আশ্চর্য সুন্দর চোখ মেয়েটার। গায়ের রং গোলাপী। সুন্দর পেচিয়ে পর। সিফনে মেয়েটার ফিগার অপূর্ব। ম্যাজেন্ট। কালারের সিফন ব্লাউজটা একই রং-এর। স্লিভলেস ব্লাউজটা মেয়েটার দেহে সেঁটে আছে কবিতার মতো ।
ড্রয়িং রুমে ঢুকে লাল ডিভানে বসে ‘সালেম’ সিগারেটে যখোন জাফর টান দিচ্ছে, মেয়েটি তখোন এলো। ছন্দোময় কবিতার মতো মেয়েটি প্রশ্ন করলো ।
‘আপনিই জাফর সোবহান ?
ধোঁয়ার রিং ছেড়ে উত্তর দিলো জাফর, ‘জি।’
‘মোরশেদ আপনার কথা বলেছে।’-বললে। মেয়েটি। বলতে যেয়ে মৃদু হাসলো সে। জাফর দেখলো, সাদা ঝকঝকে দাঁত, সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো, সমান উচচতায় দৃশ্যমান ।
‘কি খাবেন—হুইস্কি না বিয়ার ?’
মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো ।
‘কোল্ড বিয়ার’–উত্তর দিলো জাফর ।
মেয়েটি উঠলো। ডাইনিং টেবিলটার একদিকে রাখা ফ্রিজিডিয়ার-এর দরোজা খুলে দুটা বিয়ারের টিন বের করে আনলো। জাফরের হাতে একটা টিন দিয়ে নিজে একটা নিয়ে কাছে এসে বসলো ।
সিগারেটটাকে এসট্রেতে রেখে টিনটার মুখটা খুললো জাফর। সমুদ্রের ফেনার মতো সাদা ধবধবে ফেনা বেরুতে লাগলো টিন থেকে। মেয়েটা ইতিমধ্যে অন্য টিনটা খুলে ফেলেছে।
‘চিয়ার্স’, বললো মেয়েটি। ‘চিয়ার্স’—জবাব দিলো জাফর সোবহান ।
বিয়ারের টিনে চুমুক দিয়ে হাসলো জাফর। দরোজাটা বন্ধ করে লাল পর্দাগুলো টেনে টিউব লাইটটা নিভিয়ে দিলো মেয়েটি। জাফরের ডান পাশে একটা ঝুলন্ত বাতি। বেতের ‘সেড্’ পাহারা দিচ্ছে বাতিটাকে। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে জাফর অনেকগুলো সর্পিল রেখার ছায়া দেখতে পেলো ৷
‘গরোম লাগছে?’- আলতো করে জিজ্ঞেস করলো মেয়েটি ।
‘কিছুটা’—রনসন লাইটারে আর একটা সিগ্রেট ধরিয়ে উত্তর দিলে জাফর ।
মেয়েট। আবার উঠলো । সিলিং ফ্যান্টা ‘অন’ করে ‘গ্লো’তে রাখলো ! ফ্রিজিডিয়ার থেকে কতকগুলো কাজ, বাদাম নিয়ে সামনে রেখে বললো- ‘খান।’
বাদাম চিবুতে লাগলে। জাফর। বেশ নরোম লাগছে । মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জাফর ভাবলো, ‘মেয়েটা বোধ হয় বাদামগুলো থেকে আরও নরোম । ‘আপনার নাম ? – জিজ্ঞেস করলো জাফর সোবহান ।
‘নামে কি প্রয়োজন আছে ?’– মৃদু হেসে উত্তর দিলো মেয়েটি।
‘তবুও, সারাটা রাত যখন একসংগে থাকবো, নামটা জানলে ডাকতে ভালো লাগতো।’—বিয়ারের টিনে আর একটা চুমুক দিয়ে বললো জাফর । ‘কনক’—আঁচলটাকে বুকে একটু টেনে উত্তর দিলো মেয়েটি ।
মনে মনে হাসলো জাফর সোবহান। যাক, ‘নামটা মন্দ নয়। অবশ্যি এ হয়ত তার ছদ্ম নাম। আসল নামটা কি হতে পারে? কান্তা, কাজল, কাঞ্চন ?
