জাহান্নাম – কাজী জহুরুল হক

›› সম্পুর্ণ গল্প  

বিদেশী সংগীত, গ্লাসের টুং টাং, চিয়ার্স-এর কোরাস ঘরটাকে অনেক শয়তানের মেস বানিয়েছে ।
স্টেজে নাচছে মিস ম্যাকসন ও মিস এনজেল । মাংসোল দেহ জড়িয়ে দু’ টুকরো কাপড় । পুষ্ট যৌবনকে ধরে রাখতে ক্লান্তিতে নেয়ে চামড়া কামড়ে ধরেছে। চন্দন ওদিকে তাকায়। চন্দন আহমেদ – বিসনেস ম্যাগনেট । জনিওয়াকার ও ব্লাক এণ্ড হোয়াইট-এর পাচ-এ ওর চোখে আগুন জ্বলছে । সামনে জাফর—জাফর রেহমান, সি. এস. পি । ওর হান্‌নামের সঙ্গী। ম্যাকসন ও এনজেলের থ্রি কোয়ার্টার উদলা বুকের দিকে তাকিয়ে এভারেস্ট কল্পনা করছে আর জন হেগ গিলছে। এক সময় চন্দনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘রিয়েলি বিউটিফুল।
মাথ৷ হেলে চন্দন ওকে সাপোর্ট করে। চমোৎকার মিস ম্যাকসন ও মিস এনজেল। বাজনার তালে তালে নাচছে ওরা। বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ছে—যেনো যৌবন গলে গলে পড়ছে ।
এক সময় ওরা বেরিয়ে যায়। হোটেলটার ডানদিকে পার্ক করা ফোক্‌স ওয়াগেনটায় চেপে বসে। গাড়ী এগিয়ে চলে। হেড লাইট জলছে—যেনো হায়েনার চোখ ।
মুচকে হাসে জাফর। হিক্কা ছেড়ে চন্দনকে বলে। মিস ম্যাকসন তোর, মিস এনজেল আমার-ডেট করতে হয়।
চন্দন জাফরের দিকে তাকায়। লাল করাজার মতো চোখ মেলে বলে, ‘হাঁ, যতো তাড়াতাড়ি ডেট কর।’
গাড়ী চলে ন্যু মার্কেট ছেড়ে সাইন্‌স লেবোরেটরির পাশ কাটিয়ে । যেন শয়তানের রথ চলছে।
জাফরকে লিফট দিয়ে চন্দন যখোন বাড়ী ফিরলো তখোন রতি অনেক। দারোয়ান গেট খুলে পাশে এসে দাঁড়ালো। গ্যারেজে গাড়ী রেখে জমকালো বিছানায় গা ছুঁড়ে দিলো চন্দন ।
মিস ম্যাকসন ও এনজেল তখনো ওর চোখ আগুনের হলকায় পুড়ে মারছে। শকুনের মতো কামড়ে, দুমড়ে, ছিঁড়ে, গিলে খেতে ইচ্ছে হলো চন্দনের ।

পরদিন সকাল–রোববারের আলসে সকাল । সূর্যের নরোম রোদ ভেনটিলেটর গলিয়ে চন্দনকে চুমিয়ে তুলেছে তুলেছে। চন্দন উঠলো। বাথরুমে গেলো, সেভ করলো। ব্রেকফাস্ট করতে বসলো ট্রাপিজয়ডাল টেবিলে । কালকের কথা মনে করে চন্দন হাসে। এক কালের চন্দন—মাদ্রাসার ছাত্র চন্দন মরে ভুত হয়ে আবার জন্মেছে। শয়তানের বন্ধু হয়ে জাহান্নামে বাড়ী বানাতে ব্যস্ত। হাসে চন্দন। লাল কুসুমের প্রলেপে টোস্ট লেপটে অতীতের হাত ধরে টানতে থাকে ৷
ছোট চুল, গম্বুজের মতে। টুপী, পাজামা-পাঞ্জাবীতে ড্রেস করা চন্দন মাত্র আট বছর বয়সে কোরান শেষ করে বড়ো কিতাব ধরেছে। আজান দিয়ে নামাজ পড়ে । গজল গাঁয়। অথোচ, আজকের চন্দন ! একটা পিচাশের ডিপো, নাকি আস্ত একটা জানোয়ার ?
