গন্ধপরাগ – মারুফ কামরুল

›› সম্পুর্ণ গল্প  

সারলিন ব্লাউজের বোতাম খুলে দিলো। স্তনের ওপর চিকন রগগুলো ফুটে উঠেছে। খয়েরি বোঁটা শক্ত হয়ে আছে। চিকন কচি ঠোঁটের ভেতর বোঁটা ঠেলে দিতেই চুকচুক শব্দে চুষে চলছে দুই মাসের ফারহান। নিজের খাবার বুঝে নিতে বারবার মুখের ভেতর স্তনের বোঁটা টেনে নিচ্ছে। সারলিন কাত হয়ে কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে শরীর এলিয়ে দিয়েছে। অদূরে বসা রাহাত। এক পলকে তাকিয়ে আছে। দেখছে, সন্তানের খাবার বুঝে নেওয়ার আনন্দ। রাহাত যেখান থেকে কামগন্ধ খুঁজে নেয়; সেখানে মুখ গুঁজে খাবার খাচ্ছে ফারহান। সারলিন বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুমে ডুবে গেল। রাহাত বারবার নিজেকে পরখ করে দেখছে, কোথাও একবিন্দু কাম জমেনি। শিশ্ন বলে কিছু থাকতে পারে, সেটাও ভুলে গেছে। অথচ সে ভেবে পায় না, এই স্তনজোড়া ব্লাউজবন্দি থেকেও ওকে জাগিয়ে দিতো। কামের আনাগোনা দেখা দিতো শরীরজুড়ে। আজ অনাবৃত দেখেও এত স্বাভাবিক কী করে থাকতে পেরেছে। সারলিনকে ঘুমের ঘোরে ছুঁয়ে দিলে জেগে যেত। কামুক হয়ে উঠতো। হিংস্রতা চেপে বসতো রাহাতের হাত ওর স্তনে পরতেই। কই, এখন তো আরামে ঘুমাচ্ছে। রীতিমতো বোঁটা চুষে যাচ্ছে ফারহান। তবু কোনো নড়নচড়ন নেই। উন্মাদনা নেই। কাম নেই। রাহাত বুঝে নিলো, দুটি অনুভূতির তফাৎ। রাহাতের স্পর্শেও সুখ পায়, সে প্রশান্তিতে বহু ব্যবধান। রাহাত আরো কাছে গিয়ে বসলো। ভালো করে সারলিনের চেহারা দেখছে। শরীরজুড়ে ভিন্ন একটা ঘ্রাণ। আগাগোড়া একটা মায়ের ছবি ভেসে উঠেছে। মাতৃত্বের গন্ধ লেগে আছে গায়ে। কোনো সংকোচ নেই। রাখঢাক নেই। সন্তানের সামনে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। দুনিয়ার সব সম্পর্ক মুহূর্তে বিলীন হয়ে শুধু মা সম্পর্কটি রয়ে গেল। রাহাতের মনে একটি মায়ের ছবি ভেসে ওঠে। জন্মের সময় সে মাকে হারিয়েছে। আজ সারলিনের শরীরজুড়ে মায়ের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছে। এখন সারলিন গোটা দুনিয়ার মা। মায়েদের ছতর নেই। এক ‘মা’ শব্দ জাগতিক অঙ্গীয় সম্পর্কের অঙ্গগুলো বিকল করে দেয়। এভাবেই আদিকাল থেকে শব্দের বিভাজনে অঙ্গের সক্রিয়তা নির্ভর করে আসছে। কাপড় ছাড়াও মা, মা-ই ছিল অনন্তকাল থেকে। রাহাত ভাবে অ্যাডামের কথা। তিনি তো মায়ের আদর পাননি। তিনিও কি ঈভের সন্তান প্রসবের পরই মাতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন! ঈভ সৃষ্টির পর অ্যাডাম কামনায় জ্বলেছে। বারবার ছুঁতে গেছে। সে অ্যাডামের কেমন অনুভব হয়েছিল তখন? যখন ঈভ সন্তান প্রসব করলো, আর এমন পরিপক্ব স্তনের বোঁটা সন্তানের মুখে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছিল। তখন তা দেখে হয়তো অ্যাডামেরও কামনা দমে গিয়েছিল। এমনও হতে পারে কী, সেদিন অ্যাডাম আনমনে মাকে কল্পনা করেছে ঈভের মাঝে। মনের কোণে মায়ের চিত্র এঁকেছে। আর নিজের কামনা দমে যাওয়া দেখে অবাক হয়েছে! রাহাত ঘোরের খাদে আটকে যায়। পৃথিবীর প্রথম মানব জুটি চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছে। এভাবেই আমাদের চাকা ঘুরছে, আমরা থমকে যাই, আমাদের বোঝাবুঝির দ্বার খুলে যায়।

