চৌরপঞ্চাশিকা – কাশ্মীরের কবি বিল্হন

›› কবিতা / কাব্য  

১.
অদ্যাপি তাং কনকচম্পকদামগৌরীং
ফুল্লারবিন্দবদনাং তনুরোমরাজীং।
সুপ্তোত্থিতাং মদনবিহ্বললালসাঙ্গীং
বিদ্যাং প্রমাদগণিতামিব চিন্তয়ামি ।।

বাংলায়:
আজো সেই কনকচাঁপার মতো গৌরী,
তার প্রস্ফুটিত পদ্মমুখ, তনুরোমরাজী,
সুপ্তোত্থিত কামবিহ্বল লালসাঙ্গ ভেবে
আমার সমস্ত বিদ্যা ভুল হয়ে যায়।

২.
অদ্যাপি তাং শশীমুখীং নবযৌবনাঢ্যাং
পীনস্তনীং পুনরহং যদি গৌরকান্তিং।
পশ্যামি মন্মথশরানলপীড়িতাঙ্গীং
গাত্রাণি সম্প্রতি করামি সুশীতলানি ।।

বাংলায়:
আজো সেই চন্দ্রমুখী নবযৌবনা
পীনস্তনী গৌরকান্তি আবারো যদি দেখি
কামশরানলে তপ্ত পীড়িত তার
দেহখানি সুশীতল করে দেবো।

৩.
অদ্যাপি তাং যদি পুনঃ কমলায়তাক্ষীং
পশ্যামি পীবরপয়োধরভারখিন্নাং।
সংপীড়্য বাহুযুগলেন পিবামি
বক্ত্রং উন্মত্তবন্মধুকরং কমলং যথেষ্টং ।।

বাংলায়:
আজো যদি ফের পদ্মের মত আয়তাক্ষী,
সুগঠিত স্তনভারে নত তাকে দেখি
দৃঢ় বাহুবন্ধনে বেঁধে উন্মত্তের মত
মধু তার পান করবো মুখে মুখ রেখে।

৪.
অদ্যাপি তাং নিধুবনক্লমনিঃসহাঙ্গীং
আপাÐুগÐপতিতালককুন্তলানিং।
প্রচ্ছন্নপাপকৃতমন্থরং আবহন্তীং
কণ্ঠাবসক্তাবাহুলতাং স্মরামি ।।

বাংলায়:
নিধুবনে মিলনের ক্লান্তিতে তার বিবর্ণ কপোল,
আলুলায়িত কেশভার, গোপন পাপের
ছায়া দৃষ্টিতে, আর আমার কণ্ঠলগ্ন তার
কোমল বাহুলতা মনে পড়ে যায়।

৫.
অদ্যাপি তাং সুরতজাগরঘূর্ণমান
নির্যগ্বলত্তরলতারকং আয়তাক্ষীং।
কৃঙ্গারসারকমলাকররাজহংসী
ব্রীড়াবিনম্রবদনাং ঊষসি স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে রাতভোরে সেই
সুরতজাগরিত নৃত্যরত উজ্জ্বল আয়ত
দুটি চোখ, কৃঙ্গার সরোবরে সঞ্চরমাণ
লজ্জাবনত মুখ সেই রাজহংসীর কথা।

৬.
অদ্যপি তাং যদি পুনঃ শ্রবণায়তাক্ষীং
পশ্যামি দীর্ঘবিরহজ্বরিতাঙ্গযষ্টিম্।
অঙ্গৈরহং সমুপগুহ্য ততোতিগাধং
নোন্মিলয়ামি নয়নে চ তাং ত্যাজয়ামি ।।

বাংলায়:
আজো যদি আরেকবার আকর্ণবিস্তৃতনয়না প্রিয়ার
দীর্ঘবিরহজনিত ক্ষীণ তনুলতা দেখতে পাই,
দৃঢ় আলিঙ্গনে তাকে বেঁধে নেব আমার অঙ্গে–
আমি আর চোখ খুলবো না, তাকেও ছাড়বো না।