কেনো এমন হয় ? গ্রীন স্পট চা ও লেবুর রসের ককটেলে চমক দিয়ে ভাবতে থাকে চন্দন। তার মৃত্যু ও পুনর্জন্ম এর জন্য কাকে দায়িত্বের কাতারে ফেলা যায়! হিসেব কষে চন্দন । অনেকগুলো মুখ। কটি? তিন তিনটি—ক্রমশঃ ঘোলাটে থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে। নাজমা, কেয়া ও সীমা। ব্যালেন্‌স নিয়ে বসে চন্দন । মেপে দেখে দোষ কার কতো বেশী। ঘেমে উঠে চন্দন । কপালের দুপাশ দিয়ে দর দর করে ঘাম গড়িয়ে পড়ে।
তখোন কি সাল! বায়ান্ন না তিপান্ন ? মাদ্রাসা ছেড়ে স্কুলে ঢুকলো চন্দন। কামরান আহমেদের একমাত্র সন্তান চন্দন আহমেদ মাদ্রাসা ছেড়েছে মা-র পরামর্শে।
মা বলেছেন, আলেম হয়ে কাজ নেই। স্কুলে পড়ে ইনজিনিআর বা সি. এস. পি হও।’
রেগে উঠেছেন কামরান আহমেদ । স্ত্রীকে শাসিয়েছেন। বলেছেন – ‘না, ছেলে আমার আলেম হবে। রোজা নামাজ করে আখেরাতের ফসল বুনে যাবে। তোমার আমার গোরাজাব কমানোর জন্য চন্দন মৌলানা হবে।’
কিন্তু পারেন নি কামরান আহমেদ। স্ত্রীরা শাসন করেছে স্বামীকে। এ চিরন্তন। অফিসে যে সাহেব বড়ো খিটখিটে, পদ্মার মতো গর্জন করে— ঘরে এসে স্ত্রীর কাছে তিনি শীতলক্ষ্মা, নম্র, সুবোধ। কামরান আহমেদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তারপর এক এক করে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠেছে চন্দন। ম্যাট্রিক-এ থার্ড হলো সে। অঙ্ক, বিজ্ঞান-এর পাশে কোরান-হাদিস চলছিল সমানতালে ।
গ্রামের উদার ছেলে চন্দন ঢাকা এলো। ন্যু মার্কেট, বায়তুল মোকাররম ওকে অনেক প্রেম নিয়ে বরণ করলো। নটারডেম কলেজের ছাত্র চন্দন আহমেদ অনেকের সাথে মিশলো ৷ ঢোলা পাঞ্জাবী, পা-জামা, টুপি চন্দনকে যেন কাতর স্বরে বললো, ‘এবার আমাদেরকে বিদায় দিন।’
চন্দন ওদেরকে ছাড়তে চায়নি। কিন্তু তবুও ছেড়েছিল। ছেড়েছিলে৷ ভাবতে যেয়ে চন্দন দেখলো, শ্যামলী একটা মেয়ে হাসছে। কপালের এক পাশে ছোট্ট একটা তিল। কোকরানো চুলে করবী। সালোয়ার কামিজে অপূর্ব নাজমা। চন্দনের চোখে চোখ রেখে বললো, ‘তুমি বড় সেকেলে চন্দন।
কৈশোর ও যৌবনের মাঝখানে থমকে দাঁড়ানো চন্দনের মাথায় কে যেন বলে গেলো—‘হা চন্দন, যুগের সাথে তাল রেখে চলো ।
চন্দন বেসামাল হলো। নাজমাকে ওর ভাল লাগলো । হলিক্রস কলে- জের ছাত্রী নাজমা আর নটারডেন কলেজের ছাত্র চন্দন প্রেমের জোয়ারে ভাসলো । বিজনেস ম্যাগনেট আলতাফ চৌধুরীর আদুরে কন্য। নাজমা যেন বিংশ শতাব্দীর একটা মূল্যবান প্রতীক-তাকে নিয়ে ইতিহাস রচনা করা যায়।
অনেকট। এক বয়সী নাজমা চন্দনকে টেনেছে হাত ধরে। এক কালের ভীরু চন্দনকে চটপটে বানিয়েছে। চ্যু চিন চ্যু, শাহবাগ ইত্যাদিতে নিয়ে নাজমা প্রমাণ করেছে, বর্তমান অতীত হতে অনেক ঝলসানো । বাংলা থেকে ইংরেজী অনেক গভীরতা নিয়ে এসেছে। বাংলা সিনেমা না দেখে কোন ইংরেজী ছবি দেখো চন্দন—মুক্তোর মতো দাঁতগুলো বের করে লাল সিকের ওড়না গলায় চালান দিয়ে জমানো যৌবনকে চন্দনের চোখের তারার কাছে ধরে টেনে টেনে বলেছে নাজমা। আর তখোন ? মাদ্রাসার ছেলে চন্দনের শিরদাঁড়াকে পায়ে চলার পথ বানিয়ে একটা সরীসৃপ যেনো বেয়ে উঠেছে চন্দনের মগোজে !
