নারী – হুমায়ুন আজাদ

›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

নারী, ও তার বিধাতা : পুরুষ

………নারী কাকে বলে? দ্য বােভােয়ার (১৯৪৯, ৩৫) বলেছেন, এর উত্তরে একধরনের পুরুষ বলে, নারী হচ্ছে জরায়ু, ডিম্বকোষ; নারী হচ্ছে স্ত্রীলােক।’ পুরুষ এমন অসংখ্য সংজ্ঞা দেয় নারীর, যার সবটাই নিন্দাসূচক। কোনাে কোনাে নারীকে দেখিয়ে তারা বলে, সে নারী নয় যদিও তার জরায়ু-স্তন-যােনি সবই রয়েছে। ওই নারীর মধ্যে তারা দেখতে পায় নারীত্বের অভাব, চিরন্তন নারীত্বের উনতা। তারা চায় নারী হবে নারী, থাকবে নারী, আর হয়ে উঠবে নারী। পুরুষ চায় শাশ্বতী নারী, যার কোনাে অস্তিত্ব নেই।…..

………নারীমাত্রই পুরুষের কাছে সামান্যা : জরায়ু-যােনি-স্তনের সমষ্টি, নিজের লিঙ্গে ও যৌনতায় বন্দী পশু। পুরুষ ও স্ত্রী বা নর ও নারী ব্যাকরণে দুটি সুষম রূপ বােঝালেও জীবনে বােঝায় দুটি ভিন্ন মেরু। পুরুষ ও নারী নির্দেশ করে দ্বিমুখি বৈপরীত্য……….

……..পুরুষ তাকে মনে করে যৌনসামগ্রী। পুরুষের কাছে নারী হচ্ছে যােনি, যৌনবস্তু, কামের পরিতৃপ্তি; এর বেশি নয়, কম নয়। পুরুষ নারীকে নির্দেশ করে, নারীর স্বাতন্ত্র্য বােঝায়। | নিজের সাথে তুলনা করে। পুরুষ হচ্ছে অনিবার্য, অপরিহার্য, অবধারিত; আর নারী ।…..

লৈঙ্গিক রাজনীতি

………নারীপুরুষের অন্তরঙ্গতম সম্পর্ক হচ্ছে সঙ্গম, যাতে একজনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আরেকজন। সব কিছুই রাজনীতি ব’লে যারা মনে করেন, তারাও মাংসের ভেতরে মাংসের অনুপ্রবেশকে রাজনীতি বলে মনে করেন না। সঙ্গমক্রিয়াকে দ্য বােভােয়ার (১৯৪, ৫৩-৫৪) বর্ণনা করেছেন এভাবে : নারী যখন ইচ্ছুকও হয়, তখনাে পুরুষই নারীকে অধিকার করে, নারী অধিকৃত হয়। এটা হয় আক্ষরিকার্থেই, বিশেষ কোনাে প্রত্যঙ্গের সাহায্যে বা বলপ্রয়ােগে পুরুষ নারীকে কাবু করে, তাকে ঠিকমতাে আটকে ধরে; পুরুষই সম্পন্ন করে সঙ্গমের প্রয়ােজনীয় অঙ্গসঞ্চালন।…..

…….আদিম সমাজে নারীর যােনিকে মনে করা হয় একটি ক্ষত। তারা বিশ্বাস করে ওই স্থানে কোনাে পাখি বা সাপ গর্ত খুঁড়ে ক্ষত সৃষ্টি করে গেছে; তাই মাসে মাসে ওই ঘা থেকে রক্ত চোয়ায় । ফ্রয়েডীয়রাও মনে করেন নারী হচ্ছে খােজা। অর্থাৎ পুরুষতন্ত্র নারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে দেখে ঘৃণার চোখে; কিন্তু নিজের অঙ্গটিকে দেখে গর্ব ও গৌরবের চোখে।……..

