বিদ্যাসুন্দর – ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর

›› গল্পের অংশ বিশেষ  ›› ১৮+  

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
উৎসঃ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আদি-রসের গল্প
সম্পাদনাঃ সুকান্ত সেনগুপ্ত

……..দুজনের গানে দুজনে মােহিত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করে। প্রেমরসে এবং কামমদে বিদ্যা-সন্দরকে মত্ত দেখে সখীরা শরমে-ত্রাসে শয়ন মন্দির পরিত্যাগ করে চলে যায়।

কামরসে রসিয়া সুন্দরের ‘পরিধানধুতি পড়িছে খসিয়া। বিদ্যাকে চুম্বন করে সুন্দর, তার কুচপদ্মকলি স্পর্শ করতেই পলকে শিউরে ওঠে বিদ্যা। সুন্দর তার পরিধেয় বস্ত্র হরণ করে তাকে নগ্ন করলে বিদ্যা তার প্রিয়ের হাত ধরে বলে, নব-যৌবন জোরের যােগ্য নয়। আজ আমায় ক্ষমা কর, কালকে হবে। কামরণে রণ-পন্ডিত, আমি পীড়িত ‘আমায় করুণা কর। তােমার পায়ে পড়ি, আজ আমায় ছাড়। তুমি জোর করছ, আমি লজ্জায় মরে যাই। পরে ফল ফুটে উঠলেই পুরাে রস পাওয়া যায় কলিকার দলনে কি লাভ। একান্তই যদি থাকতে না পার-পরফল ফুলে কর পান মধু। দেখ আমার স্তনে কি ভাবে তুমি নখের আঁচড় কেটেছ। জায়গাটা লাল হয়ে উঠেছে আর জ্বালা করছে।

সুন্দর বলে, কন্দর্পের পুস্পসরে আমার সারাদেহে জালা ধরেছে। তুমি পদ্ম আর আমি সূর্য। মিথ্যেই ভয় পাচ্ছ। তােমার স্তনরুপ শিবলিঙ্গের শিরে আমার নখের আঁচড় চন্দ্রকলার মতাে শােভা পাচ্ছে। | অতঃপর বিদ্যা আর সুন্দর নিবিড় মিলনের স্বর্গ সুখ অনুভব করে। হৃদয় মিলে যায় হৃদয়ের সনে। রােমাঞ্চ জাগে নিতম্ব আর ধনের উষ্ণকোমল ছোঁয়ায়। দংশই দশন দশন মধরাধর দুই তনু দহে অবলম্বে।” মিলনের সােনাণী আনন্দে সিত হয় উভয়ের দেহ-চুম্বন চতি শীকৃতি শিহরণ কোকিল কুহরে গলায়ে। অবশেষে অলস অবশ হলো তাদের দেহ। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর অচেতন অঙ্গ চেতনা ফিরে পায়। রসবতী বিদ্যা তার পরিধেয় বস্ত্র পরে অনেক পাওয়ার আনন্দ নিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে এল। সখীরা সামনে এলে বিদ্যা খুব লজ্জা পেল। লাজে অবনতমখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে।…….আর প্রতিরাতে বিদ্যা এবং সুন্দর পারস্পরিক সান্নিধ্য উপভােগ করে-অনুভব করে সঙ্গমের অনির্বচনীয় পলক। একদিন লাজলজার মাথা খেয়ে বিদ্যা বিপরীত রঙ্গে (কামােত্তেজিত নায়ক যখন নায়িকাকে আঘাত করে শ্রান্ত হয়ে পড়ে অথচ তার কামােদ্দীপনা থাকে পরে মাত্রায় তখন নায়কের ইচ্ছায় বা অনেক সময় নিজের সতীৱ দেহকামনা চরিতার্থ করার জন্য নায়ককে নীচে রেখে নায়িকা তার ওপরে উঠে সঙ্গমরত হয়-কামশাস্রে একে বলে বিপরীত রতি) মাতল। তার কবরী খসে গেল। ‘ঘন অবিলম্ব নিতম্ব দোলে।’ কামরস-জলধি উথলে উঠল। অধীর হয়ে সে অধর চাপে। রতিশ্রমে বিদ্যার নরম দেহটা ঘামে ভিজে ওঠে। ক্ষণে ক্ষণে রােমাঞ্চিত হচ্ছে সে। মুখে তার শীৎকার ধনি (উদগ্র যৌনসম্ভোগ বাসনায় পীড়িত নায়ক যখন নায়িকাকে আঘাত করে তখন নায়কের আঘাতের প্রত্যুত্তরে নায়িকার রমণকালীন অস্ফুট ধনি)। কাপিয়া কাপিয়া চাপয়ে সখে। অবশেষে রস ক্ষরণ হলাে—দেহ তার নেতিয়ে পড়ে। সুন্দর তখন শয্যা ছেড়ে ওঠে। আহা মরি বলে প্রেয়সীর অধর চুম্বন করে।

