দ্বিতীয় রিপু – অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

…..রিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করে এত খুশি হল যে, মিলিকে ধরে টকাস টকাস করে চুমু খেল। সেদিন রাত পর্যন্ত ওরা গল্প করছিল। ডবল বেড খাট। ওদের গায়ে কম্বল ঢাকা ছিল। কম্বলের মধ্যে দিয়ে রিয়া মিলির বুকে হাত দিল, তারপর ওর বুক টিপতে লাগল। মিলি বলল, “এটা কী হচ্ছে?” মিলি যতবার রিয়ার হাত সরিয়ে দিচ্ছে, ততবার রিয়া চোখ মটকে মিলির দিকে তাকিয়ে ওর বুক টিপছে। শেষপর্যন্ত মিলি ওর কম্বল নিয়ে সোফায় গিয়ে আধা-শোয়া হয়ে রইল।…..

….রিয়া ছুটতে ছুটতে এসে ওকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যাতে রিয়ার বুকের চাপ মিলি অনুভব করে। মিলির মাথা গরম হয়ে গেল।……

……মিলি কাঁদতে কাঁদতে কিছু বলার চেষ্টা করল, পারল না। রিয়াই যে ওর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে সেটুকুও বলতে পারল না। কী করে পারবে? মিলি ভাবল, যখন ঘটেছিল তখন বলা উচিত ছিল। এখন বললেই সবাই বলবে, তখন বলোনি কেন? আরও প্রশ্ন করবে। তা হলে তুমি কি সত্যিই ছেলে যে রিয়া তোমার সঙ্গে সেক্স করতে গেল? নাকি রিয়াকে তুমি লেসবিয়ান বলতে চাইছ?….

….পুলিশ আর ফোটোগ্রাফারদের ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই পুলিশ ওর পেছনে হাত দিয়ে জোর করে জিপে তুলে দিল। মিলি প্যান্টিতে পুলিশের হাতের ছোঁয়া অনুভব করল। পুলিশ ওর জিনসের ঠিক সেই জায়গাটাতেই হাত দিয়েছে যেখান থেকে মিলি পুলিশের হাতের ছোঁয়া বুঝতে পারে। ওকে গ্রেপ্তার করতে কোনও মহিলা পুলিশ পাঠানো হয়নি।…..

…..পুরুষ পুলিশ নামানোর সময়ে ওর ছোট ছোট বুকের ওপর হাত বুলিয়ে দিল। ওর ভুরু কুঁচকে গেলেও মুখ দিয়ে কোনও কথা ফুটল না। ওর বুক ছেলেদের মতো চ্যাটালো কি না তা পরীক্ষা করতে চাইছে পুলিশ!…..

…..তিনি বলতে শুরু করলেন, “অভিযুক্তের বুক নারীর মতো, তা যতটা সাধারণত বেড়ে ওঠে এক্ষেত্রে তেমন হয়নি। কিন্তু তাতে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। তার ভেতরের শরীরটাও নারীর। যে-কোনও নারীর মতোই তার যৌন অঙ্গ।….

….“কোর্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিপে ওঠানো ও নামানোর সময়ে টি-শার্টের ওপর দিয়ে আমার বুকে ইচ্ছাকৃতভাবে হাত লাগানো হয়েছে। প্যান্টের ওপর দিয়ে যোনিতে হাত দিয়েছে। পাছায় হাত দিয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা
সরকারি হাসপাতালে পুলিশ আমার সঙ্গে বর্বরোচিত ব্যবহার করেছে। ডাক্তার মিসেস বিনতা পালের চেম্বারে আমার জামাকাপড় খুলিয়ে পরীক্ষার সময়ে তিনজন পুরুষ পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা বীরবিক্রমে আমাকে বলে টি-শার্ট খোলো, প্যান্ট খোলো, প্যান্টের জিপার টেনে নামিয়ে দেয়। আমাকে প্যান্টি খুলতে বলে। প্যান্ট খোলার সময় জুতো খুলতে হয়েছিল। তারা বলে মোজা খোলো। ডাক্তার পাল তখনও ঘরে আসেনি। তারা বলে, তোমাকে রেডি রাখছি। আমি ওই অবস্থায় দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার পালের চেম্বারের বেডের চাদর নিয়ে নিজেকে জড়াই। সেই সময় ডাক্তার পাল ঢোকেন এবং একজনও মহিলা পুলিশ ছিল না দেখে অবাক হন আর তিন পুরুষ পুলিশকে ঘর থেকে বের করে দেন। তখন আমি অভিযুক্ত ছিলাম। অপরাধী হলেও কি এ কাজ কোনও মহিলার সঙ্গে করা যায়?”…..

….মিলি ঘাড় নাড়ল আর মনে মনে বলল, যারা জিপে ওঠানো নামানোর ফাঁকে আমার পেট, বুক, পাছায় হাত লাগিয়েছে, যেসব পুলিশ পরীক্ষার নামে আমাকে নগ্ন করেছে তাদের ছবি আমার বুকে বিঁধে আছে। যতজন পুলিশকেই টিআই প্যারেড দাঁড় করানো হোক না কেন, আমি অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারব। তখন আমি ভয়, ঘৃণায়, লজ্জায়, কুণ্ঠায় কুঁকড়ে ছিলাম। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করেছি। আর নয়।….

….তখনও সেই পুলিশটির মুখে নির্বিকার ভাব। যেন কোনও কিছুই ঘটেনি। এমন নির্লিপ্ত মুখ। মিলির সামনে ফুটে উঠল সেই ছবি। সেই ধূর্ত, লোভী চোখ, সেই দাড়ি গোঁফ কামানো মুখ।…..

…..তার বুকে হাত বুলিয়ে স্তন খামচানোর চেষ্টা করছিল।
লাইন দিয়ে শনাক্তকরণ চলছে। এর মুখই-বা সে কী করে ভুলবে? বাঁহাত দিয়ে তাকে জিপে তুলছিল আর ডান হাতে প্যান্টের ওপর দিয়ে তার যোনিতে ধাক্কা মেরেছে।…..