দেবী ও দানবী

………..নারীর দেবী ও দানবী রূপ, নারীর প্রতি পুরুষের ভীতি ও কামনা প্রকাশ পায়। কুমারীত্ব সম্পর্কে পুরুষের আগ্রহ ও আতঙ্কে। কুমারী, অক্ষত যােনি, পুরুষ কামনা করে, ভয়ও পায়। কুমারী পুরুষের চোখে এক চরম রহস্য। পুরুষের কাছে কুমারী, কুমারীর দেহ, তার রন্ধ্রের অদৃশ্য আবরণঝিল্লি একই সাথে ভীতিকর, ও পরম কামনার বস্তু। পুরুষ যখন মনে করে নারীর শক্তি তাকে পরাভূত করবে, সে হেরে যাবে ওই রহস্যের কাছে, তখন সে ভয় পায়; যখন পুরুষ ভাবে ওই শক্তিকে সে জয় করবে, আধিপত্য বিস্তার করবে ওই রহস্যের ওপর, তখন সে দাবি করে অক্ষত কুমারী । আদিম সমাজে যেখানে নারীশক্তি প্রবল, সেখানে পুরুষ আতঙ্কে থাকে; তাই সেখানে বিয়ের আগের রাত্রেই কনের কুমারীত্ব মােচন করে শক্তিমান কেউ, পুরােহিত বা সমাজপতি। মার্কো পলাে জানিয়েছে যে তিব্বতি পুরুষেরা কেউ কুমারী নারী বিয়ে করতে রাজি নয়। কুমারীর সতীচ্ছদ ছিন্ন করাকে মনে করা হয় এক অতীন্দ্রিয় ভীতির কাজ, যা সকলের। পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অনেক সমাজে মনে করা হয় যে যােনিতে লুকিয়ে রয়েছে। সাপ, যা পর্দা হেঁড়ার সাথেসাথে দংশন করবে পুরুষাঙ্গে; কোনাে কোনাে সমাজে মনে করা হয় যে রক্তপাতের ফলে হানি ঘটবে পুরুষের বীর্যের। ধাতু বা বীর্যকে সব সমাজেই অত্যন্ত দামি মনে করা হয়। পুরুষ এতাে যে ভয় পায় তা নারীকে দানবী রূপে দেখারই ফল। অনেক সমাজে সতীচ্ছদ ছেড়ারই প্রশ্ন ওঠে না; সেখানে মেয়েরা কুমারী থাকে শুধু শিশুকালে। শৈশব থেকেই তারা সঙ্গমের অনুমতি পায়, সঙ্গম সেখানে বাল্যক্রীড়া। কোনাে কোনাে সমাজে মা, বড়াে বােন, ধাত্রী মেয়েদের সতীচ্ছদ ছিন্ন। করে। কোনাে কোনাে সমাজে পুরুষেরা জোর করে মেয়েদের গ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক বা অন্য কোনাে উপায়ে ছিন্ন করে কুমারীর আবরণ। কোনােকোনাে সমাজে মেয়েদের তুলে দেয়া হয় অচেনা পুরুষদের হাতে, যারা মােচন করে তাদের কুমারীত্ব। ওই সমাজ বিশ্বাস করে অচেনা পুরুষদের এতে কোনাে ক্ষতি হবে না, বা হ’লেও কোনাে ক্ষতি নেই। কোনাে কোনাে সমাজে পুরােহিত বা সমাজপতি বা গ্রাম্য চিকিৎসক বিয়ের আগের রাতে মােচন করে কুমারীত্ব। মালাবার উপকূলে বিয়ের আগের রাতে কুমারীত্ব মােচনের দায়িত্ব পায় ব্রাহ্মণেরা; তারা এমনভাবে মােচন করে কুমারীর কুমারীত্ব যেনাে একটি অসম্ভব কঠিন কাজ সম্পন্ন করছে। এ-কাজের জন্যে তারা মােটা পারিশ্রমিকও নিয়ে থাকে। সব সমাজেই পবিত্র কাজ অপবিত্রের করা। নিষেধ: স্বামী পবিত্র নয়, শক্তিমান নয়; সমাজপতি বা পুরােহিত শক্তিমান বা পবিত্র, তাই তাদের পক্ষেই ওই কাজ সম্ভব। সামােয়ায় রীতি হচ্ছে স্বামী তার স্ত্রীর সতীচ্ছদ স্বাভাবিক উপায়ে ছিন্ন করবে, তবে বীর্যপাত করতে পারবে না; কেননা তাতে যােনির রক্তে দূষিত হবে তার বীর্য । দানবীর নানা ভয়ে ভরে আছে পুরুষতন্ত্রের মন।……

……….ভারতীয় ত্রিকালদর্শীরা নারীর দানবীরূপ আঁকায় ও ছন্দোবদ্ধ ধিক্কার রচনায় পরিচয় দিয়েছেন লােকোত্তর প্রতিভার। ওই ঋষিরা লকলকে কামুক ও নারীবিদ্বেষী। নারী দেখলেই লক্ষ বছরের ধ্যান আবর্জনার মতাে ছুঁড়ে ফেলে তারা অসুস্থের মতাে উত্তেজিত হন, প্রকাশ্যে বা কুয়াশা ছড়িয়ে ধর্ষণ-রমণ করেন, যােনি না পেলে যেখানে সেখানে বীর্যপাত ক’রে শান্তি পান; এবং রচনা করেন শ্লোকের পর শ্লোক নারীনিন্দা। তাঁদের। শ্রেষ্ঠ ধ্যান হচ্ছে কামধ্যান; আর তারা প্রায় সবাই ছিলেন অকালস্থলগ্রস্ত, যার পরিচয় পাওয়া যায় তাদের সামান্য উত্তেজনায় রতিস্থলনের মধ্যে। তাদের চোখে নারী। কামদানবী। নারীনিন্দায় বৌদ্ধহিন্দু সবাই সমান। জাতক, পঞ্চতন্ত্র, কথাসরিৎসাগর, রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন পুরাণ, মনুসংহিতা ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ভরে আছে নারীর দানবীরূপে ও নারীবিদ্বেষে; মুক্তকণ্ঠ ঋষিদের রচিত অশ্লীল উপাখ্যান ও শ্লোকে। জাতকের গল্পে ফিরে ফিরে আসে কামচণ্ডালী নারীরা, যারা কাম ছাড়া কোনাে নীতি জানে না । জাতকের একটি গল্পে আছে নারীরা বুড়ী জরতী হয়ে গেলেও থেকে যায়। কামদাসী দানবী। বােধিসত্ত্বের মায়ের বয়স একশাে বিশ, যাকে বােধিসত্ত্ব নিজে সেবাযত্ন করে। ওই মাও কামার্ত হয়ে ওঠে এক যুবকের জন্যে এবং উদ্যত হয় নিজের পুত্রকে হত্যা করতে। আরেকটি গল্পে রাজা শত্রু দমনের জন্যে রাজধানী ছেড়ে দূরে যায়; এবং যাওয়ার পথেপথে এক-এক ক’রে বত্রিশজন দূত পাঠায় রানীর কুশল জানার। জন্যে। রানী বত্রিশজনের সাথেই লিপ্ত হয় কামে। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাজা রানীর কুশল জানার জন্যে পাঠায় আবার বত্রিশজন দূত; রানী তাদের সাথেও কামে জড়িত হয়। এমনই দানবিক কামক্ষুধা নারীদের! নারীদের ক্ষুধার নানা উপাখ্যান রয়েছে…….

