হতাম।
ঝাপিয়ে পড়ার জন্যে তবে আমি করতাম তাক!
এমন চাদের আলাে, আয়নাটি করে ঝকঝক;
তুমি যে তৃষ্ণায় এসে দাড়িয়েছে সুন্দরের বনে,
পায়ের নরােম শব্দ, হৃদপিণ্ড করে ধ্বকধ্বক
মেরুদণ্ড টানটান, ওঠে গান হাওয়ার স্বননে।
সে গান সঙ্গীতে নয়, গীত হয় দেহের সন্ধিতে!
দেহটি দেহের সাথে সহবাসে গান করবার
জন্যেই উন্মুখ বটে, তুমি চাও মন দিতে নিতে-
জ্যোৎস্নাজলে বাঘ তার নখে দীপ্তি মাংসটি খাবার।
মুখের ভেতরে তার করাতের মতাে দাঁতপাটি
বােতাম ছিড়তে থাকে, রক্তমাখা হতে থাকে মাটি ॥
২১.১০.২০০৯ ঢাকা
৫
বই তুমি জ্যামিতির, তােমাতেও বৃত্ত আছে, আর
ত্রিভূজও তােমারই দেহে, সমতলও সেই তােমাতেই।
নিপুণ কোণের ডিগ্রি ঠিকঠিক হিসেব করবার
চাঁদাও তােমারই দেহে দৃষ্টি দিলে দেখা তাে যাবেই।
সমকোণ? সেও গড়ে ওঠে খুব নিখুঁত আকারে,
যখন শয্যায় তুমি অসম্মাত আড় হয়ে শােও
যখন ফিরিয়ে মুখ পড়ে আছি দু’জন দু’ধারে,
যখন রতির মাঠে বিচ্ছেদের ধান তুমি রােও।
বলেছি ধানের কথা, মূখ আমি জ্যামিতি বিষয়ে-
জানি শুধু চাষবাস, দেহ আর মাঠ একাকার-
বীজের বপন-ঋতু ব্যর্থতায় যায় যদি বহে,
দেহের ভাগ্যেই জোটে পরিণামে তীব্র অনাহার।
তাই চাষ দিতে চাই ওই দেহে আমি এক চাষী।
এ-চাষ সে-চাষ নয়- একে বলে ভালােবাসাবাসি!
২২.১০.২০০৯ কলকাতা
৬
জ্যোৎস্নার ধবল দুধে ভিজে ওঠে তােমার ত্রিভূজ,
উন্মুখ বুকের দুধ ঝরে পড়ে নাভি অভিমুখে।
যখন খরার মাঠ হতে থাকে সজল সবুজ
তখন কৃষক রূপে দেখে নিয়ে তােমার বন্ধুকে।
এখন সে বৃষ্টিকাল দেখে হাতে তুলে নেয় বীজ,
রােপণের তাড়নায় নেমে পড়ে পিচ্ছিল কাদায়।
যখন খুলছাে তুমি দেহ থেকে শাড়ি ও শেমিজ
তখন উদ্বেল কেউ হয়ে ওঠে কৃষি-প্রতিভায়।
বৃষ্টি তাে থামার নয়, বিরতিও নেই বপনের,
এমত কৃষক তার চোখেমুখে উন্মত্ত ঝিলিক।
বাতাসও মাতাল খুব, পড়ে দাঁড় মন-পবনের;
বিদ্যুত লাফিয়ে ওঠে, পুড়ে যায় দিক ও বিদিক।
অংকুর উদামে বীজ সফলতা পাক বা না-পাক
আমি তাে প্রার্থনা করি এই বৃষ্টি বারােমাস থাক ।
২২.১০.২০০৯ কলকাতা
৭
সাধ্য নেই গুনে উঠি এ শহরে কত বাড়িঘর।
যদি জনসংখ্যা হয় এক কোটি তবে তাে নিশ্চয়।
এক থেকে দেড় লক্ষ ছাদ আছে মাথার ওপর।
অথচ অবাক কাণ্ড একটিও নিভৃত নিলয়
আমাদের জন্যে নেই! ফুটপাথ পায়ের তলায়,
বিশাল নীলের নিচে হাতে হাত ধরে পরম্পর
সারাদিন সারারাত কেটে যায় চলায় চলায়।
শূন্যতায় গড়ে তুলি আমাদের জন্যে এক ঘর।
সেখানে তােমার দেহ মেলে দাও তুমি নগ্নতায়,
সেখানে কবির কণ্ঠে কবিতার পঙক্তি ছিড়ে স্বর
কামের অক্ষরগুলাে লাল হতে থাকে শব্দতায়,
সেখানে আগুনে পুড়ে যায় জামা সকল ধূসর।
কেবল তুমি ও আমি অগ্নিধরা দেহের ভেতরে
বসবাস খুঁজে পাই আমাদের বহুদিন পরে ॥
২৩.১০.২০০৯ ঢাকা
৮
দিন বড় ধীরে যায়, রাত সেও বড় ধীরতার!
এদিকে বৈশাখ মাস, বীজ তার সম্ভাবনা নিয়ে;
পুষ্পজ্বর- পান করি অপেক্ষার জল চিরতার;
প্রান্তরে বৃষ্টির ফোটা, রােদও আছে- শেয়ালের বিয়ে!
যেন এ করুণ ঠাট্টা প্রকৃতির আমাদের প্রতি।
জানি তাে তুমিও আছাে তারিখের অপেক্ষায়, মেয়ে।
আমার মতােই তুমি কামনায় দিয়েছে সম্মতি।
কালের পিঁপড়ে যায় শরীরের শর্করা তাে খেয়ে!
আয়নায় ফোটে মুখ; সিঁথি করো তুমি পাটপাট-
আমিও জামার গর্তে ঢেকে রেখে প্রস্তুত শরীর।
পঞ্জিকার পাতা ছিড়ি বৃষ্টি ছিলাে, ভিজে আছে মাঠ।
মাঠের জ্যোৎস্নায় খসে পড়ে যায় পাখনা পরীর!
এমত বৈশাখ তবে! অপেক্ষার এ আকাশ, মেয়ে,
রতির রক্তিম ঘুড়ি, চেয়ে দ্যাখাে, ফেলেছে কী ছেয়ে!
২৫.১১.২০০৯ ঢাকা
৯
আজ ভােরে বৃষ্টি খুব। গতকালও বৃষ্টি হয়েছিলাে!
সে ছিলাে গােপন জল— সম্মিলনে! মেঘের সংঘাতে
বিদ্যুতের মতাে প্রাণ দু’জনার জ্বলে উঠেছিলাে।
এখন সমস্ত জল ঝরে চলে কী বিচ্ছিন্নতাতে!
সেই সুখ মনে পড়ে, লােকে যাকে সুখ মনে করে
বাজারের শস্তা ভাও, কামিজের ঠিক ফিট করা,
বর্শীতে মাগুরমাছ, কড়া চড় গালির উত্তরে-
এ সব কিছুই নয় সেই সুখ অধরাকে ধরা!
তুমি কি এখনাে আছে আমাদের রতির শয্যায়?
তুমি যদি দিয়েছিলে, আমি যদি নিয়েছি সেদিন-
এখনাে স্মৃতির শাঁস রয়ে গেছে হাড়ের মজ্জায়
সেই দেয়া-নেয়া আজও বৃষ্টিকালে বিরতিবিহীন।
যে ভালােবেসেছে শুধু সেই জানে শুধু জানে সে-ই,
রতির স্মৃতির বীজ তারও মূল যুগল দেহেই ॥
২৭.১১.২০০৯ ঢাকা
১০
কাল রাতে প্রেমিকেরা এসেছিলাে ঝিলের কিনারে,
কাল রাতে জ্যোৎস্না ছিলাে, ঝরেছিলাে দুধ পূর্ণিমার,
ঠোট ভিজে গিয়েছিলাে পিপাসার ধবল আঁধারে,
দেহ দুধে ধুয়েছিলাে, চোখে ছিলাে বিস্ময় অপার।
আমিও অমন রাতে গিয়েছি যে তােমার শয্যায়,
দেখেছি জ্যোৎস্নার জলে ফুটে আছে যুগল কুসুম।
আমার ঠোটের পরে ধারা দুধ, মুখ ভেসে যায়-
তােমারও শরীর ভেঙে জানুদেশে পিষ্টতার ধুম।
যৌবনবতীর দেশে আলােছায়া বন-উপবন,
তারই মধ্যে ভুল পথ, হেসে উঠে ঠিক পথ পাওয়া,
এ সব তােমারই কথা, শারীরিক তােমারই সৃজন,
নিবিড় মুহূর্তগুলাে রতিরসে ক্রমে ভিজে যাওয়া।
তােমার ভূগােল ভেঙে বতুতার মতাে পর্যটন
এখন তখনময় আর এই তখন এখন!
৩.১.২০১০ ঢাকা
১১
কিছু শব্দ উড়ে যায়, কিছু শব্দ ডানা মুড়ে থাকে,
তরল পারার মতাে কিছু শব্দ গলে পড়ে যায়।
এমন সে কোন্ শব্দ নক্ষত্রের মতাে ফুটে থাকে—
তুমি কি দেখেছাে তাকে হৃদয়েশ্বরের আয়নায়?
দ্যাখােনি যখন কালাে অন্ধকার উঠে আসে গ্রাসে!
যখন সৌজন্য যায় কবরের মাটি কল্পতায়,
যখন স্তব্ধতা গিলে খেতে থাকে কামুকেরা ত্রাসে,
তখন তাকিয়ে দেখাে শুদ্ধতার গভীর ব্যাথায়—
আমার ঠোটের থেকে একটি যে শব্দ একদিন।
ফুটেছিলাে এই ঠোটে তােমারই যে দেহস্পর্শ তাপে,
আজ সেই শব্দ দ্যাখাে পৃথিবীর বুকে অন্তরীন –
তবু তারই উচ্চারণে বৃক্ষপাতা বারবার কাঁপে।
পড়ে নিও তুমি তাকে, দেখে নিও আকাশে নয়তাে
সেই শব্দ ‘ভালােবাসি’ নক্ষত্রের মতােই হয়তাে ॥
৬.১.২০১০ ঢাকা
১২
বৃষ্টির ভেতরে তুমি, আর আমি জ্বরের উত্তাপে
পুড়ে যাচ্ছি। ভালাে হতাে যদি এটা হতে সর্দিজ্বর!
এ জ্বর এমনই জ্বর, সাধ্য নেই চিকিৎসক মাপে।
কামনার তাপ ক্রমে তােমাতেই হয় অগ্রসর।
বৃষ্টিও বৃষ্টি তাে নয়– জরায়ুর রক্তিম ক্রন্দন!
