ফর অ্যাডালস ওনলি – শচীন ভৌমিক

›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

মদিরা

…….ভূতটা এসে ছেলেদের নার্ভ আর মেয়েদের কার্ভ নিয়ে পিংপং খেলা শুরু করে, আর জাদুকর মশাই মনটাকে নিয়ে……

……সে বয়েসে আমার স্বপ্ন ছিল উত্তমকুমারের বাড়িতে, ক্যাডিলাক গাড়িতে ও সুচিত্রা সেনের শাড়িতে ঢােকার। স্বপ্ন ছিল হেমন্ত মুখার্জির কণ্ঠ, তারাশঙ্করের চরণ, রবিশঙ্করের অঙ্গুলি, নেহেরুর হস্ত, সােফিয়া লােরেনের স্তন, এলিজাবেথ টেলরের নিতম্ব স্পর্শ করার।…..

……সে এক অদ্ভুত বয়েস। সব যৌবনবতী মেয়েই যেন বাসনার সােনা, সব নারীর জানুসন্ধির ক্ষেত্রই যেন তীর্থক্ষেত্রু….

……..আরেকটি-স্বামী স্ত্রী বাড়িতে ককটেল পার্টি দিয়েছিল। সারারাত হৈ-হুল্লোড় গেছে। পরদিন স্বামী স্ত্রীকে ডেকে প্রশ্ন করল, লিলি, একটা কথা জিজ্ঞেস করছি কিছু মনে কর না। ড্রিঙ্কট্রিঙ্কের পর তাে হুশ থাকে না। লাইব্রেরী ঘরের সােফার পিছনে কাল রাতে যে মেয়েটির সঙ্গে সহবাস করেছি সেটা তুমিই ছিলে তাে? | স্ত্রী চিন্তিত মুখে জবাব দিল, টাইমটা কখন বল তােরাতের। গােড়ার দিকে, না শেষ রাতে, না মাঝ রাতে ?…….

…….ড্রিংকস যৌন উত্তেজনা বাড়ায় ও যৌন সম্ভোগকে দীর্ঘতর করে। ভুল এটা। সামান্য নেশা যৌনক্রীড়ায় ফলদায়ক হয়, কেননা স্নায়ুর শ্লথচারিতায় যৌন অনুভূতি দীর্ঘ হয়। না হলেও, মনের জোর ও সাহস বেড়ে যায় বলে যৌনভীতি কমে যায়। কিন্তু অধিক মদ্যপান যৌনশক্তিকে সত্যি বলতে, অপহরণ করে। রাজা মহারাজা থেকে জমিদাররা নেশার পর যৌনক্ষেত্রে এত বিফল হতেন যে ডাক্তার বদ্যি হাকিমী থেকে তুতা কুসংস্কারের প্রচুর কাণ্ড-কারখানা করেও তারা হৃত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারেন নি। ইংরেজীতে বলে Rich drinkers are poor lovers…………

স্ট্রিকিং

…….এর কিছুদিন পর দুটি সুশ্রী মেয়ে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্রিকিং করল। তপ্ত ইতিহাসের নগ্ন পাতায়, না স্যরি, নগ্ন ইতিহাসের তপ্ত পাতায় এ দুজনের নাম উল্লেখ থাকবে। কেননা এরাই পাইওনিয়ার। মেয়ে স্বাধীনতার অগ্রদূতী বা বলা যায় নগ্নদূতী।…..

…….লণ্ডনের এক মদের দোকানের মালিক বিজ্ঞাপন দিয়েছিল যে কোন মেয়ে যদি ন্যাংটো হয়ে আসে তাকে এক বােতল বিয়ার ফ্রি দেওয়া হবে। একটি মেয়ে উদোম হয়ে দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে ফ্রি বােতল সংগ্রহ করে দৌড়ে গাড়িতে চেপে চলে যায়। খদ্দেররা মদ না খেয়েই নিশ্চয়ই মাতাল হয়ে উঠেছিল।…..