……..আর্য ঋষিদের চোখে নারী হচ্ছে সমস্ত অশুভ ও দোষের সমষ্টি। নারীকে দেখেছেন তারা একটি বিশাল অতৃপ্ত যােনিরূপে; নারী হচ্ছে আপাদমস্তক যােনি, যে কাম ছাড়া আর কোনাে সুখ বা নীতি জানে না। মনু (মনুসংহিতা, ৯:১৪; দ্র মুরারিমােহন (১৯৮৫)] বলেছেন : …….তারা রূপ বিচার করে না, বয়সও বিচার করে না; সুরূপ বা কুরূপ যাই হােক, পুরুষ পেলেই তারা সদ্যোগের জন্যে অধীর হয়ে ওঠে। পরের শ্লোকেই [৯:১৫] এ-মহর্ষি বলেছেন: পুরুষ দেখামাত্রই তারা ভােগে মেতে ওঠে বলে তারা চঞ্চলচিত্ত ও স্নেহশূন্য; তাই সুরক্ষিত রাখা হ’লেও তারা স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।

মহাভারত-এ (অনুশাসনপর্ব : ৩৮] বলা হয়েছে নারী জন্মদুশ্চরিত্র; নারীরা শুধু পরপুরুষের অভাব ও পরিজনের ভয়ে ভর্তার বশীভূত হয়ে থাকে। তার কামক্ষুধার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় আর সব কিছু। মহাভারতের (অনুশাসনপর্ব : ১৯। ঋষি বলেছেন :

স্ত্রীলােক স্বভাবতই রতিপ্রিয়। পুরুষসংসর্গ তাদের যেমন প্রীতিকর, অগ্নি বরুণ প্রভৃতি দেবতারাও তাদের কাছে ততাে প্রীতিকর নয়। সমস্ত স্ত্রীলােকের মাঝে পতিব্রতা চোখে পড়ে মাত্র এক-আধটি। যখন তাদের কামপ্রবৃত্তি প্রবুদ্ধ হয়, তখন তারা পিতা, মাতা, ভ্রাতা, কর্তা, পুত্র ও দেবরের কিছুমাত্র। অপেক্ষা করে না। নিজের অভিলাষ পূর্ণ করতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকে।……..

…………তারা অনায়াসে লজ্জা ছেড়ে পরপুরুষদের সাথে সংসর্গ করে। পুরুষ পরস্ত্রীসম্ভোগে অভিলাষী হয়ে তার কাছে গিয়ে অল্প চাটুবাক্য প্রয়ােগ করলেই সে তখনি তার প্রতি অনুরক্ত হয় (অনুশাসনপর্ব : ৩৮। দেবীভাগবত-এ [৯:১৮) বলা হয়েছে :

স্ত্রীজাতি স্বভাবত নিরন্তর অভিলাষিণী-কামচারিণী, কামের আধারস্বরূপা ও মনােহারিণী হয়ে থাকে। তারা অন্তরের কামলালসা ছলক্রমে গােপন করে। নারী প্রকাশ্যে অতি লজ্জাশীলা কিন্তু গােপনে কাকে পেলে যেনাে তাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়। রমণী কোপশীলা, কলহের অঙ্গুর ও মৈথুনভাবে সর্বদা মানিনী, বহু সদ্যোগে ভীতা ও অল্পসদ্যোগে অত্যন্ত দুঃখিতা হয়। স্ত্রীজাতি সুমিষ্টান্ন ও সুশীতল জলের চেয়েও সুন্দর সুরসিক গুণবান ও মনােহর যুবাপুরুষকে সর্বদা মনেমনে কামনা করে। তারা। রতিদাতা পুরুষকে নিজের পুত্রের থেকেও বেশি স্নেহ করে এবং সম্ভোগ পারদর্শী পুরুষই তাদের প্রাণাধিক প্রিয়তম।

এসব শ্লোক থেকে ধারণা করতে পারি এ-শ্লোকারেরা কী ভয়াবহ কামদানবীরূপে দেখতেন ও কতােটা অবিশ্বাস করতেন নারীকে। তাই ঋষিগুরুরা কোথাও গেলে উদ্বিগ্ন থাকতেন ভার্যাদের রন্ধ্র সম্পর্কে, প্রহরী হিশেবে রেখে যেতেন শিষ্যদের; এবং শিষ্যদের সম্পর্কেও নিশ্চিতৰােধ করতেন না। তাই বিধান দেন যে পঞ্চমহাপাতকের একটি হচ্ছে গুরুপত্নীতে উপগমন। ঋষি দেবীভাগবত, ৯:১] আরাে বলেছেন :