‘এ ব্রাইড ইজ মাচ টু বিউটিফুল’ – চন্দনকে দেখিয়েছে নাজমা । নাজ-এর ‘আর সি’তে বসে গরোম পোটেটু চিপ্‌স চিবুতে চিবুতে কখনো ডান হাতের উষ্ণ পরশে চন্দনকে খেপিয়ে দিয়েছে। কখনো হলের আধো আলো, আধো অন্ধকারে লিপ্সটিক মাখা ঠোঁট চেপে ধরেছে চন্দনের অনভ্যস্ত ঠোঁট । সৃষ্টি করেছে একটা সফেন সমুদ্র। তারপর? একদিন চন্দনকে নিয়ে। টাইটুং-এর কেবিনে ঢুকে বলেছে, ‘চন্দন, তোমার আমার বিয়ে হতে পারেনা মুক্তি চাইছি ৷ ‘
আশ্চর্য হয়েছে চন্দন। গ্রামের ছেলে চন্দন, উদার চন্দন শহুরে নাজমার ব্যবহারে মর্মাহত হয়েছে। টেনে টেনে বলেছে, ‘কেন বল ত ?’
‘তোমার আমার বয়সের তফাৎ কতটুকু ? তুমি চাইল্ড—ফ্রিজড । তোমায় নির্ভর করা চলেনা। তোমাকে নিয়ে পুতুল খেলা যায়। বন্ধু তুমি হতে পারে।, কিন্তু স্বামী হবার যোগ্য নও ।
চন্দনের গাল টুক করে চুমিয়ে কথাগুলো বলে গেলো নাজমা ৷ কদিন পর চন্দন শুনেছে, নাজমার বিয়ে। বর এম আর সি পি। কেঁদেছে চন্দন। তিন দিন ক্লাশ করেনি। রমনা গার্ডেনের লেকের ধারে বসে আনমনা হয়ে সময় কাটিয়েছে।
ঢং ঢং—নটা বাজলো। দেয়াল ঘড়িটা বড়ো বে আক্কেল — রাগলো চন্দন। অতীতের কঠিন হাতটা ঠিক যেনো নাজমার মতো চলে গেলো । বর্তমানে ফিরে যেয়ে চন্দন দেখলো চা জুড়িয়ে শরবৎ হয়ে গেছে।
ডাইনিং টেবিল ছেড়ে সোফায় বসলো চন্দন। ‘টাইম্‌স’ খুলে দেখতে লাগলো । পিঙ্ক রং-এর পাইপ টেনে সারা ঘরটাকে আঁতুড় ঘর বানালো । সামনের দরোজা দিয়ে কে ঢুকছে? জাফর ? – আয় দোস্ত-চিৎকার করে চন্দন। লেডি কিলার জাফর এসে বসলো চন্দনের পাশে ।
কতক্ষণ গল্প করলো চন্দন আর জাফর রেহমান। মেয়েদের যৌবন নিয়ে আলোচনা। মিস ম্যাকসন এবং মিস এনজেলের উদলা বুক কল্পনার ফিতে দিয়ে মাপলো ওরা। মাংসোল হিপ্ এর অসিলেশন নিয়ে ওরা গান বানালো ।
চল ‘ইয়েস্টারডে টুডে এণ্ড টুমরো? দেখে আসি – সাজেস্ট করলো জাফর । রাজী হলো চন্দন। ক’ মিনিট পর ওদের রথ চললো গুলিস্তানের দিকে।
ড্রেস সার্কেলে বসে পাশ ফিরে দেখে চন্দন—চেনা চেনা কে যেন বসে। তখনো হলের দেয়ালে বানানো তারাগুলো মিট মিট করে জ্বলছে। অতীতটা যেনো কাছে এলো। ভাবলো চন্দন। মিলছে এবার । কেয়া— রোকেয়া কবির। ক’ বছর আগেকার রোকেয়া আজিজ — পুলিশ সুপার আজিজ আহমেদের একমাত্র মেয়ে, তার মগোজে এসে জাহাজ ভিড়ালো । তীরে দাঁড়িয়ে যেনো চন্দন। ধোঁয়াটে সিড়ি বেয়ে কাছে এসে যেনো কেরা বললো, ‘কেমন আছো ?
