ফাঁদ – রূপক সাহা

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…….আচ্ছা, মা শকুন্তলাকে জিজ্ঞাসা করলে কি তা জানা যাবে? নিজেকেই প্রশ্নটা করলেন জেন্টিলি। মেক্সিকান এই মহিলা ছিলেন প্রেমানন্দের সাধনসঙ্গিনী। বয়স মধ্য চল্লিশ। এখনও অসাধারণ সুন্দরী এবং মারাত্মক সেক্সি। পূর্ব জীবনে না কি মা শকুন্তলা একবার মিস মেক্সিকো হয়েছিলেন। তখন নাম ছিল জেনিফার ফার্নান্ডেজ। সিসি টিভির ফুটেজে এই মহিলার ছবি দেখেই আজ দুপুরে জেন্টিলি চমকে উঠেছিলেন। গভীর রাতে এই মা শকুন্তলা প্রেমানন্দের কটেজে গিয়েছিলেন। আশ্রমের রীতি অনুযায়ী, এটা কোনও গর্হিত অপরাধ নয়। ইচ্ছে। হলে সাধনসঙ্গীরা সহবাস করতেই পারেন।……..

……..ওখানে গিয়ে বসলে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। হলঘরে মৃদু স্বরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বাজে। একপ্রান্তে দুটো বিশাল পর্দায় ভিডিও ক্লিপিংস মারফত রিল্যাক্স করার। প্রণালী দেখানাে হয়। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শিথিল করার প্রক্রিয়া। সম্ভোগের আগে শরীরের এনার্জি রিচার্জ করে নেওয়ার উপায় বলে দেওয়া হয়। হলঘরেই যে যাঁর মনােমতাে পার্টনার বেছে নিতে পারেন। রােজ একই পার্টনার বেছে নিতে হবে, তার কোনও মানে নেই। আচার্য স্বরূপানন্দের দর্শন অনুযায়ী, অবদমিত যৌনতা মানুষকে অমানুষ করে তুলছে। তাই অবাধ যৌনতা মানুষকে নির্বাণ লাভের দিকে এগিয়ে দেবে। ভারতীয় যােগীর এই দর্শন সত্যি কি না, তা পরীক্ষা করার জন্যই একদিন ধর্মনগরে হাজির হয়েছিলেন জেন্টিলি।…….

…….মা শকুন্তলার কটেজে যাওয়া ঠিক হবে কী না, জেন্টিলি বুঝতে পারলেন না। আশ্রমে অবশ্য তেমন বিধিনিষেধ কিছু নেই। আশ্রমিকরা পছন্দমতাে পার্টনার। কটেজে নিয়ে গিয়ে রাত্রিবাস করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হল, মা শকুন্তলা ছিলেন প্রেমানন্দের সাধনসঙ্গিনী। চব্বিশ ঘন্টাও কাটেনি, সেই প্রেমানন্দ খুন। হয়েছেন। জেন্টিলি ভেবেছিলেন, সামান্য হলেও শােকের চিহ্ন মা শকুন্তলার মধ্যে দেখতে পাবেন। কিন্তু তার কোনও চিহ্নই দেখতে পাচ্ছেন না। উলটে, মা শকুন্তলা তাকে আহ্বান করছেন কটেজে যেতে। আমন্ত্রণের অন্যতম একটা কারণ পরিষ্কার, যৌন ইচ্ছা মিটিয়ে শান্তির স্বর্গে পৌছনাে। কিন্তু সেজন্য তাকেই মা শকুন্তলা বেছে নিলেন কেন, সেটা জেন্টিলি বুঝতে পারলেন না।……..

………এক একটা করে টুপি মাথায় দিচ্ছেন সত্যানন্দ, আর মেয়েটা ক্লিক ক্লিক করে শাটার টিপছে। সব ছবিই পােট্রেটের জন্য। ক্যামেরার দিকে তাকানাের সময় মেয়েটার দিকে চোখ পড়ে যাচ্ছে বারবার। আর সত্যানন্দের মনে হচ্ছে, সেই একই মুখ! এও সম্ভব? হাইট এক, গায়ের রং, সুডৌল দুটো স্তন, চুল বাধার স্টাইলেও কোনও পার্থক্য নেই। তফাত শুধু পােশাকে। এই মেয়েটির পরনে জিনস আর টপ। আর সে সেজে থাকত শাড়িতে। কে এই মেয়েটা?……..