কামিনীগণ জলেীকার মতাে সতত পুরুষের রক্ত পান করে থাকে, মূর্থেরা তা বুঝতে পারে না: কেননা তারা নারীদের হাবভাবে মােহিত হয়ে পড়ে। পুরুষ যাকে কান্তা মনে করে, সে-কাপ্তা।

সুখসল্লোগ দিয়ে বীর্য, এবং কুটিল প্রেমালাপে মন ও ধন সবই হরণ করে। তাই নারীর মতাে চোর আর কে আছে? রমণীরা কখনাে সুখের নয়, তারা শুধু দুঃখেরই কারণ।

আরেকজন বলেছেন, রমণীরা যে-পর্যন্ত কোনাে নির্জন স্থান না পায় এবং কোনাে পুরুষের সাথে বিশেষ আলাপ করতে না পারে, সে-পর্যন্ত স্ত্রীলােকের সতীত্ব থাকে…………

নারীজাতিয় ঐতিহাসিক মহাপরাজয়

……..আধুনিক গবেষণা দেখিয়েছে সহজাত ও জৈবিকভাবে নারী পুরুষের থেকে অনেক বেশি উপভােগ করে কাম; পৌনপুনিকতায় ও পুলকানুভূতিতে নারী অনেক বেশি সমর্থ পুরুষের থেকে। মাস্টারস ও জনসন সাড়াজাগানাে মানুষের যৌন সাড়া (১৯৬৬) গ্রন্থে। দেখিয়েছেন নারী খুব দ্রুত একের পর এক পুলক অনুভব করতে পারে, যা পুরুষ কখনাে পারে না। নারীর পুলক সম্পর্কে ধারণাও বদলে গেছে একালে। আগে শুধু রটিকেই সুখের খনি মনে করা হতাে; কিন্তু নারীর আসল সুখের বেদি ভগাঙ্কুর। মানুষের অন্য কামাঙ্গগুলোর আরাে কাজ আছে, কিন্তু নারীরই শুধু রয়েছে একটি বিশেষ প্রত্যঙ্গ যার একমাত্র কাজ যৌনসুখ অনুভব। সেটি ভগাঙ্কুর। পুরুষের এমন কোনাে প্রত্যঙ্গ নেই।………

নারী, তার লিঙ্গ ও শরীর

………নারীর যৌনপ্রত্যঙ্গগুলাে ঢাকা রহস্যে আর নিষেধে। নারীর শরীর যেনাে আকর্ষণীয় রহস্যময় ভীতিকর দুর্গ, যার সংগঠন সে নিজে জানে না; জানাও নিষেধ। আজো মানুষের সবচেয়ে বড়াে ট্যাবে নারীর শরীর। তার একটি প্রত্যঙ্গ, স্তন, দৃষ্টিগ্রাহ্য; অধিকাংশ সংস্কৃতির পুরুষের চোখে ওটির আবেদন তীব্র, যদিও আদিম সমাজের। পুরুষের চোখে ওর কোনাে আবেদন নেই। তবে নারীর অধিকাংশ যৌনপ্রত্যঙ্গ দেহাভ্যন্তর ও অদৃশ্য, আর যেগুলাে বাহ্যিক সেগুলােও অন্তরালবর্তী। একটি নগ্ন নারীর দিকে তাকিয়ে থেকেও তার কোনাে যৌনপ্রত্যঙ্গ দেখা যায় না, শুধু আভাসের ঢেউ উঠতে থাকে।…..

….নারীর যৌনপ্রত্যঙ্গগুলাের কয়েকটি বাহ্যিক, কয়েকটি আভ্যন্তর। তবে এগুলাে এমনভাবে বিন্যস্ত যে নগ্ন হ’লেও, স্তন ছাড়া, নারী কখনাে নগ্ন নয়। নারীর বাহ্যিক যৌনপ্রত্যঙ্গ এলাকার নাম যৌনাঞ্চল [ভালভা]। চমৎকার এলাকা এটি, আপলিনিয়ের এ-এলাকাকেই বলেছিলেন বিশুদ্ধ ত্রিভুজ । এ-এলাকায় রয়েছে কয়েকটি প্রত্যঙ্গ, যেগুলাে পালন করে বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব। এগুলাে নারীর বাইরের যৌনপ্রত্যঙ্গ, কিন্তু বাইর থেকে দেখা যায় না, দেখার জন্যে তাকাতে হয় কাছে থেকে দেখতে হয় আঙুল। দিয়ে ফুলের পাপড়ির মতাে নেড়ে নেড়ে।

বৃহদোষ্ঠঃ এটি হচ্ছে দু-ভাঁজ চামড়া; ঠোট যেমন মুখগহ্বরকে ঢেকে রাখে। এ-দুটিও ঢেকে রাখে এ-দুটির মধ্যবর্তী ভগগহুরকে। দুটি বড়াে মােটা গােলাপপাপড়ি ব’লে মনে হতে পারে এ-দুটিকে। শিশু ও বুড়ােকালে বৃহদোষ্ঠ দুটি থাকে ছােটো, ভেতরে মেদ থাকে না, তবে বয়ঃসন্ধি থেকে ঋতুবন্ধ হওয়া পর্যন্ত বৃহদোষ্ঠ থাকে পরিপুষ্ট । ওপরের দিকে বৃহদোষ্ঠ দুটি মিলিত হয় এক মেদপুষ্ট অঞ্চলে, যাকে বলা হয় ভেনাসের পাহাড় (মােন্স ভেনারিস বা যােনিবিটপ। বৃহদোষ্ঠ, বিশেষ করে মােল। ভেনারিসের ওপর উদগত হয় যৌনকেশ।