আজ তিনদিন থেকে অবিরাম, ক্ষান্তি নেই তার।
নিষেধ পতাকা লাল, পতাকায় শরীরি স্পন্দন।
তবুও তবুও জাগে, জাগে ইচ্ছা সেখানে যাবার।
দু’জনেরই দেহ ছিড়ে বেরােয় যে-পূর্ণিমার চাঁদ-
সে নয় আকাশবাসী নেমে আসে স্তনের চূড়ায়।
রতির বাসর জাগি— কামনার জ্বরতপ্ত হাত
তােমার অঙ্গের ফুল, ওই দ্যাখাে, কীভাবে কুড়ায়।
তবে ভিজে যাক সব, বৃষ্টি থাক, এসাে ভিজে যাই
জ্বরের আগুনে দেহ লাল বৃষ্টিধারায় ভেজাই ॥
৯.১.২০১০ ঢাকা
১৩
আমার কি সাধ্য আছে ভুলে থাকি রক্তের ক্ষুধাও-
এভাবে রাতের ঘরে তুমি এসে দাঁড়াও যখন
শরীরের বস্ত্র ছেড়ে, চুলে ঝড়, যখন উধাও
লজ্জার সকল শীল, হয়ে পড়ি বিপন্ন তখন!
অথবা এভাবে বলি- ভাঙা এক জাহাজের মাঝি,
ধ্রুবতারা লক্ষ্যহারা, কম্পাসের কাটাও বিকল-
তখন যে হয় তার হাহাকার, কীভাবে যে বাঁচি-
চারদিকে নাচে ঘাের রাক্ষুসীর জল ছলচ্ছল।
সেই মতাে তােমার সমুখে আমি একান্ত বাসরে
নতজানু ক্রমে হই সাক্ষাত মৃত্যুর দেখা পেয়ে-
সাগরে তখন নয়- ভেসে থাকি রতির চাদরে,
হর্ষের বদ্বীপমুখে প্রাণপণে চলি দাড় বেয়ে
তােমার উত্তাল দেহে- সারারাত- সারারাত আমি
মৃত্যুর শরীর ভেঙে রতিপথ ধরে স্বর্গগামী ॥
১০.১.২০১০ ঢাকা
১৪
তােমার ভােরের স্বর গাঢ় মধু কী ঘন ফোঁটায়
ঝরে পড়ে চুমাের আঠায় মাখা আমার দু’গালে।
তখনাে আমার হাত পড়ে আছে তােমার ওটায়!
রতির কি দাগ মুছে যেতে পারে কাপড় শুকালে?
থেকে যায় রাত্রিশেষে শরীরের বিপুল বিতানে।
ঝড়ের আঁচড়গুলাে, শেকড়ের প্রতি উৎপাটন।
পূর্ণিমা যখন ঢলে পড়ে যায়, মানুষ কি জানে।
তখনাে কামুক হাত জ্বেলে রাখে সবুজ লণ্ঠন?
তার আলাে সেও খুব ধৃষ্ট আর প্রভূত ছড়ায়-
আঁধার দংশিত হয়ে পড়ে থাকে আলাের ভেতরে।
সে আলাে নদীর মতাে সানুদেশে উল্লাসে গড়ায়,
সে নদী দেহের দেশে বৃদ্ধি দেয় বৃক্ষের শেকড়ে।
সেই বৃক্ষে মউচাক, মউচাকে মক্ষিকা অক্ষর
আমারই কবিতা লেখে, তােমারই সে গাঢ় কণ্ঠস্বর ॥
১০.১.২০১০ ঢাকা
১৫
বেশ তাে বিছিয়ে ছিলে বিছানায় তুমি এতক্ষণ,
যেন মানচিত্র এক অপরূপ কোনাে শহরের –
প্রশস্ত সড়ক আর অলিগলি আঁধারে গােপন,
নদীটিও নীল আঁকা, নিশানাও নৌবন্দরের।
যেখানে জাহাজ এসে যাত্রা শেষে তুলবে নিশান,
আমি সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় মাতাল জাহাজী,
দাঁড় ঠেলে চলেছি কখন থেকে কণ্ঠে নিয়ে গান-
একবার যদি তীর খুঁজে পাই প্রাণে তবে বাঁচি।
হঠাৎ কী হলাে তুমি ঢেকে দিলে করতল পেতে
তােমার বন্দরচিহ্ন, বেসামাল পড়ে যাই টলে।
জানি না কীভাবে যাবাে, আর কতদূর হবে যেতে
অন্ধকার নেমে আসে, গাঙচিল ডুবে যায় জলে।
তারপর, তুমি ধলপহরের, ও হাত সরাও,
আমার জাহাজটিকে জেটিমুখে নিজে টেনে নাও ॥
১১.১.২০১০ ঢাকা
১৬
আজও আমি কল্পনায় দেখি সেই অপরূপ দাঁত-
স্বর্গীয় দাঁতনে মাজা কেটেছিলাে গমের দানা;
নিষেধ অমান্য করে নিয়েছিলাে নিষিদ্ধ যে স্বাদ-
আদমের হাওয়া নয়- তুমি সেই নিষেধ-না-মানা!
বেশ ভালাে কাটছিলাে দিনগুলাে কখনাে সাক্ষাত-
অমল আকাশে পাখি– শব্দময় পাখিদের ডানা!
তারপর একদিন পেতে দিলে তুমি বাম হাত,
আমার দক্ষিণ হাত পেলাে সেই হাতে যে-ঠিকানা,
সেই হাতে আজ ঝরে পড়ে যায় নক্ষত্র বিষাদ,
সেই হাতে পূর্ণিমার দরােজায় কেউ দেয় হানা-
আমিও চকিত নর, ঝিলপারে চাঁদের প্রপাত,
তুমিও আপন হাতে হয়ে আছাে বিদীর্ণ বেদানা!
আমার নিঃসঙ্গ দেশে নেমেছে যে পূর্ণিমার রাত
হরিণ হবে না তুমি? আর আমি তােমার কিরাত?
১৪.১.২০১০ ঢাকা
১৭
তােমার শরীরি-স্বাদ নীলসিন্ধু লবন মাখানাে,
হৃদয়ের পাকশালে অগ্নি জ্বলে, উনােনের ধোয়া –
ধোঁয়ায় আবিল চোখ কিছুমাত্র যায় না তাকানাে –
অপাপ শরীরে তুমি উঠে এসাে জ্যোৎস্নাজলে ধােয়া।
আমার আঙুল জানে তােমারই তাে মানচিত্র সেই,
সেই সানুদেশ, সেই পর্বতের যুগল উচ্চতা –
যেখানে ঝর্ণার জল মুক্তি পায় হাত রাখলেই-
মুহূর্তেই দূর হয় প্রান্তরের সকল শুষ্কতা।
সেই জলে রাখি ঠোট পথিকের মতাে তৃষ্ণাতুর।
যদি সানুদেশে পাই ওই বনছায়ায় বিশ্রাম!
তারই জন্যে প্রতিদিন হেঁটে আসা এই এতদূর!
এখনাে আড়ালে তুমি থাকবে কি? হবে তুমি বাম?
খুলবে না কপাট তােমার, মেয়ে, দাঁড়াবে না এসে?
মানচিত্র ছিড়ে তুমি বেরুবে না রমণীর বেশে?
২০.১.২০১০ ঢাকা
১৮
কী ভালাে সেদিন ছিলাে! অকস্মাৎ স্লান এতটাই!
অন্ধকারে সয়লাব! এতটাই ক্ষয়ে গেলাে চাদ!
পথে যে ছিলাম আমি পথচিহ্ন দেখি আর নাই।
এর চেয়ে জানা নাই আর কাকে বলবাে বিষাদ!
উদ্যত ছিলাম বটে, তুমিও তাে সম্মত, প্রস্তুত
উদ্যান-শরীর থেকে নেশাঘন গন্ধের বিস্তার,
ঝর্ণাও প্রচুর জল ছেড়েছিলাে, কোনােখানে খুঁত।
ছিলাে না তবুও দ্যাখাে অকস্মাৎ কী হলাে রিশতার!
পাখি নিলাে পাখা মুড়ে, আকাশের সবটুকু নীল।
মুছে গেলাে, বসন্ত বিদায় নিলাে, রাত এলাে গাঢ়,
সঙ্গীতের ধ্বনি ছিড়ে খেয়ে নিলাে বিসঙ্গের চিল
আমি তাে পারি না আর, দ্যাখাে তুমি যদি কিছু পারাে।
যদি পারাে, গলাও তােমার তাপে আমার বরফ
এ নয় সম্ভব যদি, তবে আমি জীয়ন্তেই শব!
২৪.১.২০১০ ঢাকা
১৯
মাংসের আগুন তাপ, আগুনেও শরীর শীতল
এমন আগুন তুমি জ্বেলে দিতে পারাে রমণীয়!
আগুনে পাথর ফেটে ঝর্ণা হয়, নেচে নামে জল,
গাহন এ জলে নয়, এ যে দেহ-জ্বরের পানীয়!
পান করে চলি তবু জ্বর কিছু কমে না
নামে নাতৃষ্ণাও মেটে না মােটে- যত পান তত তৃষ্ণা বাড়ে।
এ কেমন জ্বর দিলে! হু হু কাঁপি, শরীর ঘামে না।
গূঢ় এক অভিসন্ধি নিয়ে কেউ হাতপাখা নাড়ে।
নাকি সে তুমিই দেখি নগ্নতায় দেহ মেলে আছাে,
অপেক্ষায় আছাে তুমি আরাে জ্বর কিভাবে আনবে?
যদি জ্বর নেমে যায় তবে তুমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচো
মৃত্যুর অধিক সেটি ভালাে কিনা! তুমিই জানবে।
জানি আমি, ভালাে নয়! তাই জ্বর থাকুক শরীরে!
তােমারও সম্মােহ থাক, আমি নামি তােমার গভীরে ॥
২৪.১.২০১০ ঢাকা
২০
তােমার শরীরে শেষ লালবৃষ্টি যখন অঝাের,
যখন ক্রন্দন করে গর্ভথলি বীজ নেবে বলে,
তখন শীলতা ছেড়ে আমি যদি বুকের ওপর
নেমে আসি তখনই তাে দরােজার পাট দুটি খােলে!
সেই ঘর!– পৃথিবীর এতখানি জনশূন্যতায়।
মানবজন্মের জন্যে বহুদিন অপেক্ষায় ছিলাে!
মানব তাে প্রকৃতই কিছু নয় সঙ্গহীনতায়,
তাইতাে তমালতলে রাধা বলে বাঁশি বেজেছিলাে।
এভাবে যখন বাঁশি, এসে যাও তুমিও যখন,
কিছুটা ব্ৰিত কিন্তু উদ্যমের প্রেরণাটি গুরু
যখন বিদ্যুত হানে ভরা মেঘে, হাওয়ায় নিঃস্বন,
যখন বর্ষণ নিতে বিস্ফারিত অপরূপ উরু,
তখন সে কোন্ কালা হাতে রাখে বাঁশিটিকে আর?
তখন কণ্ঠেই গান- দেহে দেহে সৃষ্টিশীলতার ॥
১৬.২.২০১০ ঢাকা
২১
আরাে এক ‘তুমি’ বাস করে না কি তােমার ভেতরে?
সেই অতিমানবীর খোঁজে এই শরীর মথন!