……..জানালা দিয়ে পড়ন্ত রােদ্দর মুখে এসে পড়ছে। পরদা টেনে দিয়ে জেন্টিলি চোখ বুজলেন। কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি। তার কারণ মা শকুন্তলা ওরফে জেনিফার ফার্নান্ডেজ। কাল রাতে ঘুমােতে যাওয়ার ঠিক আগে দরজায় টকটক শব্দ। দরজা খুলেই তিনি দেখেন জেনি। পরনে সাদা স্বচ্ছ নাইলনের নাইট গাউন। দেখে বােঝা যাচ্ছিল, কোনও অন্তর্বাস নেই। মােহময়ী ভঙ্গিতে বলেছিলেন, “ভিতরে আসতে বলবেন না?’ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে জেন্টিলি বলেছিলেন, “আপনি?

সেই সুযােগে কটেজের ভিতরে ঢুকে জেনি আর কিছু বলার সুযােগ দেননি। মুখটা টেনে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ঠোটে চুমু খেয়েছিলেন। নতুন বিয়ে হওয়া মেয়ের মতাে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। একটানে খুলে ফেলেছিলেন নাইট গাউন। তারপর নগ্ন অবস্থায় দু’হাতে আলিঙ্গন করে কামপীড়িত স্বরে বলেছিলেন, আশ্রমের নিয়ম-কানুনগুলাে কি জানাে না ডিয়ার? প্লিজ আসুন, সারা রাত ধরে আমাকে তৃপ্ত করুন।

শয্যাসঙ্গিনীর আহ্বানে সাড়া না দেওয়া গর্হিত অপরাধ। আশ্রমের নিয়ম-কানুন জেন্টিলি ভালমতাে জানেন। এখানে একটা স্লোগানই আছে, ‘সম্ভোগ টু সমাধি’। আচার্য স্বরূপানন্দের লেখা বইতে একটা চ্যাপ্টারও আছে এ নিয়ে। বলা আছে, যৌনক্রিয়া কোন অপরাধ নয়। বরং যৌনইচ্ছা মেটানােটাই স্বাভাবিক। যৌনতৃপ্তি মানুষকে সাময়িক আনন্দ দেয়। আবার সর্বনাশের পথেও ঠেলে নিয়ে যায়। এই পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার সব ঘটনার পিছনেই থাকে যৌনতৃপ্তি। এই অতৃপ্তি দূর করতে পারলেই পৃথিবীতে শান্তি বলে কিছু থাকবে না। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং বাসযােগ্য হবে। আচার্য স্বরূপানন্দের মতে, যৌনতাকে অবদমিত করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনাে যাবে না। উলটে, চিরন্তন আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষকে একটা যৌন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ধর্মনগরে যাঁরা সন্ন্যাস নেন, কঠোর ভাবে এই প্রক্রিয়া তারা অনুসরণ করেন। যৌনতা নিয়ে জেন্টিলি আশ্রমের যে নিয়ম কানুনের কথা জেনি বলছিলেন, তা পালন করার কথা সন্ন্যাসীদের, অতিথিদের নয়। জেন্টিলি তাই বলেছিলেন, “কোন নিয়ম-কানুনের কথা বলছেন জেনি?

‘দুষ্ট ছেলে। জানেন না বুঝি।’ কথাগুলাে বলেই বিছানায় গিয়ে শুয়েছিলেন জেনি। দু’পা ছড়িয়ে দিয়ে যােনিদ্বার উন্মুক্ত করে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না আমার শরীর ঠান্ডা হয়, ততক্ষণ আপনাকে সঙ্গম করে যেতে হবে।’

কিন্তু পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই বীর্যপাত হয়ে গিয়েছিল জেন্টিলির। জেনির চোখমুখে অতৃপ্তির চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। একটু পরে বুকের উপর উঠে এসেছিলেন জেনি। তারপর চুমু খেয়ে বলেছিলেন, ‘বজোলি মুদ্রার কথা কখনও শুনেছেন জুইসেপ্লে?’

