কর্কটক্রান্তি – ইন্দ্রনীল সান্যাল

›› উপন্যাসের অংশ বিশেষ  

…….এটা খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার যে, দীপশিখার বাঁ স্তনে একটা গুটলি হয়েছে, সেটা তার স্বামী সৈকত ধরতে পারেনি, ধরেছে প্রাক্তন প্রেমিক সিদ্ধার্থ। লােকে বলবে, এর মধ্যে আশ্চর্যের কী আছে? বিয়ের সাত বছর পরে, যখন একে অন্যের শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি চেনে, তখন অত মনােযােগ দিয়ে সব কিছু দেখার ইচ্ছে থাকে না। এই যুক্তিকে সপাটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে বলা যায়, সৈকতের ব্রেস্ট নিয়ে অবসেশন আছে। বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ বা বিএমসি-র থার্ড ইয়ারে প্রেমপর্ব শুরু হওয়ার সময় থেকে আজ পর্যন্ত সে অবসেশন যায়নি। পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতাে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার সৈকত মুখার্জি পনেরােদিনে একবার আলমবাজারের নর্থ সিটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আসে। ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করা মাত্র তার আক্রমণের লক্ষ্য দীপশিখার বুক।

বলিউডের গুরুত্তনী বাঙালি হিরােইন ঝিলম রায় সৈকতের পছন্দের তালিকার এক নম্বরে। সুতরাং এ কথা বলাই যায়, দীপশিখার গোঁফ গজালে সেটা সৈকতের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু বুকে কিছু হল, আর সেটা সৈকত বুঝল না? অসম্ভব ব্যাপার।……..

…….সােমবার বিএমসি প্যাথােলজি ডিপার্টমেন্টে দীপশিখার ব্রেস্টে হাত দিয়ে চমকে উঠেছিল সিদ্ধার্থ। গুটলি বেশ শক্ত!…..

……“সৈকত কিছু বুঝতে পারেনি ?” গতকাল ভােরবেলাতেই সৈকত বুক নিয়ে নানা কাণ্ড করেছে। সেটা মনে করে স্নান হাসে দীপশিখা, “না।”…..

…..“বড় ব্যাপার নয়?” ফ্যাকাসে হেসেছিল দীপশিখা। মৃত্যুভয়ের চেয়েও তার কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্তন বাদ যাওয়ার ইসু।……

……পরদিন অপারেশন। বাঁ দিকের স্তন বাদ। বাঁ বগলের লসিকা গ্রন্থি বাদ।…….

…….ম্লান হাসে দীপশিখা। গর্ব করার মতাে স্তন তার ছিল না। কিন্তু একদম কেটে বাদ দেওয়া ? ব্যাপারটা কোনওদিন হজম হবে না।…..

“অ্যাজ লং অ্যাজ ঘেটুরানির এই দুটো ঠিক আছে…” দীপশিখার ব্লাউজের ভিতরে আক্রমণ শানিয়েছিল সৈকত, “অন্য কিছু আমার কাছে ম্যাটার করে না।”…..

……..সৈকত কি আর কখনও মানসিক বাধা কাটিয়ে তার সঙ্গে প্রাণ খুলে মেলামেশা করতে পারবে? সৈকত যদিও-বা পারে, দীপশিখা কি পারবে ঘধুর সামনে নিঃসংকোচে নগ্ন হতে? তার কি মনে হবে না, ঘধুর যৌনবাসনা আসলে চ্যারিটি ? তার কি মনে হবে , এই যৌনক্রীড়ায় সে স্থান পাচ্ছে স্ত্রী হিসেবে নয়, যৌন প্রতিবন্ধী হিসেবে? নিজেকে আজকাল প্রতিবন্ধী বলে মনে হয় দীপশিখার। একটা স্তন বাদ দেওয়ার পরে দীপশিখার মনে হয়, সে আর যথেষ্ট নারী নেই।……

…..স্তনহীন দীপশিখা এত ব্লাউজ দিয়ে কী করবে? মিউজিয়ম বানাবে? রাগে, দুঃখে, হতাশায়, লজ্জায় ব্লাউগুলােকে প্লাস্টিকের ব্যাগে। ইসছে সে। আর কোনওদিনও এই জঞ্জালের মুখ দেখবে না।……

……টিফিন কেরিয়ারের ঘা খেয়ে চোরবাবাজি উলটে পড়ে গেলেও আবার লাফিয়ে উঠে ভোঁ দৌড়। আশা চেপে ধরার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। তবে ধস্তাধস্তির সময় একটা জিনিস বুঝেছিল। এ চোর ব্যাটাছেলে নয়। এ মেয়ে। এর স্তন আছে!…..

Leave a Reply