………দাওয়ার নীচে, ঘাস-মাটির ওপরে জানবসে ছিল এক রমণী । সে যে দীর্ঘাঙ্গী, বসে থাকা অবস্থায়ও বােঝা যায়। গায়ে তার জামা নেই । ক্ষীণ কটির ওপরে কালাে পাড় নীল ময়লা শাড়ির বন্ধনী। ঈষৎ নম্র হলেও, তর্ক শাড়ি ঢাকা বুক দেখাচ্ছে উদ্ধত । এবং অপরিমেয় যৌবন যেন তার সর্বাঙ্গেই উদ্ধত হয়ে আছে । তার মেদহীন দু হাতে শ্রমের বলিষ্ঠতায় রমণীয় কোমলতাও লক্ষণীয়। মাথার রুক্ষ চুলে কোনাে সিথি চোখে পড়ে না। ঘাড়ের কাছে আলগা খোঁপায় জড়ানাে চুল। চোখ দুটি কালাে ডাগর, নাক বসা, ঠোঁট দুটি পুষ্ট । একটা আলগা শ্ৰী আছে তার মুখে ।……
…….আরক্ত ভাের নদীর দক্ষিণ কূল ঘেঁষে কলকল শব্দ । ঐদিকে জলধারা বহে। পূর্বগামিনী গন্ধেশ্বরীর উত্তরের অধিকাংশ বুক জুড়ে বালু কেবল বালুবালুচর। দক্ষিণের তীর ঘেঁষে আঁকাবাঁকাজলস্রোত । কলকল বহে। সেই জলে ওরা কেউ কেউ এখনও গা ডুবিয়ে আছে। কেউ কেউ জল ছেড়ে বালিচরে উঠেছে। আদুড় গা ভেজা। ভেজা চুল থেকে জল পড়ছে টুপিয়ে । এখনও পুবের ঘন বন, শালতালের মাথার ওপরে আকাশ লাল। সূর্য ওঠেনি । অথচ আকাশের লাল ছটায় যেন রােদের। উজ্জ্বলতা । সেই ছটা ওদের কল্লাজ রঙ-ভেজা গায়ে। গাঢ় তামাটে রঙের কাঁকরে মেশানাে পাথরের টুকরাে কল্লাজ, একটু বা রক্তিম । ওদের গায়ের রঙ সেই রকম । আকাশের লাল ছটায়, আরও লাল দেখাচ্ছে ওদের ভেজা শরীর । ওদের মেদহীন নাভিস্থলের নিচে, ভেজা শাড়ি বস্তিদেশ ছুঁয়েছে । কারাে উদ্ধত, কারাে বা ঈষৎ নম্র বুকে ভেজা চুল থেকে টুপিয়ে জল পড়ছে । বুক থেকে টুপিয়ে পড়ছে নাভিদেশে । ক্ষীণ কটি, গুরু নিতম্ব। বলিষ্ঠ বাহু। চওড়া কাঁধ। কঠিন শ্রম দিয়ে গড়া ওদের শরীর । শ্রমই দিয়েছে লালিত্য । দিয়েছে ঔদ্ধত্যের শ্রী। শাড়ির অর্ধেক অংশ নিঙড়ে ওরা চুল মুছছে। শরীর মুছছে। এখনও যারা জলে গা ডুবিয়ে আছে, তারা এর ওর গায়ে জল ছিটিয়ে দিচ্ছে। শাড়ির ভেজা আঁচল দিয়ে হাত ঘাড় গলা মুখ শরীর মাজছে । জলের স্রোতের কলকল শব্দ ছাপিয়ে হেসে উঠছে। নিজেদের মধ্যে কী কথা বলাবলি করছে। খিলখিল হাসছে । যারা জল ছেড়ে উঠেছে, তারা সম্ভবত তাড়া দেয়। সবাই একে একে উঠে আসে জল থেকে । অর্ধেক শাড়ি নিঙড়ে আদুড় গা মােছে। মাথা মােছে । সবই খুব তাড়াতাড়ি। ঝটিতি তুলে নিচ্ছে শুকানাে শাড়ি। পলকে ভেজা শাড়ি খুলে, শুকনাে শাড়ি জড়িয়ে নিচ্ছে গায়ে। ভেজা শাড়ি জলে ভয়ে, গােটাটা আবার নিঙড়ে নিচ্ছে। তুলে নিচ্ছে পায়ের কাছে রাখা দু-একটা পুঁটলি। ভেড়ি বাতাসে উড়িয়ে, দৌড়চ্ছে। ……..