………স্ট্রিকিং-এর এই হিড়িকের আগে আমেরিকায় Mooning বলে একটা fad চালু হয়েছিল। হঠাৎ জনসমক্ষে পালুন খুলে পাছা দেখানাে হচ্ছে এই খেলার নাম। নিতম্ব প্রদর্শন। নিতম্ব যেহেতু পূর্ণচন্দ্র স্বরূপ গােলাকৃতি তাই এই পাগলামীর নাম দেওয়া হয়েছিল Mooning। শিশুসুলভ অন্যকে অপমান করার এই নিতম্ব প্রদর্শন প্রতিবাদ করার এক অভিনব প্রক্রিয়া। God father ছবির শুটিঙের সময় মার্লন ব্ৰাণ্ডো স্টুডিওতে, রাস্তায়, আউটডাের লােকেসনে প্রচুর mooning করেছেন। অন্যান্য অভিনেতা অভিনেত্রীরাও বাদ যান নি ! Last Tango in Paris ছবির শেষ পার্টি দৃশ্যে মার্লন ব্ৰাণ্ডোর সাজেসান অনুযায়ীই বার্তোলুসি নায়ক ও নায়িকার প্যান্ট খুলে পাছা দেখিয়ে পার্টির গণমান্য লোকদের চোখ কপালে তােলার দৃশ্যটি চিত্রায়িত করেছেন Mooning-এর ঢেউ শেষ হতেই শুরু হয়েছে Streaking-এর ঝড়।………

……কিন্তু না আমেরিকা বা জার্মান, না লেডী গােডিভা বা সফোক্লেস এই নগ্ন আন্দোলনের পুরােধা। এই আন্দোলনের জন্মস্থান হল আমাদের প্রাচীন ভারতবর্ষ। ভিরমী খাবেন না। এটাই ফ্যাক্ট।

আজ থেকে চার হাজার বৎসর আগে মহারাজা জনক তৎকালীন বিখ্যাত ঋষি, মুনি ও মহাজ্ঞানীদের এক সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সে জ্ঞানভারতীর সভায় মহাজ্ঞানেশ্বরী গার্গী এসেছিলেন সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে। বিদ্যার, জ্ঞানের এত বড় বিদগ্ধ নারী নগ্ন হয়ে আসায় অন্যান্য মুনি ঋষিরা অবাক। কয়েকজন গার্গীর এই নির্লজ্জতার সমালােচনা করায় গার্গী জবাব দিয়েছিলেন, আপনারা সত্যিকারের বেদান্তের অর্থ বােঝেন না। সত্যিকারের বৈদান্তিক কখনও নগ্নদেহে শুধু দেহের নগ্নতা দেখতেন না, দেখতে পেতেন দেহাতীত সে মহাসত্যকে, সে মহাজ্ঞানকে, সে মহাবিদ্যাকে—যে শক্তির অন্য নাম হল ঈশ্বর। দেহ তত অনিত্য অসত্য, যা সত্য তা অমর, তা দেহাতীত। ঋষিরা স্বভাবতই চুপ। জ্ঞানেশ্বর ঋষিদের কি ঋষি কাপুরের মত ব্যবহার শােভা পায় ? গার্গী তাে আর আজকের ডিম্পল নয়। তিনি ছিলেন এম্পল ! এম্পল অফ ক্লেস নয়, এম্পল অফ নলেজ।

এছাড়া শ্রীকৃষ্ণ যখন গােপীদের বস্ত্র হরণ করে বৃন্দাবনে নিউডিস্ট কলােনী স্থাপন করেছিলেন সেটা কি বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভের জার্মানদের অনেক অনেক আগে নয়? বলুন? জার্মানদের এই নগ্নতাবাদের দর্শনের অনেক আগে কি মহাজ্ঞানী মহাবীর জৈনধর্মের দিগম্বর সাধু সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন নি? জৈনধর্মের এই সম্প্রদায়কে বলা হয় “দিগম্বরপ। আকাশই বস্তু যাদের, অর্থাৎ দিগম্বর থাকাই যাদের ধর্ম অর্থাৎ নগ্নতাবাদী। তাহলে? এসব কি আজকের কথা ?