তারই জন্যে ফোটে শব্দ নক্ষত্রের আগুন-কথন,
তাকেই আহ্লাদে আমি রেখে দিই শরীর শেকড়ে।
কিন্তু সে অধরা থাকে, থেকে যায় চোখের আড়ালে
সমস্ত দিনের শেষে রাত নেমে আসে কী মন্থর।
এ রাত আঁধার কিন্তু একপক্ষ অন্তর অন্তর
পূর্ণিমার চাঁদে স্নান হতে পারে প্রান্তরে দাঁড়ালে।
সমস্ত শরীর ভিজে যেতে পারে বিপুল জ্যোৎস্নায়,
তুমিও অমল দুধে ধুয়ে নিতে পারাে মুখখানি-
তবুও সে মুখ নয় যাকে আমি অন্তর্গত জানি,
তােমার প্রসিদ্ধ মুখে, জানি না সে কীভাবে কোথায়
নিজেকে গােপন রেখে আজীবন পলাতক থাকে
কেবল রতির কালে মাঝে মাঝে সেই মুখ জাগে ॥
১৫.৩.২০১০ ঢাকা
২২
এমন কোমল তুমি অথচ কী কঠিন পেশীতে-
আমাকে বন্ধন করাে অনুরাগ নিবিড় প্রচাপে;
দেহ থেকে অবিরল ঝরে স্বেদ পউষেরও শীতে
হাওয়া নেই তবু যেন ঝড় বয়, থরথর কাঁপে
জানালার শার্সি কাচ, পর্দা ওড়ে পতাকার মতাে
জঙ্গল যুদ্ধের শেষে গেরিলার উল্লসিত হাতে।
যদিও সর্বাঙ্গ জুড়ে অস্ত্রাঘাতে বহুতর ক্ষত,
রক্ত ঝরে, ঝরে যাক– সুখধ্বনি তবু আর্তনাদে।
রাতের রমণ শেষে থাকে শুধু এই প্রার্থনাটি—
এ রাত না হােক শেষ, আরাে যুদ্ধ এখনাে যে বাকি!
এখনাে তাে দুগ্ধ আরাে দোহনের তুমুল বোটাটি
শােষণের অপেক্ষায়, তৃষ্ণাতুর ঠোটে চেপে রাখি।
এমন অনন্তকাল, তবু যেন এক মুহূর্তের—
এভাবেই একটি বাসর কেটে যায় আমাদের ॥
১৭.৩.২০১০ ঢাকা
২৩
তখনাে সে শান্ত নয়, তখনাে সে আষাঢ়ের নদী—
যদিও অনেক আগে নেমে গেছে কোটালের বান।
আমি তাে নিশ্চয় দেখি এইবার রতির বিরতি,
অথচ এখনাে তার সেই অঙ্গে রয়েছে নিদান!
কী ছােট শলাকা সেটি!– যেন দাঁত প্রথম শিশুর!
মাঢ়িতে শূলের দাপ, যা পায় তা কেটে ছিড়ে ফ্যালে,
তখন শান্তির হাসি ফুটে ওঠে এমন মধুর
আমারও উত্তাপ ফিরে আসে কিছু কাল ফিরে গ্যালে।
দাঁতে তার সমর্পণ করি আমি আমার উত্থান,
ঘাের হয়ে আসে চোখ, নদীপাড় ঝপাৎ ধড়াস!
যা কিছু শরীরে হয়, কিন্তু আরাে দ্যাখাে এই প্রাণ,
এ প্রাণ শরীর সহ! ভাঙে পড়ে! মথিত ফরাস!
তারপর শান্ত হয়, হও তুমি, হয়েছিলে ঠিকই
অগ্নি তবু নেভে নাই, শলাকাটি লাল ধিকিধিকি ।
১৩.৪.২০১০ সিলেট
২৪
বহুদিন ওই ঠোটে চুম্বন করি নি। সেই থেকে!
মেয়ে, তাই আমার এ ঠোট দ্যাখাে হয়ে আছে হিম।
কতকাল পাইনি তােমাকে আমি হাতে হাত রেখে
এ হাতে এখনাে তাই লেগে আছে নিকষ কুট্টিম।
ভীষণ ক্ষুধার্ত আমি, রােদুরের ভীষণ জোয়ার,
সমুখে রেস্তোরা পেয়ে ঢুকে পড়ি আমি অনাহারী।
ঝিমােয় পুরনাে কথা, যেন পশু পেয়েছে খোয়াড়,
স্যুপের বাটিতে স্পন, বিগত সঙ্গমগুলাে নাড়ি।
তারপর মুখে তুলি। স্যুপে এক চুমুক দিতেই
পােড়ে ঠোট যেন ঠোটে অকস্মাৎ তােমার চুম্বন।
মনে পড়ে দাঁতে কবে স্তনবৃন্ত কেটেছি যে সেই
তারই মতাে স্বাদ যেন টমাটোতে যখন দংশন।
নির্জন রেস্তোরা! একা! সঙ্গমের স্মৃতিপ্রত্ন ঠোটে।
তােমার শীৎকার! নাকি ট্রাক যাচ্ছে- হর্ন বেজে ওঠে!
১৬.৪.২০১০ ঢাকা
২৫
সৈনিক যেমন তার বন্দুকের পরিচর্যা করে,
বেয়ােনেটে গ্রীজ মাখে, দাখে নল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে;
সতত সতর্ক থাকে কোথা থেকে কোন্ পথ দিয়ে।
আক্রমণ করে কেউ! জেগে থাকে ঘুমেরও প্রহরে।
তুমিও তােমার মুখ পরিচর্যা করাে প্রতিদিন।
ঘর থেকে বেরুবার সমাবেশে দাঁড়াবার কালে,
আঁকো চোখ, ঢাকো ত্বক ঘন পাউডারের আড়ালে,
ঠোটের কামনা কোষে লিপস্টিক, চশমা রঙিন।
যখন পার্টিতে যাও, আক্রমণ আশঙ্কায় নয়,
নিজেই হামলা তুমি করাে প্রতি যুবক শিবিরে,
শরীরে তরঙ্গ তুলে, দুই চোখে কামনার তীরে
তখন তােমার কাছে মানি আমি ঘাের পরাজয়-
আরাে কিন্তু অনেকেই! মরে যাই একমাত্র আমি!
রূপের রুপালি ছুরি- বুকে ধরি- আমি মৃত্যুকামী ॥
১৬.৪.২০১০ ঢাকা
২৬
মুখে স্বাদু শব্দরাশি, একদিকে কবিতা রন্ধন,
কী সাথে মেশালে আর কতটুকু তাপ দিলে পর।
বাঙালি প্রেমিক তাকে সমাদরে করবে গ্রহণ,
এই নিয়ে হাতা নাড়া করােটির গভীর ভেতর।
অন্যদিকে ব্যস্ত এই হাত দুটি তােমার শরীরে,
কখনাে স্তনের পরে, কখনােবা নাভিমূলে রাখা,
মেধাবী খননকারী খুঁড়ে চলে মাংসের গভীরে
ক্রমে মুছে যেতে থাকে মানচিত্রে রাজধানী ঢাকা!
এমন বসতি আমি অথবা কি বলবাে আমরাই?
যুগল শরীর ভেঙে মাংস আর মেদ ও মজ্জায়
নির্মাণ করতে চাই, যদি শুধু এক রাত্রি পাই,
যমুনার তীরবর্তী গ্রাম তবে করে নিই শয্যায়।
কবিতাটি তৈরি হয়, গ্রামটিও প্রায় হয়ে ওঠে
আমি মুখ গুঁজে দিই, উচ্চারণ করাে তুমি ঠোটে ।
১৭.৪.২০১০ ঢাকা
২৭
এইতাে কেবল সন্ধ্যা, অচিরেই যুবতী সে হবে—
পরনে তারার ঘাগরা, টিপ পরে নেবে সে চাঁদের,
একটি তরঙ্গ রেখা নেচে যাবে, শরীর সৌরভে ।
ভরে যাবে, মেলে দেবে ডালপালা বৃক্ষেরা ফাঁদের।
লুকোচুরি তার আর কতক্ষণ? ধরা সে দেবেই
ধরা তাে দিতেই তার নীলাকাশে নিত্য ফুটে ওঠা।
কেউ না কেউ তাে আছে, সেই তার বুক পকেটেই
ম্যাজিকের মতাে ঢুকে যাবে তার দুগ্ধবতী বোঁটা।
তারপর ফোঁটা ফোঁটা, আঠা হয়ে যেতে থাকা সব,
তারপর খুলে পড়ে যাওয়া তার পােশাক প্রান্তরে
এমন গল্পের কাছে কবরেও জেগে ওঠে শব,
আমি তাে মরণশীল, ক্ষমাপ্রার্থী দুই কান ধরে!
আমাকে এমন করে প্রতিরাতে মাতাল যে করাে
বারবার মরে যাই একবার তুমি যদি মরাে!
১৭.৪.২০১০ ঢাকা
২৮
সুরার তুমুল রােষে শরীরের শাড়ি খুলে যায়-
তখন বেরিয়ে পড়ে কতকাল ঢেকে রাখা ক্ষত-
যােনির আঁধার আর ছাপচিহ্ন লাল দরােজায়
দেখেই বিদীর্ণ হই, থাকি চুপ ভদ্রতাবশত।
শুধু চুপ থাকা নয়, হেসে উঠি যেন অভিনেতা,
অপিচ উৎকর্ণ শুনি বলে যাচ্ছাে তুমি যে কাহিনী
দেহদেশে কবে কোন্ সেনাপতি হয়েছে বিজেতা,
এক নয়, আরাে বহু যুবকেরই সকাম বাহিনী।
ফলবৃক্ষ ভূপাতিত, ছােট দুটি দুধের নদীও
কীভাবে খরার তাপে মরুপ্রান্তে ফেলে গেছে কারা—
আমি সেই শুকনাে খাতে মুখ ফেলে রয়েছি যদিও
আমিও সুরার তােড়ে ভেসে যাই, হই সংজ্ঞাহারা।
কিন্তু সে সুরাও ব্যর্থ— দগ্ধ হই ঘণ্টা গােনে ঘড়ি।
ঈর্ষার অগ্নিতে লাশ! ঘিরে তুমি নাচো নগ্ন পরী ॥
১৯.৪.২০১০ কুমিল্লা
২৯
শয়ন-মন্দিরে তুমি এসেছিলে সবুজ কামিজে,
অস্থির দু’হাতে যেই খুলে ফেলি ঝিনুক বােতাম
বেড়ালের মতাে লাফ দিয়ে ওঠে স্তন ভিজে ভিজে;
একমেটে দেহ যেন কুমােরের উঠোনে কাঠাম!
