চোদ্দ শতকের বাঙালী – ডঃ অতুল সুর

›› বই এর অংশ / সংক্ষেপিত  

কুলীনের মেয়ের যুক্তি 

বঙ্গাব্দ চতুর্দশ শতাব্দী স্মরণীয় হয়ে আছে কুলীন ব্রাহ্মণ সমাজে বহুবিবাহ নিরােধের জন্য। মধ্যযুগের বাঙালী সমাজ কলঙ্কিত হয়েছিল এই অপপ্রথার জন্য।

আগের শতাব্দীতে কৌলীন্য প্রথা নিরােধের জন্য নিরলস প্রয়াস চালিয়েছিলেন রামনারায়ণ তর্করত্ন ও পণ্ডিত ঈশবরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যদিও বিধবা বিবাহ বৈধ করবার জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল (১৮৫৬ সালের ১৫ নম্বর আইন দ্বারা), কিন্তু কৌলীন্য প্রথা নিরােধের জন্য তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা ফলবতী হয়নি। সরকার এ সম্বন্ধে কোন আইন প্রণয়ন করেন নি। সরকার কর্তৃক প্রণীত হলেও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রচেষ্টার ফলে যে জনমত গড়ে ওঠে তারই প্রভাবে বংগাব্দ চতুদশ শতাব্দীতে কৌলীন্য প্রথার অবলুপ্তি ঘটে।

কুলীনের মেয়ের ছিল অভিশপ্ত ও কলঙ্কিত জীবন। কুলীনের মেয়ে’ বলতে বােঝাত কুলীন ব্রাহ্মণকন্যা। যে সকল ব্রাহ্মণ কুলীন’ নামে আখ্যাত হতেন, তাঁদের পদবী ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায় ও মুখােপাধ্যায়। সামাজিক মর্যাদায় তারা ছিলেন অন্যান্য ব্রাহ্মণের তুলনায় উচ্চ ও শ্রেষ্ঠ। বিবাহ সম্বন্ধে তাঁদের মধ্যে যে বিধান প্রচলিত ছিল সেই বিধান অনুযায়ী কুলীন ব্রাহ্মণসন্তান কুলীন বা অকুলীন ব্রাহ্মণ বংশে বিবাহ করতে পারত, কিন্তু কুলীন ব্রাহ্মণকন্যারা তা পারত না। যদি সেরুপ মেয়ের বিবাহ অকুলীনের সঙ্গে হতাে, তাহলে তার বাবার কৌলীন্য ভঙ্গ হতাে। সামাজিক মর্যাদায় সেরুপ বংশ হীন বলে পরিগণিত হতাে। সেজন্য কুলীন ব্রাহ্মণরা কন্যাদান কুলীন পাত্রেই করত। এছাড়া আরও বিধিনিষেধ ছিল। ফলে কুলীন কন্যার বিবাহ সম্বন্ধে সমাজে এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

বস্তুত মধ্যযুগের বাঙালী ব্রাহ্মণ সমাজে কৌলীন্য প্রথা যে জটিল অবস্থার সষ্টি করেছিল, তাতে কুলীন কন্যাদের বিবাহ যে মাত্র দুস্কর হয়ে উঠেছিল তা নয় ; বিভ্রাটে ও সামাজিক অশুচিতায় পরিণত হয়েছিল। অর্থগৃধুতা একশ্রেণীর কুলীন ব্রাহ্মণকে প্রলুব্ধ করেছিল ‘বিবাহ’কে একটা বাণিজ্যিক পেশায় পরিণত করতে। রামনারায়ণ তর্করত্ন তার কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটকে তাদের বিবাহ বণিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে অর্থের বিনিময়ে তারা কুলীন কন্যার পিতাদের কন্যাদায় হতে মুক্ত করত। তারপর বিবাহতে ওই সকল বিবাহবণিক নিজেদের খাতায় কন্যার ও তার পিতার নামধাম লিখে নিয়ে অন্তর্হিত হতাে। ফলে সেরুপ ‘বিবাহিতা কুলীন কন্যাকে পিতৃগৃহেই থাকতে হতাে। অনেক সময় কুলীন পিতা কুলরক্ষার জন্য শ্মশানঘাটে ‘গঙ্গাজলী’র জন্য আনীত কুলীন ব্রাহ্মণের সঙ্গেই কন্যার বিবাহ দিতেন। অচিরেই সেই কন্যা বিধবা হতো। এরুপ বিধবা কুলীন কন্যারাও পিতৃগৃহেই থেকে যেত। আবার গরীব কুলীন কন্যাদের অনেক সময় বিবাহই হতাে না। সারা জীবন তাদের অনঢ়া হয়েই পিতৃগৃহে থেকে যেতে হতাে।

