…..একটা নৌকোর একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি যুবতী রমণী। সম্পূর্ণ বিবস্ত্রা। তার স্তনবৃন্তটি ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে ধরে বাদুড়ের মতাে ঝুলছে তার শিশু। সম্ভবত অপুষ্টিসর্বস্ব মাতৃস্তন্যে সে আকুল হয়ে খুঁজছে অমৃতভাণ্ড।…..
……পুরুষ মঞ্চে উঠলে একরকম, কোনাে নারী উঠলেই দৃশ্যপটে বেশ পরিবর্তন ঘটছে। প্রাচ্যের পরাধীন দেশ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে আনা উলঙ্গ ক্রীতদাসীটির শরীরের বিশেষ কিছু অঙ্গ অসঙ্কোচে স্পর্শ করে তখন তার গুণকীর্তন বর্ণনা করছে নিলাম পরিচালনা করা লােকটি।…..
…..রামচন্দ্র ন্যায়তীর্থ যে সুপাত্রর কথা বলছেন, সেই জাতীয় পাত্র কৌলীন্যপ্রথার রমরমার দৌলতে একেবারেই বিরল নয়। এঁরা জাতে কুলীন ব্রাহ্মণ, কিন্তু পূজার্চনা বা বিদ্যাদান কিছুই করেন না। এঁদের কাজ শুধুমাত্র বিয়ে করা। গােটা বঙ্গভূমি জুড়ে এঁদের শ্বশুরবাড়ি। পরনে পিরান, ধুতি। কাঁধে উড়নি। বুকের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে উপবীত। কানে কলম। আর বাহুমূলে গোঁজা খেরাের খাতা। সেই খাতায় সারি সারি দিয়ে লেখা একের পর এক শ্বশুরমশাইয়ের নাম, গৃহ, ঠিকানা। গােটা বছরই তাঁরা পূর্ববঙ্গ থেকে রাঢ়প্রদেশ চষে বেড়ান ‘ভিজিট’ দেওয়ার জন্য। প্রতিটি শ্বশুরালয়ে বছরে একবার ‘ভিজিট’, জামাই আদর, নিত্যনতুন শয্যাসঙ্গিনী। কখনাে কখনাে কোনাে শ্বশুরালয়ে এক রাত বেড়ে তিনরাত্রিও হয়, তবে তা শ্বশুরমহাশয়ের আর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে।
‘ভিজিট’ শেষে স্ত্রী-সম্বন্ধীদের কৃতার্থ করে মােটা জামাইবিদায় ‘ফি’ নিয়ে খেরাের খাতায় চোখ বুলিয়ে পরবর্তী শ্বশুরগৃহের দিকে গমন। এই হল সেই বিবাহ বিশারদ কুলীনদের কাজ। যাদের সম্পর্কে খােদ বিদ্যাসাগর লিখেছেন, “গত দুর্ভিক্ষের সময় এক ভঙ্গকুলীন অনেকগুলি বিবাহ করেন। তিনি লােকের নিকট আস্ফালন করিয়াছিলেন, এই দুর্ভিক্ষে কত লােক অন্নাভাবে মারা পড়িয়াছে, কিন্তু আমি কিছু টের পাই নাই, বিবাহ করিয়া স্বচ্ছন্দে দিনপাত করিয়াছি।
একটু হিসেবের কচকচি করলে ব্যাপারটা আরাে স্পষ্ট হয়। ১৮৭১ সনে কৃষ্ণসুন্দরের আবাস হুগলী জেলায় তেত্রিশ জন কুলীন ব্রাহ্মণ বিয়ে করেছেন ২১৫১টি মেয়েকে। অর্থাৎ গড়ে একেকজন বিবাহ বিশারদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে পঁয়ষট্টিটি কন্যাকে।….
…..পাঁচকড়ি আড়চোখে ভেতরের দিকে তাকালেন। কৃষ্ণসুন্দরের এই বিধবা বােনটি নাকি বেশ সুন্দরী। খিদমদগার লালুর সাকরেদ আছে এগাঁয়ে, সে-ই বলেছে। উন্নত নাসা, আয়তনয়না, পাকা বিশ্বফলের মতাে স্তনযুগল। গীতগােবিন্দের রাধার মতাে তন্বী ষােড়শী ভুবনমণিও পীনপয়ােধরা।…..