দেবী তুমি দাঁড়িয়ে রইলে, আমি চুম্বনের ফুলে
সারাদেহ ঢেকে দিয়ে পূজাপাঠ শুরু করলাম।
তুমি তাে মাটির নও– ছুঁয়ে আমি দেখেছি আঙুলে,
তবুও মন্দিরে ঢুকে প্রথমেই তােমাকে প্রণাম।
অর্থাৎ তােমার বুকে বুক রেখে স্ত্রোত্রপাঠ করি-
সামান্য শব্দই মাত্র ‘ভালােবাসি’– বলি বারবার;
তােমার পূজার আমি পুরােহিত, তুমি তাে ঈশ্বরী
যা বলে বলুক লােকে, পুত্র আমি কামদেবতার।
শরীর ধুনুচি হয়ে ধূপগন্ধে ভরে তােলে ঘর।
সবুজ কামিজ একা সারারাত মেঝের ওপর ॥
২১.৪.২০১০ ঢাকা
৩০
তােমার উত্তল স্তনে হাত রেখে আমি সারারাত-
আর কেউ রেখেছিলাে নাকি তার হাত এইখানে?
তুমি তাে অঘাের ঘুমে, কেটে চলে আমাকে করাত
একে বুঝি ঈর্ষা বলে? যেটা বলে! নেই অভিধানে।
এই যে উৎকণ্ঠা এই নারকোল শাঁস কুড়ে চলা,
এই যে ঝড়ের হাতে ছিড়ে পড়া গাছ থেকে আম,
এই যে অতীত এসে সাঁড়াশীতে চেপে ধরে গলা
এতেই তাে বুঝে যাই তােমাকে কী ভালােবাসলাম।
এতই সে ভালােবাসা জানি তুমি অন্য কারাে ছিলে—
একদিন কতদিন— তবু যেন তুমি সে কুমারী
দুয়ার এখনাে যার আঁটা আছে চন্দনের খিলে,
আমিই প্রথম তার! আমি এসে যেই কড়া নাড়ি
জেগে ওঠে চন্দ্রকলা, স্তনবৃন্ত রাখি ঠোটে করে-
তখন রতির স্নানে শুদ্ধ তুমি আমার ওপরে ॥
২১.৪.২০১০ ঢাকা
৩১
যদি তুমি চলে যাও! পৃথিবীর যেখানে যাও না—
তুমি তাে সতত আছাে মনােভাগে অস্থির মানবী।
যতই চুকিয়ে তুমি দিতে চাও দেনা ও পাওনা—
এক সত্য জানি আমি, জানে এই তােমারই তাে কবি :
বেডরুম, বইপত্র, টেবিলের পরে ল্যাপটপ,
জানালার নীল পর্দা, বাথরুমে গােলাপি তােয়ালে
নিহত তােমার হাতে সব পড়ে থাকলেও শব,
| রতির শয্যায় ফুটে থেকে যাবে রাতটা পােহালে
তােমার দেহের ছাপ, রমণের শ্রমে ঝরা স্বেদ
এবং বালিশে কিছু বলিরেখা, খসে পড়া চুল—
ওতেই যা গােপনীয় আমাদের শরীর সমেত
রয়ে যাবে ওখানেই। কখনােই হবে না নির্মুল।
সেই বৃক্ষ যার জলসেচে তুমি একদা রমণী
নিয়েছিলে রক্ত এই দেহ থেকে জানে তা ধমনী ॥
২৫.৪.২০১০ ঢাকা
৩২
ধরাে যদি তাই হলাে! তুমি গেছাে বহুদূর দেশে—
সেখানেও জানি আমি দিগন্তটি আকাশেই মেশে।
জল নিম্নগামী সেই প্রবাসেও তুমি দেখে নেবে,
সেখানেও ভালােবাসা বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে কেঁপে।
হয়তাে সেখানে তুমি দেখা পাবে এমন জনের
চোখে যার উজ্জ্বলতা, কণ্ঠে ভাষা দেবতাগণের
অর্থাৎ এমন কেউ যাকে ভালাে লেগে যেতে পারে
রেস্তোরায় ট্রেনে বাসে বিপণীতে সাগর কিনারে।
হয়তাে তখন তাকে দৃষ্টি দিয়ে পাঠাবে সংকেত—
এসাে দুটো কথা কই, ঘুচে যাক বিরহ বিচ্ছেদ।
আলাপ এগিয়ে যাবে, মুখােমুখি হতে হতে হতে।
হয়তাে ভেসেও যাবে হৃদয়ের অন্তর্গত স্রোতে।
তারপর একদিন যদি তুমি হও শয্যাগামী
তারই সাথে! তখনও দেখতে পাবে- সে তাে নয়— আমি!
২৫.৪.২০১০ ঢাকা
৩৩
‘এ হলাে তােমার কবি- দুঃখের বিলাস! নইলে কি
সাধে বলে, সুখ যদি বেশি হয় ভুতেই কিলােয়!
হৃদয় ও শরীরের সব পেয়ে অতৃপ্ত ছিলে কি?
সাধুভাষে বলেছিলে আমি নাকি তােমার নিলয়!
তােমার কুটির আমি, ঝর্ণাজল তােমার জন্যেই—
সেসব গিয়েছাে ভুলে, ঠেলে দিচ্ছাে বহুদূর দেশে?
এবং যা কিছু তুমি পেয়েছিলে তাতে মন নেই
কী করে অপর কাছে তুলে দিচ্ছাে এত ভালােবেসে?
আমি চুপ তিরষ্কার শুনে, আমি থাকি নত চোখে
শয্যার কিনারে বসে, তুমি নগ্ন তখনও শয্যায়
উত্তল যুগল স্তন, সিক্ত যােনি, লাল রঙ নখে—
ঝাপিয়ে পড়তে চাই, মরে যাই লজ্জায় লজ্জায়!
অথচ কী জানাে দেবী, ঈর্ষাটিও খুব ভালাে লাগে—
ঈর্ষার লবণে প্রেম স্বাদু হয়, ঠোটে লেগে থাকে ৷
২৭.৪.২০১০ লন্ডনের পথে
৩৪
তরুণ এখনাে রাত, আকাশেও নক্ষত্রের মেলা,
এখনাে শয্যায় তুমি দেহ পেতে কেটে যায় রাত।
এমত অনেক রাত! হৃদয়ের এত অবহেলা,
এতটাই ঠাণ্ডা তাপ আর এত দুর্বোধ্য বিষাদ!
অথচ এমন নয় ভস্ম করে ফেলেছে আমাকে,
আমিও তােমার থেকে ফিরিয়েছি অন্যখানে চোখ!
এখনাে সুরায় আছি আর আছি ভার্জিন তামাকে,
তােমারও জঘার তিল যথাস্থানে আমিও সনখ!
তােমার স্তনের বোঁটা রক্তলাল এখনাে আঁচড়ে,
ঠোটের কোমল কোষ চুম্বনের চাপে বিস্ফারিত;
আমার হৃদয় করে ধুকধুক বুকের পাঁজরে—
অঙ্গের অবশ দিশা, প্রবেশের দ্বার অবারিত!
এর কোনাে মানে নেই শুধু শুয়ে থাকা পাশাপাশি
অপেক্ষায় কখন শরীর ভেঙে বেজে ওঠে বাঁশি ॥
২০.৫.২০১০ ঢাকা
৩৫
তােমার সৌন্দর্য, নারী, তুমি চাও বর্ণনায় আনি।
যদিও প্রচুর আছে প্রথাসিদ্ধ উপমা তুলনা
তােমার মন্দিরে ফুল বহুজন দিয়ে গেছে জানি—
কিন্তু সে সকল বাসি পদনখ ছুঁয়েও ছুঁলাে না।
বরং তুমি তাে চাও সেই অসামান্য পদাবলী।
এখনাে যা লেখার অপেক্ষা করে আছে মাতভাষে—
রক্তের অক্ষরে লেখা- উৎস যার নয় বীর্যথলি—
প্রেমের কান্তার থেকে যার প্রতি বর্ণ উঠে আসে।
কান্তার? হৃদয় তবে! দেহ নয়, যােনি জঘা নয়,
আকাশের মতাে ব্যপ্ত অনুভব নীল থেকে তবে।
উঠে আসা পঙক্তিমালা রূপকল্প শব্দ সমুদয় ।
উজ্জ্বল মােহর যদি হয়ে ওঠে, তুমি তৃপ্ত হবে।
কিন্তু কী আমার সাধ্য! ততখানি নই তাে মেধাবী
রতি ও আরতি মেশা একই বাক্যে মেটাই সে দাবি।
২১.৫.২০১০ ঢাকা
৩৬
এই যে রতির শেষে রােজ ফিরে যাওয়া যে আমার,
ভুলতে কি পারি সেই সমতল উত্তল খামার—
যেখানে দু’দণ্ড থেমে সর্বসুখ পেয়েছি স্বর্গের;
যদি লিখি, নিশ্চিত সে খাদ্য হবে তুমুল তর্কের।
শিশ্ন আর যােনি আছে সকলেরই— তবুও অবাক,
সকলেই বলে ওটা ওইসব মনে চাপা থাক।
বরং পদ্যেই যদি তােক শুধু ভালােবাসা নিয়ে,
সেই ভালােবাসা যার পরিণামে ললাকে করে বিয়ে।
বিয়েতেও নিষেধের আছে বহু ধরনধারণ!
যা হয় শােবার ঘরে, প্রকাশ্যে তা বলাটা বারণ।
অথচ যে-স্বর্গ হয়ে ওঠে দুই দেহ সম্মিলনে,
বুঝি না সে সব লেখা অপরাধ হবে কী কারণে!
থাকুক মানুষ তবে নিমসাধু সৌজন্যবশত;
দেহের মন্দিরে আমি থেকে যাই পূজায় নিরত ॥
২৪.৫.২০১০ ঢাকা
৩৭
আমি তাে অবাক মানি প্রতিবার রতির বাসরে
যখন শাড়িটি ছেড়ে নগ্ন তুমি দাঁড়াও সমুখে—
প্রতিবার মনে হয় এর আগে কখনােই বুকে।
দেখিনি তাে ওই তিল। শুনি ডাক- ভেলায় ভাসাে রে!
হে মাঝি তােমার জন্যে দিকচিহ্ন বুকে ওই তিল,
ধ্রুবতারা দ্যাখাে ওই জঘনের তিল আরাে এক;
তখন যাত্রায় আমি উদ্বোধিত বস্ত্র করি ত্যাগ,
উদ্যত বৈঠার ঘায়ে ভেঙে চলি শরীরের নীল।
তাহলে গন্তব্য তুমি তােমাকেই লক্ষ করে চলা,
তােমাতেই আছে সেই ব্যক্তিগত দারুচিনি দ্বীপ
যার প্রতি ঝিল ঝর্ণা সানুদেশ করেছি জরিপ
আমার কম্পাস ফেলে, মেনে নিয়ে সকল শৃঙ্খলা।
আমি তাে নাবিক এক প্রতিবারই প্রথম যাত্রায়
প্রথম দিনেরই মতাে রতি কিংবা রাতের ভেলায় ॥
২৪.৫.২০১০ ঢাকা
৩৮
পাঠালে চিরকুট তুমি, সাধ হলাে আমাকে দেখার—
ঠিক সাড়ে পাঁচটায় আমাদের প্রিয় রেস্তোরায় ।
এমন হঠাৎ সাধ সে কি শুধু তােমার একার?