৭.
অদ্যপি তাং সুরততাণ্ডবসূত্রধারীং
পূর্ণেন্দুসুন্দরমুখীং মদবিহ্বলাঙ্গীং।
তন্বীং বিশালজঘনস্তনভারনম্রাং
ব্যালোলকুন্তলকলাপবতীং স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে সেই সুন্দরী চন্দ্রমুখীকে
সুরততাণ্ডবের কারণে যার অঙ্গ মদবিহ্বল,
বিশাল জঘন-স্তনভারনম্র সেই তন্বী
আলুলায়িত কুন্তলকলাপ ছড়িয়ে নৃত্যরতা।

৮.
অদ্যপি তাং মসৃণচন্দনপঙ্কমিশ্র
কস্তূরিকাপরিমলোত্থবিসর্পিগন্ধাং।
অন্যোন্যচঞ্চুপুটচুম্বনখঞ্জরীত
যুগ্মভিরামনয়নাং শয়নে স্মরামি ।।

আজো মনে পড়ে খুব মিহি করে বাটা
চন্দনলিপ্ত কস্তূরিগন্ধ বিকীরিত তনু আর
চুম্বনবিক্ষত ওষ্ঠাধর নিয়ে শুয়ে থাকা
অভিরাম নয়নযুগলের সেই নারীকে।

৯.
অদ্যপি তাং নিধুবনে মধুপানরক্তাং
লীলাধরাং কৃশতনুং চপলায়তাক্ষীং।
কাশ্মীরপঙ্কমৃগনাভিকৃতাঙ্গরাগাং
কর্পূরপূগপরিপূর্ণমুখীং স্মরামি \

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে নিধুবনে মধুপানে আরক্তবর্ণা
লীলাধরা কৃশতনু চপল আয়ত চোখের সেই নারীকে,
কাশ্মীরের গৈরিক মাটি আর মৃগনাভিতে যে করেছে
অঙ্গরাগ, যার মুখে কর্পূরবাসিত পানের সুরভি।

১০.
অদ্যপি তৎ কনকগৌরকৃতাঙ্গরাগং
প্রস্বেদবিন্দুবিততং বদনং প্রিয়ায়াঃ।
অন্তে স্মরামি রতিখেদবিলোলনেত্রং
রাহুপরাগপরিমুক্তমিবেন্দুবিম্বম্ ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে যায় কনকগৌরবর্ণা
স্বেদবিন্দুসজ্জিত প্রিয়তমার সেই মুখ;
তারপর মনে পড়ে, রতিসমাপ্তির খেদে
বিলোল সে-চোখ যেন রাহুমুক্ত চন্দ্রবিম্ব।

১১.
অদ্যপি তন মনসি সংপরিবর্ততে মে
রাত্রৌ ময়ি ক্ষুতবতি ক্ষিতিপালপুত্রিয়া।
“জীবেতি” মঙ্গলবাচঃ পরিহৃত্য কোপাৎ
কর্ণে কৃতং কনকপত্রম অনালপন্ত্যা ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে, কীভাবে এক রাতে কথা বলেনি
রাজকুমারী; কিš’ হঠাৎ আমি হেঁচে উঠলে সব রাগ
ভুলে “জীব জীব” বলে আমার মঙ্গল কামনা করে
কানে দিয়েছে কনকপত্র আসলে যেটা রক্ষাকবচ।

১২.
অদ্যপি তাং চলচকোরবিলোলনেত্রাং
সীতাংশুমণ্ডলমুখীং কুটিলাগ্রকেশং।
মত্তেব কুম্ভসদৃশস্তনভারনম্রাং
বন্ধুকপুষ্পসদৃশং ঔষ্ঠপুটাং স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে, তার চকোরের মতো
চঞ্চল চোখ, কুঞ্চিতাগ্র কেশগুচ্ছের প্রেক্ষাপটে
পূর্ণ চাঁদের মতো মুখ, কলসির মতো সুগোল
স্তনভারে নত তার বাঁধুলি ফুলের মতো ওষ্ঠপুট।