…..সিক্তবসনে হেঁটে চলেছে এক সদ্যতরুণী, তার তনুলতার প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠছে হাঁটার তালে তালে, কলসী থেকে জলবিন্দু চুইয়ে পড়ছে পদ্মের মতাে পা বেয়ে। গাছের আড়াল থেকে নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে লালসার হাত।
চারপাশের গহীন অরণ্যমধ্যে আদিম দৃশ্যটা কল্পনা করতে করতে পাঁচকড়ি মুখুজ্জের শরীর উজ্জীবিত হয়ে উঠল। মনে পড়ে গেল সেই পুরনাে কাব্য,
‘ভালাে ভালাে স্ত্রীলােক যত ধইরা লইয়া জাএ।
আঙ্গুষ্ঠে দড়ি বাঁধি দেয় তার গলা।
একজন ছাড়ে তারে আর জনা ধরে।
রমণের ভরে ত্রাহি শব্দ করে।
পাঁচকড়ি মুখুজ্জে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, বলাৎকৃতা নারীকে কঠোর প্রায়শ্চিত্ত তাে করতেই হবে। এক্ষেত্রে আবার ধর্ষণ করেছে দুই বিধর্মী। ধর্ষিতা ব্রাহ্মণী হলেও ম্লেচ্ছর ঔরসধারণে সে নিজেও এখন ম্লেচ্ছতে অধঃপতিত হয়েছে। তাই কোনাে সদ্বংশজাত ব্রাহ্মণ যদি তার সেবা দুইপক্ষকাল গ্রহণ করতে সম্মত হন, তবেই সে স্বকূলে আবার ঠাই পাবে।
কৃষ্ণসুন্দর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারলেন না। হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন।
পাঁচকড়ি মুখুজ্জে নিজেই স্ববক্তব্যকে প্রাঞ্জল করতে উদ্যোগী হলেন, ‘আহা বুঝলে না? তােমার ভগ্নীর সেবা দুইপক্ষকাল কোনাে উপযুক্ত ব্রাহ্মণ গ্রহণ করতে স্বীকৃত হতে হবে। তবেই সেই দ্বিজের পবিত্রতায় তােমার ভগ্নীর অশুচিতা কাটবে। অত্রিসংহিতা নিশ্চয়ই পড়েছ, ধর্ষিতা নারীকে একমাস পর থেকেই শুচি জ্ঞান করা যায়। ভুবনমণি একমাস পরেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। বুঝলে?
“আজ্ঞে ! বিহ্বলচোখে কৃষ্ণসুন্দর বলেন, “সে আর এমনকী ব্যাপার? এই তাে লাহিড়ীমশাই রয়েছেন, তাঁর গৃহে গিয়ে নাহয় ভুবনমণি একমাস পিতৃজ্ঞানে পদসেবা করে আসবে? তবেই তাে হবে?
পাঁচকড়ি মুখুজ্জের মুখের অভিব্যক্তি তৎক্ষণাৎ বদলে যায়। বিরক্তিতে তিনি হুঁকায় মনােনিবেশ করেন। তাঁর খিদমদগার লালু রােষকষায়িত নয়নে তাকায় কৃষ্ণসুন্দরের দিকে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে মুহুর্তের মধ্যে আসরে নামেন গােপী লাহিড়ী, “আহ, বােকার মতাে কথা কয়াে না কেষ্ট। এ সেবা সে সেবা নয়। মুখুজ্জেমশাইয়ের কথা ভালাে করে বুঝতে চেষ্টা করাে। স্নেচ্ছের ঔরসে দূষিত দেহকে শুদ্ধ করতে হবে ব্রাহ্মণ ঔরসে। শ্রীরাধা যেমন কৃষ্ণকে নিজের দেহমন দিয়ে সেবা করেছিলেন, এই সেবা সেই সেবা।
কৃষ্ণসুন্দরের সামনে হঠাৎই পাঁচকড়ি মুখােপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। বজ্রাহত হয়ে তিনি ভেতরের দিকে তাকান। দেখতে পাওয়া না গেলেও দরজার পাশে দণ্ডায়মান নিশ্চপ ব্রহ্মময়ীর অস্তিত্ব তিনি অনুভব করেন।
একি অন্যায্য কথা! একবার ধর্ষিতা হওয়ার জন্য ভুবনমণিকে একমাস ধরে ধর্ষিতা হতে হবে? কী প্রচণ্ড অন্যায়! কোন শাস্ত্রে লেখা আছে একথা?
