কীতিনাশিনী – সমরেশ বসু

›› গল্পের অংশ বিশেষ  

কীতিনাশিনী

…..আমার মনে আছে, ঢাকায় এক অভিজাত মুসলমান মহিলা, ‘যুবতী’ শব্দে আপত্তি করে। পরিবর্তে তরুণী’ শব্দ ব্যবহার রুচিকর বলেছিলেন। অবিশ্যি তিনি শিক্ষিতাও। আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়েছিল, তিনি নারী’ বা ‘রমণী’ কোনটা বেশি রুচিকর জ্ঞান করেন। করিনি, কারণ আমি জানতাম, তিনি নারীকেই ভােট দেবেন। যুবতীর সঙ্গে যৌবন শব্দের যেমন একটা নৈকট। আবার, তেমনি রমণীর সঙ্গে সম্ভবত রমণের। মহিলাটির মানসিক জগতের কিঞ্চিৎ হদিস এতে মিলে যায়। তারপরে ভাবুন, বঙ্গ হিন্দুদের নাম যদি হয় রমণীমােহন, কী লজ্জা, কী লজ্জা যুবতীমােহন হলে তাে কথাই ছিল না। ঢাকার সেই মহিলার শুনে বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের কথা মনে হয়ে যায়।…..

…..সুচেতা অধিকারীর রূপ আর স্বাস্থ্যের জন্য এত কথা বলার দরকার নেই। তার সবই ভালাে, বক্ষ, কটি এবং নিতম্ব বেশ মানানসই, কিন্তু মেদের ব্যাপারে বিপদ সংকেতের কিনারায় এসে দাড়িয়েছেন মেদ একটু বাড়লেই ওঁর এই সুঠাম শরীরের রূপ পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।…..

……আমার বন্ধুর সঙ্গে প্রথম যে দিনটিতে তাঁকে ক্লাবে দেখেছিলাম, সেদিন তিনি রঙ মেলানো শাড়ি জামা স্নিপার সাণ্ডেস কপালের ফোটা, কানে ফুলের এবং গলায় পাথরের মালা পরেছিলেন, এবং বলাই বাহুল্য, ওঁর স্লিভলেস জামার গলা আর কাঁধের হ্রস্বতা নিটুট বক্ষের আপাতঃ উদাসীনতায় আসলে একটি সর্বনাশের সংকেতই জাগিয়ে রেখেছিলেন, তদুপরি নির্লোম নিভাজ মেদহীন শ্রোণীদেশ, নাভির নিচের শাড়ি বন্ধনীতে যেন রীতিমত একটা উসকে দেবার চ্যালেঞ্জ।…..

…..শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যার কথা বলছি। হিন্দুমতে সর্বগুণ সুলক্ষণা, স্নেহশীলা, প্রেমব্যাকুলা কান্তা বা দয়িতা, সুলক্ষণার মধ্যেও সামান্য কয়েক রেখা ও রোমরাজির জন্যই যে-নারী গৃহাঙ্গন ও বহিরাঙ্গনের মধ্যপাথে বিচরণশীলা, কিংবা সুবর্ণচ্ছটা ও সুদেহিনী নারীর বস্তিদেশ থেকে উদগত কেশরেখা নাভিস্থলগামী, একমাত্র এই কারণেই সে সুভোগা গণিকা-লক্ষণা-ইত্যাদির বিচার একরকম। নায়িকা-লক্ষণের কথা

উঠলেই চিন্তা ধাবিত হয় তন্ত্র ও শাক্ত ধারার দিকে। সেখানে তাে নট, ডােম্বিনী, বেশ্যা, যবনী, শুদ্ৰাণী, ব্রাহ্মণী অনেকেই নায়িকা।……

 

সাধ

….গােপীনাথ নমিতার পাশে শােয়া। ঘর অন্ধকার। মাথার টালির ওপরে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ। কাছের জলা থেকে ব্যাঙের ডাক ভেসে আসে। সঙ্গে ঝিঝির ঝংকার। টালির মাথায় খুটখাট শব্দ, বোধ হয় ইদুর ছুটোছুটি করে। গোপীনাথ নির্ভুলভাবে অন্ধকারে নমিতার বুকে একটি হাত রাখে। নমিতার বুকে আঁচল সরানো, গায়ে জামা নেই। গােপীনাথের হাত পড়ে নমিতার বুকের মাঝখানে, জেগে ওঠা হাড়ের ওপরে। অতি স্পষ্ট না, তবু হাড় টের পাওয়া যায়। পার্শ্বে আর নিচের দিকের নাভিতে শিথিল বুক, স্বাভাবিক গরম।…..

Leave a Reply