১৩.
অদ্যপি তৎ প্রণয়ভঙ্গুরদৃষ্টিপাতং
তস্যাঃ স্মরামি রতিবিভ্রমগাত্রভঙ্গম্।
বস্ত্রাঞ্চলস্খলতচারুপয়োধরান্তং
দন্তচ্ছদং দশন খণ্ডনমণ্ডনঞ্চ ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে তার প্রণয়বিহŸল দৃষ্টিপাত,
রতিবিভ্রম সৃজনকারী শারীরীবিভঙ্গ,
চারু স্তনপ্রান্ত থেকে খসে পড়া বস্ত্রাঞ্চল,
আমার দংশনচিহ্নে মণ্ডিত ওষ্ঠাধর।

১৪.
অদ্যপি অশোকনবপল্লবরক্তহস্তাং
মুক্তাফলপ্রচয়চুম্বিত চূচুকগ্রাম্।
অন্তঃ স্মিতোচ্ছ¡সিত পাণ্ডুরাগণ্ডভিত্তিং
তাং বল্লভাম্ অলসহংসগতিং স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজো নব অশোকপল্লবের মতো রক্তিম
হাতের তালু, মুক্তাহার চুম্বিত স্তনাগ্র,
স্মিত হাসিতে উচ্ছ¡সিত পাণ্ডুর কপোল,
অলস হংসগতি প্রিয়তমার কথা মনে পড়ে।

১৫.
অদ্যপি তৎকনকরেণুঘনোরুদেশে
ন্যস্তাং স্মরামি নখরক্ষতলক্ষ্ম তস্যাঃ।
আকৃষ্টহেমরুচিরম্বরম্ উত্থিতায়া
লজ্জাবশাৎ করধৃতম্ চ ততো ব্রজান্ত্যাঃ ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে তার সোনারঙের আঁচল
সরে গেলে চোখে পড়ে যাওয়া তার সোনালি
উরুতে আমার নখরক্ষত, আর লজ্জায় তা
ঢাকা দিয়ে তার সেই উঠে চলে যাওয়া।

১৬.
অদ্যপি তাং বিধৃতকজ্জলচারুনেত্রাং
প্রোৎফুল্লপুষ্পনিকরাকুলকেশপাশাম্।
সিন্দূরসংলুলিতমৌক্তিকহারদন্তাম্
আবদ্ধহেমকটকাং রহসি স্মরাম ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে তার কাজলকালো চোখ,
প্রস্ফূটিত ফুলে সাজানো তার কেশপাশ,
তাম্বুলরসে রাঙানো দাঁতের সারি যেন মুক্তাহার
সিঁদুররঙের ঠোঁটের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা।

১৭.
অদ্যপি তাং গলিতবন্ধনকেশপাশাং
স্রস্তস্রজং স্মিতসুধামধুরাধরৌষ্ঠীম্।
পীনোন্নতস্তনযুগোপভিচারচুম্বন্
মুক্তাবলীং রহসি লোলদৃশম্ স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজো তার খোঁপা খুলে যাওয়া কেশরাজি,
তার মধুর ওষ্ঠাধরের স্বাদ পাওয়া স্মিতহাসি,
পীনোন্নত পয়োধর চুম্বনরত দোদুল্যমান
মুক্তামালার কথা মনে পড়ে যায়।

১৮.
অদ্যপি তাং ধবলবেশ্মানি রত্নদীপ
মালাময়ূখপাতালৈর্দলিতান্ধকারে
স্বপ্নোদ্যমে রহসি সংমুখোদর্শনোত্থাং
লজ্জাভয়ার্তনয়নাম্ অনুচিন্তয়ামি।।

