বিপন্ন বাসর – আজিজুর রহমান আজিজ

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…..প্যাকেটটি খুলে বের করে দেখতে থাকে কামিজ সেটটি । জিন্সের প্যান্ট এমনকি বক্ষবন্ধনীও একে একে খুলে ফেলে । আকাশের মত উন্মুক্ত হয় সে । তারপর সেলোয়ার কামিজ পরে গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে ডাইনে বায়ে পিছন ফিরে দেখতে থাকে নিজেকে কেমন মানিয়েছে । আজ তার মনে হচ্ছে তার বুকটি অনেক ভরাট হয়েছে । কামিজ ফেটে যেনো বেরিয়ে আসতে চায় সব । ওড়না আজ তাকে পড়তে হবে । নিজের যৌবন নিজেই গ্লাসে দেখে অবাক হয়। এতোটি বড় হয়েছে সে ভাবেনি কখনো । বিপাশাকে দাঁড় করাতে গিয়ে নিজের শরীরের সীমান্ত খুঁজে দেখার সময় পায়নি সেলিনা ।…..

…..বাসায় ফিরে ফারুকের যেনো আর কিছু ভাল লাগছে না । এ সময়টা তার ঘুমাবার । সে ঘুমাতে চেষ্টা করে । নাহ্, পারে না। বার বার করে শাহানার নিষ্পায় ছবিটি মনের ভেতরে দোল খেয়ে যায় । সেই নিস্পলক চোখে সাগরের গভীরতা নিয়ে তাকিয়ে থাকা শাহানা যেনো কত কথা বলতে চায় ফারুকের সাথে। কল্পনায় শাহানার শরীর, জীবন যৌবনব্যাপী বিচরণ করে ফেরে ফারুক। আজ গাড়ী থেকে নামবার সময় সেলিনার বুকে তার হাতের ছোঁয়া লেগেছিল একান্তই অসাবধানতা বশতঃ সেলিনার বুকটা বেশ ভরাট। বেশ উচুঁ, আকর্ষণীয়। ওর চালচলন আধুনিক কেতাদুরস্ত স্মার্ট । শাহানা সেলিনা আর নাদিয়া ফারুককে এখন একই সীমান্তে এনে দাঁড় করায় । …..

…..নাদিয়া সেদিন যে পরম তৃপ্তিতে শুধু চোখ বুজে ফারুককে গভীরভাবে জড়িয়ে তার ভিতরে হারিয়ে গিয়েছিল । নাদিয়া আরো কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল । কিন্তু নাহ, ফারুক তাতে সাড়া না দিয়ে শুধু বলেছিল –ওসব হয়ে গেলে তোমার প্রতি আমার আকর্ষণটা কমে যাবে । আগে বিয়ে হোক সারাটি জীবন তো তোমার জন্যেই আমি প্রতিটি মুহূর্ত, সুখে কি দুঃখে কাটিয়ে দেবো । কিন্তু নাদিয়া বলেছিল ছি: দুষ্ট কোথাকার । আমি কি ওসব বলেছি নাকি। জবাবে ফারুক বলেছিল ওসব কি বলতে হয় । জেনে নিতে হয় বলেই ফারুক সেদিন নাদিয়াকে আরো গাঢ় ভাবে অনুভবে দিশেহারা করে তুলেছিল। নাদিয়ার বিশাল বিত্তবান বুক ফারুকের বুকে যেন নিষ্পেষিত হয়ে গিয়েছিল । আর নাদিয়াও স্থির থাকতে পারেনি । দু’জনেই দু’জনকে পান করেছিল । এমন ঘটনা এরপর বহুবার ঘটেছে । এসব কথা ভেবে ফারুক আরো অস্থির হয়। আজ সেই নাদিয়া কোথায় ।…..

…..ফারুকের বেশ মনে আছে । সেই কবেকার কথা । তবুও বেশ স্পষ্ট, জীবন্ত হয়ে আছে । গ্রীষ্মের দাবদাহে সবাই অতিষ্ট । নাদিয়া আর ফারুক ভার্সিটির ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে দূরে, বহুদুরে হারিয়ে গিয়েছিল । শহরের সবুজ বনানী ঘেরা পার্কে নয় আরো দূরে । বিন্দু বিন্দু বাতাসের জন্যে শান্তির সন্ধানে। দরদর করে ঘাম বইছিল নাদিয়ার শরীরে । গায়ের জামা ভিজে ভেতরের সংক্ষিপ্ত জামা স্পষ্ট বেরিয়ে এসেছিল । শাড়ির আঁচলে বুঝি ঢেকে রাখা যায় না । ফারুক নিজের ছোট তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়েছিল তার শরীর, মুখ, এমনকি এক সময় বুকের ভেতরটা পর্যন্ত । হাতে অনুভব করেছিল নদিয়ার যৌবন, নাদিয়ার গোপন ভূবন । সেই নাদিয়াই তাকে অবজ্ঞা করতে পারলো!….