ফারহানের কান্না শুনে রাহাত চমকে ওঠে। দেখে সারলিন অপর স্তনটি ওর মুখে পুরে দিলো। মুহূর্তে কান্না থেমে গেল। আগের মতো নরম চোয়ালে, চিকন ঠোঁটে চুষে চলছে ফারহান। ওর কান্না শুনে কী করে সারলিন বুঝে গেল স্তন পরিবর্তন করতে হবে! কিছুতেই বুঝে আসে না রাহাতের। ও একইভাবে তাকিয়ে আছে। ঘুমে অচেতন কোনো মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সারলিনের শরীরে কোথাও কাম জাগানিয়া কিছু চোখে পড়ে না। শুধুই একখন্ড মা, তুলতুলে শিশুর আশ্রম। এসব ভাবতে ভাবতে রাহাতের মুখ ফসকে ‘মা’ শব্দটি বেরিয়ে যায়। হাত দুটো সারলিনকে জড়িয়ে ধরতে চায়। আঁচলে মুখ লুকিয়ে বলতে চায়, মা তুমি কেমন আছো? কিন্তু পারে না। বহুবার হাত বাড়িয়ে ফের গুটিয়ে নিয়েছে। এতক্ষণে সারলিনের ঘুম ভেঙে গেছে। চোখ খুলে দেখে, রাহাত এক পলকে বাচ্চার দুধ খাওয়া দেখছে। সারলিন বললো, এমন করে কী দেখছো? চোখ সরাও, না হয় ফারহানের পেট খারাপ হবে! রাহাত থতমত খেয়ে বললো, না না, তেমন কিছু না। মাতৃত্ব, মাতৃত্ব দেখছিলাম। সারলিন হাই তুলে বললো, কী সব বলছো? বুঝি না। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার দিচ্ছি। ফারহান ততক্ষণে বোঁটা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছে। সারলিন ব্লাউজের বোতাম লাগিয়ে, বাচ্চার গায়ে কাঁথা দিয়ে নেমে পড়লো।

দুজনে রাতের খাবার খেতে বসেছে। রাহাত চুপচাপ। তেমন কোনো কথা নেই। সারলিন যা-ই বলে, শুধু হু হা উত্তর দিচ্ছে। সারলিন বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলো, কী হলো? এমন চুপমেরে আছো কেন? কিছু বললে হু-হা করছো! রাহাত বললো, না তেমন কিছু না। তুমি খাও।

মূলত রাহাত এতক্ষণ যে সারলিনকে দেখেছে, মাতৃত্ব দেখেছে, সেটা এখন দেখতে পাচ্ছে না। ভিন্ন গন্ধ পাচ্ছে। প্লেটে তরকারি দিতে গিয়ে সারলিনের আঁচল খসে যেতেই রাহাতের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কামের উপস্থিতি টের পায়। সারলিনের বক্ষস্থল থেকে করুণ আবেদন তেড়ে আসছে। অথচ একটু আগেই অনাবৃত দেখেছে। তখন কোনো তাড়না কাজ করেনি শরীরে। এসব রহস্য রাহাতের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