যারা কুলীন কন্যাদের বিবাহ করা পেশা রুপে গ্রহণ করেছিল, সে-সব কুলীন ব্রাহ্মণ খাতা দেখে নামধাম সংগ্রহ করে মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়িতে পদার্পণ করত এবং এক রাত্রি জামাই আদরে থেকে সালিয়ানা দক্ষিণা আদায় করে, কুলীন কন্যার পিতার বংশকে কৃতার্থ করে, সত্বর অপর গ্রামে অপর শ্বশুরবাড়িতে পদার্পণ করবার জন্য যাত্রা করত। অনেকে আবার রাত্রিকালে নিদ্রিতা স্ত্রীর অলঙ্কার অপহরণ করে ও সরে পড়ত।

অনেক সময়ই এরুপ বিবাহ-পেশাদারী কুলীন ব্রাহ্মণরা শ্বশুরবাড়ির পথঘাটের সঙ্গে সম্যক পরিচিত থাকত না। কথিত আছে এরুপ এক কুলীন ব্রাহ্মণ এক গ্রামে গিয়ে শ্বশুরবাড়ি চিনতে না পেরে, পথে পুস্করিণী থেকে স্নানাতে প্রত্যাগতা এক যুবতীকে দেখে তাকে সম্বোধন করে জিজ্ঞাসা করে—মা, অমুকের বাড়ি এ গ্রামের কোথায় বলতে পার ? তিনি কেন সন্ধান করছেন জানতে চাইলে ব্রাহ্মণ বলে-‘আমি তাঁর জামাই। সে কথা শুনে সেই কন্যা বুক পর্যন্ত অবগঠিত হয়ে, তাকে নিজ গৃহে নিয়ে যায়।

আগেই বলেছি যে এ-সমাজের মেয়েরা বিয়ের পর বাপের বাড়িতেই থেকে যেত। স্বামী কচিৎ কদাচিৎ শ্বশুরবাড়ি আসত। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি এলে কি হবে! বিনা দক্ষিণীয় তারা কখনও স্ত্রীর সহিত মিলিত হতাে না। ভারতচন্দ্র তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে এর এক সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে এক কুলীনের মেয়ের মুখ দিয়ে তিনি বলিয়েছেনঃ

আর রমা বলে আমি কুলীনের মেয়ে
যৌবন বহিয়া গেল বর চেয়ে চেয়ে ।
যদি বা হইল বিয়া কত দিন বই।
বয়স বুঝিলে তার বড় দিদি হই ।
বিয়াকালে পণ্ডিতে পণ্ডিতে বাদ লাগে।
পনবিয়া হবে কিনা বিয়া হবে আগে।
দু-চারি বৎসরে যদি আসে একবার।
শয়ন করিয়া বলে কি দিবি ব্যাভার।
সতা বেচা কড়ি যদি দিতে পারি তায়।