…..রাত দশটার ভয়েস অব আমেরিকার নিউজের শেষ বুলেটিন শুনে কাত হয়ে শুয়ে পরে ফারুক । রোজ রাতে সেলিনাই দরজা জানালা বন্ধ করে। আজ সে ভুলে যায় ওসব করতে । গভীর ঘুমে যখন সে মগ্ন তার মনে হলো তার পাশেই শুয়ে আছে সেলিনা । সেলিনা যে নীলগিরি তার মনে একটিবারও উদয় হয়নি । ফারুক জেগে ওঠে । ডিমলাইটের আলোতে দেখতে পায় শাহানা বিবস্ত্রা হয়ে শুয়ে আছে। ফারুক চঞ্চল হয় । ন্যায়, অন্যায়, নীতি আদর্শ ক্ষনিকের জন্যে হারিয়ে যায় তার কছে থেকে । সে হাত বাড়াতেই শাহানা ফারুকের বুকের লুটিয়ে পড়ে । একান্ত গভীরভাবে । ফারুকও আকন্ঠ পান করে শাহানার সব কিছু । মাথার ঘন কালো চুল থেকে শরীরের সমগ্র সীমানা দু’হাতে মেপে নেয় । তারপর কখন আরো গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ে মেনে নেই । হঠাৎ মসজিদের আজানে ঘুম ভাংগে ফারুকের । পাশ ফিরে দেখে কেউ নেই । দরজাটি খোলা । পাশে পড়ে রয়েছে বক্ষবন্ধনী । ফারুক উঠে পরে । ডিম লাইট নিভিয়ে ফ্লোরে সেন্স লাইট অন করে ।
স্বামী স্ত্রীর সাথে যা যা ঘটে সবই ঘটে গেছে শাহানার সাথে। বিয়ের পরে সেলিনার সাথে যা হয়েছে সবই তো হয়ে গেছে এ রাতে। সে ওঠে দাঁড়ায় । এক পা দু’পা করে দরজা গলিয়ে ড্রইং রুমের দিকে যায় । আবছা আলোতে দেখতে পায় শাহানা সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে চলে যাচ্ছে ।…..

…..সেই দুর্ঘটনা রাতের পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে । না, ফারুক নিঃশ্চিন্ত । জানাজানি হয়নি, আর শাহানার বিপদের সময় কেটে গেছে। ওদের প্রিয়ড ঠিক একই সময়ে । সেলিনার আর শাহানার শাহানা সেটা আঁচ করেই বোধ হয় আগের চেয়ে অনেক বেশী প্রাণবন্ত, স্বাভাবিক । সেলিনার আর ফারুকের বিয়ের দিন যেমন ছিল ঠিক তেমনি। সেলিনার মনে একটিবারও অন্য কিছু ভীড় করেনি, না কোন সন্দেহের না অস্বাভাবিক কিছু ।
,
কিন্তু ফারুকের মনে সেই যে দুর্ঘটনার বীজ জন্ম নিয়েছে তার থেকে যেন মুক্তি পাচ্ছে না সে । মাঝে মঝেই হঠাৎ করে নীরব হয়ে যায় ফারুক । তাছাড়া সেলিনা আর শাহানার মাঝে সুখের ব্যবধান সন্ধান করে ফারুক । সেদিন দুর্ঘটনার রাতে শাহানার কাছে সে যে তৃপ্তি, আনন্দ, সুখ পেয়েছে সেই তুলনায় সেলিনা যেন মান।
ভার্সিটিতে থাকতে বন্ধুদের কাছে শুনেছে বোবা, বধির, কালা, এরা একদিকে প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদিকে তারা অস্বাভাবিকভাবে পারংগম অধিক পটু। ভালবাসা, আবেগ, জীবন, যৌবনাবেগ তাদের নাকি অফুরন্ত । ভীষণ সহযোগী- যোগিনী । বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে নাকি এটা বেশী প্রযোজ্য । হয়তো সে জন্যেই শাহানার কাছে সে বেশী কিছু পেয়েছে, যা সেলিনা দিতে পারেনি । …..