শােবার ঘরেই শুধু? ওতেই কি সব হয়ে যায়?
তােমার সুন্দরবনে পর্যটনে যখন বেরােই
তখন তােমাকে শুধু নারীবােধে শিকারেই চিনি?
রতিতেই সব শেষ করে উঠে ঘামে থই থই
ওতেই ফুরিয়ে যায় হৃদয়ের সব বিকিকিনি?
নিশ্চয় তা নয়, আছে আরাে এক আকাক্ষার টান—
তােমাকে সবার মধ্যে দেখে নিতে খুব সাধ হয়।
উজ্জ্বল মােতির মতাে দ্যুতিময় ভরে আছে প্রাণ—
আমার তুমিই তুমি— এইটুকু! আর কিছু নয়।
কিন্তু যেই দেখা হলাে, ফেটে পড়ি তীব্র পিপাসায়—
এত লােক রেস্তোরায়! চুম্বনেরও নেই যে উপায়!
২৫.৫.২০১০ ঢাকা
৩৯
তাহলে সন্ধেটা হােক, কফিটুকু শেষ করা যাক,
কফির উষ্ণতাটুকু চুম্বনের তাপ হয়ে যায়—
রেস্তোরায় ন্যাপকিন, জানালার পর্দা পড়ে থাক,
আকাশে নক্ষত্র থাক যদি চাদ ওঠে অপেক্ষায়।
আমরা ঘরের দিকে তবে চলাে যাই যেতে থাকি
যেতে যেতে মােড়ের দোকান থেকে ফুল কিনে নিয়ে
চলাে যাই নীড়ে যেন সন্ধ্যাগমে আকাশের পাখি।
কথাটা কি কাব্যগন্ধী? তবে আর বলি বা কি দিয়ে!
আমি তাে এমন দেখি তােমাকে যে ভালােবাসলাম,
তােমার হৃদয় ভেঙে দেহদেশে এই যে ভ্রমণ,
সে তাে সাধ্য হয়েছিলাে, যাত্রাপথে জানিনি বিরাম
কেননা পেয়েছি ডানা ভালােবেসে তাই উডডয়ন
হৃদয় নিখিলে আর বস্ত্রহীন দেহের ভূগােলে
সে তাে তুমি সবটুকু আমাকেই দিয়েছিলে বলে ।
২৫.৫.২০১০ ঢাকা
৪০
দুঃসহ সুন্দর তুমি- কুঠারের ধার ঝলসিত-
শয্যায় শয়ান তুমি- হাড়িকাঠে গলা পেতে আছিও-
দুটি স্তনের খাঁজে- বলিদান হলে আমি বাঁচি।
কিন্তু তুমি দেবী বড় রহস্যের করাে বিলম্বিত।
উজ্জ্বল দৃষ্টির দ্যুতি, জঘনের চাপে স্বর্গদ্বার
রেখেছাে আবদ্ধ করে, কিন্তু জানি ওখানেই গতি!
তুমি যে তাকিয়ে আছাে– দিয়েছি তাে নিঃশর্ত সম্মতি।
আমাকে গ্রহণ করাে, দেরি আর সহে না আমার!
নিষ্পলক চেয়ে আছাে, আর আমি আছি চোখ বুজে।
আমার শরীরে তাপ, আগুনের শব্দ টের পাই
তােমার নিঃশ্বাসে আমি, অপেক্ষায় হয়ে যাবাে ছাই—
ওদিকে বৃষ্টির ফোটা— সেও তপ্ত উত্থান গম্বুজে।
আর তবে দেরি কেন! দেবী তুমি করাে শঙ্খধ্বনি।
তােমার কুঠারে রক্ত মেখে দেবে প্রেমিক ধমণী ॥
২৬.৫.২০১০ ঢাকা
৪১
তুমি সেই! সেই তুমি! অথচ কী বিস্ময় মানি-
এতবার এত দেখা এত কথা এতবার রতি,
আবার যখন দেখা, মনে হয় তুমি এতখানি।
অচেনা আমার- যেন, তুমি কোনাে প্রথম যুবতী-
যার সাথে এইমাত্র পরিচয়, কুশল সম্ভাষ,
লােকোচিত উড়াে কথা কিছু আর যেন তারপর
দু’জনে যে-যার পথে ফুটপাথে ফুল একরাশ,
কেউ তাে গাইছে না তবু চারদিকে সঙ্গীতের স্বর!
সেই কতকাল থেকে আছাে তুমি আমার হৃদয়ে-
কেবল হৃদয়ে নয় শরীরেরও প্রতিটি বিতানে।
তােমার সম্মত দানে আছাে তুমি গন্ধমাখা হয়ে-
এসব নিবিড় কথা কতটুকু মানুষ কী জানে!
কেবল আমিই জানি, আর জানাে তুমিও নিশ্চয়-
প্রতিদিনই তুমি আমি, প্রতিদিনই প্রথম কি নয়?
২৬.৫.২০১০ ঢাকা
৪২
যখন শয্যায় তুমি মেলে দাও তােমার শরীর-
সে এক ভূগােল এক অবতল উত্তল ভূভাগ!
দেখেই যাত্রার জন্যে হয়ে পড়ি তুমুল অধীর-
অচিরেই অভিযাত্রী! ঝােড়াে হাওয়া যতই উড়াক।
চোখ অন্ধ করা ধুলি, পদচিহ্ন মুছে যাক, আমি
সেসব মানি কি আর! ধাবমান তােমার দিকেই,
আমার হৃদয় আর প্রতি অঙ্গ হয় পথগামী
সেই পথ!– মিশেছে যা অনুপম তােমার স্বর্গেই।
স্বর্গের বর্ণনা কত শাস্ত্রে লেখে, পুরােহিতও বলে—
সেখানে ঝর্ণার ধারা, গাছে কত মিষ্টি পাকা ফল!
তুমুল ভক্ষন শেষে মুখ রাখি উষ্ণ ধারাজলে,
তুমিও দিশারী এক, করে তােলাে এ যাত্রা সফল।
তুমি যে সুখদ দেশ, বিপুল বিশাল সেই দেশে
রতিযাত্রা শেষ হয়, তবু শেষ হয় না তাে এসে ॥
২৮.৫.২০১০ ঢাকা
৪৩
তৃষ্ণায় অধীর আমি, তুমিও তাে বিপুল তৃষ্ণায়
পড়ে আছাে মরুভূম হয়ে আজ রতির শয্যায়।
কী চাও আমার কাছে? মুক্তোজল দেহ উৎসারিত?
তাহলে অপেক্ষা কেন? প্রাথমিক সকল অধীত-
এখন কেবল দুটি প্রাণ হয়ে আছে তৃষাতুর,
করাও আমাকে পান, করাে পান লবণে মধুর।
লবণে মধুর আর তুলে দাও মুখে সেই ফল।
রসে পরিপূর্ণ যার ত্বক কত সােনালি উজ্জ্বল।
তারপর টেনে নাও পথিকের শরীর শরীরে
যেখানে বর্ণনাতীত খাদ্য আছে সুড়ঙ্গ গভীরে।
কেবল আমিই নাকি! ক্ষুধা আছে তােমারও অনেক,
তুমিও তাে খাদ্য চাও, চাও স্বাস্থ্যে পূর্ণ অভিষেক।
আমার সর্বস্ব পােড়ে, তৃষাতুর যে ভীষণ টান-
রাত্রিও গড়াতে থাকে, তবুও কি শেষ হয় পান!
২৮.৫.২০১০ ঢাকা
৪৪
তােমার শীৎকার শুধু কতিপয় শব্দধ্বনি নয়।
যেভাবে মুখের রেখা রতিকালে ভেঙে ভেঙে যায়-
সে তাে শুধু পরিচিত মুখখানি ভেঙে যাওয়া নয়,
এ হলাে যখন তীরে সাগরের ঢেউ আছড়ায়,
মুছে যায় তটরেখা, ভেসে যায় কাঁকড়ার দল,
মানুষের পদচিহ্ন, শূন্য সব খাদ্যের মােড়ক-
পৃথিবীর দূরপ্রান্ত থেকে আসা কল্লোলিত জল,
গর্জনে যে ছুটে আসে, যেন ক্রুদ্ধ মন্ত্রের শােলােক!
যেন সব লুপ্ত করে স্থলভাগ দেবে সে ডুবিয়ে,
যেন কেউ স্থিতি আর না পায় এখানে এরপর,
যেন সৃষ্টি প্রথমার রক্তে দেবে আকাশ ছুপিয়ে-
তখনই সে লজ্জাশীলা হয়ে যাবে ভৈরবী সত্বর।
খােলা চুল, ঝােড়াে হাওয়া, দাঁতে তার সূর্য ঠিকরােয়-
তুমিও তেমনি মেয়ে, দেহ এসে দেহ যদি ছোঁয় ॥
৩১.৫.২০১০ যশাের
৪৫
স্বভাবে বিনয়ী আমি, স্বাগতমে তুমি স্বল্পভাষী।
যখন দরােজা খুলে দাও তুমি— এক চিলতে হাসি!
তার বেশি কিছু নয়, চোখে দুটি তারা ঝিকমিক-
আমিও চৌকাঠে স্থির, বুকে ঝড় চৈত্রের অধিক।
এভাবেই কিছুক্ষণ পরস্পর শুধু চেয়ে থাকা-
দরােজার এপারে ওপারে যেন স্থিরচিত্র আঁকা।
তারপর সরে তুমি পথ করে দিলে ঢুকবার
তখনই হঠাৎ তাড়া, সাড়া জেগে ওঠে ত্রস্ততার।
তখন পাথরে রুদ্ধ জলধারা ছােটে অকস্মাৎ,
তখন স্তম্ভিত মেঘ ছিড়ে যেন দেখা দেয় চাদ।
আর কী বিলম্ব সহে! তখনই তাে মত্ত আলিঙ্গনে।
তােমার মরুর মুখ সিক্ত করি চুম্বনে চুম্বনে।
বিনয় তাে আর নয়, নয় আর স্বল্পভাষীতা যে!
মথিত বৃষ্টির গান হতে থাকে রতির শয্যাতে ।
১.৬.২০১০ ঢাকা
৪৬
এখনাে তাে বাকি রয়ে গেছে বহু এসব কথন-
তােমার উত্তাল গ্রীবা, স্তনযুগ, নাভি ও জঘন,
স্বর্গের দরােজা ঘিরে বনঝুরি, বোটা আর ঠোট-
এ সব প্রত্যহ লিখে যতটাই করি না আস্ফোট,
কিছুই হয়নি বলা, এ কেবল শুরু মাত্র- জানি
এখনও সদয় নন ততখানি দেবী বীণাপানি
যতখানি হলে আমি শব্দ আর ছন্দের বয়নে
তােমাকে পূজায় পাই উপমার অনন্য চয়নে।
এবং বিস্ময়কর রূপকল্প সৃষ্টি করে করে
তােমার বন্দনা করি! কিন্তু এই মূঢ় কণ্ঠস্বরে।
যা কিছু বলি না কেন, কামুকেরই উচ্চারণ হয়।
কবিতা বলবাে তাকে? খুব জানি কবিতা সে নয়!