ক্ষুদ্রোষ্ঠঃ এ-দুটি মেদপুষ্ট স্পর্শকাতর চামড়ার ভজ, গােলাপের ছােটো পাপড়ির মতাে। ওপরের দিকে এ-দুটির একটি চলে যায় ভগাঙ্কুরের ওপরে, আরেকটি ভগাঙ্কুরের নিচে; নিচের দিকে এ-দুটি মিলিত হয় পরস্পরের সাথে। বয়ঃসন্ধি থেকে ঋতুবন্ধ পর্যন্ত এটি গুপ্ত থাকে বৃহদোষ্ঠের আড়ালে, দেখতে হয় আঙুল দিয়ে খুলে; তবে শিশু ও বুড়ােকালে এ-দুটি বেশ দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে।

ভগাঙ্কুরঃ পুরুষের যেমন শিশ্ন নারীর তেমন ভগাঙ্কুর; তবে শিশ্নের যৌন ছাড়া অন্য কাজ রয়েছে, কিন্তু ভগাঙ্কুরের একমাত্র কাজ যৌনসুখ অনুভব। তাই এটি অনন্য। কামপ্রত্যঙ্গ, পুরুষের এমন কোনাে অনন্য কামপ্রত্যঙ্গ নেই। এটি যেহেতু শুধু কামসুখের জন্যেই, আর কোনাে কাজের জন্যে নয়, তাই দেশে দেশে পিতৃতন্ত্র এর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এটি কেটে ফেলার বিধান দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক মুসলমান দেশে। এখনাে ভগাঙ্কুরছেদ বা নারীর খনা প্রচলিত রয়েছে। এটি কেটে ফেলার অর্থ হচ্ছে নারীর কামসুখের চিরাবসান। গত কয়েক দশকে নারীবাদীরা, ও মাস্টার্স্ ও জনসনের গবেষণা, প্রতিষ্ঠা করেছেন এর প্রাধান্য। তাদের মতে অরগাজম বা পুলকের জন্যে সঙ্গম অপ্রয়ােজনীয়, এটি মৈথুন করেই অনুভব করা সম্ভব চরম পুলক। ইলিয়েরসেন আমি অভিযােগ করি (১৯৬৯) নামের বইতে লিখেছেন [দ্র গ্রিয়ার (১৯৭১, ৪৩)]: (যৌনবিজ্ঞানীরা) পরামর্শ দেন যে সঙ্গমের অবতরণিকা হিশেবে নাড়তে হবে ভগাঙ্কুরটিকে, সঙ্গমকেই অধিকাংশ পুরুষ মনে করে ‘আসল জিনিশ। তাদের জন্যে যা আসল জিনিশ”, নারীর জন্যে তা পুরােপুরি সুখানুভূতিহীন। এটিই হচ্ছে মূল জিনিশ! যাকে বিনীত, লজ্জাশীল ও অনুগত নারীরা শতাে শতাে বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছে।

এটি অবস্থিত যৌনাঞ্চলের ওপরের দিকে মধ্যস্থলে। এটি মােটা শিউলিবোটার মতাে, এর রয়েছে তিনটি অংশ : শীর্ষ, শরীরদণ্ড, ও পা। এর শীর্ষটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, দণ্ডটিও বেশ স্পর্শকাতর। শীর্ষ ও দণ্ড নেড়েই নারী পেতে পারে চরম পুলক। সঙ্গমে নারী পুলক বােধ করে প্রধানত শিশ্নের সাথে এটির ঘর্ষণে অনেক নারী সঙ্গমে কোনাে পুলক বােধ করে না, কিন্তু তারা ভগাঙ্কুর মৈথুন করে চরম পুলক লাভ করে। ভগাঙ্কুরের একটু নিচেই থাকে মূত্র।

যােনিচ্ছদঃ মুত্ররন্ধ্রের নিচে অবস্থিত নারীর যােনিমুখ, যেটি সাধারণত ঢাকা থাকে। একটি পাতলা পর্দায়। পর্দাটির প্রথাগত নাম সতীচ্ছদ, তবে এটি থাকা-না-থাকা। তথাকথিত সতীত্বের প্রমাণ-অপ্রমাণ নয়। সতীত্ব ব’লে কিছু নেই; এটি না থাকার অর্থ এটি নেই। এটিকে যােনিচ্ছদ বলাই ভালাে। এটি এক অপ্রয়ােজনীয় জিনিশ। এটি একটি পাতলা পর্দা, যাতে থাকে এক বা একাধিক ছিদ্র, যার ভেতর দিয়ে নিঃসৃত হয়। ঋতুস্রাব। এটির আকার ও স্থিতিস্থাপকতা ভিন্ন হয়ে থাকে নারী থেকে নারীতে; সঙ্গম না করেও এটি ছিড়ে যেতে পারে, আবার বহুসঙ্গমেও থাকতে পারে অটুট। এটি ছেড়ার সময় সাধারণত কিছুটা রক্ত বেরােয়। অনেক সমাজে যযানিচ্ছদ ছেড়া ও রক্তক্ষরণকে মনে করা হয় নারীর সতীত্বের প্রমাণ। বাসর রাতের ভােরে তারা বিছানা খুঁজে দেখে রক্তের দাগ আছে কি-না। আরব ও আফ্রিকি সমাজে যযানিচ্ছদ ও বাসর রাতের রক্তক্ষরণ আজো চরম গুরুত্বের বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে কনের পিতা চরম উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বাসরঘরের দরােজায়, তার হাতে দেয়া হয় কন্যার যােনিরক্তভেজা একটি শাদা রুমাল, আর সে সেটিকে পতাকার মতাে উড়িয়ে ঘােষণা করে কন্যার সতীত্ব রক্ষা করে বংশের মান। সেখানে এখন যােনিচ্ছদ জোড়ালাগানাের শল্যচিকিৎসা ধনীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। | নারীর আভ্যন্তর যৌনপ্রত্যঙ্গের মধ্যে রয়েছে যােনি, জরায়ু, ডিম্বনালি বা ফ্যালােপীয় নালি, ও ডিম্বাশয়।