‘চলুন’ বলে মেয়েটি উঠলো। বেডরুমের দিকে এগুলো সে। মেয়েটির ছন্দায়িত মুভমেন্ট নিয়ে একটা গান বানালে কেমোন হয় ?—মনে মনে চিন্তা করল জাফর।
বেডরুমটাকে আরও ভালো লাগলো জাফরের। সিংগেল দুটো খাটকে জড়ো করে ডাল করে রেখেছে। ফোম ম্যাট্রেস। গোলাপী মখমলের বেড কভারে বিছানাটা সুন্দর লাগছে। বেড সাইড টেবিলে রাখা পিন হোল্ডার-এ কতকগুলো রজনীগন্ধা দাঁড়িয়ে। মুখ নীচু করে ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে করলো জাফরের !
মেয়েটার গায়ের ঘ্রাণ কি রজনীগন্ধার মতো ?—কতোখন নিজ মনে আওড়ালো জাফর। দৃষ্টিটাকে রজনীগন্ধার গুচ্ছ থেকে সরাসরি উপরের দিকে তুলে দেয়াল ঘড়িটাকে দেখলো জাফর । কটা বাজে? দশটা বেজে বিশ —গুণে দেখলো সে।
দেয়াল ঘড়িটার ঠিক নীচে একটা নুড ছবি। কোন এক বিদেশী মেয়ের দুহাতে স্তন দুটো উপরের দিকে তুলে ধরেছে মেয়েটি। নাভীর নীচের স্থান- টুকুর দিকে তাকালে। জাফর। কিছু দেখা যাচ্ছেনা ৷
টুক করে দরোজা বন্ধ করলো কনক। তিনটা বাতি থেকে দুটো নেভালে৷ সে। কম পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে কাছে এসে বললে। ‘রেডি ??
মেয়েটির কণ্ঠস্বর যেন গানের মতো। মৃদু কম্পন অনুভব করলো জাফর । একটা আশ্চর্য সুন্দর মেয়েকে নিয়ে রাত কাটাবো ভেবে আমার যেন কেমোন লাগছে – ভাবলো জাফর সোবহান ।
আঁচলটা ছেড়ে দিলে৷ কনক। ম্যাজেন্টা কালারের ব্লাউজ ও গোলাপী গায়ের রং প্রায় এক হয়ে গেছে দেখছি—ভাবলে। জাফর । ব্লাউজটার পেছনে হাত দিলে৷ মেয়েটি। হুক খুলতে থাকলে৷ এক এক করে। জাফরের দিকে আড় চোখে চেয়ে একটু হাসলো সে। ব্লাউজটা খুলে গেলো। সাদা স্পন্জি ব্রেসিয়ার দেখলো জাফর। মেয়েটার বুকের দিকে তাকিয়ে শিস দিয়ে উঠলো সে ।
কাছে এলো মেয়েটি। ফিক্ করে হেসে বললো – ‘এবার খোলার পালা তোমার।’ জাফরের গালে হাত রাখলো সে। বললো, ‘আমায় দেখে তোমার টেমপারেচার বেড়ে গেছে দেখছি।’
ব্রেসিয়ারের স্ট্র্যাপ খুললো জাফর। ধীরে ধীরে সামনের দিকে টেনে আনিলে৷ সেটা। দুটো নরোম কবুতর যেন উড়ে যেতে চাইলো । আহ্ ! কি নরোম মেয়েটার বুক। কাছে এগিয়ে গেলো জাফর। মেয়েটির গোলাপী
ঠোঁটটাকে নিজের ঠোঁটে টেনে আনলো ।
মানব সৃষ্টির রহস্যের মন্ত্রগুলো এক এক করে আউড়িয়ে যেতে থাকলে৷ জাফর। ম্লান আলোতে মেয়েটার দেহের প্রতিটি বিন্দু গ্রাস করলো সে। আশ্চর্য সুন্দর ভাবে সাড়া দিলো কনক। অবর্ণনীয় আনন্দে দোল খেতে দেখে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো জাফর – ‘মোরশেদ বলছিলো, তুমি বিবাহিতা।’
মেয়েটা কোন উত্তর দিলোনা। ওর মুখটাকে নিজের চোখের তারার কাছে টেনে এনে জাফর আবার বললো, ‘জবাব দিচ্ছ না যে।’
‘কি দেবো ?’– এবার উত্তর দেয় মেয়েটি।
আর একটা চুমু খেলো জাফর । ডান হাতটা মেয়েটার ডান বুকে ঘোরাতে ঘোরাতে বললো, ‘এ পথে নেমেছে। কেন ?