প্রত্যহ সম্ভোগহেতু তাকে রাত জাগতে হয় সেজন্য নিঝুম দুপরে দ্বার রুদ্ধ করে বিদ্যা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সখীরা বাইরে ঘুমিয়ে আছে। এদিকে সুন্দর বিদ্যার শয়ন মন্দিরে উপনীত হলাে। প্রমত্ত সুন্দর নিদ্রিতা বিদ্যার সঙ্গে রতিক্রীড়ায় রত হলাে। অলি পদ্মিনী পেলে কি আর ফিরে যেতে চায়। বিদ্যার নিদ্রার ঘোর কাটেনা। কামরসে হয়ে ভাের স্বপ্নবােধে বাড়ে অনুরাগ। নিদ্রার মাঝে যে সুখ পাওয়া যায়, জাগ্রত অবস্থায় কি ততটা সুখ মেলে। রতিরঙ্গ সাঙ্গ হলে সুপ্তথিতা বিদ্যা বাইরে এসে দেখে আকাশে তখনও দপদপ করছে মধ্যাহ্ন সব। ভাবে দিবসে এ কি হলাে। সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। অবশেষে ঘরে সুন্দরকে দেখতে পেয়ে তার খুব রাগ হলাে। বলে সে, দিনে নিদ্রার ঘোরে আমাকে আলুথালু পেয়ে এই যে কুকর্মটি করলে এর জন্যে আমি অপমানিত বােধ করছি। নিদারুণ পুরুষের মন। ঘৃণা লজ্জা-দয়া-ধর্মবােধ কিছুই তার নেই। অতঃপর মান ভাঙানাের চেষ্টা করে সুন্দর।

দিবা সম্ভােগে  ক্রোধ ছিল বিদ্যার। একদিন সে ভাবে এর শোধ নিতে হবে। দিনের বেলা সুন্দর তার বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। বিদ্যা সুড়ঙ্গ পথে তার প্রিয়তমের ঘরে এলো। নিদ্রায় অবশ সুন্দরের কপালে সিদুর আর চন্দনের চিহ্ন রেখে চোখে চুমু দিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেল বিদ্যা। নারীর নরম ছোয়ায় সুন্দরের দিবানিদ্রা টুটে গেল, শিহরিত হলাে তার শরীর। অতঃপর সে বিদ্যার ঘরে গিয়ে দেখে যে সে খাটে বসে দর্পনে মুখ দেখছে। সুন্দরকে দেখে সস্মিত বিদ্যা বলে, ‘প্রিয়তম এস, তােমার কপালে কে আবার সিদুরে-চন্দন দিল। চোখেতেই বা কে দিল পানের পিক। বিশ্বাস না হয় আরশিতে মুখটি একবার দেখ। আয়নায় নিজের মুখ দেখে বিস্মিত হলো সুন্দর। বিদ্যা পুনরায় বলে, ‘হীরা মালিনীর বাড়ি বুঝি দিনের বেলাতেই আজকাল রসের অনুষ্ঠান হয়। আমার বুঝি মধু ফুরিয়েছে, আমি এখন বাসি হয়ে গেছি ? যে পরনারীর মুখেমুখ দেয়, পরের উচ্ছিষ্ট খেতে যার রুচি হয় তাকে যে স্পর্শ করে সে হয় অশচি।

সুন্দর বলল, “প্রিয়ে, কেন আমায় ভৎসনা করছ। তােমার সিদর, তােমার চন্দন, তােমার পানের পিকের দাগ লেগেছে আমার। যতদিন বাঁচব ততদিন এ দাগ আর উঠবে না। অবশেষে কলহান্তে উভয় সঙ্গমরত হলাে।

প্রভাতে হীরার ঘরে চলে যায় সুন্দর। এইভাবে প্রতি রাতে চলে মিলনানুষ্ঠান। সখীরা জানল বিদ্যা ঋতুমতী হয়েছে।

একদিন বিদ্যা সখীকে বলে, আমার একি হলো। লুকিয়ে প্রেম করে কুলকলঙ্কিনী হলাম।’ বিদ্যা গর্ভবতী হলাে-তার উদরুপ আকাশে সুতরুপ চন্দ্রোদয় হয়েছে। পদ্ম মুখে মদলে রজ দরে হয়। ক্ষীণ মাজা দিন পেয়ে দিন দিন উচু হচ্ছে, স্তনবন্ত কৃষ্ণবৃণ ধারণ করল। ……..

Leave a Reply