যােনিঃ এটি পুরুষের প্রধান স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন। পুরুষ এর প্রতি আকর্ষণ বােধ করে, এমনকি ভয় পায় ও ঘৃণা করে এটিকে। যােনি একটি পেশল নালি, এটি পেছনের দিকে উঁচু হয়ে গিয়ে জরায়ুতে পৌছে। এটি পেশিতে গঠিত, এবং এতে আছে রক্তবাহী। শিরাজাল, যা কামােত্তেজনার সময় ফুলে ওঠে। স্বাভাবিকভাবে যােনির দেয়াল লেগে। থাকে পরস্পরের সাথে; তবে এটি যেহেতু স্থিতিস্থাপক, তাই এর ভেতর দিয়ে লিঙ্গ বা ট্যাম্পুন প্রবেশের বা সন্তান প্রসবের সময় এটি বিস্ময়করভাবে প্রসারিত হয়। যােনি। সাধারণত ৩.৭৫ ইঞ্চি দীর্ঘ। জরায়ুর গ্রীবা বা সারভিক্স ঢুকে পড়ে এর ভেতর। যােনি। প্রত্যঙ্গ হিশেবে বিস্ময়কর। এটা শুধু স্থিতিস্থাপকই নয়, এটির আছে নিজেকে নিজে পরিচ্ছন্ন রাখার শক্তি। নারীর আভ্যন্তর প্রত্যঙ্গগুলাের মধ্যে এটিই বেশি লিপ্ত হয় কামে; সাধারণ বােধে এটিই নারীর একমাত্র কামপ্রত্যঙ্গ। পুরুষ এটির ভেতরে শিশ্ন ঘর্ষণ ও ধাতুপাত ক’রেই চরম সুখ পায়। এটির সব অংশ সমান স্পর্শকাতর নয়, এর। মধ্যভাগের কোনাে স্পর্শকাতরতাই নেই, শুরু ও শেষভাগের রয়েছে কিছুটা। স্পর্শকাতরতা। তাই শুধু এটির ভেতরে সঙ্গম করা হলে নারী পুলক বােধ করে না। ছােটো যােনি ব’লে কিছু নেই, যে-কোনাে যােনিতে প্রবেশ করতে পারে যে-কোনাে শিশ্ন। কামােত্তেজনার সময় যােনি সিক্ত হয়, সিক্ততা শিশ্নের প্রবেশের সহায়ক। যােনি কোনাে অক্রিয় প্রত্যঙ্গ নয়, সঙ্গমের সময় এটি শিশ্নকে জিভের মতাে চুষতে পারে।

জরায়ুঃ জরায়ু আরাে বিস্ময়কর। গর্ভধারণের আগে এটি দেখতে অনেকটা নাশপাতির মতাে, দৈর্ঘে প্রায় চার ইঞ্চি, পাশে আড়াই ইঞ্চির মতাে, ওজন দু-আউন্স’। গর্ভধারণের সময় এটির ওজন হয় আড়াই পাউন্ড, ধারণ করতে পারে সতেরো ইঞ্চি দীর্ঘ একটি শিশু। সন্তান জরায়ুতে উদ্ভূত হয় না, লালিত হয়। জরায়ু এক শূন্য পেশল আধার, এর সামনে মূত্রাশয় পেছনে মলাশয়। সামনের দিক থেকে দেখতে এটি।……….