হাসলে৷ কনক। চোখ তুলে তাকালে৷ জাফরের দিকে। থেমে থেমে বললো, ‘আমরা না হলে তোমরা আনন্দ পেতে কোথায় ?
আর কিছু বললোনা জাফর সোবহান । কনককে কাছে টানলো, জীবনকে উপভোগ করতে থাকলে৷ ‘পপ’ মিউজিকের মতো ।
মেয়েটির বুকে মুখ রেখে ঘুমুতে ঘুমুতে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকলো জাফর সোবহান । কিছুক্ষণ বিরতি। তারপরই একটা বীভৎস স্বপ্ন দেখলো সে। দেখলো, অফিস থেকে সে বাসায় ফিরেছে। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে বেড রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই একটা অনুচ্চ কণ্ঠস্বর—’এই, লাগেতো । একটু আস্তে। হাঁ, এবার। বাহ্, কি আনন্দই না লাগছে।’
মাথাটা ঘুরলো জাফরের। বেডরুমের কাছ থেকে সরে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসলো সে। বাড়ীটাতে কেউ নেই দেখছি। আবদুলটা গেলো কোথায় ? বিড় বিড় করে বললো জাফর ।
ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি খেলো জাফর। ভীষণ ক্লান্তি অনুভব করলো সে।
সময় বয়ে গেলো। দরোজা খোলার শব্দ হলে।। বেরিয়ে এলে। একজন। ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালো লোকটা। জাফরকে দেখে চম- কালো সে। দৌড়তে শুরু করলে৷ উল্টো দিকে ।
শিউলি দৌড়ে এলো। বিগ্রস্ত চুল, বিগ্রস্ত দেহ, ব্লাউজটা অগোছালো । জাফরকে দেখে চিৎকার করে পড়ে গেলে। শিউলি ।
জাফর উঠে দাঁড়ালো। টলছে জাফর। হিরোশিমার কোন এক স্থানে আবিষ্কার করলো নিজকে। ভয়াবহ বিধ্বস্ত নগরীর আবর্জনা ফুঁড়ে সে যেন আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু, অন্ধকার ! সব অন্ধকার।
জেগে গেলে৷ জাফর সোবহান। লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়লো সে। ট্রাউ- জারটা টেনে পা গলাতে থাকলো ।
মেয়েটি অবাক। ওদিকে দৃষ্টি নেই জাফরের। মানি ব্যাগ বের করলো জাফর। একশ টাকার পাঁচটা নোট ছুড়ে মারলো মেয়েটার দিকে। তারপর পাগলের মতো বেরিয়ে গেলো ।
বিল্ডিংটা ছেড়ে রাস্তায় দৌড়তে থাকলে৷ জাফর। স্বপ্নের রেশ তখনো তার পিছু পিছু আসছে। হিরোশিমার বিধ্বস্ত অবয়ব তার মনে উঁকি দিতে থাকলো বারবার। পৃথিবীর অগুণতি বিস্রস্ত চেহারা তার মস্তকটাকে ঘোরাতে থাকলো বৃত্তের মতো ৷