চমকালো চন্দন, স্বপ্ন সত্য হয়ে হেসে দাঁড়ালো, কেয়া বললো, ‘কতদিন পর দেখা, তাই না ?
জাফর চমকে দেখলো, চন্দন পাশের মেয়েটির সংগে কথা বলছে । খোঁচা দিয়ে যেনো বোঝালো, ‘তুমি যা করছে। —সব দেখছি।’
চন্দন ও কেয়ার মাঝের সিটটা তখনো যেন কাকে খুঁজছে ভাবলো চন্দন, নাকি ওটা চন্দনেরই অভিব্যক্তি? বললো চন্দন, ‘একাই এলে ?
‘না রিমির বাবাও এসেছে। টয়লেট-এ গেলো, কতক্ষণ হলো ।”
আবার চিন্তা করলো চন্দন। রিমি বোধ হয় ওর মেয়ের নাম। সংসার কি ভাবে বদলায়–দেখলো চন্দন। রিমি হয়তো চন্দন ও কেয়ার ভালবাসা দিয়ে গড়ে উঠতো। তাকালো চন্দন কেয়ার দিকে। দেয়ালের তারাগুলো ততক্ষণে এক এক করে নিরতে শুরু করেছে। এক রাশ কালো ছায়া এসে দাঁড়ালো কেয়া ও চন্দনের মাঝখানে। রিমির বাবা এলো—অনুমান করলো চন্দন । কি খুশী কেয়া !—ফিসফিস করে কি যেন বলে চললো ওরা।
জাফর ওর জাহান্‌নামের সঙ্গীকে বললো, ‘কে?’ চন্দন নীচ স্বরে বললো, ‘আমার এক কালের স্ত্রী।’
মুচকে হাসে জাফর—চন্দনের জীবনের সব ঘটনা ওর জানা, ঘাড় ফিরিয়ে দেখতে চেষ্টা করে মেয়েটিকে। কিন্তু যা অন্ধকার । ভাল করে দেখতে পেলোনা জাফর ।
ফিল্ম শুরু হলো, সেলুলয়েডের পর্দায় সোফিয়া লরেনকে আড়াল করে দাঁড়ালো কেয়া —রোকেয়া আজিজ।
আকর্ষণীয়া, স্যাম্পু করা চুলে মডার্ন, কালে৷ কালো চোখ চন্দনের মনে কাঁপন ধরালো। চন্দন তখোন ইনজিনিআরিং-এর ছাত্র। কেয়া আজিজ সাহিত্যের—ইংরেজীর। স্টুডেন্টস্ ফোরাম-এ ওদের আলাপ । মাদ্রাসার ছাত্র চন্দন তখোন স্মার্ট, হ্যাণ্ডসাম, ভালো ছাত্র। এমনি অনেক গুণ নিয়ে কেয়ার মনে ঢেউ তুললো । কেয়া একদিন চন্দনকে বললো, ‘তোমাকে ভালবাসি—এ পুরানো কথা। প্রাচীন গন্ধ আছে তাতে । নতুন আমেজে ও ছোঁয়াচে অলংকৃত করলে এ রূপ দাঁড়ায়—’তোমাকে ছাড়া আমার চলবেনা ।
ভাবলো চন্দন। নাজমার খালি জায়গাট৷ পতিত পড়ে আছে। কেয়াকে দেয়া যায়না ?