কিশােরীতরুণী

………বয়ঃসন্ধি বদলে দেয় বালিকার দেহ। এর আগে বালকবালিকার শরীরে থাকে সমান শক্তি, প্রাণবন্ততাও থাকে সমান; কিন্তু বয়ঃসন্ধি বালিকাকে জন্ম দেয় নতুন করে। তার দেহ হয়ে ওঠে আগের থেকে ভঙ্গুর, এক ঠুনকো অবয়বের অধিকারী হয় সে; তার। কামপ্রত্যঙ্গগুলাে সহজে বােধ করে আহত, আর বুকের দু-পাশে দুটি বিব্রতকর ফলের মতাে দেখা দেয় অদ্ভুত, বিপত্তিকর স্তন। পুরুষের চোখে স্তন সুন্দর, তার শরীরের ওই স্কীত পিণ্ড দুটি পুরুষের চোখে জাগায় তীব্র আবেদন; কিন্তু কিশােরী তা নিয়ে থাকে বিব্রত। অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরে, আগের জামা তাকে পীড়া দিতে থাকে; সে দৌড়েতে গেলে ওগুলাে দোলে, ব্যায়াম করতে গেলে দোলে। তার বুকে যন্ত্রণা হয়ে যা ফুলে ওঠে তা স্তন, যা তার নিজের কোনাে কাজে লাগে না; একদিন পুরুষ ও-দুটি। মথিত করে, শিশু শােষণ করে। কিশােরী হয়ে ওঠে দুর্বল, কমতে থাকে তার পেশির শক্তি, সে হারিয়ে ফেলে তৎপরতা। একই বয়সে কিশাের অর্জন করে পেশি, অর্জন। করে তৎপরতা। এমন একটি প্রক্রিয়া দেখা দেয় তার শরীরে, যা কখনাে বােধ করে না। পুরুষ; তা তার ঋতুস্রাব। পশ্চিমে একে এক সময় বলা হতো ‘অভিশাপ’, যা কিশােরীর কাছে আসলেই অভিশাপ মনে হয়। অধিকাংশ সমাজেই এর জন্যে তাকে প্রস্তুত করে তােলা হয় না, তাই হঠাৎ অনভিপ্রেত রক্তের প্রবাহ তাকে ভীত করে তােলে।…….

প্রেম ও কাম

……..মাস্টার্স ও জনসন নারীর যৌন সাড়াকে ভাগ করেছেন চারটি পর্বে ; উত্তেজনাপর্ব, অধিত্যকাপ, পুলকপর্ব, ও শমপর্ব। পুরুষও যায় এ-চারটি পর্বের ভেতর দিয়ে; তবে তাদের প্রত্যঙ্গের ভিন্নতা অনুসারে উপভােগ করে ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

উত্তেজনাপর্ব : এর সূচনা ঘটে কোনাে পুরুষের শরীরসংস্পর্শে, তবে কোনাে পুরুষকে দেখেও এর সূচনা ঘটতে পারে। বিভিন্ন নারী বছরের বিভিন্ন সময় বােধ করে বিশেষ উত্তেজনা; কেউ ঋতুকালে, কেউ চক্রের মধ্যভাগে, কেউ ঋতুসূচনার আগে বােধ করে তীব্র কাম-উত্তেজনা। সব ধর্মেই ঋতুকালে সঙ্গম নিষিদ্ধ, যদিও এর কোনাে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অনেক নারী এ-সময়েই বেশি কাম বােধ করে। এ-সময়টা নিরাপদও, গর্ভসূচনার কোনাে সম্ভাবনা নেই। নারীর উত্তেজনাপর্ব পুরুষের উত্তেজনাপর্বের থেকে দীর্ঘ, পুরুষ যতাে সহজে উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে নারী তেমন হয় না। এ-পর্বে স্তনবৃন্ত খাড়া হয়ে ওঠে, ভগাঙ্কুর আয়তনে বাড়ে, ‘ওষ্ঠগুলাে’ কোমল পুরু হয়ে স্ফীত হয়, যােনি সিক্ত হয়; এবং রক্তপ্রবাহের ফলে ত্বকে দেখা দিতে পারে ঝিলিক, যাকে । বলা হয় কাম ঝিলিক।

অধিত্যকাপর্ব : উত্তেজনাপর্বেরই সম্প্রসারণ অধিত্যকাপর্ব; উত্তেজনাপর্বে যা কিছুর সূচনা ঘটে, এ-পর্বে সে-সব পৌছে তুঙ্গে। নারী এ-পর্বে ভেতরে চায় শিশ্ন। এ-পর্বে। জরায়ুর গ্রীবা বৃদ্ধি পায়, যােনিরও বাড়ে। এর ফলে যােনির গভীরদেশে তৈরি হয় একটি থলের মতাে এলাকা, যেখানে ঘটবে বীর্যপাত। এ-সময় যােনির বাইরের দিকটা বেড়ে এ-এলাকাটির ব্যাস হ্রাস পায়। মাস্টার্স ও জনসন একে বলেছেন ‘পুলকমঞ্চ’ । অধিত্যকাপর্ব যতাে দীর্ঘ হয় ততােই সুখকর নারীর জন্যে।