শয্যায় তােমাকে পেতে ডাক দিই যে-ভাষায় আমি
এখনাে কবিতা নয় কণ্ঠ যদি শুধু রতিকামী ।
১.৬.২০১০ ঢাকা
৪৭
আলােটা নিভিয়ে রাখি, পর্দা খুলে দিই জানালার,
আকাশ মণ্ডল থেকে তারাগুলাে পড়ক ঝাপিয়ে
আমাদের ছােট্ট ঘরে, আর ওই চাঁদ পূর্ণিমার
ধবল দুধের মতাে আলাে ঢেলে দিক না ভাসিয়ে।
আমরা শয্যায় শুয়ে শরীরের সব বস্ত্র খুলে-
এসাে না দীপ্তিতে তার উজ্জ্বলিত উচ্ছসিত হই-
জ্যোৎস্নায় তােমার সুখ কেন্দ্রীভূত হােক নাভিমূলে,
আমিও উদ্দাম বটে, অপলক চোখ পেতে রই।
দেখি যে সাতটি তারা ম্যাজিকের মতাে নেমে এসে
তােমার কণ্ঠের মালা ক্রমে হয়ে যেতেছে এবার,
আর স্বাতীনক্ষত্রের জল ওই নামছে সে-দেশে
যেখানে আমার ঠোটে তৃষিতের পানীয় নেবার।
কে বলে আকাশে থাকে তারা কিংবা পূর্ণিমার চাঁদ?
তােমারই শরীরে সব, দেখেছে যে জানে সে সংবাদ ।
৫.৬.২০১০ ঢাকা
৪৮
এবার তােমার পালা, মেয়ে তুমি যাত্রা শুরু করাে
আমার শরীরভূমে, দ্যাখাে আমি সবুজে সচ্ছল,
আমার বাগানে ফুল, নীলনদ বহে খরতর
কামনার হ্রদ থেকে, শয্যায় সে ফোঁটা ফোঁটা জল।
এবার তুমিই নামমা, আমি শুধু নীরব সেবক-
তােমাকে আতিথ্য দিতে অপেক্ষায় দ্যাখাে কি উৎসুক!
এতকাল উদ্যমী যে আমি আর নই সেই লােক,
তােমার পায়ের চিহ্ন নেবাে বলে পেতে আছি বুক।
আজ রাতে আমাদের ভূমিকার এই যে বদল,
এই হয়ে যাওয়া নদী, এই হয়ে যাওয়া যে বাগান,
এই যে জলের ধারা সারাদেহে তােলে কলরােল,
মেয়ে, তুমি নেমে এসাে, এই জলে সাঙ্গ করাে স্নান।
তারপর শুয়ে থেকো সিক্ত চুলে রমিত শয্যায়-
শান্ত তুমি, শান্ত আমি, শান্ততার অববাহিকায় ॥
৫.৬.২০১০ ঢাকা
৪৯
যখন কামার্ত দাঁতে উচ্চারণ-লিপ্সা জেগে ওঠে,
দাগ পড়ে যেতে থাকে দুই গালে বর্ণমালা প্রায়,
শীলের শেকল ভেঙে তখন যে-ভাষা ফোটে ঠোটে,
বর্বর হলেও তবু অশ্লীলতা তাকে বলা যায়?
মাঝে মাঝে ভাবি আমি রমণের কালেই যে ভাবি,
তখন দড়ির টান অকস্মাৎ পায় শিথিলতা,
সােনালি দরােজা থেকে খসে পড়ে যেতে থাকে চাবি-
যা ছিলাে সটান তরু, মুহূর্তেই হয়ে যায় লতা!
অশ্লীলতা? তুমি যে তাতেও সাড়া দাও দেখেছি তাে-
তােমারও মুখের খই ওই ভাষা- তখন ছিটোয়
গনগনে তাওয়া থেকে, আমি হয়ে পড়ি সম্মােহিত;
বুক পেতে আছাে তুমি, তােমাকে কে পণ্ডিত পিটোয়!
আমাদের পাঠশালা! পড়াশােনা রতির শয্যায়!
তুমি ডাক ভেঙে চলাে সুন্দরের অশ্লীল ভাষায় ॥
৬.৬.২০১০ ঢাকা
৫০
নতুন উপমা নয়, পুরনােই ধার করে বলি-
পৃথিবীর মতাে তুমি সহে গেছাে খন্তার আঘাত!
নিরুপায় বিবাহের দাবী শােধ করা প্রতিরাত-
আমাকে বলেছাে সবই, মনে আছে আমার সকলই।
সে কথা যখন মনে পড়ে যায়, কী যে হয় জানাে?
প্রথমত খুশি হই সে শেকল ছিড়েছিলে বলে;
তােমাকে তখন পাই বালিকার মতাে– এই কোলে-
তখন চুমাে যে খাই কাম আর মমতা মেলানাে।
মমতাই বুঝি তার ভাগে পড়ে অনেক অধিক!
তােমার মাথাটি রাখি আলগােছে বালিশের পরে,
স্বর্গের সুগন্ধ আর প্রজাপতি এসে যায় ঘরে,
তুমি যে ঘুমিয়ে পড়াে, আমি চেয়ে থাকি অনিমিখ।
তখন শরীরটুকু গলে গিয়ে দুধ হয়ে যায়-
তােমাকে নাহাতে থাকে, প্রেম এসে আলােতে জাগায় ॥
৭.৬.২০১০ ঢাকা
৫১
সে সব কষ্টের কথা কতদিন বলেছে আমাকে-
কীভাবে কিশােরী ছিলাে প্রতিরাতে শরীর বিছিয়ে,
কীভাবে দুঃখের জল দিতে তার অস্তিত্ব ভিজিয়ে,
তুষার পতন হতাে সারাদেহে, যেন যদি ঢাকে—
যেখানে খন্তায় খুঁড়ে চলাটাই মুখ্য তার কাছে,
যার কাছে একদিন গিয়েছে সে ভুলবার্তা পেয়ে।
এখন কিশােরী নয়- আর নয়- যুবতী সে মেয়ে-
এখন এ সব তার মনে পড়ে আয়নার কাচে।
আমি সেই ভাঙা কাচ তুলে আনি, আর্ত দুই হাতে
কুড়িয়ে কুড়িয়ে সব তুলে আনি, জোড়া দিতে থাকি-
গড়ে তুলি সেই মুখ— একদার ফের হবে নাকি?
যদি প্রেম দিয়ে আমি পারি সব নিপুণ মেলাতে।
জানি না পেরেছি কিনা, ঘুম এসে যায় দুই চোখে।
চোখে যে কষ্টের ছবি— তাই যদি! কী হবে সম্ভোগে?
৭.৬.২০১০ ঢাকা
৫২
এরপর আর কিছু বাকি থাকে দেবার নেবার?
হৃদয়ে হৃদয় গত, বস্ত্রহীন শরীরে শরীর-
তবুও ভেতরে এক অভিযাত্রী অশান্ত অস্থির।
ডাক ভেঙে ওঠে বাঘ, শব্দ শুনি অশ্বের হ্রেষার।
আরাে যাত্রা আছে, মেয়ে, আরাে পথ আছে বনভূমে;
এখনাে বাঘের হাতে আরও মৃত্যু আছে অনুপম;
সুন্দরবনের পথে শব্দ তােলে সাধুর খড়ম-
দু’চোখ আবিল হতে আরও বাকি আরতির ধূমে।
অর্থাৎ সহজ করে তােমাকে যে সব সাধে পাই,
সেখানেও নগ্নতা তােমার দেখি নগ্নতাও নয়!
যেন সে দ্বিতীয় বস্ত্র তখনাে তা দেহ ঢেকে রয়-
দেহের ভেতরে দেহ! সেই দেহ আজও খােলে নাই।
এবং হৃদয়-দেশে হৃদয়েরও খােলেনি দরােজা।
তােমার গভীরে গিয়ে প্রতিরাতে সেই শেষ খোজা ।
৮.৬.২০১০ ঢাকা
৫৩
তরুণ সবুজ গাছ বাসনার প্রান্তরের পরে,
দূরে ওই পাহাড়ে আনত চাঁদ, স্তনের বোঁটায়
জ্যোৎস্না এসে পড়েছে যে, ঝরে দুধ ফোটায় ফোঁটায়,
কামের কৌশল বুঝি নারীগণ তাই গর্ভ ধরে!
তােমার শরীরে আছে সেই সম্ভাবনা সৃজনের,
লােকে যাকে পুষ্প বলে— পুষ্প থেকে জন্ম নেয় ফল;
বৃক্ষের উপমা ছেড়ে বলি কথা যদি আমাদের,
আমাদের রতি থেকে ঝরে যদি সমর্থ সে-জল
যাতে তুমি গর্ভবতী হয়ে জন্ম দেবে যে-সন্তান,
আমার মতােই কিংবা কন্যারূপে তােমার মতােই-
তারও দেহ যৌবনের দেশে গিয়ে প্রেমিকের প্রাণ
পেয়ে যাবে, আমাদেরই মতাে হবে সখা কিংবা সই।
তাহলে শয্যায় এসাে, নগ্ন হও প্রকৃতির মতাে-
বীজ হাতে আমি আসি ফসলের কৃষকের মতাে ॥
১০.৬.২০১০ চট্টগ্রাম
৫৪
এ রাত জ্যোৎস্নার রাত, জানালার বাইরে আকাশ-
নক্ষত্র নীলাভ আলাে বলে, এই আলােটা মাখাস্
যাকে তুই ভালােবেসে রতি শেষে ঘুমােতে দিলি যে!-
সেই ছবি দেখে দেখে ওরা হাসে ঝিলিকে ঝিলিকে!
ওই যে নক্ষত্রগুলাে আর ওই রাণীবেশে চাঁদ-
তখন তােমার মুখ মহাকাশ! ছুটে যায় হাত-
এই হাত! যে-হাত তােমার দেহে মানচিত্র পড়ে।
প্রতি রাতে, তারপর একা চুপ- স্মৃতির প্রান্তরে
একাকী দাঁড়িয়ে থাকে, আর তুমি আকাশ প্রণীত।
জ্যোৎস্নাঘােয়া শুয়ে থাকো রতিকাল-নক্ষত্র খচিত।
আমিও সমস্ত রাত জেগে থাকি অপলক চোখে-
এমন ভূস্বর্গ আমি দেখেছি যে এই ইহলােকে
আর কোনাে স্বর্গ নয় এ জীবনে আমার প্রার্থনা!
তুমিই সে স্বর্গদেবী, সত্য প্রেমে তুমিই সাধনা ॥
১০.৬.২০১০ কক্সবাজার
৫৫
আলাে না আঁধার! নাকি পর্দাটানা ঘরে আলােছায়া!