জেন্টিলি বলেছিলেন, ‘কী সেটা? *একটা প্রক্রিয়া, যা তানুসরণ করলে ঘন্টার পর ঘণ্টা আপনি যৌন আনন্দ পেতে পারেন। এই যে পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই আপনার বীর্যপাত হয়ে গেল, তখন সেটা হবে না। বজোলি মুদ্রা অনুশীলন করে প্রেমানন্দ এই ক্ষমতাটা অর্জন করেছিলেন। সারারাত ধরে উনি সঙ্গম করে যেতেন। ওঁকে যারা খুন করেছে, তাদের আমি ক্ষমা করব না।’

জেনি ফের মা সত্যবতীকে গালাগাল দিতে শুরু করবেন। সে সব শুনতে -চাওয়ার জন্য জেন্টিলি জিজ্ঞেস করলেন, ‘বজোলি মুদ্রার প্রক্রিয়াটা কী? | জেনি বলেছিলেন, ‘উঠে লকারের কাছে যান। লকার খুলে দেখবেন, একটা মেডিক্যাল বক্স রয়েছে। তার ভিতর সিসের একটা সরু নল আর গ্লাভস আছে। যান, গিয়ে আগে ওই নল আর গ্লাভসটা নিয়ে আসুন। তারপর হাতে কলমে আপনাকে দেখাব, বজোলি প্রক্রিয়াটা কী? | কৌতুহলী হয়ে লকার থেকে সেই সিসের নল আর রবারের পাতলা গ্লাভস বের করে এনেছিলেন জেন্টিলি। সেই গ্লাভস হাতে নিয়ে জেনি বলেছিলেন,

‘সিসের এই নলটা চোদ্দো আঙুল লম্বা। বারাে আঙুল পর্যন্ত এই নলটা আপনার লিঙ্গনালির ভিতর ঢােকাতে হবে। শুয়ে পড়ুন। আজ আপনার প্রথম দিন। এই কাজটা আমিই আজ করে দিচ্ছি।’ বলেই জেনি গ্লাভস পরতে শুরু করেছিলেন। | অনিচ্ছা সত্ত্বেও জেন্টিলি ডিভানে তখন শুয়ে পড়েন। মনে আশঙ্কা নিয়ে, সিসের নল ঢােকানাের সময় যদি যৌনাঙ্গে লাগে! সেটা আন্দাজ করেই জেনি বললেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার হাতে জাদু আছে জুইসেপ্পে। নল ঢােকানাের সময় আপনি টেরও পাবেন না। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে। আপনি চোখ বুজে শুয়ে থাকুন।’

সত্যিই জেন্টিলি টেরও পাননি, লিঙ্গের ভিতর নলটা ঢােকার সময়। চোখ খুলেই তিনি দেখেন, মাত্র দুআঙুল পরিমাণ নল বাইরে বেরিয়ে আছে। জেনি তখন বলেছিলেন, “উঠে বসুন জুইসেপ্পে। মুখ নীচু করে এই নলে ফু দিতে থাকুন। তা হলে একটা অদ্ভুত সেনসেশন টের পাবেন। আমি না বলা পর্যন্ত আপনি থামবেন না।’

জেনির কথামতাে জেন্টিলি নলের বেরিয়ে থাকা অংশ মুখে দিয়ে, ফু দিতে শুরু করেন। লিঙ্গটা তখন উর্ধ্বমুখী হয়ে ছিল। অণ্ডকোষের ভেতর একটা অদ্ভুত সেনসেশন হচ্ছিল। সেই ভাললাগাটা অনুভব করতে করতে একটা সময় জেন্টিলি বলেছিলেন, এই প্রক্রিয়াটা কতদিন ধরে চালাতে হবে জেনি?”