……..পচার গলির রাস্তায় ঢুকে, আবার এক ঘা কষালাে রামকিঙ্করের পিঠে। পচার পাড়, বেশ্যাপল্লী । ইস্কুলে যাবার সংক্ষিপ্ত পথ । রামকিঙ্কর এই রাস্তা দিয়েই ইস্কুলে যায় । বড় একটা পুকুর। পুকুর ঘিরে, মৌমাছির চাকের মতাে ঘিঞ্জি ঘর। পল্লীবাসিনীরা এই সময় বেশির ভাগ ঘাটে ঘাটে কাপড় কাচে। যাদের রাতের ঘাের কাটে না, তারা প্রায় নগ্ন শরীর নিয়ে ঘরের দরজার সামনে বসে থাকে। কোলের ছেলেমেয়েরা মায়েদের খালি বুকের ওপর পড়ে, কুকুরছানার মতাে স্তন চোষে। কেউ স্নান করে আদুড় গায়ে । নিজেদের সীমানায় তারা লজ্জা-সহবতের ধার ধারে না । দারিদ্র্য আর দুভাগ্যের মধ্যে উৎকট নগ্নতা । হাসি ঝগড়া গান, কী না হচ্ছে। এ সময়টা রােজগারের না। সাজগােজও নেই।……..
…….বসন্তবালার মাথার ঘােমটা খােলা। মেয়ে-বউদের জামা গায়ে দেবার প্রচলন নেই এই পরিবারে। নেই উচ্চ কোটির পরিবারের স্ত্রীলোেকদেরও, বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়া । শিশুটি ভাতের থালা ছেড়ে এখন মায়ের কোলে চেপেছে। বুকের কাপড় টেনে খুলতে চেষ্টা করছে। অথচ বুকে দুধ নেই। কিন্তু দিবাকর এখনও মায়ের স্তন না চুষে থাকতে পারে না । দুধের তৃষ্ণা থেকেও শােষণের তৃষ্ণা বেশি । অনেকটা নেশার মতাে। বউদি হাসছে, ‘আহ, ই বিটাকে লিয়ে আর পারি নাই। আমাকে ছিড়ে খায় । ইয়ার লাতুন দাঁত সুড়সুড় করে। বঁটায় কাটে। রামকিঙ্কর সেদিকে একবার দেখলাে। বউদির ভরাট বুকের এক দিক আঁচলের বাইরে। রামকিঙ্করের চোখে নতুন কিছু না। বউদিরও কোনাে লজ্জার অবকাশ নেই ওর কাছে । ওর চোখে মা আর বউদির মধ্যে কোনাে প্রভেদ নেই । ও সদর দরজার দিকে চলে গেল।……..
……পত্রিকার ছবি দেখেই, ও প্রথম তেল রঙের ছবি এঁকেছিল । রূপসী এক মেয়ে। ডাগর তার চোখ । টিকলাে নাক । কোঁকড়ানাে চুলের রাশি আলুলায়িত । গায়ের জামার বাইরে কাঁধ অনেকখানি খােলা। বুকের যেখানে জামার কুচির সঙ্গে ফিতের বন্ধনী, সেখানে স্তনযুগলের অংশত দেখা যায় । তারপরেই জামায় ঢাকা পীন বক্ষ । সেখান থেকে কোমরের দিকে সুগঠিত শরীর যেন ত্রিকোণের মতাে নেমেছে। কিন্তু নাভিস্থলের আগেই ছবি শেষ ।……….