বাংলায়:
আজো সেই ধবল প্রাসাদে রত্নদীপের সারি
যেন পাতালের অন্ধকারে ময়ূখমালা, আর
তারই মাঝে যেন স্বপ্ন থেকে উঠে আসা তার
প্রেমের লজ্জা ও ভয়ে আর্ত নয়নের কথা ভাবি।

১৯.
অদ্যপি তাং বিরহবহ্নিনিপীড়িতাঙ্গীং
তন্বীং কুরঙ্গনয়নাং সুরতৈকপাত্রম্।
নানা বিচিত্রকৃতমণ্ডনম্ আবহন্তীং তাং
রাজহংসগমনাং সুদতীং স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে যায়, বিরহানলে পীড়িত দেহ
কুরঙ্গনয়ন সেই তন্বীর কথা, যে আমার সুরতের
একমাত্র পাত্র, নানা বিচিত্র সাজে সেজে আমাকে
ডেকে যায় সেই রাজহংসগামিনী সুন্দরী।

২০.
অদ্যপি তাং বিহসিতাং কুচভারনম্রাং
মুক্তাকলাপধবলীকৃতকণ্ঠদেশম।
তৎকেলিমন্দরগিরৌ কুসুমায়ুধাস্য
কান্তাং স্মরামি রুচিরোজ্জ্বলাপুষ্পকেতুম্ন ।।

বাংলায়:
আজো মনে পড়ে কুচভারনম্রা তার হাসিমুখ,
সাদা মুক্তাহারজালে ঢাকা তার কণ্ঠদেশ,
কেলিমন্দারগিরিচূড়ায় কুসুমায়ুধ হাতে
আমার প্রিয়া নিজেই যেন স্বয়ং পুষ্পকেতু।

২১.
অদ্যাপি তাং চাটুশতদুর্ললিতোচিতার্থ
তস্যাঃ স্মরামি সুরতক্লমবিহŸলয়াঃ।
অব্যক্তনিঃস্বনিতকাতরকথ্যমান
সংকীর্ণ বর্ণরুচিরং বচনং প্রিয়ায়া ।।

বাংলায়:
এখনও মনে পড়ে সঙ্গমক্লান্তিবিহŸল
তার দুর্বোধ্য অর্থবহ চাটুবাক্য শত।
অব্যক্ত নিঃস্বনিত কাতর কথায় প্রিয়বচন
বলতো সে ভীরু মৃদু কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে।

২২.
অদ্যাপি তাং সুরতঘূর্ণনিমিলিতাক্ষীং
স্রস্তাঙ্গযষ্ঠিগলিতাংশুককেশপাশাম্।
কৃঙ্গার বারিরূহকাননরাজহংসীং
জন্মান্তরেহপি নিধনেহপ্যং অনুচিন্তয়ামি ।।

বাংলায়:
এখনও বসে ভাবি তার সুরতঘূর্ণ নিমিলীত চোখ,
বিস্রস্ত পোশাক পরা তনুদেহ, আলুলায়িত কেশপাশ।
কৃঙ্গারবারিস্নাত কাননে এক রাজহংসী সে
জন্মান্তরে বা মৃত্যুও পরও তার কথা ভেবে যাবো আমি।

২৩.
অদ্যাপি তাং প্রণয়িনীং মৃগশাবকাক্ষীং
পীযূষপূর্ণ কুচকুম্ভযুগং বহন্তীম্।
পশ্যামি অহং যদি পুনঃ দিবসাবসানে
স্বর্গাপবর্গ নররাজসুখং ত্যজামি ।।

বাংলায়:
আজও সেই প্রণয়িনী– হরিণছানার মতো চোখ,
মধুভরা কলসের মতো স্তনযুগলের নারীকে
যদি দেখতে পাই দিনাবসানে আমি
ছেড়ে দিতে রাজি স্বর্গসুখ, রাজসুখ।

২৪.
অদ্যাপি তাং ক্ষিতিতলে বরকামিনীনাং
সর্বাঙ্গসুন্দরতয়া প্রথমৈকরেখাম্।
কৃঙ্গারনাটকরসোত্তমপানপাত্রীং
কান্তাং স্মরামি কুসুমায়ুধবাণখিন্নাম্ ।।