কেয়াকে নাজমার কথা বললে৷ চন্দন। চন্দনকে বোঝালে। কেয়া ৷ অতীত বড়ো বাজে। মনকে রুগ্ন করে। বর্তমানকে ভালবাসো।
কিন্তু টিকলোনা । চাইল্ড চন্দন তখোনও ম্যান হয়নি। ফিল্ড চন্দন তখনো উত্তপ্ত হয়ে উঠেনি। ট্রানজিশন পিরিয়ড চলছে।
কেয়া আজিজও চলে গেলো একদিন। কবে চন্দন পাশ করবে— প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন বসে থাকা চলেনা। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্‌স, গাড়ী, বাড়ী কেয়া আজিজকে হাতছানি দিয়ে ডাকলো। রোকেয়া আজিজ বিয়ে করলো কবিরকে চাটার্ড একাউনটেন্ট জি. এ. কবির ।
শো শেষে ফিরে তাকিয়ে দেখলো চন্দন। কেয়া কবির ওর জীবন অবলম্বনকে বাঁ হাতে ধরে এগিয়ে চলছে একজিটের দিকে ।
কনটিনেন্‌টাল থেকে কুইক লান্‌চ করে জাফরকে লিফট দিয়ে চন্দন যখোন বাড়ী ফিরলো তখোন সূর্য পশ্চিমে হেলছে। টায়ার্ড মনে হলো চন্দনের ।
বিছানায় শুয়ে আবার ভাবলো চন্দন। অতীতটা যেনো ওর মনের জানালা গলিয়ে ওকে ছুঁইছে। স্মৃতির চেইনের একটা লিংক যেনো ওর চোখে ধরে অতীতটা পাশে দাঁড়িয়ে ৷
সীমা খান। প্রফেসার খানের মেয়ে। শান্ত, নরোম, মিষ্টি। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। ভালো গল্প লিখে। ট্রেনে আলাপ।
নরসিংদী-ঢাকা। একটানা ট্রেন জার্নি আমুদে হয়েছে প্রফেসার খানের সংগে গল্প করে। চন্দনের আড় চোখ প্রফেসার খানের ডান পাশে বসা মিষ্টি মেয়েটাকে অনেকবার নিরীক্ষণ করছে।
আলাপ করিয়ে দিয়েছেন প্রফেসার খান । আমার বড়ো মেয়ে সীমা । বাংল৷ অনার্স পড়ছে।
গুটিয়ে রাখা একটা পেলব হাত বেরিয়ে এসেছে। কপাল পর্যন্ত উঠে চন্দনকে সালাম জানিয়েছে ।
কমলাপুর স্টেশনে এসে নেমে কার্ড দিয়েছেন প্রফেসার খান । ‘ঢাকা য়ুনিভার্সিটী বাংলো’-পড়লে ৷ চন্দন। হ্যাণ্ড সেক করে প্রফেসার উঠে বসেছেন অপেক্ষমান ফোক্‌স ওয়াগেনটায় । সালাম জানিয়েছে সীমা খান চন্দন আহমেদকে। নীচু স্বরে বলছে বাসায় আসলে খুশী হবো ।
চাইলড চন্দন তখোন ম্যান। পি ডব্লিউ ডি-এর এনজিনিআর । পোড় খাওয়া চন্দন সীমাকে নিয়ে বেশ কদিন ভাবলো। তারপর একদিন বিকেলে হাজির হলে৷ ওদের বাসায়।
পড়ন্ত সূর্যের সোনা-রশ্মি সীমাদের হলদে রং-এর বাংলোটার গা থেকে তখোন গলে গলে পড়ছিল।
প্রফেসার খান চন্দনকে দেখে খুশি হয়েছেন। সীমাও । লাজুক লাজুক চোখের বাণে চন্দনকে যেন বিদ্ধ করতে চাইলো সীমা খান ৷
তার পরের কথা অনেক। সীমাকে ভালো লাগলো চন্দনের। সীমাও তাকে নিয়ে অনেক কল্পনার মাল৷ বানালে৷ ৷
বালিশটাকে দুমড়ে খাটটার সীমানায় ঠেকিয়ে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকালো চন্দন । ব্লেডগুলো থমকে দাঁড়িয়েছে। গরোম গুমোট একটা বাতাস যেনো চন্দনের ঘরটাকে গিলে খেতে চাইছে। ওয়াপদার চৌদ্দ গুষ্টিকে গাল দিলো চন্দন ।
স্মৃতির লিংকটা তখনো চন্দনের চোখের সামনে। চলন দেখলো আর একটা বিকেল। নরোম রোদে মিষ্টি। ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াচ্ছে সীম।। পেছন দিক থেকে চন্দন এলো। সীমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করলো ।
ম্যান চন্দন উষ্ণ পরশে সীমার শান্ত পরশকে গরোম করতে চাইলো। চন্দনের সিগারে পোড়া ঠোঁটটা সীমার আলতে৷ পাতলা ঠোঁটে নোঙ্গর ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ।
ছিটকে সরে দাঁড়ানো সীমা। অনেক অনেক ঘৃণা ওর চোখ বেয়ে যে ন চন্দনকে ডুবিয়ে দিতে চাইছে ।
‘কামুক কোথাকার।’- রাগে বলে উঠলো সীমা খান।
চমকালো চন্দন। সীহার চোখে চোখ রেখে বললো, ‘ভালোবাসি তোমায় । মন পেয়েছি। দেহটাও আমার।’
এগুলো চন্দন। সীমা সরে দাঁড়ালো ৷ বোঝালে৷ চন্দন। এ অন্যায় নয় । কিন্তু, বুঝলো না সীমা ।
‘তুমি আমার দেহকে ভালবাস, মনকে নয়।’ চেঁচিয়ে উঠলো সীমা। ‘যখোন শরীরটা রুগু হবে তখোন ছেড়ে পালাবে, না ?”