কৃষ্ণসুন্দর হলফ করে বলতে পারেন, এহেন কোথাও লেখা থাকতে পারে না। এ অসম্ভব।
পাঁচকড়ি মুখুজ্জে ঘাড় দুলিয়ে বললেন, তবে মনে হয় না কোনাে উপযুক্ত ব্রাহ্মণ সম্মত হবে। কারণ ম্লেচ্ছদ্বারা ধর্ষিতা হওয়ার ফলে ভুবনমণি এখন নিজেও ম্লেচ্ছ। আর মনুর বিধান তাে এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট,……
…..শুদ্র কিংবা ম্লেচ্ছগমন করলে ব্রাহ্মণের অধােগতি হয়। সন্তান উৎপাদন হলে ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্বও নষ্ট হয়। তাই যেচে কে ভুবনমণির সেবা নিতে চাইবেন? তবে হ্যাঁ , একান্তই যদি মহৎ কোন ব্রাহ্মণ হন, সেক্ষেত্রে তাঁর অধােগমন হয় না। তেমন কাউকে পাওয়া গেলে তােমার পরম সৌভাগ্য বলে ধরতে হবে।’
‘তেমন কে আছে এ গাঁয়ে?’ গােপী লাহিড়ি দুই হাতে এক বিচিত্র মুদ্রা প্রদর্শন করে কথাটা বাতাসে ভাসিয়ে দিলেন।
‘তা তােমরা দ্যাখাে। এ গ্রামে না থাকলে আশপাশের গ্রামে সন্ধান করাে। তবে বেশি বিলম্ব কোরাে না। আজ তাে তিনদিন হয়েই গেল, প্রায়শ্চিত্ত ধর্ষণের পঞ্চরাত্রির মধ্যে শুরু করতে না পারলে সব আয়ােজনই বৃথা। সেক্ষেত্রে কৃষ্ণসুন্দরের বােনকে পরিত্যাগ করা। ছাড়া কোনাে উপায় তাে থাকবেই না, সমাজচ্যুতও হতে হবে। পাঁচকড়ি মুখুজ্জে আর কথা না বাড়িয়ে গাত্রোখান করলেন।
‘মুখুজ্জেমশাইয়ের জয় হােক! কেমন সুন্দর একটি প্রায়শ্চিত্তের রাস্তা বাতলে দিয়ে গেলেন। উৎফুল্ল চোখে কপালে জোড়হাত ঠেকালেন রামচন্দ্র ন্যায়তীর্থ, “কেষ্ট, মুখুজ্জেমশাইকে পেন্নাম করাে। তােমাকে একঘরে করার থেকে বাঁচিয়ে দিলেন! পরকালের রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে গেল।……
…..ষাটোর্ধ্ব পাঁচকড়ি মুখােপাধ্যায়ের পাঁচটি পত্নী, শােনা যায় সর্বকনিষ্ঠাটি মাত্র চতুর্দশবর্ষীয়া, তার পাণিগ্রহণ করেছেন এখনাে একবছর অতিক্রান্ত হয়নি। একজন শিক্ষিত মানুষের কামবোেধ এইবয়সেও এত প্রবল হয় কী করে?……
….নবকিশাের দত্ত মােটা দাগের লােক। সারাজীবন অর্থ উপার্জন ছাড়া কিছু বােঝেননি। জৈবিক চাহিদা তাে সব প্রাণীরই থাকে, সেই তাড়নায় তিনটে বিবাহ করেছে। দু’জন রক্ষিতাও রেখেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। নারী-পুরুষের সম্পর্কের মাঝে যে শারীরিক চাহিদা ছাড়াও মানসিক ভাব আদানপ্রদান সম্ভব, তা কোনােদিনও এই গন্ধবণিক প্রৌঢ়ের মাথায় আসেনি। মেয়েদের তিনি তাঁর রপ্তানির জন্তুদের মতই পণ্য ভাবেন। তাই এতগুলি নারীর সংস্পর্শে নিয়মিত থাকা সত্ত্বেও সকলেই তার শয্যাসঙ্গিনী হয়ে রয়ে গিয়েছে। নমসঙ্গিনী কেউই হতে পারেনি।…..