বাংলায়:
এখনও এই ধরাতলে সুন্দরীদের মধ্যে
সবচেয়ে সর্বাঙ্গসুন্দর প্রথম রেখাটির মতো
কৃঙ্গারনাটকের উত্তম রসের পানপাত্রী নারীটিকে
স্মরণ করে বাণশূন্য হয়ে পড়েন স্বয়ং ফুলধনু।

২৫.
অদ্যাপি তাং স্তিমিতবস্ত্রম্ ইব অঙ্গলগ্নাং
প্রৌঢ়প্রতাপমদনানলতপ্তদেহম্।
বালাম্ অনাথশরণাম্ অনুকম্পনীয়াং
প্রাণাধিকাম্ ক্ষণম্ অহং ন হি বিস্মরামি ।।

বাংলায়:
আজও এই প্রৌঢ়প্রতাপের কামাগ্নিতপ্ত দেহেও যেন
লগ্ন হয়ে আছে সেই স্বল্পবস্ত্রে ঢাকা তনুদেহখানি।
শরণ নেয়া অনাথের মতো অনুকম্পাযোগ্য সেই নারী
আমার প্রাণাধিকা, যাকে ক্ষণমাত্র ভুলতে পারি না।

২৬.
অদ্যাপি তাং প্রথমতো বরসুন্দরীণাং
স্নেহৈকপাত্রঘটিতাম্ অবনীশপুত্রীম্।
হংহোজনা মম বিয়োগহুতাশনোহয়ং
সোঢ়ুং ন শক্যতেতি প্রতিচিন্তয়ামি ।।

বাংলায়:
আজও আমি শ্রেষ্ঠ সুন্দরীদের মধ্যে প্রেমের প্রথম আর
একমাত্র পাত্রী মনে করি তাকে- সেই রাজকন্যাকেই।
শোনো হে সবাই, তাকে হারানোর আগুনে পুড়ছি,
তার চিন্তা কোনোমতেই ভুলতে পারছি না।

২৭.
অদ্যাপি বিস্ময়করী ত্রিদশান্ বিহায়
বুদ্ধির্বলাচ্চলতি মে কিম্ অহং করোমি।
জানন্নাপি প্রতিমুহূর্তম ইহান্তকালে
কান্তেতি বল্লভকরেতি মমেতি ধীরা ।।

বাংলায়:
আজও কি বিস্ময়কর, কাটিয়ে ত্রিকাল জীবনের
বুদ্ধি আর বলে চলে কী আর করবো!
এই জীবনান্তকালে এসে প্রতিমুহূর্তেই জানি
সে আমার প্রেম, আমার সর্বস্ব, সে শুধু আমারই।

২৮.
অদ্যাপি তাং গমনম্ ইত্যুদিতং মদীয়ং
শ্রুত্বৈব ভীরুহরিণীম্ ইব চঞ্চলাক্ষীম্।
বাচঃ স্খলদ্বিগলদাশ্রুজলাকুলাক্ষীং
সংচিন্তয়ামি গুরুশোকবিনম্রবক্ত্রাম্ ।।

বাংলায়:
এখন যখন ঘনিয়ে এসেছে যাওয়ার সময়
ভীরু হরিণীর মতো সে চঞ্চলনয়নার
কান্নায় ভেঙে যাওয়া স্বর, জলাকুল চোখ
মনে এলে গভীর দুঃখে মাথা নুয়ে পড়ে।

২৯.
অদ্যাপি তাং সুনিপুণং যততা ময়াপি
দৃষ্টং ন যৎ সদৃশতোবদনং কদাচিৎ।
সৌন্দর্যনির্জিতরতি দ্বিজরাজকান্তি-
কান্তামিহাতিবিমলত্বমহাগুণেন ।।