সাহিত্যের ছাত্রী সীমার মনের গভীরে ডুবুরী হয়ে মুক্তে৷ কুড়িয়ে আনা এনজিনিআর চন্দনের পক্ষে সম্ভব হলোনা। এক সময় তাই বললো, ‘তুমি কি আমায় ভালবাস না ?’
উত্তর দিলো সীমা। ‘একটু আগেও বাসতাম । এখোন না।
‘কেন বলত?’—জানতে চাইলো চন্দন ।
‘কেননা, তুমি কামুক, দেহলোভী। তোমার মনে একটা দানব লুকিয়ে আছে যাকে আমি ঘৃণা করি’—বললে৷ সীমা
ম্যান চন্দন আর কিছু বলেনি। নাজমা ও কেয়ার একসপেরিমেন্ট করা চন্দন, গিনিপিগ চন্দন, বেরিয়ে এলো বাংলো থেকে।
তারপর ? দিন ঘুরেছে। বছর পেরিয়েছে। এনজিনিআর চন্দন বিজনেস শুরু করেছে। বিজনেস ম্যাগনেট হয়েছে।
ব্লেডগুলে৷ আবার ঘুরলো। ঘরের গুমোট ভাবটা ভেন্টিলেটার দিয়ে পালালো। টায়ার্ড চন্দন এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো ।
স্বপ্ন দেখলো চন্দন। মিস ম্যাকসন উদলা বুক নিয়ে নাচছে। চলনকে সরিয়ে রাখছে একটা আয়রন গেট। ম্যান চন্দনের মগোজে কে যেন আগুন জ্বালালো। সীমার আবিষ্কৃত দানবটা থাবা বাড়ালে৷ ম্যাকসনের দিকে।
এগুলো চন্দন। দেখলে৷ গেটে একজন অদ্ভুৎ লোক দাঁড়িয়ে। লোকটা বললো, ‘টিকেট আছে ?’
‘না, নেইত ?’–বললো চন্দন ।
পেছন থেকে কে যেন স্পর্শ করছে। তাকালো চন্দন। দেখে জাফর মুচকে হাসছে।
গেট পেরিয়ে এ যে জাহান্‌নাম । হাত তুলে দেখালো জাফর। নাচছে ম্যাকসন। কতোক্ষণ পর এনজেল আসবে ।
‘কিন্তু, টিকেট?’–চন্দন বললো ।
‘আমার কাছে রয়েছে। চল যাওয়া যাক। বললো জাফর ।
গেট খুলে গেলো । এগুলো চন্দন আহমেদ ও জাফর রেহমান ।
আচমকা ঘুম ভাঙ্গলো চন্দনের। চোখ রগড়ে তাকালো সে। দেখলো, লেডি কিলার জাফর হাসছে।
‘রাত দশটায়—ম্যাকসন ও এনজেল ডেট দিয়েছে’—বললে৷ জাফর । উঠলো চন্দন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যে সাতটা ।
হাত মুখ ধুয়ে কাপড় পড়ে এসে চন্দন বলে, ‘চল, এক্ষুণি বেরিয়ে পড়ি । পূর্বাণীতে যেয়ে চা খাবো।’
মুচকে হাসে জাফর। বলে, ‘হাঁ, তাই চল্।’