তােমার পছন্দ কী যে রতিকালে, আজও বুঝি নাই।
তােমার দুচোখে দেখি বিদ্যুতের চিরে চিরে যাওয়া,
চাবুকের মতাে সে আলােয় আমি সেই দেখা পাই
কামকুঞ্জে যে-দেখা দেখেছে কেউ নারীদের স্তন,
নাভির গভীর গর্ত, যােনিদেশে রক্তিম চেরাই,
প্লাবনের শেষে পাখি— ঘাস ঠোটে তার উড্ডয়ন,
গােপন নিষিক্ত রস, ওতে সিক্ত যাওয়া ও আসাই।
এ সব তােমার যদি মনে হয় ঘাের অশ্লীলতা,
যদি বলাে সাধুভাষ হও তুমি সহবাসকালে-
আমি তাে উপায়হীন, এ কী লজ্জা? তুমিই বলাে তা!
শিখিয়েছে ভালােবাসা, ভালাে ভাষ না হয় শেখালে!
ভাষার সাধ্য কি ধরে শরীরের নগ্ন অনুভব?
হয় তােমারই কাছে নেবাে পাঠ, শিখে নেবাে সব।
১১.৬.২০১০ কক্সবাজার।
৫৬
রাত যত গাঢ় হয় ঘুম তত কেটে যায় চোখে,
অথচ এতটা রাতে সকলেই ঘুমােতে গিয়েছে।
পূর্ণিমা চাঁদের আলাে আমাদের ঘরে এসে ঢােকে,
চোখের তারায় পড়ে, বাড়ে তাপ, বুঝি না কী এ যে!
এ কেমন ইন্দ্রজাল ঘটে যেতে থাকে সারারাত-
তােমার শরীর ক্রমে চাদ হয়ে যেতে থাকে প্রায়,
রুপালি আলাের জলে ধুয়ে ওঠে আমাদের হাত,
শরীরে শরীর এসে সমুদ্রের মতাে আছড়ায়।
বেলাভূমে একে যায় সঙ্গমের দুর্বোধ্য অক্ষর,
কেবল তােমার মতাে প্রণয়ীরা পেতে পারে পাঠ।
শরীরের পাঠশালে বসে থাকে পণ্ডিতপ্রবর—
যেন বেত হাতে করে; খুলে যায় দরােজার পাট।
তােমার শীকার ওঠে, ভেসে যাই যােনির যে-জলে—
কবি তাকে মন্দাকিনি নয় কিন্তু মহানন্দা বলে ।
১২.৬.২০১০ চট্টগ্রাম
৫৭
তারপরে পাশ ফিরে শােবাে আমি সেই বান্দা নই!
উত্তাল নদী ও আছে বৃষ্টিজল নিক্ষেপের তাড়া;
নদীতে পাহাড়ি ঢল যতক্ষণ আছে থই থই
তােমার নৌকোয় আমি, লক্ষ্য পথে রতি-ধ্রুবতারা।
অতএব তৈরি থেকো, আমি দ্যাখাে আমার উত্থানে,
শয্যার চাদর পিষ্ট হতে থাক তােমার মুঠিতে,
ঝর্ণার তুমুল জল বহে যাক তােমার উদ্যানে
চাদের দুধের ধারা ঝরে যেন স্তনের দুটিতে।
এবং সচ্ছল থেকে অবিরাম মধু সৃজনের,
মন্থনে বিরতিহীন নারী হয়ে ওঠো প্রিয়তমা,
ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় থেকো সেই চরমক্ষণের
যখন তােমার দেহে দেবাে আমি রাজস্বের জমা।
কিন্তু কী অবােধ আমি, তুমি দেখি আরাে দীর্ঘক্ষণা—
যুদ্ধ শেষ তবু যুদ্ধে বলাে তুমি আবার এসাে না!
১৩.৬.২০১০ ঢাকা
৫৮
এ কেমন রাত এই- সারারাত- ভাের হয়ে যায়-
চোখ বুজে আসে তবু শেষ নেই এখনাে খেলায়!
সােনার পুতুল হাতে ধরে আছাে, যেন এ পুতুল
তােমারই দেহের বটে, আমারই তা বলা বড় ভুল।
নাচাও ফেরাও তুমি, তাকে দাও মাঝে মধ্যে চুমাে।
তুমি তাে শােনাে না কথা, জেগে থাকো, যত বলি ঘুমােও ।
হলাে তাে অনেক রতি, ঘুম কেন আসছে না চোখে?
তুমি বলাে, একটু আদর আরাে কিছুক্ষণ ওকে!
এইভাবে সেই কোন সন্ধ্যা থেকে তুমি আর আমি।
অনেক হয়েছে, মেয়ে, ভাের হলাে, এইবার নামি!
থেমে গেছে নক্ষত্রের টিপিটিপি চাঁদের ভ্রমণ-
লংকায় এ যেন রাত, নিদ্রাহীন এখনাে রাবণ
যখন সীতাকে নিয়ে ফিরে গেছে অযযাধ্যায় রাম-
আমিও সে অধরার স্বপ্ন ধরে ঘুমােত গেলাম ॥
১৫-১৬.৬.২০১০ ঢাকা
৫৯
সােনালি ত্রিভূজ যাকে বলে থাকে মাদক ব্যাপারী
সেই দূরপ্রাচ্যে আমি সাধুশীল কখনাে যাইনি।
তােমার জঘন দেশে ত্রিভূজের খোঁজে এ বেচারী!
সেখানে মাদক আছে, কিন্তু চোরাচালানে যাইনি।
একমাত্র ওই ছাড়া! প্রতিরাতে আমি যে-ত্রিভূজে
নত হই, সীমান্তের অন্ধকার ভেতরে দাঁড়াই,
তারপর অধিগম্যতার ঝোঁকে চোখ আসে বুজে,
কেননা নির্বিঘ্ন গতি, চালানের শুল্ক পেয়ে যাই
তােমার শরীর থেকে, চুম্বনের ওষ্ঠ্য ও জিহ্বায়।
আমার বাণিজ্যে কোনাে অসাধুতা তিলমাত্র নাই-
মাদকে মদির হয়ে পড়ে থাকি তােমার শয্যায়,
যেন এ সীমান্তপারে কোনাে এক গােপন সরাই।
চালান নিশ্চিত হলে ব্যাপারীরা মাতে পানাহারে।
আমিও মাতাল হই- যােনিকেশ গাঢ় গন্ধ ছাড়ে ॥
১৯.৬.২০১০ ঢাকা
৬০
তুমি তাে আমাকে জানাে, আর আমি তােমাকেও জানি-
যখন সঙ্গত হই শয্যাদেশে তােমার শরীরে
তখন যে-ঢেউ ওঠে পৃথিবীর সমুদ্র গভীরে,
দিগন্তের রেখা মুছে দিতে থাকে নােনা নীল পানি।
মনে হয় আর কিছু নেই এই বিপুল ভূভাগে,
শুধু এক উতরােল ঢেউ আর ধ্বনি প্রতিধ্বনি।
সমুহ সুখের দিকে ঝুঁকে পড়ি দু’জন তখনি,
যুবতী আঁকড়ে ধরাে তুমি এই প্রেমিক যুবাকে।
যেন জন্ম নিতে চাও মৃত্যুময় পৃথিবীতে ফের,
তােমার যৌবনকাল পেতে চায় অমরত্ব, আর
আমিও ঠোটের পাত্র করে তুলি অমৃত আধার,
শরীরে শরীর তাই! মথিত কী চেষ্টা প্রবেশের!
কখনাে তা সাধ্য হয়, কখনাে তা পশে ব্যর্থতায়-
আমার এ ভিন্ন দেহে প্রেম তবু পতাকা ওড়ায় ॥
২৯.৬.২০১০ ঢাকা
৬১
তুমি যে ভূবন ভেঙে ডেকে নাও আমাকে ভেতরে,
ভূবনের সেই লাল দীপ্তি আমি ভুলতে পারিনি।
গােধুলির অন্ধকারে পাখি তুমি আকাশচারিনী-
আমি তাে মর্ত্যের লােক! পাবাে আমি তােমাকে কী করে?
তােমার নীড়ের খোঁজ পেয়েছে যে দুরন্ত বালক—
যখন ফিরেছাে নীড়ে, ফিরে দ্যাখাে তার দুষ্টমতি,
তােমাকে নির্বাণ দিতে মেনে নেয় নিজেরই সে ক্ষতি,
তারপরও তুমি তাকে দান করাে রঙিন পালক।
সে পালক এমনই যে তার তীব্র বর্ণের ছটায়।
অন্ধ হয়ে যায় চোখ, তবু দৃষ্টিপথে পড়ে তার
তােমার উজ্জ্বল বিভা– ওতেই যা বিপদ ঘটায়!
অবিরাম খেলা চলে ভালােবাসা ভালােবাসবার।
লাল হয়ে আসে পথ, গােলাপের মতাে সুবাসিত!
এতটা সুন্দর তুমি, আগে আমি কই!– জানিনি তাে ॥
৩০.৬.২০১০ নিউইয়র্কের পথে
৬২
আমি তাে বিস্ময় মানি, এত রূপ হয় বুঝি কারাে?
ম্লান হয়ে যায় চাঁদ, বাগানের ফুল ঝরে পড়ে,
মাছের রুপালি পেট নীল হয় নদীর ভেতরে,
মধুও তেমন আর নয় স্বাদু নয় কিছু গাঢ়।
তােমার চুম্বনে লালা টেনে নিই যখন জিহ্বায়,
যখন জঘনে হানা দিতে থাকি রতি-দস্যুতায়
তখন যে-অপরূপ লাল পাপড়ি ধীরে খুলে যায়,
তখন রাত্রির বুক পূর্ণিমায় যায় ভেসে যায়।
এমন ভাসানে তুমি আর আমি নিত্য ভেসে যাই,
তােমাকে বৈঠার ঘায়ে ভেঙে চলি শয্যার নদীতে-
এমন যাত্রা তাে আমি জানি নাই আমার অতীতে-
তােমারই নৌকোয় আমি যমুনার গ্রামে পৌছে যাই।
সেই যে যমুনা তীরে রাধা আর কৃষ্ণের বিলাস-
সেখানে আমার ধটি খসে পড়ে! তুমিও নিলাজ!
৩০.৬.২০১০ দুবাই
৬৩
অতলান্ত নামে এক সমুদ্রের নােনা নীল জলে
এখন নেমেছি আমি, দাঁড়িয়েছি রক্তিম প্রত্যুষে
করজোড়ে, এ জল তােমারই জল, গঙুষে গঙুষে
পান করে নেবাে আমি মিশে যাবাে তােমার ধবলে।
সেই যে ধবল বর্ণ ফুটে ওঠে রতির বিলাসে
যখন নিজেকে তুমি করে তােলাে প্রাচীন জাহাজ-
আমি তাকে এই দূর বিদেশেও দেখে নিই আজ,
কীভাবে আমার কাছে স্মৃতিময় রতি হয়ে আসে।
যদিও অনেক দূরে আমাদের দূরত্ব অনেক,
মাঝে শুধু লবণের জল গােলা সমুদ্র দুস্তর,
তবুও এমন মনে হয় যেন লগ্ন পরষ্পর
শয্যায় দু’জনে, আর ধাতু থেকে স্বর্ণের নিষেক!