চৌষট্টি দিন। বায়ু যাতায়াত করলে, আপনার লিঙ্গনালি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটা বড্রোলি মুদ্রার প্রথম পর্ব। আরও তিনটে পর্ব আছে। দ্বিতীয় পর্বে লিঙ্গনালি দিয়ে আপনাকে জল ঢােকাতে ও বের করতে হবে। তৃতীয় পর্বে দুধ। আর চতুর্থ পর্বে মধু। এই প্রক্রিয়ার পর দেখবেন, আপনি বিশেষ একটা ক্ষমতা অর্জন করেছেন। আপনার বীর্য আর নিম্নমুখী হচ্ছে না। তখন আপনার সাধনসঙ্গিনীকে সারারাত তৃপ্ত করতে পারছেন। সাধনসঙ্গিনীর রেতঃপাত হয়েই যাচ্ছে, অথচ বীর্যপাত না করেও আপনি অসীম আনন্দ পাচ্ছেন।’

অনেকক্ষণ ধরে ফু-দেওয়া পর্বটি চলার পর, সিসের নলটা বের করে এনেছিল জেনি। তারপরই লিঙ্গ ফের কঠিন হয়ে গিয়েছিল। জেন্টিলি অবাক হয়ে লক্ষ করেছিলেন, জেনির সঙ্গে দ্বিতীয়বার সঙ্গম করার মেয়াদটা দীর্ঘতর হয়েছিল।

অন্তত মিনিট পঁচিশ তাে হবেই। হিন্দুদের যােগশাস্ত্রে কত অদ্ভুত প্রক্রিয়াই না আছে! বাসে পুরুলিয়ার দিকে যাওয়ার সময়, তখনও জেনির কোমল দেহর স্পর্শ টের পাচ্ছিলেন জেন্টিলি।…….

…….জয়া বলছিল, সম্ভব। এক মিনিটেই প্রেমে পড়া সম্ভব। বলেই নিজের জীবনের গল্প শুনিয়েছিল জয়া। শিকার পরবের দিন অযােধ্যা পাহাড়ে গিয়েছিল নার্সিংহােমের কয়েকজন ডাক্তার আর নার্স। সেখানেই ওর সঙ্গে প্রথম আলাপ ডাক্তার মুখার্জির। সেই রাত থেকেই ওদের মধ্যে গভীর প্রেম। সেদিনই ওদের সঙ্গম হয়েছিল। তার অকপট বর্ণনা শুনে সারা শরীর শিরশির করে উঠেছিল জাহ্নবীর। প্রথম আলাপের দিনই কী করে ও সহবাসে রাজি হল ? জানতে চাওয়ায় জয়া বলেছিল, শিকার পরবের দিন আপত্তির কোনও প্রশ্ন নেই। কোনও মেয়ের যদি কোনও পুরুষকে ভাল লাগে, সে সহবাস করতেই পারে। যদি গর্ভবতী হয়ে যায়? তখন বিয়ের কথা আসবে।

ধ্যাৎ, কী আজেবাজে সব ভাবছে। নীলের কথা মন থেকে সরিয়ে দিয়ে জাহ্নবী কুসির দিকে তাকাল। দিনকে দিন সুন্দরী হচ্ছে মেয়েটা। অনেকদিন পর। ওকে দেখে চটকাতে ইচ্ছে করছে। তাই হাত বাড়িয়ে দিয়ে ও বলল, ‘আয়, আমার কাছে আয় সােনা। কতদিন তােকে আদর করি না, বল তাে? এখানে এসে জানলা দিয়ে দ্যাখ। অনেক নতুন নতুন পাখি দেখতে পাবি। কুসি বলল, না পিসি, তােমার কাছে যাব না। বাবা বারণ করে দিয়েছে।……….

……..আমরা না কি উদ্দাম যৌনতাকে প্রশ্রয় দিই। একেবারে বাজে কথা। আমরা। শেখাই, যৌনতা হল মানুষের একমাত্র এনার্জি। যৌনতার কারণেই তার জন্ম। যৌনতার মাঝে তার বেড়ে ওঠা। যৌনতা পাপ নয়, এটা তার এনার্জি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই এনার্জি সে ব্যবহার করবে কিসের জন্য? অসংখ্য সন্তান উৎপাদন করে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে, দেশকে সে আরও গরিব করে দেবে? না। কি ধ্যান সহযােগে এই এনার্জিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়ে উচ্চমার্গের মানুষ। হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে? উচ্চমার্গে পৌঁছনাের পর মানুষ যৌনতা নিয়ে তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা একটা পরীক্ষিত সত্য। আশ্রমেই দেখেছি, উচ্চমার্গে পৌঁছনাের পর মানুষ লােকহিতকর কাজে আত্মনিয়ােগ করে।……..

Leave a Reply