….আঁচল সরে গেল বুক থেকে, এখন ওর গায়ে রোদ নেই । রোদ বুবাইদের জানালার দিকে । পিছন থেকে হাত এনে, আঁচল টেনে বুক ঢাকতে গিয়ে, নিজের বক্ষান্তরের দিকে ওর চোখ পড়লো। অনেকখানি দেখা যাচ্ছে। আঁচলটা টানতে টানতেই ও ঝটিতি চোখের পাতা তুলে তেরোর দিকে একবার দেখলো ।….
….চুলে অনেকখানি ঢাকা । কুমারের দৃষ্টি তখনো ওর দিকে। কোনো ইঙ্গিত নেই, যেন খুব অবাক হয়ে, ফুল্লরাকে দেখছে । ফুল্লরার ভুরু কুঁচকে উঠলো। কুমারের চোখের দিকে ভালো করে দেখলো, এবং তারপরে নিজের বুকের দিকে। ওর মুখে ঝটিতি রঙের ছোপ লেগে গেল, তেরোর কোলের কাছে পড়ে থাকা আঁচলটা তাড়াতাড়ি টেনে বুকের ওপর ঢাকা দিল, দিতে দিতেই এক পলকে তেরোর দিকে দেখে নিল। কালো ঠুলির দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝবার উপায় নেই ।….
….ও সামনের দিকে এগিয়ে, দু পা ছড়িয়ে দিয়ে, যতোটা সম্ভব সমস্ত শরীরটাকে পিছনে এলিয়ে দিল, কিন্তু বুকজোড়া, নিজের চোখেই বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠলো, তাই ডান দিক থেকে আঁচল টেনে বুক ঢেকে বাঁ দিকের জামায় গুঁজে দিল ।….
…..বিমানকে একটু সুযোগ দিয়ে গিয়েছিল। বিমান কখন কী ভাবে হঠাৎ ফুল্লরার দুই উরত প্রাণপণ শক্তিতে ঘন আবদ্ধে চেপে ধরেছিল, আর ও নিচু হয়ে বিমানের হাতটা এক হাতে চেপে ধরেছিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলেছিল, ‘না। বিমান ছাড়ো।’
বিমান তখন নরম কাদার বুকে, জংলি গাছের মূলে আগ্রাসী লোভে মুখ বাড়িয়ে দেওয়া শুয়োরের মতো । ও যে কোন্ মুহূর্তে ওরকম একটা এ্যাটেমপ্ট নিয়েছিল যা আর কখনো করেনি, ফুল্লরা একটুও টের পায়নি। ও রীতিমতো ক্ষ্যাপা আর বলশালী হয়ে উঠেছিল, আর গোঙানো স্বরে একটা আকুতির শব্দ করেছিল । ওর হাত তখন অনেকখানি ভিতরে চলে গিয়েছিল; যেতে পেরেছিল, কারণ ও নিচু হয়ে কাণ্ডটা করেছিল একবারে আচমকা । ফুল্লরা এর পরস্পর আবদ্ধ শক্ত উরতে, বিমানের নখের আঘাত অনুভব করেছিল। শায়া আর শাড়ির ওপর দিয়ে ওর হাতটা ফুল্লরা প্রাণপণে চেপে ধরেছিল । এক হাতে অসম্ভব বুঝে দু’হাতে চেপে ধরেছিল, আর নিচু হয়ে পড়ার দরুন, বুকের আঁচল বিমানের পিঠের ওপরেই ছড়িয়ে পড়েছিল, এবং গলার স্বর কিছুটা তুলে বলেছিল, ‘ছাড়ো বলছি, ছাড়ো। আমি চিৎকার করবো।’
বিমান ছাড়েনি, কথা শোনেনি, বরং আর একটু দীর্ঘ শব্দে গুঙিয়ে উঠেছিল। কিন্তু ফুল্লরা মরীয়া হয়ে উঠেছিল। এমন অসুবিধাজনক ভাবে ওকে বিমানের হাতটা চেপে ধরতে হয়েছিল, কোমর থেকে শাড়ির বাঁধন একটু একটু করে খসে পড়ছিল। বিমানের হাত ক্রমাগত ওর উরু সঙ্গমের দিকে তিল তিল করে এগিয়ে যাচ্ছিল। ফুল্লরা খানিকটা নিরুপায় হয়ে, হঠাৎ খানিকটা ঝুঁকে, বিমানের মাথার সঙ্গে মাথা ঠুকিয়ে ওর হাত দুটো সহ ঝুলে পড়েছিল । ওর শরীরের একটা ভার আছে, সেই ভারটা বিমানের ওপর কিছুটা চেপে বসতেই, হাত দুটোও কিছুটা নেমে এসেছিল। ফুল্লরা বেশ জোবে ফুঁসে ওঠা স্বৰে ডেকে উঠেছিল, ‘বিমান ছাড়ো !’
বিমানেব অন্য হাতটা তখনই ফুল্লবার বুকে স্পর্শ করেছিল। সেটা নতুন কিছু না, কিন্তু ফুল্লরার কাছে তখন সেই চেনা স্পর্শও অসহ্য বোধ হয়েছিল। ও হঠাৎ খানিকটা পিছনে ছিটকে যেতে পেরেছিল, আর, প্রায় চিৎকার করে উঠেছিল, ‘না, আর না, ছাড়ো।’
ফুল্লরার শাড়ি তখন অনেকখানিই ছাদে লুটোচ্ছিল।
বিমান জানু পাত৷ অবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়েছিল, এবং ফুল্লরার ছড়ানো আঁচল ধরে টানতে টানতে ওর দিকে এগিয়েছিল। বিমান তখন স্থান কাল পাত্র হিতাহিত সবই ভুলে গিয়েছিল। ফুল্লরাকে আর একবার হাত বা৷ড়য়ে ধরবার মুহূর্তে কমল নিঃশব্দে এগিয়ে এসেছিল। ও খুব আস্তে আস্তে এসেছিল, নিশ্চয় অনেক দ্বিধা আর বিস্ময় নিয়ে। ওকে দেখতে পেয়েই, ফুল্লরা প্রায় আর্তনাদের স্বরে বলে উঠেছিল, ‘কমল, সেভ, মী প্লিজ ! এর হাত থেকে আমাকে ছাড়াও ও যে কী জঘন্য !’….