সেদিন কোপেনহেগেনে যৌন স্বাধীনতা জোয়ারে নারী পুরুষের নানাবিধ যৌন সঙ্গমের ছবির বই বাজারে বেরিয়েছে। কত বিভিন্ন আসন, কত বিচিত্র বিকারগ্রস্ত ভঙ্গী! কিন্তু আমাদের খজুরাহাে আর কোণারকের মিথুনভঙ্গী ও প্রক্রিয়ার বিভিন্নতার কাছে এসব তাে পান্তাভাত। কোণারকে যা বহুকাল আগে জনসমক্ষে প্রকট ছিল, সেটা মাত্র কাল কোপেনহেগেনে প্রচারিত হচ্ছে !…….

…..একটি নিউডিট কলােনী দেখেছি আমি। সব স্বপ্ন তাতে ধুলো হয়ে গেল। যা ভাবছেন তার উল্টো। ছেলেরা কেউই এপােলাে নয়, মেয়েরাও ৩৬ ২২ ৩৬”নন। ভেবেছিলাম ব্যাকুয়েল ওয়েলচ, সােফিয়া লােরেন, ব্রিজিট বার্ডটের ছড়াছড়ি হবে। তার বদলে ঝুলন্ত স্তন, দুরন্ত নিতম্ব ও সঙ্গে দুলন্ত ভুড়ি নিয়ে যেসব নগ্ন বামার ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তারা দ্বিপদী হাতি। স্বপ্নে কা সাথী কদাপি নয়। তাই বলছি নগ্ন আন্দোলনের মুশকিলও আছে। নগ্নিকারা মােটই সুন্দরী নন। সুন্দরীরা বেশি নগ্ন হতে চান না বােধহয় । ফিগার ভাল যাদের তারা বেশি ইগার নন।…….

…..নিউডিজমের গুণ অনেক। বয়ঃসন্ধির ছেলেদের পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য নিয়ে দুর্ভাবনায় মুখ ব্রনে ভরে যায়, মেয়েদের দুর্ভাবনা হল স্তনের উচ্চতা নিয়ে। দেহমুখী সাহিত্য ও দেহধর্মী বিজ্ঞাপন দেখে এই অর্থহীন মনােবিকার। নগ্নতার স্বাধীনতা থাকলে ওই সব বিকার লােপ পাবে। দেখুন রীতিমত কঠিন যুক্তি। দর্শনকাম বা প্রদর্শনকাতরতারও উপশম হবে। কি ঠিক কিনা?……..

সফর সংকীর্তন

…….শুনুন তাহলে অশ্লীল ছায়াছবির জগতে আলােড়ন তুলছে যে ছবি সেটার নাম হল ‘ডিপ থোট। লেস ভেগাস শহরে আমি ও রাজকাপুর (রাজকাপুরও তখন সেখানে বেড়াচ্ছিলেন) সে ছবিটি দেখেছি। ছবিটির প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘ফেলাসিও’ বা লিঙ্গলেহন । নায়িকা লিণ্ডা লাভলেস্ তার কাম-বিদ্যার যে পরিচয় দিয়েছেন তাতে সেও আমেরিকার এক অবিস্মরণীয় দ্রষ্টব্য বলে উল্লেখযােগ্য থাকবে। সেজন্যেই বলেছি আমেরিকা উচ্চতম প্রাসাদাবলী ও গভীর কণ্ঠনলীর জন্যে বিখ্যাত ! ‘ডিপ থে’ আমেরিকার পর্নোগ্রাফীর জগতে সবচেয়ে বড় হিট ছবি। লিণ্ডা লাভলেস্ হলেন রাকুয়েল ওয়েলচ, অফ পর্নোমুভি। মানে উনি একজন সেলিব্রিটি।……

এনার্জি

………আমি বুঝতে পারছি ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’ ছবি হিসেবে সারা জগতে এত হৈচৈ কেন ফেলে দিয়েছে। কারণ সােজা। এই প্রথম মােশন পিকচার তৈরি হয়েছে যাতে নায়িকার ইমোশন নয়, মােশন দেখানাে হয়েছে ছবিতে নায়িকার নগ্ন পাছা মানে bum দেখিয়ে পরিচালক বলছেন যে আগামীকালের নরনারী বামপন্থী হবে না, হবে bumপন্থী। Assই হবে আমাদের Asset, আমাদের backই হবে আমাদের bank, প্রতি মানুষের বস্তিদেশে রয়েছে এক একটি শক্তির ঐরাবত, রয়েছে হস্তী। পাঁকেই রয়েছে পদ্ম।………..

Leave a Reply