নলা হস্তার আগে ও পরে – এস এম মাসুদ রানা রবি

›› সম্পুর্ণ গল্প  

তানিয়া ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সালামকে। বিয়ের সতেরো দিন পর সালামকে চলে যেতে হলো জীবিকার তাগিদে ইটালি ।
সালাম ইটালি যাওয়ার তিন দিন আগে থেকে তানিয়া শোকে পাথর হয়ে গেল । বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল। আমরন অনশন শুরু করল। এয়ারপোর্টে সি-অফ করতে গিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে ঝাপ দিল। এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন থেকে দৌড়ে এসে আবার তানিয়াকে সালাম জড়িয়ে ধরল। সবাই ভাবছিল, সালাম ইটালি চলে গেলে হয়তো তানিয়া বাচবে না। কারণ সালাম প্রতি দুই বছর পর পর ছুটি পেলে বাংলাদেশে আসত ।
সালাম ইটালি চলে যাওয়ার পর তানিয়া নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিল। সারাক্ষণ মন মরা হয়ে পড়ে থাকত। চোখের নিচে কালি পড়ল। কোনো কিছুই তাকে আনন্দ দিতে পারত না। কারো সঙ্গে তানিয়া মিশত না । টিভি দেখা, গান শোনা, শপিং করা আর বাইরে খাওয়া ছিল তার শখ। কিন্তু তখন তানিয়া টিভি দেখা, গান শোনা, শপিংয়ে যাওয়া, বাইরে খাওয়া, সব বন্ধ করে দিল । কোনো কিছুই তার ভালো লাগত না। মন মরা তানিয়ার মন পড়ে থাকত সুদূর ইটালিতে, সালামের কাছে। সালামের প্রতি তানিয়ার এই প্রেমকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে Calf Love (কাফ লাভ)।
ষোলো বছরের মেয়ে তানিয়া। টগবগে যৌবন। এই বয়সে তানিয়ার বিয়ে হয়ে গেল। Calf Love-কে মনোবিজ্ঞানীরা বলে, এই প্রেমে প্রচণ্ড আবেগ থাকে, কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী।
এমনই এক সময়ে তানিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। আমার ঘরের জানালা আর তানিয়ার বারান্দা মুখোমুখি ছিল । তখন ছিল শীতকাল। কুয়াশায় ঢাকা ছিল সারা শহর । শীতের সকালে চাদর মুড়ি দিয়ে বারান্দার চেয়ারে এসে বসল তানিয়া। হাতে চায়ের কাপ। কিছুক্ষণ পরপর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল সে। এমন সময় আমার ঘুম ভাঙল । আলস্য ভরা শরীরে জানালা খুললাম। শীতের ঝটকা হাওয়ার সঙ্গে তানিয়ার প্রথম দর্শন লাভ করলাম। প্রথম দর্শনে প্রেম হলো না, কিন্তু ভালো লাগল আমার। তানিয়া একবার আমার ওপর চোখ রেখে চোখ সরিয়ে নিল। আমি বেহায়ার মতো তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
কিছুদিন এভাবে চলল। আমি জানালা দিয়ে উকি দিলেই তানিয়া বারান্দা ছেড়ে ঘড়ের ভেতর চলে যেত। সে খুব ভালো শিস দিতে পারত। দিনের বেশির ভাগ সময় সে বারান্দায় থাকত। নিজ মনে গুনগুন করে গান গাইত আর শিস বাজাত। গুনগুনানি আর শিসের শব্দেই তার উপস্থিতি টের পেতাম। তার আর এক সঙ্গী থাকত বারান্দায়, তার সঙ্গে। সেটা হলো তার সবুজ টিয়া পাখি। প্রথম প্রথম আমাকে উপেক্ষা করলেও ধীরে ধীরে তানিয়াও আমার চোখে চোখ রাখতে শুরু করল। তখন আমাদের মুখে মুখে কথা হতো না, কথা হতো মনে মনে আর চোখে চোখে। আমি তার চোখের ভাষা বুঝতাম । তানিয়ার দৃষ্টিতে ছিল দুরন্ত কামনা। চোখ যে মনের কথা বলে। চোখে চোখ রাখা শুধু নয় । চোখের ভাষা বুঝতে হলে মনের মতো মন থাকা চাই । আমার ও তেমন মন ছিল । এরপর অল্প অল্প করে কথা।
আগে সন্ধ্যার সময় শীতের বাতাস আর মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তানিয়া বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিত সকালে আবার দরজা খুলত। কিন্তু আমার সঙ্গে সখ্য হওয়ার পর সব সময় দরজা খোলা রাখত। একটু পরপর বারান্দায় এসে উকি দিত। আমাকে দেখত। আমার খোজ নিত। মাঝে মাঝে চকলেট, চুইংগাম জানালা দিয়ে ছুড়ে মারত। ছুড়ে দিয়েই লজ্জায় দৌড়ে চলে যেত ।
রোজার সময় ইফতারের মুহূর্তে তানিয়া আচলে করে পেয়াজু, ছোলা, খেজুর, আপেল নিয়ে এসে আমাকে বারান্দায় দিয়ে দিত। আমার কাছে দেয়াশলাই না থাকলে তার কাছ থেকে ধার নিয়ে সিগারেট ধরাতাম। দুজন মুখোমুখি দাড়িয়ে থাকতাম জানালা আর বারান্দার গুল ধরে। আমি সিগারেটের ধোয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে তার মুখে ছুড়ে মারতাম। সে হাত দিয়ে ধোয়া সরিয়ে বলত, উফ। অসভ্য কোথাকার।
তানিয়াকে জিজ্ঞাসা করতাম, তুমি আমাকে ভালোবাসো?