এভাবেই পেয়ে যাই দূরে থেকে কাছে তােমাকেই-
তােমার স্মৃতির চাদ, দেখি তার কোনাে অস্ত নেই ॥
২.৭.২০১০ নিউইয়র্ক
৬৪
সেদিন সমুদ্র নীল, ঢেউগুলাে শাদা শাদা ফুল,
আকাশে গাঙচিল ওড়ে, বাতাসে কী সঙ্গীতের স্বর।
অকস্মাৎ উঠে এলে তুমি মেয়ে নােনা ভেজা চুল,
কাঁধে চাঁদ, অমৃতের কুম্ভ দুটি, রক্তিম কোটর।
অথচ সেসব নয়- দুটি ঠোটে কী যে ছিলাে কথা,
ঈষৎ বিযুক্ত ছিলাে যেন এক মন্ত্র উচ্চারণে।
আমি যে মরণশীল, আমিও যে পাবাে অমরতা-
আমাকে সে পাঠ দেবে, জন্ম নিলে তাই এ ভূবনে।
একটি জীবন গেলাে, আজও আমি অপেক্ষায় আছি
কখন সে ঠোট থেকে শব্দগুলাে উচ্চারিত হয়;
তুমুল সমুদ্রে নৌকো, ছিন্ন পাল, যতদিন বাঁচি
সে মন্ত্র শােনার জন্যে ভেসে আমি থাকবাে নিশ্চয়।
যদি দয়া হয়, মেয়ে, মন্ত্র দাও, অথবা মৃত্যুই-
অন্তত এটুকু যেন কবরেও তােমাকেই চুই ॥
৭.৭.২০১০ লন্ডন
৬৫
ফিরে যাবাে তােমার বিতানে আমি তােমার গােলাপে,
তােমার নাভির নিচে এক মুঠো মেঘের ভেতরে,
তরল হীরের মতাে ঝর্ণাজলে, রতির প্রলাপে,
চিতার উরুর চাপে, ফিরে যাবাে রক্তিম শেকড়ে।
মুঠির ভেতরে মুঠি, আঙুলের কঠিন নিগড়ে,
স্তনের কোমল কাঁটা, নিতম্বের প্রদেশ দুটিতে;
ফিরে এলে মনে হয় এতদিন ছিলাম কী করে
যখন তােমাকে ফেলে চলে যাই সুদীর্ঘ ছুটিতে।
ছুটি কি মােটেই ছিলাে? সারাক্ষণ তুমি-তুমিময়-
তােমার সুঘ্রাণ আমি দূরপাল্লা ট্রেনেও পেয়েছি,
রাতের নক্ষত্র আর মেঘ ছিড়ে সূর্যের উদয়-
প্রতিটি আলােয় আমি তােমারই তাে সুনাম গেয়েছি।।
যে-তুমি আমাকে দিলে ভালােবাসা নামে মন্ত্রপাঠ-
ভিকিরি হঠাৎ জেগে দেখেছিলাে এখন সম্রাট!
১৪.৭.২০১০ লন্ডন
৬৬
আকাশে কী মেঘ আজ! বাতাসে কী শীতের চাবুক!
ঘরের ভেতরে ঠাণ্ডা, করতল হিম হয়ে আছে।
স্থির হয়ে আছে পাতা আমাদের রােপিত সে গাছে।
হয় কেটে যাক মেঘ, নয়তাে সে অঝােরে নামুক।
আমি জ্বেলে নেবাে চুল্লি, এই শীতে হাত নেবাে সেঁকে।
জ্বেলেছি আগুন ঘরে, শিখা যেই উঠেছে লাফিয়ে
শীতার্ত হৃদয়ে তুমি অকস্মাৎ নামলে দাপিয়ে-
মুহূর্তে বিহ্বল আমি অপরূপ সেই মূর্তি দেখে।
সেই নগ্নতায় তুমি!- যাকে আমি বলেছি আগেও
চিতার পেটের মতাে মসৃণ কোমল, আর উষ্ণতায়
পৃথিবীর সব অগ্নি তার কাছে পরাজয় পায়,
স্তনের উচ্চতা দেখে হিমালয়?- নতমুখ সেও!
নামুক শীতের ছুরি, বৃষ্টি হােক, ঘরে আমি একা-
রতির স্মৃতির তাপে হতে থাক হিমদেহ সেঁকা ॥
১৫.৭.২০১০ লন্ডন
৬৭
বােতামের ঘরে হাত, কামিজের পিঠের বােতাম
এক দুই তিন চার একে একে মুক্ত করি সব-
তােমার শরীরে আজ শুরু হবে রতির উৎসব,
তুমি তাে নর্তকী হবে- যদি আমি নর্তক হতাম!
তেমন যেমন হলে জমে ওঠে যুগল নৃত্যটি,
মুহূর্তে সৃজিত হয় মঞ্চ আর যাদুর-
ঝলক তােমার উরুর দিকে দুটি চোখ থাকে অপলক,
কিন্তু আমি দ্যাখাে তুমি কীরকম আনাড়ি ভৃত্যটি-
শুধু চেয়ে থাকা আর পান করা দেহের ছবিটি-
এদিকে উত্তাপ বাড়ে, সানুদেশে অগ্নি ওঠে জেগে;
সাধ নাই সরে যাই, সম্মােহিত দাবানল দেখে;
এমন নাকাল দেখে আকাশেরও তারা মিটিমিটি।
হঠাৎ ঝাপিয়ে তুমি বুকে পড়ে বলল- দেরি কিসে?
নৃত্যের মহড়া ভুলে তৎক্ষণাৎ দেহে যাই মিশে ॥
২৫.৭.২০১০ ঢাকা
৬৮
কে বলে ক্লান্তির কথা? তারা সব জাহান্নামে যাক!
এসাে দেখি, আবার সঙ্গত হই, চুমাে দাও দিকি,
বুকে টেনে নাও, পর্দা জানালায় খােলা পড়ে থাক—
তােমার চোখের মতাে নক্ষত্রের আলাে ঝিকিমিকি।
এমন পূর্ণিমা রাত, তার চেয়ে বেশি জ্যোৎস্না ওই
তােমার বিথর দেহে প্রতি স্বেদবিন্দুতে হীরক-
প্রতিটি চুম্বনে দাও দীপ্তিকণা তুমি থইথই,
স্বর্গের দরােজা খােলাে, বন্ধ করে রেখাে না কীলক।
তুমি হেসে বলে ওঠো, এত স্বাদ স্বেদের বিন্দুতে!
এত যে তৃষ্ণার ঠোটে তুলে নিচ্ছাে তবু তৃষাতুর?
তােমার মন্থনে আমি পরিণত অপার সিন্ধুতে-
উদ্দাম অরণ্য ভাঙে ধাবমান হরিণের খুর।
জোৎস্নায় হরিণ এসে জলপান করেছিলাে ঝিলে।
আমিও এসেছি দ্যাখাে জল তুমি!– যদি ডাক দিলে ।
২৬.৭.২০১০ ঢাকা
৬৯
তােমার ভেতরে তুমি- সেই তুমি! -কোথায় যে আছাে?
উত্তল স্তনে কি তুমি? সানুদেশে নাভির গভীরে?
যােনির লবণ জলে? কামনায় প্লাবিত শরীরে?
এত যে সন্ধান করি রতিকালে পাই না কদাচ!
তােমার প্রত্নের খোজে ফিরে ফিরে এত বারবার
রতির শয্যায় আসা, বস্ত্র খুলে দেখার তাড়না-
তুমি তাে তবুও দূর, কাছে তুমি আসতে পারাে না?
হতে কি পারাে না তুমি ধরা ছোঁয়া অবাধ অপার?
কোথাও সওদা খুঁজে পাই না তাে, খালি হাতে ফিরি—
এত যে মােহর গুনে চলি আমি, ভাঙি অলিগলি,
এত যে শরীর ভাঙি, এত যে ভ্রমণ করে চলি,
রতির তুমুল শেষে পড়ে থাকি বিষন্ন বিচ্ছিরি।
কেননা শরীরে নেই তােমার সে তুমি যে স্বর্গের-
যেন লাশ আমি এক ব্যবছিন্ন নির্জন মর্গের ॥
২৯.৭.২০১০ ঢাকা
৭০
আমার জন্মের রাতে ছিলাে কোন্ নক্ষত্র আকাশে?
গণনায় উত্তরআষাঢ় সেই নক্ষত্রের নাম।
জ্যোতিষী বলেন ওটি দুর্বিনীত, চেপে ধরে ত্রাসে—
সংসার উচ্ছন্নে যায়- স্মিতমুখে সবই শুনলাম।
স্মিত আমি, ভীত নই, কেননা সে গণনায় মােটে
এ কথা আসেনি, দেবী, তুমি এসে সমুখে দাঁড়াবে।
তােমার দীপ্তির কণা লক্ষকোটি অন্ধকারে ফোটে,
আমার আকাশ হয় রাজবেশ, তুমি তা পরাবে
আমার গরীব দেহে, স্নান তুমি করাবে ঝর্ণায়
যে-জল তােমার দেহে কামনায় উৎসারিত হয়-
মাথায় মুকুট দেবে আমাকে যে, তাতে শােভা পায়
তােমার প্রেমের সত্য, রত্নমণি, বস্তুত হৃদয়।
হৃদয় দিয়েছাে তুমি, তাই মিথ্যে নক্ষত্র প্রভাব।
তুমি যদি শৈবলিনী আমি তবে তােমার প্রতাপ ॥
২.৮.২০১০ ঢাকা
৭১
অন্ধকারে ঝিকিমিকি শরীরের জোনাকি সকল ।
মনে হয় অন্ধকার। তার মুখ! দেখিনি কখনাে।
পর্যটন শেষে যদি রতিক্লান্ত তৃষ্ণার্ত তখনাে।
এতটা বিজয়ী কাম, তার কাছে সকলই বিফল।
তৃষ্ণার এমন তীব্র কালাহারি কখনাে জানিনি—
যতদিন দেখিনি নারীর মুখ, যাকে বলি নারী।
লু-এর কবলে মরু, তারই মধ্যে দিতে হয় পাড়ি-
দিয়েছি তাে– কিছু তার লিখে যাই রাতের কাহিনী।
আমি তাকে সর্বনামে সম্বােধন অনেক করেছি,
এখন সে ‘তুমি আমি তুমিময় অনুভবে রাখি,
একটি সােনার দাড়ে বসে আছে অপরূপ পাখি-
যা বলে বলুক লােকে, সত্যাসত্যে অনেক মরেছি।
এবং বেঁচেছি প্রেমে— তার প্রেমে- তােমারই তাে প্রেমে।
যদিও বাসর শেষ, তবু চাওয়া গেলাে না তাে থেমে ॥
৩.৮.২০১০ কলকাতার পথে