তবে মিষ্টি মুখ নতুবা রুস্ট হয়ে যায় । সুতরাং এরুপ সমাজে যে-সব মেয়ের যৌনক্ষধা প্রবল, তাদের ক্ষেত্রে যা ঘটত তা সহজেই অনুমেয়। গােপন অভিসার কুলীন কন্যাদের স্বভাবে দাঁড়িয়েছিল। আদিম যৌনক্ষুধাকে তারা অস্বীকার করতে পারত না। অবৈধ সহবাসে তারা লিপ্ত হতো। বস্তুতঃ খ্রীষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রামনারায়ণ তর্করত্ন ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেটা খােলাখুলিই বলেছিলেন। রামনারায়ণ তাঁর ‘কলীনকলসবস্ব’ নাটকের চতুর্থ অঙ্কে। পিতা-পুত্রের সংলাপের ভিতর দিয়ে সেটা বলেছেন। পুত্র তিন বৎসর শশুরবাড়ি যায়নি। হঠাৎ খবর এল তার একটি কন্যাসন্তান হয়েছে। পুত্র আশ্চর্য হয়ে পিতাকে যখন এ কথা বলছে, তখন পিতা বলছেন ‘বাপ হে, তাতে ক্ষতি কি? আমি বিবাহ করবার পর একবারও শশুরবাড়ি যাইনি। শুভদৃষ্টির পর একেবারে তােমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়।

কলীন কন্যাদের যখন স্বামী ব্যতীতই গর্ভ হতো, তখন মেয়ের মায়েরা কি কৌশল অবলম্বন করে সেই সতানের বৈধতা পাড়াপড়শীদের কাছে জানাতো, তা বিদ্যাসাগর মশাই তাঁর বহুবিবাহ নিবন্ধে বিবত করেছেন। বিদ্যাসাগর মশাই লিখেছেনঃ

কোনও কারণে কলীন মহিলার গর্ভসঞ্চার হইলে, তাহার পরিপাকার্থে কন্যাপক্ষীয়দিগকে বিবিধ উপায় অবলম্বন করিতে হয়। প্রথম সবিশেষ চেষ্টা ও যত্ন করিয়া জামাতাকে আনয়ন। তিনি আসিয়া শ্বশুরােলয়ে দু-একদিন অবস্থিতি করিয়া, প্রস্থান করেন। ঐ গর্ভ তৎ সহযােগে সম্ভুত বলিয়া পরিগণিত হয়। দ্বিতীয়, জামাতার আনয়নে কৃতকার্য হইতে না পারিলে, ব্যভিচার সহচরী ভ্রণহত্যাদেবীর আরাধনা। এ অবস্থায় এতদ্ব্যতিরিক্ত নিস্তারের আর পথ নাই। তৃতীয় উপায় অতি সহজ, অতি নির্দোষ ও সাতিশয় কৌতুকজনক। তাহাতে অর্থব্যয়ও নাই এবং ভ্রণহত্যাদেবীর উপাসনাও করিতে হয় না। কন্যার জননী বা বাটির অপর কোন গৃহিণী একটি ছেলে কোলে করিয়া, পাড়ায় বেড়াইতে যান, এবং একে একে প্রতিবেশীদিগের বাটি গিয়া, দেখ মা, দেখ বােন। অথবা দেখ বাছা, এইরুপ সম্ভাষণ করিয়া, কথা প্রসঙ্গে বলিতে আরম্ভ করেন, অনেক দিনের পর কাল রাত্রিতে জামাই আসিয়াছিলেন, হঠাৎ আসিলেন, রাত্রিকাল কোথায় কি পাব, ভাল করিয়া খাওয়াতে পারি নাই। অনেক বলিলাম একবেলা থাকিয়া, খাওয়া দাওয়া করিয়া যাও। তিনি কিছুতেই রহিলেন না, বলিলেন, আজ কোন মতে থাকিতে পারিব না; সন্ধ্যার পরই অমুক গ্রামের মজুমদারের বাটিতে একটা বিবাহ করিতে হইবেক। পরে অমুক দিন, অমুক গ্রামের হালদারের বাটীতেও বিবাহের কথা আছে ; সেখানেও যাইতে হইবেক। যদি সুবিধা হয়, আসিবার সময় এই দিক দিয়া যাইব। এই বলিয়া ভাের ভাের চলিয়া গেলেন। স্বর্ণকে বলিয়াছিলাম, ত্রিপুরা ও কামিনীকে ডাকিয়া অনি, তারা জামাইয়ের সঙ্গে খানিক আমােদ আহাদ করিবে। একলা যেতে পারব না, বলিয়া ছুড়ী কোন মতেই এল না। এই বলিয়া সে ঐ দুই কন্যার দিকে চাহিয়া বলিলেন, এবার জামাই এলে মা তােরা যাস ইত্যাদি। এইরুপে পাড়ায় বাড়ি বাড়ি বেড়াইয়া জামাতার আগমনবার্তা কীর্তন করেন। পরে স্বর্ণমঞ্জরীর গর্ভসঞ্চার প্রচার হইলে, ঐ গর্ভ জামাতাকৃত বলিয়া পরিপাক পায়।