পুলকপর্ব: পুলক শরীরমিলনের লক্ষ্য। পুলক এক অনির্বচনীয় অনুভূতি; নারী এ-পর্বে বােধ করে তীব্রতম সুখ, যা প্রতি নারীর জন্যে অনন্য। পুলকই কাম্য, কেননা তা নরনারীকে পৌছে দেয় সুখের শিখরে; একে ভয়ও পায় অনেকে। ফরাশিরা একে বলে। ‘ছােটো মৃত্যু’। নারীর পুলকের সূচনা হয় শ্রোণীদেশে, পরে ছড়িয়ে পড়ে সারা। শরীরে। এর সূচনা ঘটে স্তব্ধতায়, তারপর ঘটে অদম্য পেশিসঞ্চালন, শিহরণ, ভাসমানতার অনুভূতি, উষ্ণতা, মানসিক উত্তেজনামুক্তি, ও উল্লাস। পুলক ঘটে প্রতিবর্তীতার ফলে। ভগাঙ্কুরের সাথে শিশ্ন, ওষ্ঠ বা আঙুলের ঘর্ষণের ফলে উত্তেজনার সংবাদ পৌছে সুষুম্নাকাণ্ডে; সেখান থেকে তা পেঁছে দেয়া হয় নারীর শ্রোণীনিয়ন্ত্রক। স্নায়ুরাশিতে। এর ফলে ঘটে পুলক। তবে সব নারীর সব সময় পুলক নাও ঘটতে পারে। ঘটবে কী ঘটবে না, তা নির্ভর করে ওই প্রতিবর্তীতায় তার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণের মাত্রার ওপর। যে-নারী কোনাে যৌননিষেধগ্রস্ত নয়, সে হয়তাে সহজেই পৌছােয় পুলকে; কিন্তু যে নারী যৌননিষেধগ্রস্ত, সে হয়তাে কখনােই পৌছােয় না। কেউ কেউ পুলকের সময় আলােড়িত করে তােলে তার শরীর ও পরিবেশকে, শীৎকারে ভ’রে দেয়। চারপাশ, কেউ কেউ থাকে স্তব্ধ । পুরুষের সাথে নারীর পুলকের পার্থক্য হচ্ছে নারীর। কোনাে বীর্যপাত ঘটে না।

আগে মনে করা হতাে পুলক রয়েছে দু-ধরনের; একটি ভগাঙ্গুরীয়, আরেকটি যােনীয়। এ-ধারণার মূলে রয়েছে ফ্রয়েডের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সূত্র। তাঁর বিশ্বাস ছিলাে যে ভগাঙ্গুরীয় পুলক নারীর বিকাশহীনতার পরিচায়ক, কেননা তা হস্তমৈথুনেই লাভ করা যায়, বালিকাও তা লাভ করতে পারে; আর যােনীয় পুলক নারীর কাম ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের পরিচায়ক, কেননা এতে বালের কাম ভগাঙ্কুর থেকে স্থানান্তরিত হয় যােনিতে। ফ্রয়েডীয় সিদ্ধান্ত প্রথাগত কুসংস্কারের প্রকাশ : পুলক হচ্ছে পুলক, কীভাবে তার উৎপত্তি ঘটেছে তা বিবেচনার বিষয় নয়। কেউ যদি কবিতা পড়ে, সূর্যাস্ত দেখে, জনসভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় নিজের নামে শ্লোগান শুনে পুলক বােধ করে, তাও চমৎকার! এটা নিশ্চিত যে পুলকের উৎস ভগাঙ্কুর, উত্তেজিত ভগাঙ্কুরই শুরু করে ঘটনাটি, তবে যােনিও এতে কিছুটা অংশ নেয়। ষাটের দশক থেকে নারীর কামে যােনির মর্যাদা কমে গেছে, প্রধান হয়ে উঠেছে ভগাঙ্কুর। কারাে কারাে ভগাঙ্কুর এতাে প্রতিভাশালী যে একের পর এক, মেশিনগানের মতাে, পুলক বােধ করতে পারে; কেউ কেউ পঞ্চাশটি পুলকের সংবাদও দিয়েছে! তবে সম্প্রতি নারীর পুলককেও পুরুষ। ব্যবহার করছে নারীকে নতুন ধরনের দাসী করে তুলতে; পুরুষ দাবি করছে সে যখন শিশ্ন চালাবে, তখন নারীকে বাধ্যতামূলকভাবে পেতে হবে পুলকের পর পুলকের পর পুলক। নারীর একটি দায়িত্ব হয়ে উঠেছে পুলক অর্জন করা, যে-নারী পুলক অর্জন করে না পুরুষ তাকে মনে করে প্রতারক; তাই পশ্চিমে নারী এখন পুরুষকে কামসেবা করতে গিয়ে বাধ্য হচ্ছে পুলকলাভের অভিনয় করতে। পুরুষ এখন মনে

করছে নারী হচ্ছে পুলকলাভের যন্ত্র, তার কাজ শয্যাকে পুলকে পুলকে প্লাবিত করা। [দ্র ক্লাইন ও স্পেন্ডার (১৯৮৭, ১১০-১২৪)। নারীর পুলকও পুরুষেরই জন্যে।

শমপর্ব: শমপর্ব পুলকোত্তর বা পুলকহীন সঙ্গমােত্তর পর্ব, যখন নারীপুরুষ ফিরে যায় তাদের প্রাক-উত্তেজনা অবস্থায়। এ-পর্বে ঘটে সব কামনার নিবৃত্তি বা দেখা দেয় ব্যর্থতার ফলে যন্ত্রণা। পুলকের পর পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে যােনি নীরস হয়ে ওঠে, তবে উত্তেজিত করা হলে নারী আবার পুলকের পর পুলক পেতে পারে। নারী যদি অধিত্যকাপর্বের পর কোনাে পুলক অনুভব না করে, বা ব্যর্থ সঙ্গমের পর হস্তমৈথুন করে পুলক বােধ না করে, তবে তার শান্ত অবস্থায় ফিরতে অর্ধেক দিনরাত কেটে যেতে পারে। বার বার উত্তেজনা ও পুলকলাভে ব্যর্থতা নারীর জীবনে নিয়ে আসতে পারে। হতাশা ক্লান্তি অবসাদ, দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা। পৃথিবী জুড়ে অধিকাংশ নারী পুলকের অভাবে অবসাদগ্রস্ত।……….

Leave a Reply