বাংলায়:
এখনও যতই তাকাই নিপুণভাবে ইতিউতি
তার মতো অপরূপ মুখ কদাচিৎ দেখতে পাই।
সে কান্তার রতিক্লান্ত রূপ চন্দ্রকান্তিময়,
যে রূপ পেয়েছে তার মহাগুণে অতি বিমলতা।

৩০.
অদ্যাপি তাং ক্ষণবিয়োগবিষোপমেয়াং
সঙ্গে পুনর্বহুতরাং অমৃতাভিষেকাম্।
তাং জীবধারণকরীং মদনাতপত্রাং
উদ্ধত্তকেশনিবহাং সুদতীং স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজও সেই জীবনদায়িনী, কামাগুন থেকে ত্রাণকারী
সিংহীতুল্য কেশপাশ কন্যাকে যখন মনে পড়ে
মুহূর্তে আমার মৃত্যু ঘটে সেই বিরহের বিষে,
ফের বেঁচে উঠি যেন বহুতর অমৃতবর্ষণে।

৩১.
অদ্যাপি বাসগৃহতো ময়ি নীয়মানে
দুর্বারভীষণকরৈর্যমদূতকল্পৈঃ।
কিং কিং ত্বয়া বহুবিধং ন কৃতং মদর্থ
বক্তুং ন পার্যত ইতি ব্যথতে মনো মে \

বাংলায়:
আজও মনে ব্যথা পাই যখন বলতে পারি না
যমদূতের মতো দুর্বার ভীষণ হাত যখন আমাকে
বাসগৃহ থেকে টেনে নিয়ে গেল, তখন
আমার জন্যে তুমি কত কী যে করেছ।

৩২.
অদ্যাপি মে নিশি দিবা হৃদয়ং দুনোতি
পূর্ণেন্দুসুন্দরমুখং মম বল্লভায়াঃ।
লাবণ্যময়নির্জিতরতিক্ষতিকামদর্প
ভুয়ঃ পুনঃ প্রতিপদং ন বিলোক্যতে যৎ \

বাংলায়:
আজও দিনরাত আমার হৃদয় দগ্ধ হয়
আমার প্রিয়ার পূর্ণচাঁদের মতো সুন্দর
কামদর্পহারী রতিতুল্য লাবণ্যময় মুখখানি
আর কোনো প্রতিপদে দেখতে পাবো না ভেবে।

৩৩.
অদ্যাপি তামবহিতায় মনসাচলেন
সংচিন্তয়ামি যুবতীং মম জীবিতাশাং।
নান্যোপভুক্তনবযৌবনভারহারাং
জন্মান্তরেপি মম সৈব গতির্যথা স্যাৎ \

বাংলায়:
আজও অবিরাম স্থিরমনে ভাবি এই জীবনের
একমাত্র আশা সেই যুবতীর কথা, আমি ছাড়া
যার নবযৌবন আর কেউ উপভোগ কখনো করেনি
তাকে যেন জন্ম জন্মান্তরেও আমি পাই।

৩৪.
অদ্যাপি তদ্বদনপঙ্কজগন্ধলুব্ধ-
ভ্রাম্যদ্দ্বিরেফচয়চুম্বিতগণ্ডদেশাম্ ।
লীলাবধূতকরপল্লবকঙ্কণানাং
ক্বাণো বিমূর্চ্ছতি মনঃ সুতরাং মদীয়ম্ ।।

বাংলায়:
আজও যখন তোমার মুখপদ্মগন্ধলুব্ধ ভ্রাম্যমাণ
মৌমাছিরা তোমার গালে চুম্বন করতে গেলে
তুমি লীলাভরে করপল্লব নাড়িয়ে তাদের তাড়াও,
তখন তোমার কঙ্কণ নিক্কণে আমার মন যেন মূর্চ্ছা যায়।

