টিনএজার – কাজী জহুরুল হক

›› সম্পুর্ণ গল্প  

লাল, নীল, সবুজ, কালো ও সাদা রং-এর বাহারে কলেজটার প্রাংগণ মুখর । ছ ফুট চওড়া করিডোরের বুকে সাদা, চকোলেট, লাল ও কালো স্যান্ডেল জড়ানো মেয়েদের উপস্থিতি। তদুপরি তাদের পাঁচমিশেলি সুরের মূর্ছনায় আমি ও আমার বন্ধু ডঃ আনোয়ার যখোন কলেজটার অফিসের দিকে প্রধাবিত হয়েছি, তখোন কতকগুলো উক্তি আমাদের কানের শাসিতে রিফ্লেক্ট করলো : ‘বাহ্, চমোৎকার, লিলি, দেনা একটা ধাক্কা লাগিয়ে ।’
চমকে উঠলাম। অনেক মেয়ের ভীড়ে যে পথ বেয়ে চলেছি ত৷ পায়ে চলার পথ নয় । ডান ও বাঁ দিকে এলোমেলো ভঙিতে দাঁড়িয়ে পড়া ছাত্রীদের শাড়ীর ভাঁজ থেকে কনক, কান্তা, প্যাট্র। অথবা ইভিনিং ইন প্যারিস-এর গন্ধের হাটে আমার ও ডঃ আনোয়ার-এর নাক জ্বালা করছিলো ।
জনৈক আত্মীয়ার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার এডমিট কার্ড আনয়নের মানসে উক্ত কলেজে আমরা এসেছি। সকাল এগারটার ঝাঁঝালো রোদের রাজ্যে ডঃ আনোয়ার-এর ডাটসান গাড়ীটা যখোন কলেজটার পরচ্-এ রিদমিক হর্ণ দিয়ে দিয়ে থামলো, তখোন পরটার চারদিকে মেয়েদের মেলা বসেছে।
স্টীয়ারিং ছেড়ে গাড়ীর দরোজা বন্ধ করে ডঃ আনোয়ার যখোন কলেজটার সিঁড়িতে পা রাখলো, আমি তখোন বারান্দায় উঠে গেছি।
‘মলি দেখেছিল, ওরা কেমন ফিল্ডিংবাজ ? নিশ্চয়ই ফিল্ডিং মারতে এসেছে’- চমকে তাকিয়ে দেখি, যিনি উক্তি করছেন তিনি একজন অজস্তা স্টাইলের ফ্যাসন গার্ল। হাতে গুটি কতক বই। এক বিঘৎ ব্লাউজের উপর ও নীচে লাক্স সাবানের মতো চামড়া। পেঁচিয়ে পড়া শাড়ী মেয়েটির দেহ বল্লরী নগ্ন করে তুলেছে।
লন্ডনের পি এইচ ডি ধারী ডঃ আনোয়ার পরবর্তী সময়ে যখোন কলেজ প্রাক্ষণ পেরিয়ে ঘরমুখো হলো, তখোন বলেছিলো, ‘শফিক, বাংলাদেশের মেয়েরা লন্ডনকে দেখছি হার মানিয়েছে।’ হাফ ন্যাকেড এ টিনএজারগুলো থেকে ফুল ন্যাকেড মেয়েদের বডি অনেক নিষ্প্রভ ।
কলেজের অফিস কক্ষেও মেয়েদের বাজার দেখলাম। পরীক্ষার্থিনীদের যারা আত্মীয় তাঁরা হন্যে হয়ে রোল নাম্বার খুঁজছেন। কারণ, রোল নাম্বার ছাড়া এডমিট-এর হদিস মেলা মুশকিল । ছাত্রী ভর্তি অফিস কক্ষে রোল নাম্বারের বড়ে৷ কাগজগুলো থেকে আমার আত্মীয়ার রোল যখোন খুঁজতে যাবো দেখি ড: আনোয়ারকে এক ছাত্রী চ্যালেঞ্জ করে বসেছে।
‘ধাক্কা মারলেন কেন ?
সঙ্গে সঙ্গে ওদের দলের অনেকের সমর্থন ।
ডঃ আনোয়ার বললো, ‘মাফ করবেন, আমি ধাক্কা দেইনি। অনেক ধাক্কার রিজালটেন্ট-এ আপনি আক্রান্ত হয়েছেন।’
মেয়েটি আরও চটলো ।
চেয়ে দেখি তিনিও ফ্যাসান গার্ল। বুকের উপরিভাগ ব্লাউজের সীমা পেরিয়ে স্ফীত হয়ে কলেজের ছাদ দেখতে ব্যস্ত। নাভী থেকে আরও সরে গেছে পাতলা শাড়ীটা ।
এগিয়ে গেলাম। ডঃ আনোয়ারকে বাঁচাতে যেয়ে বললাম, ‘দেখুন, এতো লোকের ভীড়ে ধাক্কাটা লেগেছে। মনে কিছু করবেন না।’
মেয়েটির দলীয়রা কি যেন ভাবলো। বললো, ‘রীণা, থাক, চলে আয়।’ এডমিড কার্ড নিয়ে যখোন চলে আসি তখোন ‘গো গো সানগ্লাস ও গলায় চালান দেয়া ওড়না পরিহিতা দু’জন একে অপরকে ধাক্কা মেরে বললো, ‘তোর কি মনে হয় ওরা এডমিট কার্ড নিতে এসেছে ?’
‘এডমিট কার্ড না ছাই, ফিল্ডিং সাহেবরা ফিল্ডিং দিতে এসেছেন’— কলহাস্যে সাথীটি জবাব দিলো ।
আমি ও ডঃ আনোয়ার হতবাক। যারা আমাদেরকে ফিল্ডিংবাজ বলে আখ্যায়িত করলো তারা কিন্তু আলট্রা মডার্ন। নগ্ন নারী দেহ শাড়ী ও ব্লাউজের ভাঁজে ভাঁজে জঘন্যভাবে প্রকাশ করে অশোভনীয় ভাষায় বিক্ষিপ্ত কথা ছুঁড়ে আমাদেরকে হয়ত স্মরণ করাতে চাইলো —’দেখো বাংলাদেশের মেয়েরা কতো প্রগতিশীলা হয়েছে। তোমরা যারা পুরুষ, তাদের সাথে কেমোন চমোৎকারভাবে চলতে শিখেছে।’
কদিন আগে আমার এক বন্ধুকে বলতে শুনেছি— ‘জানিস শফিক, য়ুনিভার্সিটির কোন এক মেয়েকে নাভীতে ফুল রেখে আমি ন্যু মার্কেটে হাটতে দেখেছি৷
আশ্চর্য, এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সন্তানের জননী, এরাই আমাদের বোন, কারও ভাগিনী, ভাইয়ের মেয়ে, বয়োজ্যেষ্ঠ আমার কোন কলিগের হয়ত ‘কন্যা।