…..রজোদর্শনের আগেই তাকে ধ্বজদর্শন করতে হল। জন্মরহস্যের গুঢ় তত্ত্বটি তার জানা ছিল না, হয়ত বা কৃষ্ণসুন্দরের বিদ্যোৎসাহী স্বভাবের জন্যই কন্যাকে বৈবাহিক বিষয়ে জ্ঞানী করে তুলতে তিনি তেমন উদগ্রীব হননি। ব্রহ্মময়ীও সেই পথে হেঁটেছেন। কিন্তু সেই মাশুল দিতে হল তাঁর কন্যাকে। প্রথম রাতে এক শয্যায় শুয়ে স্বামীর এই অস্বাভাবিকসম আদিম রূপ দেখে সে ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
সেই চিৎকারের প্রাবল্য এতটাই যে ঘরের বাইরে দণ্ডায়মান দত্তবাড়ির প্রহরী-দুজন প্রথমে কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীল রসিকতা করলেও আর্তনাদের তীব্রতায় বধিরতার ভান করে দাঁড়িয়ে রইল।
অপালার সপত্নী দয়াময়ী ও পরেশমণির মহল অন্যদিকে হলেও উমাতারার মহল পাশেই। অপালার পরিত্রাহী আর্তনাদ তার কানেও পৌঁছল।
‘মাগি কেমন বেহায়ার মতাে চেঁচায় দ্যাকো, ছ্যা ছ্যা! আমরা কি আর সােয়ামির সঙ্গে শুইনি নাকি, না সােয়ামি আমাদের সােহাগ করেনি? হাঘরের বেটি হলে যা হয়। সব জেনেবুঝেও উমাতারা মুখ বেঁকাল।। | সােয়ামীর সােহাগে অপালা কতটা তৃপ্ত হল তা সে-ই জানে, কিন্তু তার অপরিণত প্রায় শিশু শরীর এক মধ্যবয়স্ক কামাতুর বহু-অভিজ্ঞ শিশ্নকে সেভাবে সাদরে অভ্যর্থনা জানাতে পারল না। পরিত্রাহী আর্তনাদ অন্তে ক্রমাগত রক্তক্ষরণে সে ঝিমিয়ে পড়তে লাগল।
নবকিশাের দত্ত বহু নারীতে উপগত হয়েছেন, কিন্তু এমন অঘটনের সম্মুখীন কখনাে হতে হয়নি। রতিক্রিয়া তাঁর মাথায় উঠল। ভীত চোখে তিনি দেখলেন, রক্তস্রোত ক্রমাগত বেরিয়ে গােটা ফুলশয্যা’কে রক্তাক্ত করে তুলছে। তিনি পালঙ্কের পাশের কুলুঙ্গিতে থাকা জলের পাত্র নিয়ে বারকয়েক জলের ছিটে দিলেন পত্নীর মুখে। কিন্তু তেমন কোনাে লাভ হল না। অপালার চোখের পাতা সামান্য কেঁপে উঠলেও সে নিঃস্পন্দ হয়ে পড়ে রইল।……
…..পেয়ারাবালা তাঁর সঙ্গিনীদের মধ্যে একমাত্র, যে অপরিসীম ব্যথা সহ্য করতে পারে। নবকিশােরের আবার ওই এক শখ, রতিক্রিয়ার সময় সঙ্গিনী যন্ত্রণায় চিৎকার করবে, ছটফট করবে, তাই দেখে তিনি কেমন এক স্বর্গীয় সুখ পান। সব মেয়েই তাঁর অত্যাচারে চিৎকার করে। কিন্তু পরের দিন থেকে আতঙ্কে আর সহজ হতে পারে না।
কিন্তু পেয়ারাবালা তেমন নয়। তার পাকা বেলের মতাে স্তনে আর কলাগাছের মত। উরুতে জ্বলন্ত কাঠকয়লা চেপে ধরে ধরে চামড়াগুলাে সাদা কালাে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তবু মেয়েটা প্রতিবারই স্বেচ্ছায় ধরা দেয় তাঁর কাছে।……