…..ইচ্ছে করেই সে দরজাটা এমন ভাবে আগলে দেয় যেন বুঝায় যায় ভেতর থেকে বন্ধ । অথচ বাইরে থেকে কেউ পুষ করলেই খুলে যাবে । তার চোখে ঘুম আসে না । ডিম লাইট নিভিয়ে দেয় । গভীর ঘুমের ভান করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে ।
দেয়াল ঘড়িতে রাত বারটা বাজার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পায় ফারুক। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দটি কানে ভেসে আসে । তার শরীরে শিহরণ জাগে । আবার ভয় ভয় ভাবের উদয় হয় ।
হ্যাঁ, যে ঘরে ঢুকছে সে আবার অতি সযত্মে দরজাটা ভেতর দিয়ে বন্ধ করে দেয় । দক্ষিণ পাশের দরজাটা আধো খোলা রাখে । যেখান দিয়ে পাশের কক্ষে নির্বিঘ্নে যাওয়া যায় । হয়তো একটু বেশী সাবধান হবার জন্যে শাহানার এই পরিকল্পনা ।
কোথাও কোন সাড়া শব্দ নেই । দূর থেকে টলহ পুলিশের হুইশাল ভেসে আসছে । এয়ারকুলার এ তেমন শব্দ নেই । ফারুক যেভাবে শুয়ে ছিল তেমনি ভাবে পড়ে থাকে । সে বুঝতে পারে কে যেন তার পাশে এসে বসলো । সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই । আস্তে আস্তে শাহানা ফারুাকের মাথায় হাত রাখে । তারপর নিজেই চেষ্টা করে ফারুককে তার দিকে ফিরতে চায় । গভীর ঘুমের ভান করে ফারুক অনায়াসে ঘাড় ফিরায়। তারপর কাত হয় । ফারুকের ডানহাতটি শাহানা তার বুকের ভিতর টেনে নেয় । সে বিছানায় শরীর গলিয়ে দেয় । ফারুক আড় চোখে চেয়ে দেখে শাহানা বিবস্ত্রা । তার বুকে যেন বিশাল নতুন জেগে উঠা বালুচর । কোথাও কোন ঝুলঝাল নেই । সে শাহানাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে । শাহানা চোখ বুজে থাকে। আর ফারুক তার পরিকল্পনা অনুসারে দেখতে থাকে শাহানার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ, প্রস্ফুটিত দু’টি গোলাপ । শাহানা থর থর করে কাপছে । কাপছে বুকের ফারুক । নিদারুণ ব্যথায় কি বেদনায় না সুখে বুঝতে পারে না ওরা ।
ফারুক শাহানাকে অধরের সুললিত আঘাতে অধির করে তোলে। বুক, নিতম্ব এমন কি বিশেষ বিশেষ স্থান । আজ যেনো সে প্রতিজ্ঞা করেছে শাহানার সকল পত্রপল্লব পাপড়ি দলিত মথিত করবে ।
এরই মধ্যে দু’বার দেয়াল ঘড়ি ঢং ঢং করে সময় উত্তীর্ণ হবার সংকেত জানিয়ে গেছে । ভোর চারটা । পাঁচটা । সেদিকে খেয়াল নেই ফারুকের । শাহানাকে কিছুতেই সে তার বুক থেকে সরাতে পারছে না । যেনো সে আর শাহানা এক হয়ে গেছে । দু’জনের অংগপ্রতংগ যেনো কোন ঐশ্বরিক খেয়ালে যুক্ত হেয়ে গেছে । এক রকম জোর করেই শাহানাকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে ফারুক উঠে পড়ে । ফ্লোর থেকে শাড়ী আর মেয়েদের বুকে ব্যবহারের জামা গুছিয়ে শাহানার হাতে তুলে দেয়। শাহানা নিথর হয়ে পড়ে আছে। ঘড়ির দিকে ইশারা দিয়ে বুঝায় রাত প্রায় শেষ । নিজের ঘরে যাও।….

…..শাহানার যৌবনের তাড়না যে কত প্রখর তা ভেবে অবাক হয় ফারুক । শাহানা আজ ক’রাত ধরে তাকে যে সুখ দিয়েছে সেলিনা সে তুলনায় শত ভাগের এক ভাগও দিতে পারে নি । সেলিনার বুকটাই তো অত ভরাট নয় । কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে। ওখানে সব আকাঙ্খার ফুলদ্বয় নির্জীব । শাহানা যেন ঝর্ণা আর সেলিনা, মোহনার নদী, স্রোতহীনা ।…..