এবার শুনুন শরৎচন্দ্র তাঁর বামনের মেয়ে’ উপন্যাসে কি বলেছেন। ‘পরম কুলীনের পরমা কুলীন কন্যা হিসাবে সন্ধ্যা বলল—আমি বামনের মেয়ে নই।•••আমার মা আমাকে সম্প্রদান করতে বসেছিলেন। এমন সময় মত্যুঞ্জয় ঘটক দু’জন লােক সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হল। বলল, তােমরা শোন, এই যাকে তােমরা পরম কুলীন প্রিয় মুখুজ্যে বলে জান সে বামন নয়, মিহির নপিতের ছেলে। তারপর মতয় ঘটক গঙ্গাজলের ঘটটা ঠাকুরমার সামনে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, বলুন সত্যি কিনা ? বলুন ও কার ছেলে ? মুকুন্দ মুখুজ্যের না হীরা নাপিতের ? আমার সন্ন্যাসিনী ঠাকুরমা মাথা হেট করে রইলেন। কিছুতেই মিথ্যা কথা বলতে পারলেন না। একজন তখন সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সে তাদের গ্রামের লোক। বলল, আট বছর বয়সে ঠাকুরমার বিয়ে হয়, তারপর দশ-পনের বছর পরে একজন এসে জামাই মুকুন্দ মুখুজ্যে বলে পরিচয় দিয়ে বাড়ি ঢোকে। পাঁচ টাকা আর একখানা কাপড় নিয়ে সে দুদিন বাস করে চলে যায়। তারপর থেকে লােকটা প্রায়ই আসত। ঠাকুরমা খুব সুন্দরী ছিলেন—আর সে টাকা নিত না। তারপর যখন সে একদিন হঠাৎ ধরা পড়ে গেল, তখন বাবা জন্মেছেন। তারপর লােকটা বলল, ও কুকাজ সে নিজের ইচ্ছায় করেনি, তার মনিব মুকুন্দ মুখুজ্যের আদেশেই করেছে। একে বুড়ো মানুষ, তারপর পাঁচ-সাত বছর বাতে পঙ্গু তাই অপরিচিত স্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ভার তার ওপর দিয়েছিল। হিরা নাপিত ঐ বামুনের পরিচয় মুখস্থ করে, একটা উপায় তৈরি করে রাখে। তখন থেকে যা কিছু রােজগার করে অর্ধেক ভাগ পায়। আরাে দশ-বারাে জায়গা থেকে সে এমনি করে প্রভুর জন্য রােজগার করে নিয়ে যেত।