৩৫.
অদ্যাপি তাং নখপদং স্তনমÐলে
যদ্দত্তং ভয়াস্যমধুপান বিমোহিতেন।
উদ্ভিন্নরোমপুলকৈবহুর্ভিঃ সমন্তা-
জ্জাগর্তি রক্ষতি বিলোকয়তি স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজও মনে পড়ে তার মুখমধুপানে মত্ত হয়ে
তার স্তনমÐলে আমার করে দেয়া নখক্ষতচিহ্ন
দেখছে সে নত হয়ে, আর তার রোম খাড়া
হয়ে যাচ্ছে বার বার পুলক রোমাঞ্চ শিহরণে।

৩৬.
অদ্যাপি কোপবিমুখীকৃতগন্তুকামা
নোক্তং বচঃ প্রতিদদাতি যদৈব বক্ত্রম্।
চুম্বামি রোদতি ভৃশং পতিতোস্মি পাদে
দাসস্তব প্রিয়তমে ভজ মাং স্মরামি ।।

বাংলায়:
আজও মনে পড়ে অভিমানে বিমুখ সে
কিছুই না বলে ফের মুখ এগিয়ে দিলে আমি
তাতে চুম্বন করি, কেঁদে তার পায়ে পড়ে বলি,
প্রিয়তমে, তোমার দাস আমি, আমাকে ভালোবাসো।

৩৭.
অদ্যাপি ধাবতি মনঃ কিমহং করোমি
সার্ধ সখীভিরপি বাসগৃহং সুকান্তে।
কান্তাঙ্গসঙ্গপরিহাসবিচিত্রনৃত্যে
ক্রীড়াভিরাম ইতি যাতুঃ মদীয়কালঃ ।।

বাংলায়:
আজও মন ধেয়ে যায় সেই বাসগৃহে
যেখানে সুকান্তা সখীরাসহ আমার কান্তার
সঙ্গে হাস্যপরিহাসে, বিচিত্র নৃত্যে, ক্রীড়ায়
কেটেছে আমার কত অভিরাম কাল।

৩৮.
অদ্যাপি তাং জগতি বর্ণয়িতুং ন কশ্চিৎ
শক্‌নোত্যযদৃষ্টসদৃর্শী চ পরিগ্রহং মে।
দৃষ্টং ত্বয়োঃ সদৃশয়োঃ খলু যেন রূপং
শক্তো ভবেদ্যদি স এব নরো ন চান্যঃ ।।

বাংলায়:
আজও আমি বর্ণনে অক্ষম তার রূপ,
আর কেউও পারবে না, যেহেতু দেখেনি।
তার এ অতুলনীয় রূপ যেন আর কারো
জন্যে নয়, আমার জন্যেই শুধু সৃষ্টি হয়েছে।

৩৯.
অদ্যাপি তাং ন খলু বেহ্নি কিমীশপত্নী
শাপং গতা সুরপতেরথ কৃষ্ণলক্ষ্মীঃ।
ধাত্রৈব কিং নু জগতঃ পরিমোহনায়
সা নির্মিতা যুবতিরত্নদিদৃক্ষয়া বা ।।

বাংলায়:
আজও জানি না সে কি শিবের পত্নী, নাকি
সুরপতি শাপে ভ্রষ্ট অপ্সরা বা কৃষ্ণের লক্ষ্মী।
বিধাতা নিজে দেখার জন্যে, নাকি জগৎকে
মোহিত করত্‌ সৃষ্টি করেছেন এই যুবতীরত্নকে?

৪০.
অদ্যাপি নির্মলশরচ্ছশিগৌরকান্তি
চেতো মুনেরপি হরেৎ কিমুনাস্যদীয়ং।
বক্ত্রং সুধাময়মহং যদি তৎপ্রপেদ্য
চুম্বন্পিবাম্যবিরতং ব্যথতে মনো মে ।।

বাংলায়:
আজও মনে পড়ে মুনিরও চেতনাহরা
নির্মল শরৎশশীর মতো সেই মুখ
চুম্বনে চুম্বনে যার সুধাপান থেকে
বিরত হলেই আমার অন্তর ব্যথিত হতো।