খাওয়া শেষ করে সারলিন বিছানায় যায়। রাহাত বললো, তুমি শুয়ে পড়ো, আমি আসছি। রাহাতের মাথায় কৌতূহল খেলা করছে। সে দেখতে চাচ্ছে একজন নারীর মা হওয়ার প্রধান যন্ত্রণা সহ্য করার দৃশ্য। কম্পিউটারের সামনে বসে গেল। সোজা ইউটিউবে প্রবেশ করলো। সার্চবারে লিখলো, ‘স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসব করার দৃশ্য’। বহু ভিডিও চলে এলো। একেকটা ভিডিও ওপেন করছে আর চোখ লাল হয়ে উঠছে। এত অসহনীয় যন্ত্রণার ফল একটি মানব শিশু। এমন করে আগে কখনো ভাবেনি। সারলিনের ওপর মায়া আর শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। রাহাতের চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার মায়ের প্রসব বেদনার কল্পিত দৃশ্য। কিংবা সেটা সারলিনেরও হতে পারে। বেশ কিছু ভিডিও দেখে কম্পিউটার বন্ধ করলো। মশারি তুলে চুপচাপ বিছানায় গেল। সারলিন বাচ্চাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। রাহাত নিঃশ্বাস নিতেই টের পেল সেই মাতৃত্বের গন্ধ। একটু আগেও খাবার টেবিলে সেই গন্ধ ছিল না। ছিল কামুক গন্ধ। রাহাতের মুখ দিয়ে একটু জোরেই বেরিয়ে পড়ে ‘মা’ শব্দটি। শব্দ শুনে সারলিন নড়েচড়ে ওঠে। হাতগুলো আবার সারলিনকে জড়িয়ে ধরতে চায়। পারে না। কেউ যেন বাধা দিচ্ছে। হাত গুটিয়ে বালিশে মাথা গুঁজে রইলো। সারলিন, ফারহানকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। কপালে চুমু খেয়ে বললো, লক্ষ্মী সোনা, ঘুমোও। চুমুর শব্দ রাহাতের বুকে বিঁধে। সে চমকে ওঠে। ভেতরে ভেতরে লক্ষ করছে, সে চায় সারলিন তাকেও এমন চুমু খেয়ে বলুক ঘুমিয়ে পড়ো বাবা, লক্ষ্মী সোনা। কিন্তু এটা কী করে হয়! তার মাথায় আসছে না। সম্ভবও না, এটাও জানে, একটি মা মুখের চুমুও চায়। সারলিন এবার রাহাতের দিকে পাশ ফিরলো। দেখে রাহাত বিড়বিড় করে কিছু বলছে। সে জানতে চাইলো, কী হলো তোমার? কোনো সমস্যা হলে খুলে বলো। রাহাত চুপ করে আছে। সে টের পাচ্ছে সারলিনের শরীরের গন্ধে আর মাতৃত্ব নেই। কথার টোনে কামনা। কী করে সম্ভব! পাশ ফিরতেই সব নিমিষে বদলে গেলো, রাহাত ভেবে পাচ্ছে না। সে বলতে চাচ্ছে, তুমি ফারহানের দিকে ফিরে থাকো। ওর মুখে স্তনের বোঁটা দাও। ও চুষে খাবার বুঝে নিক। আমি একটু মাতৃত্ব দেখতে চাই। মা মা গন্ধ পেতে চাই। অথচ এসবের কিছুই বলতে পারেনি। এরই ফাঁকে সারলিন ওর আরো কাছে চলে এসেছে। জানতে চাইলো, আমার ওপর রাগ করে আছো? আচ্ছা, এখনি রাগ ভাঙাচ্ছি, এ বলে রাহাতের ঠোঁট ঠেলে দিলো।

ওরা কামলীলায় ব্যস্ত হয়ে যায়। রাহাতের তবু বুঝে আসে না। একজন নারী সন্তানের দিকে ফিরলে কী করে মা হয়ে যায় আর স্বামীর দিকে ফিরলে কামিনী। কী করে পাল্টে যায় শরীরের গন্ধ!