রামনারায়ণ তর্করত্ন, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের রচনা থেকে আমরা বাঙলার কুলীন ব্রাহ্মণদের পরিচয় পাই। তারাই কুলীনের মেয়েদের পিতা, এবং তাদের মেয়েরাই কুলীন ব্রাহ্মণ ছাড়া বিবাহ করতে পারত না। এই প্রথা নিবতনের জন্য বিদ্যাসাগর মশাই যথেষ্ট আন্দোলন করেছিলেন, কিন্তু সরকারী সমর্থন পাননি। তবে তা সত্ত্বেও তাঁর আন্দোলনের ফলেই এই কথা বাঙালী সমাজ থেকে গত শতাব্দীতে বিলুপ্ত হয়। তার ফলে কুলীনের মেয়েরা বিবাহিত জীবনে আজ সম্মান ও শুচিতা লাভ করেছে।

হিন্দু বিবাহ-বিধান

গত শতাব্দীতে হিন্দু মেয়েরা পেয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার। আর পুরুষ বঞ্চিত হয়েছে তার একাধিক বিবাহ করবার অধিকার। এছাড়া বিবাহের ন্যুনতম বয়স এখন বর্ধিত করা হয়েছে। এ সবই বিবাহের ওপর গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার ফসল। এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলােচনার পূর্বে দেখা যাক বিবাহ সম্বন্ধে আমাদের আগে কি প্রথা ও নিয়মকানুন ছিল।

আর্যরা এদেশে আসবার আগে যে সব বর্গের বিবাহপ্রথা প্রচলিত ছিল তা হল যথাক্রমে রাক্ষস, গন্ধব ও অসুর বিবাহ। কেননা এই সব বর্গের বিবাহের কোন উল্লেখ ঋবেদে নেই, অথচ এগুলি বর্তমানের। আদিবাসী সমাজে প্রচলিত আছে। বৈদিক যুগে মাত্র এক রকম বর্গের বিবাহই (ব্রাহ্ম বিবাহ) প্রচলিত ছিল, এবং তা প্রাপ্তবয়স্ক যুবক যুবতীদের মধ্যেই হত। এছাড়া তাদের অধিকাংশই নিজের পতি নিজেই নির্বাচন করতে পারত। এটা আমরা জানতে পারি ঋগ্বেদের সপ্তম মণ্ডলে বর্ণিত ‘সমন’ উৎসব থেকে। এই উৎসবে যুবতীরা মননামত পতি লাভের আশায় সুসজ্জিত হয়ে যােগদান করত। পরে দিদির ( মধ্যগ বা ঘটকের) আবির্ভাব ঘটে। তখন থেকেই ‘সমন’ উৎসবে পতিনির্বাচনের প্রচলন কমে যায়।

বৈদিক যুগে বিবাহ কোন বিশেষ ব্যক্তির সঙ্গে হত না, হত তার সমস্ত ভ্রাতাদের সঙ্গে। অন্তত আপস্তম্ভধর্মসত্রে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, কন্যাকে দান করা হয় কোন এক বিশেষ ভ্রাতাকে নয়, বংশের সমস্ত ভ্রাতাকে। এজন্য পরবর্তীকালে মন বিধান দিয়েছিলেন যে, কলিযুগে। কন্যার বিবাহ যেন সমগ্র পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে দেওয়া না হয়। ঋগ্বেদ এবং অথর্ববেদে কয়েকটি স্তোত্র আছে যা থেকে পরিষ্কার বােঝা যায় যে, যদিও বধুকে জ্যেষ্ঠভ্রাতাই বিবাহ করত, তা হলেও তার কনিষ্ঠ সহােদরদের তার ওপর যৌনমিলন বা রমণের অধিকার থাকত। এই দুই গৃহেই স্বামীর কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে ‘দেব বা দেবর বলা হয়েছে। কেননা, ‘দেবর’ মানে ‘দ্বিবর’ বা দ্বিতীয় বর। ঋগ্বেদের এক স্হানে বর্ণিত হয়েছে যে বিধবা বৌদি দেবকে তার দাম্পত্য শয্যায় নিয়ে যাচ্ছে।………..

Leave a Reply