সে বলত, মন তো একজনকে দিয়ে দিয়েছি। এক মন কতজনকে দেওয়া যায়? যাকে মন দিয়েছি তার নাম সালাম। আমার হাজব্যান্ড । ইটালি থাকে ।
যদি সালামকে ভালোবাসো তাহলে আমি তোমার কে? তোমাকেও ভালোবাসি। সালাম আমার
হৃৎপিণ্ডের এক অংশ, অলিন্দ। আর তুমি আমার হৃৎপিণ্ডের অন্য অংশ, নিলয়। মাঝে মাঝে বারান্দার গুল দিয়ে তানিয়া আমার হাত ধরে অন্ধকারে চুপ করে দাড়িয়ে থাকত। রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলত রেডিওতে ভূত এফএম শুনতে ।
একদিন তানিয়া কম্বলের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে, বাতি নিভিয়ে এফএম রেডিওতে ভূতের গল্প শুনছিল । নিজে নিজে সাসপেনস আর ক্লাইমেক্স এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে বলল, আমার খুব ভয় করছে। আমি দৌড়ে জানালার কাছে গেলাম। তানিয়া বারান্দার দরজা খুলে আমার কাছে এসে আমার হাতটি ধরল । বলল, খুব ভয় লাগছে । আমি একা ঘুমাতে পারব না। তুমি এসো। বললাম, পাগল হয়েছে? এত রাতে মেইন
গেইট লাগিয়ে দিয়েছে। কি করে আমি তোমার বিলডিংয়ের তিন তলায় উঠব? তা ছাড়া তোমার বাবা-মা আছে ঘরে। তারা টের পেলে কি হবে? আব্বু-আম্মু পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে। কেউ টের পাবে না।
সেদিন আমি জীবনের ঝুকি নিয়ে তিন তলায় উঠলাম। তানিয়ার রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগল সে। দীর্ঘদিনের সুপ্ত কামনার বিস্ফোরণ ঘটল ।
তানিয়া বলল, সালাম আমাকে বিয়ে করার পর আদর করে যৌবনের আগুন জ্বলা শুরু করে দিয়ে গেছে। এখন আমি যৌবন জ্বালায় ধুকে ধুকে মরছি। আজ তুমি এত এত আদর করে সেই আগুন নিভিয়ে দিয়ে যাবে।
তাকে কাছে পেয়ে আমিও পাগলের মতো আদর করলাম। তার সর্বাঙ্গে আদর করলাম। চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিলাম। সে বলল, আজ তোমার আমার বাসর রাত। হিন্দিতে যাকে বলে সোহাগ রাত্রি।
আরো বলল, মাঝে মাঝে সালামের ওপর খুব রাগ হয়। কারণ, আমাকে আদর করা শিখিয়েছে সে। সেক্স কি জিনিস আমি জানতাম না। বিয়ের পর আমার হাজব্যান্ড সালাম সেক্স করা শিখিয়েছে। সেক্স করে
এত মজা, তা বিয়ের আগে জানতাম না । কিন্তু এখন আমাকে ছেড়ে সে সুদূর প্রবাসে পড়ে আছে । এখন আমি ঘরে বসে সেক্স করার জন্য যৌবন জ্বালায় ছটফট করি । কিন্তু সালামকে পাই না। তোমাকে ভালোবেসে আমার শরীর আর মনের নতুন সঙ্গী খুজে পেয়েছি। এখন আবার আমরা হারিয়ে যাব আনন্দে ।
সেদিন সারা রাত একসঙ্গে ছিলাম ।
পরদিন রাতে সে বলল, আমার একা ঘুমাতে ভয় করছে। বললাম, তোমার ঘরের ডিমলাইটটা দাও । আমার ডিমলাইট ফিউজড। ডিমলাইট জ্বালিয়ে ঘুমালে আর ভয় করবে না।
এভাবে আমাদের সুখের দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল।
একদিন তানিয়া মন খারাপ করে বলল, আগামী সপ্তাহে ইটালি চলে যেতে হবে।
আমার নলা হস্তা চলে এসেছে ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নলা হস্তা মানে কি?
নলা হস্তা ইটালিয়ান শব্দ। এর মানে ইটালিতে ইমিগ্রান্ট হওয়ার অনুমতি। সালাম ইটালি থেকে নলা হস্তা আর অনলাইনে টিকেটে করে দিয়েছে।
আমি খুব কষ্ট পেলাম। বললাম, ইটালিতে যখন সালামের কাছে চলে যাবে তখন আমাকে কেন মন দিয়েছিলে? যদি আমাকে ভালো না লাগে তাহলে মন না-ই দিতে।
তানিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ল । সে বলল, মেয়েদের স্বামীর কাছে যেতেই হয়। আমার আর কোনো
উপায় নেই। যত দূরে যাই না কেন, তোমাকে ভুলব না। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হবে । তা ছাড়া এক বছর পরপর দেশে আসব। তখন আমাদের দেখা হবে। সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তুমি বিয়ে করো।